১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের বন্দর নগরী করাচিতে ভারতীয় নৌবাহিনী দ্বারা একটি অপারেশন পরিচালনা করা হয় যা ইতিহাসে অপারশন ট্রাইডেন্ট নামে পরিচিত । আর এই অপারেশন ট্রাইজেন্ট এর যুদ্ধে এই অঞ্চলের মানুষেরা প্রথমবারের মত এন্টি জাহাজ মিসাইল (মিসাইল প্রতিরধক জাহাজ) এর ব্যবহার দেখতে পেরেছিলো । এই অপারেশনটি ১৯৭১ সালের ৪-৫ ডিসেম্বরে গভীর রাতে পরিচালনা করা হয়েছিলো যার ফলে সে অপারেশনের কারণে পাকিস্তানের জাহাজের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয় । অপারেশন ট্রাইডেন্ট পরিচালনার ফলে ভারতের তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও পাকিস্তানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছিলো । এ অপারেশনের কারণে পাকিস্তানকে তখন একটি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংসকারী, গোলাবারুদ বহনকারী একটি মালবাহী জাহাজ এবং করাচিতে একটি তেলবাহী ট্যাংকার হারাতে হয়েছিলো এবং সেই সাথে আরো কিছু যুদ্ধাস্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি। আর সেই কারণে প্রতি বছরের ৪ই ডিসেম্বর ভারতীয় নৌবাহীনি এই দিনটিকে উদ্যাপন করে আসছে । তার ঠিক ৩দিন পর থেকে এই অপারেশন ট্রাইডেন্ট পাইথন দ্বারা অনুসরণ করা শুরু হয়।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের নৌবাহিনীর সদরদপ্তরে কারাচি বন্দরটির অবস্থান ছিলো এবং সেই সময় পাকিস্তানের নৌচলাচলের গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে এই কারাচি বন্দরটি ব্যবহার করা হত। যেহেতু সেই সময় কারাচি বন্দরটি পাকিস্তানের সামুদ্রিক বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল ছিলো তাই পাকিস্তানের অর্থনিতির জন্য এই স্থানটী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল । আর এ কারণের এই স্থানটির নিরাপত্তার দ্বায়ীত্ব ছিলো পাকিস্তানের হাইকমান্ডের প্রনদের উপরে এবং এই জায়গাটি আকশপথে বা নৌ পথের হামলা থেকে রক্ষিত ছিল। বন্দরটিতে ভুমি ও আকাশপথে হামলার প্রতিরোধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিলো। [১]
১৯৭১ সালের শেষের দিকে ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে আর এই কারণে পাকিস্তান ২৩ নভেম্বর জাতীয় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে । পাকিস্তানের এ পদক্ষেপ দেখে ইন্ডিয়া পাকিস্তানের উপরে নজর রাখার জন্য করাচির পাশে ওখাতে বেশ কিছু ছোট ছোট নৌযান পেট্রোলিং এর জন্য নিযুক্ত করে । অপরদিকে পাকিস্তানও তাদের সীমানায় ভারতীয় নৌবাহীনির প্রবেশ ঠেকানোর জন্য নৌযান পাঠিয়ে দেয় । এ সময়ের মধ্যে দুই দেশ তাদের পানিপথ সম্পর্কে বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফেলে । পরবর্তিতে ১৯৭১ সালের ৩য় ডিসেম্বর পাক-ভারত সিমান্তে অবস্থিত ভারতীয় বিমানবন্দরে পাকিস্তান হামলা চালালে আনুষ্ঠানিকভাবে পাক-ভারত যুদ্ধের শুরু হয়। [২]
প্রস্তাবনা
দিল্লিতে অবস্থিত ভারতীয় নৌবাহিনীর সদরদপ্তর দিল্লির পাশাপাশি পশ্চিমা নৌবাহিনীকে সাথে নিয়ে পাকিস্তানের করাচি বন্দরে হামলার প্রস্তুতি নেয় । এ হামলার জন্য পশ্চিমা নৌবাহিনীর অধীনে একটী গ্রুপ গঠন করা হয়। এই গ্রুপগুলো ভারতীয় মিসাইলবাহী বোট গুলোর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিলো যেগুলো ওখায় নজরদারির জন্য রাখা হয়েছিলো । তবে ইন্ডিয়ার এখানে একটি সমস্যা ছিলো তা হলো এই নৌকাগুলোর অপারেশন পরিচালনা ও রাডারের পরিসীমা ছিলো অনেক কম । আর এই সমস্যার সমাধানের জন্য তারা সেখানে তাদের সহায়তার জন্য জাহাজ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেয়। [৩]
৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১, করাচি বন্দরে আগে থেকে থাকা বিদ্যুৎ ক্লাস মিসাইল বোটের আদলে সাজানো গ্রুপগুলো হামলার প্রস্তুতি শেষ করে, এ সময় তাদের সাথে ছিলোঃ আইএনএস নিপাত, আইএনএস নির্ঘাত এবং আইএনএস বীর আর তাদের সাথে ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন এর তৈরি চারটি মিসাইল যেগুলোর রেঞ্জ ছিলো ৪০ নটিক্যাল মাইল ( ৭৪কিঃমিঃ, ৪৬ মাইল) , দুটি আরনালা ক্লাস এন্টি সাবমেরিন কর্ভেটঃ আইএনএস কিল্টোন ও আইএনএস ক্যাচল এবং একটি ফিল্ট ট্যাংকার যার নাম ছিলো আইএনএস পোশক। ২৫তম মিসাইল বট স্কোয়াড্রোন গ্রুপটি কমান্ডিং অফিসার কমান্ডার বাবর ভান যাদব এর অধীনে ছিল। [৩][৪]
আক্রমণ
পুর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ৪ই ডিসেম্বরে হামলার জন্য বানানো দলটী কারাচি উপকূল হতে ২৫০ নটিক্যাল (৪৬০কিঃমিঃ ২৯০মাইল) মাইল দক্ষিণে গিয়ে অবস্থান নেয় এবং পাকিস্তানি এয়ার ফোর্স এর নজরদারির বাইরে থাকার চেষ্টা করে । তারা জানতো পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর রাতে হামলা করার ক্ষমতা ছিলো না এই কারণে ইন্ডিয়া হামলার জন্য রাতকেই বেছে নেয়। [৪] সেইদিন রাতেই পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রাত ১০ঃ৩০ মিনিটে ভারতীয় দলটী কারাচির দক্ষিণে চলে আসে এবং সেখান থেকে তারা ৭০ নটিক্যাল মাইল কাছে এসে হামলা করার স্থানগুলোকে শনাক্ত করেফেলে ।
আইএনএস নির্ঘাট উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে অগ্রসর হয় এবং তা পিএনএস খাইবারের উপরে প্রথম মিসাইল হামলা করে । পিএনএস খাইবার মনে করেছিলো এটি ভারতীয় বিমানবাহিনী থেকে ছোড়া মিসাইল ছিলো যা তাদের বিমানবাহীনির এন্টি মিসাইল সিস্ট্যামে ধরা পরে। মিসাইলটি স্থানীয় সময় রাত ১০ঃ৪৫ এ জাহাজের ডানপাশের অংশে আঘাত করে যার কারণে জাহাজটির নিচের একটি অংশ বিস্ফোরিত হয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায় । এতে জাহাজের প্রথম তাপীয় কক্ষটি বিষ্ফোরিত হয়। এর পরে জাহাজোটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধোঁয়াইয় ঢাকা পরে যায়। এ সময় তারা জাহাজ থেকে একটি জরুরী সংকেত পাঠায় তাদের সদরদপ্তরে যেখানে জানা যায় শত্রুর এয়ারক্রাফট ০২০ এফএফ ২০ অংশে অবস্থান করছে যা জাহাজের ১ নং বয়লার ধ্বংস করে দিয়েছে যার ফলে জাহাজটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জাহাজটিতে হওয়া বিষ্ফোরনের কারণে তারা অবস্থান নির্নয়ে ভুল করে ফেলে আর এই কারণে তাদের উদ্ধারে উদ্ধারকারী জাহাজের আসতে দেরি হয়ে যায় । জাহাজটি তখনো পানিতে ডুবছিলো ঠিক সেই সময় নির্ঘাট থেকে ২য় মিসাইল ছুড়া হয় যায় খইবার জাহাজের অন্য আরো একটি বয়লারে গিয়ে আঘাত করে এবং জাহাজটি পানিতে ঢুবে যায় । আর এর সাথে মারা যায় খইবার জাহাজে থাকা ২২২ জন নাবিক। [৫]