ঝাড়খণ্ডের পাথরো ও জয়ন্তী এবং পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের তুমুনি ও কুনুর
অজয় নদঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের একটি বন্যাসঙ্কুল নদী যা গঙ্গার অন্যতম প্রধান শাখা ভাগীরথী হুগলির উপনদী। অজয় নামটির অর্থ যাকে জয় করা যায় না।
ভৌগোলিক অঞ্চল
বিহারের জামুই জেলা চাকাই ব্লকের বাটপার অঞ্চলের ৩০০ মিটার উচু পাহাড় থেকে উৎসারিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে এটি দেবীপুরের নিকটে ঝাড়খণ্ডে প্রবেশ করে (দেওঘরের প্রস্তাবিত শিল্প অঞ্চল) দিয়ে গিয়ে অজয় নদ ঝাড়খণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলারচিত্তরঞ্জনের নিকট শিমজুড়িতে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে এবং এটি প্রথম পশ্চিম বর্ধমান জেলা এবং ঝাড়খণ্ড হয়ে এবং পরে পশ্চিম বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া ঘাট, বীরকুলটি ঘাট, দরবারডাঙা ঘাট ও সিদ্ধপুর ঘাট হয়ে এবং বীরভূম জেলার বড়কোলা, তামড়া, বিনুই ও নবসন গ্রামের সীমানা হয়ে পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রাম থানার নারেং গ্রামের প্রবেশ করে কাটোয়া শহরের কাছে ভাগীরথী নদীর সংগে মিলিত হয়েছে।[১] অজয় নদের মোট দৈর্ঘ্য ২৮৮ কিলোমিটার (১৭৯ মাইল) তার মধ্যে শেষ ১৫২ কিলোমিটার (৯৪ মাইল) পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। [২][৩]
অজয়ের প্রধান উপনদীগুলি হল ঝাড়খণ্ডের পাথরো ও জয়ন্তী এবং বর্ধমানের তুমুনি ও কুনুর।[২]
অজয় নদের ধারা থেকে অনেকদূর অবধি পার্বত্য অঞ্চলের ল্যাটেরাইট মাটির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বর্ধমানের আউশগ্রামে এসে পাললিক সমভূমিতে প্রবেশ করে। অজয় নদের উপত্যকায় শাল, পিয়াল ও পলাশের ঘন জঙ্গল ছিল। কিন্তু অধুনা খনিজ উত্তোলন ও অন্যান্য মনুষ্যজনিত কারণে বেশিরভাগ জঙ্গল সাফ হয়ে গেছে।[২] সম্প্রতি, ভারত সরকার (নৌ পরিবহন মন্ত্রক) অজয় নদকে জাতীয় নৌপথ আইন, ২০১৬.(৬)-এর আওতায় জাতীয় জলপথ -৭ হিসাবে ঘোষণা করেছে।
ইতিহাস
ম্যাক্ ক্রিন্ডল (Mc Krindle) সম্পাদিত ভারতের প্রাচীন ইতিহাস অনুযায়ী মেগাস্থিনিসের যুগে অম্যস্টিস নামে একটি নদীর উল্লেখ আছে যা কাটাদুপা শহরের কাছে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আরেকজন ইতিহাসবিদ উইলফ্রেড মনে করেন সেই অম্যস্টিস হল বর্তমান অজয়ের কোন প্রাচীন নামের অপভ্রংশ। [৪] সাম্প্রতিক খননকার্যের ফলে অজয় নদের উপত্যকায় পাণ্ডু রাজার ঢিপিতে সিন্ধু সভ্যতার সমসাময়িক প্রাচীন সভ্যতার নানা নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে [২]
বিংশ শতাব্দীতে অজয় নদে কম করে ২০ টি বন্যার লিখিত নথি আছে। নদের নিম্নভাগের বন্যা প্রতিরোধের জন্য বাঁধ রয়েছে। [২]
কবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিক, কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ও আরও অনেক কবি অজয়ের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন:
"বাড়ি আমার ভাঙন ধরা অজয় নদীর বাঁকে,
জল যেখানে সোহাগ ভরে স্থলকে ঘিরে রাখে"
"অজয়ের ভাঙনেতে করে বাড়ি ভঙ্গ,
তবু নিতি নিতি হেরি নব নব রঙ্গ।"
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অজয় নদীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লিখেছেন-
"চাঁদের কিরণ পড়ে যেথায় একটু আছে জল
যেন বন্ধ্যা কোন্ বিধবার লুটানো অঞ্চল।
নিঃস্ব দিনের লজ্জা সদাই বহন করতে হয়,
আপনাকে হায় হারিয়ে-ফেলা অকীর্তি অজয়।"
তথ্যসূত্র
↑Chattopadhyay, Akkori, Bardhaman Jelar Itihas O Lok Sanskriti (History and Folk lore of Bardhaman District.), (বাংলা), Vol I, p 27, Radical Impression. আইএসবিএন৮১-৮৫৪৫৯-৩৬-৩