হিউ ট্রায়ন বার্টলেট, ডিএফসি (ইংরেজি: Hugh Bartlett; জন্ম: ৭ অক্টোবর, ১৯১৪ - মৃত্যু: ২৮ জুন, ১৯৮৮) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বালাঘাট এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৯ সময়কাল পর্যন্ত ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে দূর্দান্ত প্রতাপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলায় অংশ নিয়েছেন হিউ বার্টলেট। ঐ সময়ে তিনি সারে ও সাসেক্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন।
১৯৩৩ থেকে ১৯৪৯ সময়কাল পর্যন্ত ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন হিউ বার্টলেট। তন্মধ্যে, ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত সারে দলে খেলেন। এরপর ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত আক্রমণাত্মক ঢংয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে-পাছে বামহাতে ব্যাটিং করেছেন তিনি।
শৈশবকাল
ভারতের বালাঘাট এলাকায় জন্মগ্রহণ করলেও নয় বছর বয়সে ইংল্যান্ডে চলে যান। ডালউইচ কলেজে তিন বছর অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তন্মধ্যে, ১৯৩৩ সালে বিদ্যালয় জীবনের শেষবর্ষে থাকাকালে উপর্যুপরী দুইটি দ্বি-শতক রানের ইনিংস খেলেন। মিল হিলের বিপক্ষে ২২৮ রান তুলে ডালউইচের পক্ষে রেকর্ড গড়েন। ২০০৬ সালে নিম্নবয়সী গ্রুপে আর্থার মিচেল অপরাজিত ২৩০ রানের ইনিংস খেলার পূর্ব-পর্যন্ত তার এ রেকর্ড অক্ষত ছিল।[১] পরপর তিন বছর কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্লুধারী হন। ১৯৩৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলায় দলের অধিনায়কত্ব করেন। সারে দলের পক্ষে কয়েকটি খেলায় অংশগ্রহণের পর সাসেক্সের পক্ষে শৌখিন খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে শুরু করেন।
কাউন্টি ক্রিকেট
১৯৩৮ সালটি হিউ বার্টলেটের স্বর্ণালী সময় ছিল। লিডস থেকে ট্রেনে চড়ে মে মাসে ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে খেলতে আসেন। দলীয় অধিনায়ক জ্যাক হোমস তাকে বলেছিলেন যে, ৫০ রানের ইনিংস খেলতে পারলে ক্যাপ প্রদান করবেন। ইয়র্কশায়ারের বিপক্ষে ৫০ রান তোলা মানে অন্য কাউন্টির বিপক্ষে দেড়শত রানের সমমান। প্রথম পাঁচ উইকেট ১০৬ রানে পতন ঘটলে তিনি হ্যারি পার্কসের সাথে জুটি গড়েন। এ দুজন ৭৫ মিনিটে ১২৬ রান সংগ্রহ করেন। নিজে করেন ৯৪ রান। বিল বোস, হেডলি ভেরিটি, ফ্রাঙ্ক স্মেইলস, এমট রবিনসন ও সিরিল টার্নারের বল মোকাবেলান্তে এ রান তুলেন। সাতটি ছক্কার সবকটিই ভেরিটির বিপক্ষে ছিল ও নয়টি চারের মার ছিল ঐ ইনিংসটিতে। ভেরিটির দুই ওভার থেকে ০-৬-২-৬-৬-০ ও ০-০-৬-৬-০-৬ রান তুলেন। স্মেইলসের ওভার থেকে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকানোকালে বাউন্ডারি সীমানায় মরিস লেল্যান্ডের হাতে তালুবন্দী হন।[২]
লর্ডসে প্রথমবারের মতো জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে খেলে ১৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন। মরিস নিকোলসের বলে ছক্কা হাঁকান। নিকোলসের এক ওভারে পাঁচটি চারের মার মারেন। পিটার স্মিথের বল থেকে দুইটি চার ও দুইটি ছক্কা হাঁকান।[৩] ১৬৫ মিনিটের ঐ ইনিংসে ২৪টি চার ও চারটি ছক্কা ছিল। শেষ ৭৫ রান তুলতে তিনি ৪৬ মিনিট সময় ব্যয় করেন। শেষ খেলোয়াড় কেন ফার্নেসের (১০) সাথে ৪৫ মিনিটে ৮২ রান যুক্ত করেন।
২৭ আগস্ট তারিখে অস্ট্রেলিয়া একাদশ হোভে খেলতে আসে। বার্টলেট দুই ঘণ্টায় ১৫৭ রান তুলেন। অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে ৫৭ মিনিটে শতরান স্পর্শ করেন। তন্মধ্যে, প্রথম ১৪ মিনিটে তিনি মাত্র চার রান তুলতে পেরেছিলেন। ৩৩ মিনিটে ৫০, ৫৭ মিনিটে ১০০ ও ১১০ মিনিটে ১৫০ রান তুলেন। ফ্রাঙ্ক ওয়ার্ডের একটি বল পুল মেরে প্যাভিলিয়নের ছাদে ফেলেন। পরবর্তীতে ওয়ার্ডের বল থেকে উপর্যুপরী দুইটি চার ও দুইটি ছক্কায় ২২ রান তুলেন। মৌসুমের দ্রুততম সময়ে এ সেঞ্চুরির কল্যাণে বার্টলেট লরেন্স ট্রফি জয় করেন। সেঞ্চুরিটিতে ছয়টি ছক্কা ও এগারোটি চার ছিল। মধ্যাহ্নভোজনের পূর্বের ওভারে ১০৪ রান তুলেন। চতুর্থ উইকেটে জেমস ল্যাংগ্রিজের সাথে ১২০ মিনিটে ১৯৫ রান তুলেন। বার্টলেটের ১৫২ রানের বিপরীতে ল্যাংগ্রিজের সংগ্রহ ছিল ৩৯। এ ইনিংসে ছয়টি ছক্কা ও আঠারোটি চার ছিল। এবার তিনি সিড বার্নসের হাতে লং অন অঞ্চলে তালুবন্দী হন।
৫৭.৩৩ গড়ে ১৫৪৮ রান তুলে ওয়ালি হ্যামন্ড, জো হার্ডস্টাফ, লেন হাটন ও এডি পেন্টারের পর পঞ্চম স্থানে ছিলেন। এ সফলতার প্রেক্ষিতে ১৯৩৯ সালের উইজডেন সংস্করণে অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি। ১৯৩৮ সালে ৪০টি ছক্কা হাঁকান। কেবলমাত্র আর্থার ওয়েলার্ড তার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এ ইনিংস খেলার পর আর্থার ফাগ বাদ পড়লে ১৯৩৮-৩৯ মৌসুমের শীতকালে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনের জন্যে ইংরেজ দলে হিউ বার্টলেটকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঐ সফরে প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় ৫১.১৪ গড়ে রান তুললেও কোন টেস্টে তাকে খেলানো হয়নি।[৪] এক বছর বাদে জ্যাক হোমসের অধিনায়কত্বে ভারত গমনের জন্যে মনোনীত করা হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ঐ সফরটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়।
১৯৩৯ সালে ইস্টবোর্নে ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে খেলায় ৪৪ মিনিটে ৮৯ রান তুলেন। ডিপ এক্সট্রা কভার অঞ্চলে চার্লস পালমারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। মৌসুমের শেষদিকে হেডলি ভেরিটির দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হবার পূর্বেকার খেলায় নিষ্প্রাণ উইকেটে ৭/৯ বোলিং পরিসংখ্যানে তিনিও শিকারে পরিণত হয়েছিলেন।
বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিউ বার্টলেট রয়্যাল আর্মি সার্ভিস কোরে কমিশন্ডপ্রাপ্ত হন। ১৯৪২ সালে রয়্যাল ওয়েস্ট কেন্ট রেজিম্যান্টে স্থানান্তরিত হন। সেখানে তিনি গ্লিডার পাইলট রেজিম্যান্টে কাজ করেন। পরবর্তীতে বিলি গ্রিফিথের সহকারী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। নরম্যান্ডি, আর্নহেম ও রাইন অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেন।
আগস্ট, ১৯৪৫ সালে ডিস্টিংগুইসড ফ্লাইং ক্রস পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনি মেজর পদবী ধারণ করেন। যুদ্ধের পর টেরিটরিয়াল আর্মিতে থেকে যান ও পরবর্তীতে আরএএসসিতে চলে আসেন।
অবসর
যুদ্ধের পর তিনি আর খেলায় ছন্দ ফিরে পাননি। ১৯৪৬ সালে সাসেক্স অধিনায়ক বিলি গ্রিফিথের সহকারী ছিলেন। এরপর পরবর্তী তিন বছর ১৯৪৭ থেকে ১৯৪৯ সময়কালে অধিনায়কত্ব ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দলকে তলানী থেকে নবম স্থানে নিয়ে আসেন। তবে পরবর্তী দুই বছর ১৬শ ও ১৪শ স্থানে অবস্থান করে সাসেক্স দল।
১৯৩৮, ১৯৩৯ ও ১৯৪৭ সালের সহস্র রানের মাইলফলক স্পর্শের চেয়েও অধিক রান তুলেন। সকল প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ১৬ সেঞ্চুরি সহযোগে ৩১.৯৫ গড়ে ১০,০৯৮ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ১৯৩৫ সালে ফেনার্সে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরূপে নটসদের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৮৩ রানের ইনিংস খেলেন।
১৯৫০ সালের পূর্বে কিছু মতবিরোধ ঘটায় অধিনায়কত্ব ত্যাগ করে স্টকব্রোকিংয়ে চলে যান। এরপর তিনি আবারও ক্লাবের সাথে যুক্ত হন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ সময়কালে ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৮ সালে হোভে সানডে লীগের সাসেক্স-ইয়র্কশায়ারের খেলা উপভোগকালে ভূপতিত হন। অতঃপর ২৮ জুন, ১৯৮৮ তারিখে সাসেক্সের হোভে ৭৪ বছর বয়সে হিউ বার্টলেটের দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
- পাদটীকা
- উৎস
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ