অগ্নি-পি বা অগ্নি-প্রাইম একটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, সম্মিলিত মোটর কেসিংয়ের আকার, ম্যানুভারবেল রি-এন্ট্রি ভেহিকেলের (এমআরভি) সাথে উন্নত প্রোপেলেন্টস, নেভিগেশন ও গাইডেন্স ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য আপগ্রেড সহ প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও) দ্বারা কৌশলগত বাহিনী কমান্ডের কার্যকারী পরিষেবায় অগ্নি-১ ও অগ্নি-২ ক্ষেপণাস্ত্রের উত্তরসূরি হিসাবে তৈরি করা হয়।[৪]
এটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের অগ্নি (ক্ষেপণাস্ত্র) সিরিজের ষষ্ঠ ক্ষেপণাস্ত্র। অগ্নি প্রাইমকে ট্রেনে পরিবহন এবং ক্যানিস্টায় সংরক্ষণ করা যায়।[৫]
ইতিহাস ও উন্নয়ন
বিভিন্ন গণমাধ্যম সংস্থা ২০১৬ সালে শুরুতে জানান যে ডিআরডিও নির্ভুলতা ও নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে অগ্নি-৪ ও অগ্নি-৫ প্ল্যাটফর্ম থেকে নতুন প্রযুক্তি ধার করে দু'টি ধাপের সাথে অগ্নি-১পি নামে অগ্নি-১ এর একটি উত্তরসূরির বিকশিত করছে।[৬] চীন মার্কিন নৌবাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য পারমাণবিক ক্ষমতার সাথে ডিএফ-২১ডি ও ডিএফ-২৬বি গড়ে তোলার মাধ্যমে গুয়ামের নৌঘাঁটি তাদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার পরে ভারত অঞ্চল অস্বীকার অস্ত্র নিয়ে কাজ শুরু করে। একইভাবে, অগ্নি-পি'র অগ্রগতি হল চীনের ২০৩৫ সালের মধ্যে ৫-৬ টি বিমানবাহী রণতরী যুদ্ধ দলের যে পরিকল্পনা তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভারতের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলের অঙ্গ, যা পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় বিদেশের লজিস্টিকাল ঘাঁটিসমূহ সহ পশ্চিমা প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগর উভয়কেই নাগালের মধ্যে নিয়ে আসবে।[৭] চীনের সামরিক বিশেষজ্ঞরা মেনে নিয়েছেন, যে প্রবেশ বিরোধী/অঞ্চল অস্বীকারের বিষয়ে ভারতে সক্ষমতা বৃদ্ধির চাহিদা রয়েছে। অগ্নি-পি পরীক্ষা ভারতের অন্তর্বর্তী-পাল্লার পারমাণবিক বাহিনী চুক্তির অংশ হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তোলে।[৮]
ডিআরডিও ২০২১ সালের ২৮শে জুন সফলভাবে অগ্নি-পি (পূর্বে অগ্নি-১পি নামে পরিচিত) আব্দুল কালাম দ্বীপ থেকে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করে। এটি একটি দুটি পর্যায়ের কঠিন জ্বালানীর ক্ষেপণাস্ত্র, যা সালামো মোডে শীতল উৎক্ষেপণের জন্য সম্পূর্ণভাবে রূদ্ধ সীল ও পরপর সাজানো যমজ ক্যানিস্টার লঞ্চারে সংরক্ষণ করা এবং সড়ক ও রেলপথে পরিবহন করা যেতে পারে। ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়াতে উৎক্ষেপণের প্রান্তিক পর্বের জন্য এমএআরভি চারটি ডেল্টা পাখনা বহন করে।[৯] এটি ডিআরডিও দ্বারা প্রবর্তিত অগ্নি সিরিজের একটি নতুন শ্রেণির ক্ষেপণাস্ত্র, যার ওজন অগ্নি-৩ এর অর্ধেক। অগ্নি-পি এর প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের উভয়ই ওজন হ্রাস করার উদ্দেশ্যে সংমিশ্রিত পদার্থ দ্বারা গঠিত, যা অগ্নি-৫ প্রকল্পের সময় আয়ত্ত করা হয়েছিল।[১০] এটি ১.৫ টন পেইলড সহ ২০০০ কিলোমিটারের সর্বোচ্চ দূরত্বে আবদ্ধ বা আচ্ছাদিত একটি উন্নত গাইডেন্স প্যাকেজ ও চালকশক্তি ব্যবস্থা বহন করে।[২][৪][১১]
যদিও অনেক জল্পনা ছিল, যে অগ্নি-পি ক্ষেপণাস্ত্রটি অন্তর্ভুক্তির পরে পৃথিবী-১, অগ্নি-১ ও অগ্নি-২ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিস্থাপন করবে, কিন্তু সরকারি সূত্রসমূহ এই জাতীয় তত্ত্ব অস্বীকার করে।[১২]
ক্ষেপণাস্ত্রটির উন্নয়নের পেছনের অন্যতম উদ্দেশ্য হ'ল ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাটির বিরুদ্ধে সর্বাধিক কৌশলগত দক্ষতা অর্জন এবং যথাযথ আঘাত হানা জন্য উচ্চতর নির্ভুলতা অর্জন করা।[১৩]
গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার – পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) প্রাক্তন প্রশিক্ষক সুং চুংফিং-এর মতে, অগ্নি-পি ক্ষেপণাস্ত্রকে ডিএফ-২১ডি বা ডিএফ-২৬বি ক্ষেপণাস্ত্রের মতো জাহাজ বিরোধী ভূমিকা প্রমাণ করার জন্য আরও পরীক্ষার প্রয়োজন হবে, যা ডিএফ-২১ডি বা ডিএফ-২৬বি ইতোমধ্যে ২০২০ সালের সামরিক অনুশীলনে দক্ষিণ চীন সাগরে একটি লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে দক্ষতা প্রমাণ করেছে। তবে বর্তমানে অগ্নি-পি চীন ও পাকিস্তানের কৌশলগত লক্ষ্যবস্তুসমূহের বিরুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর যথার্থতা, দ্রুত প্রতিক্রিয়ার সময় ও যথাযথ আঘাত হানার সক্ষমতা বাড়িয়েছে।[১৪]