সূরাতুল কাউসার (আরবি: سورة الكوثر) মুসলিমদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১০৮ম সূরা।[১] এই সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৩টি। কুরআনের সংক্ষিপ্ততম সূরা, যা দশটি শব্দ এবং বিয়াল্লিশটি অক্ষর নিয়ে গঠিত এবং পবিত্র কুরআনের ক্রমানুসারে সুরা আল-মাউনের পরে এবং সূরা আল-কাফিরুনের পূর্বে রয়েছে।[২] আল-কাউসার ত্রিশতম পারায় অবস্থিত এবং মুহাম্মদ হাদি মারেফাতের মতে নাজিলের ক্রমানুসারে এর অবস্থান ১৫তমের দিকে যা ইবনে আব্বাসের বর্ণনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। ইবনে ইসহাকের মতে, এটি পূর্ববর্তী "মাক্কী সূরা", যা মক্কায় ইসরা ও মিরাজের কিছু আগে নাজিল হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
সূরাটি নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর আল্লাহর অনুগ্রহের কথা বলে। জান্নাতের অন্যতম নদী বা ঝর্ণা আল-কাওসার,[৩] তার সম্পর্কে আবদুল্লাহ বিন ওমর বলেন: আল্লাহর রসূল বলেছেন: "আল-কাউসার জান্নাতের একটি নদী, তার পাড় সোনার এবং তার গৌরব এলম ও নীলকান্তমণির চেয়ে উত্তম গন্ধ কস্তুরীর চেয়ে ভাল এবং এর পানি বরফের চেয়ে সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি।"[৪]
এই সুরার নাম টি এর প্রথম আয়াত থেকে উদ্ভূত। "কাওসার" শব্দটি কুরআনে একবারই ব্যবহৃত হয়েছে। আল-কাওসার প্রথম আরবি অর্থ "প্রাচুর্য" এর কবিতায় ব্যবহৃত হয়।[৫] রাঘেব ইস্পাহানি তার বই দ্য বুক অব সিংগুলারিটিজে "প্যারাডাইস ক্রিক" শব্দ দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, যে এটি নবী মুহাম্মাদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরের আল্লাহ বিরাট কল্যাণ ও অনুগ্রহ।[৬] মাজমাই আল-বাহরাইন এবং আবু মনসুর 'আব্দ আল-মালিক আল-সা'লাবির ফিকহ-এ তারিহির অর্থ "কল্যাণের প্রভু"।[৭][৮]আল-আরবের ইবনে মাঞ্জুরী কাওসারের অর্থকে "সবকিছুতে ভাল" বলে মনে করেন এবং কাওসারের বিভিন্ন অর্থ ও ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন। আল-কামুস আল-মুহিয়াত ফিরুজাবাদী আল-কাওসার অর্থ "প্রচুর পরিমাণে" এবং "খাঁড়ি" বা "করুণাময় মানুষ" এর মতো অন্যান্য অর্থকে বুঝিয়েছেন।[৯]
যদিও ইবনে আশুর, একজন সুন্নি তাফসিরবিদ, শুধুমাত্র সূরার নামকে "কাওসার" বলে মনে করেন।[১০]
শানে নুযূল
যে ব্যক্তির পুত্রসন্তান মারা যায়, আরবে তাকে নির্বংশ বলা হয়। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পুত্র আল-কাসেম আথবা ইবরাহীম যখন শৈশবেই মারা গেলেন, তখন কাফেররা তাকে নির্বংশ বলে উপহাস করতে লাগল।[১১] ওদের মধ্যে 'আস ইবনে ওয়ায়েলের' নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার সামনে রসূলুল্লাহ্ -এর কোন আলোচনা হলে সে বলতঃ আরে তার কথা বাদ দাও, সে তো কোন চিন্তারই বিষয় নয়। কারণ, সে নির্বংশ। তার মৃত্যু হয়ে গেলে তার নাম উচ্চাচরণ করারও কেউ থাকবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা আল কাওসার অবতীর্ণ হয়।[১২][১৩]
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাউসার (বা প্রভূত কল্যাণ) দান করেছি।
অতএব আপনার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে নামায আদায় কড়ুন এবং কুরবানী করুন।
নিশ্চয় আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই লেজকাটা, নির্বংশ।
বিষয়বস্তুর বিবরণ
সারকথা, পুত্রসন্তান না থাকার কারণে কাফেররা রসূলুল্লাহ্ (সা.) -এর প্রতি দোষরোপ করত আথবা অন্যান্য কারণে তার প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন করত। এরই প্রেক্ষাপটে সূরা কাউসার অবতীর্ণ হয়। এতে দোষরোপের জওয়াব দেয়া হয়েছে যে, শুধু পুত্রসন্তান না থাকার কারণে যারা রসূলুল্লাহ্ (সা.)-কে নির্বংশ বলে, তারা তার প্রকৃত মর্যাদা সম্পর্কে বে-খবর। রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর বংশগত সন্তান-সন্ততিও কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, যদিও তা কন্যা-সন্তানের তরফ থেকে হয়। অনন্তর নবী আধ্যাত্নিক সন্তান অর্থাৎ, উম্মত তো এত অধিকসংখ্যক হবে যে, পূর্ববর্তী সকল নবীর উম্মতের সমষ্টি অপেহ্মাও বেশি হবে। এছাড়া এ সূরায় রসূলুল্লাহ্ (সা.) যে আল্লাহ্ তা'আলার কাছে প্রিয় ও সম্মানিত তাও তৃতীয় আয়াতে বিবৃত হয়েছে।
হাদিস
কুরআনের প্রথম ও সর্বাগ্রে তাফসির মুহাম্মদের হাদিসে পাওয়া যায়। যদিও ইবনে তাইমিয়াহ সহ আলেমরা দাবি করেন যে মুহাম্মদ সমগ্র কুরআন সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ইমাম গাজ্জালি সহ অন্যরা সীমিত পরিমাণ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, এভাবে তিনি কেবল কুরআনের একটি অংশের ব্যাখ্যা করেছেন।[১৪] হাদিস (حديث) আক্ষরিক অর্থে "বক্তৃতা" বা "প্রতিবেদন", এটি ইসনাদ দ্বারা বৈধ মুহাম্মদের কথা কাজ ও মৌন সম্মতির রেকর্ড; সিরাতে রসুল আল্লাহর সাথে এগুলির মধ্যে রয়েছে সুন্নাহ এবং শরিয়ত প্রকাশ। আয়িশার মতে[১৫][১৬] নবী মুহাম্মদের জীবন ছিল কুরআনের ব্যবহারিক বাস্তবায়ন।[১৭][১৮][১৯] তাই, হাদিস নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে প্রাসঙ্গিক সূরার ব্যাখ্যার উচ্চতর হাতিয়ার। এই সূরাটি হাদিসে বিশেষ সম্মানের সাথে উপস্থাপিত হয়েছে, যা এই সম্পর্কিত আখ্যানগুলি দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।
তথ্যসূত্র
↑Al-Hafiz Abu al-Fida Ismail bin Kabir. Interpretation of the Great Qur'an. Dar al-Hadith. পৃ ৪৬৯.খণ্ড ৮
↑"The Book of Singularities"। web.archive.org। ২০১৮-১০-১২। Archived from the original on ২০১৮-১০-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-১৪।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: আসল-ইউআরএলের অবস্থা অজানা (link)
↑Tarihi, Fakhr al-Din b. Muhammad (1996). Hosseini Eshkevari, Ahmad, Editor. Majma'eh al-Bahrain and Mottahed al-Nairin. 3. Tehran: Maktab al-Multawiyyah. p. 469–471
↑Al-Tha'labi, Abu Mansur 'Abd al-Malik (1414). Fiqh al-Laghqa. Beirut: Dar al-Katib al-'Alamiyya, Charters of Muhammad Ali Beyzoun. 5 p.133
↑Firuzabadi, Muhammad b. Ya'qub (1415). Al-Qamus al-Muhit.2. Beirut: Dar al-Katib al-'Alamiyya, Charters of Muhammad 'Ali Al-Baydun. p. 212
↑Ibn Ashoor, Muhammad Tahir (1956). Tahrir and al-Tanwir (Arabic). Tunisia: (manuscript)
↑Grade : Sahih (Al-Albani) صحيح (الألباني) حكم : Reference : Sunan Abi Dawud 1342 In-book reference : Book 5, Hadith 93 English translation : Book 5, Hadith 1337
↑Al-Adab Al-Mufrad » Dealings with people and good character - كتاب English reference : Book 14, Hadith 308 Arabic reference : Book 1, Hadith 308