সুরিন্দর অমরনাথ ভরদ্বাজ (উচ্চারণⓘ; গুজরাটি: સુરિન્દર અમરનાથ; জন্ম: ৩০ ডিসেম্বর, ১৯৪৮) উত্তরপ্রদেশের কানপুর এলাকায় জন্মগ্রহণকারী সাবেক ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ সময়কালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ভারতের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে দিল্লি, গুজরাত ও বারোদা দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম-পেস বোলিং করতেন সুরিন্দর অমরনাথ।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
১৫ বছর বয়সের পূর্বেই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৮ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে লর্ডসে ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি করে ফেলেন। খেলার শেষ দুই বলে দুইটি ছক্কা হাঁকিয়ে ইংল্যান্ডের ছাত্রদের দলের বিপক্ষে ভারতীয় ছাত্রদের দলের সদস্যরূপে এ কৃতিত্ব গড়েন।
১৯৬৩-৬৪ মৌসুম থেকে ১৯৮৫-৮৬ মৌসুম পর্যন্ত সুরিন্দর অমরনাথের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। রঞ্জী ট্রফিতে ৪১.২৪ গড়ে ৪২০৬ রান তুলেন।
ডিসেম্বর, ১৯৬৩ সালে ১৫ বছর পূর্তির পূর্বেই প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে সুরিন্দর অমরনাথের। পুনাতে অনুষ্ঠিত জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিলে অর্থসংগ্রহের ঐ খেলায় তার পিতা লালা অমরনাথ প্রতিপক্ষের দলে ৫২ বছর বয়সে সর্বশেষ খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[১] অভিষেক খেলাতে ৮৬ রান তুলেছিলেন তিনি।[২]
১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে রঞ্জী ট্রফিতে উত্তর পাঞ্জাবের পক্ষে প্রথম খেলতে শুরু করেন। এরপর ১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে দিল্লির বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির সন্ধান পান।[৩]
ইংল্যান্ড গমন
বিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থাতেই ভারতীয় বিদ্যালয়ের সদস্যরূপে ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ড গমন করার সুযোগ পান। ১৮ বছর বয়সে লর্ডসে এমসিসি বিদ্যালয় দলের বিপক্ষে খেলায় অংশ নেন।[৪] খেলায় তিনি ১০৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন। খেলার শেষ দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের বিজয় নিশ্চিত করেন।[৫][৬]
১৯৭১-৭২ মৌসুমে রঞ্জী ট্রফির খেলায় পাঞ্জাবের সদস্যরূপে মধ্যপ্রদেশের বিপক্ষে খেলেন। খেলায় তিনি অপরাজিত দ্বি-শতরানের ইনিংস উপহার দেন।[৭] ১৯৭২-৭৩ মৌসুমে দিল্লির বিপক্ষেও একই ইনিংস খেলেন।[৮]
১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে সফররত শ্রীলঙ্কা দলের বিপক্ষে অনানুষ্ঠানিক টেস্ট খেলায় অংশ নেন। টেস্ট মর্যাদাবিহীন নিম্নমূখী রানের খেলায় তিনি ১১৮ রান তুলেন। ঐ খেলায় ভারত দল ৬৪ রানে জয় পেয়েছিল।[৯] ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে শ্রীলঙ্কা সফর শেষে অল্প কিছুদিন পরই নিউজিল্যান্ড গমনের উদ্দেশ্যে তাকে ভারত দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১০]
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে দশটিমাত্র টেস্ট ও তিনটি ওডিআইয়ে অংশগ্রহণ করেছেন সুরিন্দর অমরনাথ। ২৪ জানুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখে অকল্যান্ডে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ১৪ নভেম্বর, ১৯৭৮ তারিখে করাচীতে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।
১৯৭৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন। ১৯৭৮ সালে সর্বশেষ টেস্ট খেলার পূর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ খেলেন। ১৯৮৫-৮৬ মৌসুম পর্যন্ত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন।
জানুয়ারি, ১৯৭৬ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। অভিষেক টেস্টেই ১২৪ রানের দূর্দান্ত সেঞ্চুরি করেন। এ পর্যায়ে ব্যাটিং কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কারের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ২০৪ রান তুলেছিলেন।[২][১১] নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন টেস্টের সিরিজের প্রত্যেকটিতেই অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে, উদ্বোধনী ইনিংসে সেঞ্চুরির পর বাদ-বাকী পাঁচ ইনিংসের কোনটিতেই ২৭ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেননি।
১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টে অংশ নিয়ে ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেন। চার ইনিংসের মধ্যে দুইটিতেই অর্ধ-শতরান করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে ভারতের মাটিতে ইংল্যান্ড দলের আগমন ঘটে। সফরকারীদের বিপক্ষে তিনি দুইটি অর্ধ-শতরানের ইনিংস খেলেন।[১২] ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। তবে, আঘাতের কারণে সফরের শুরুতেই দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন।[২] অক্টোবর, ১৯৭৮ সালে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে অর্ধ-শতরান করেন। তবে, নভেম্বর, ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অংশগ্রহণ শেষে ১০ টেস্ট পর দলের বাইরে যেতে বাধ্য হন।[১২] এছাড়াও, তিনি তিনটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশ নিয়েছিলেন। সবগুলো খেলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে ছিল। সর্বোচ্চ রান তুলেন ৬২।[১০]
অবসর
জাতীয় দল থেকে উপেক্ষিত হবার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। দিল্লির সদস্যরূপে ১৯৮০-৮১ মৌসুমে বাদ-বাকী ভারতীয় একাদশের বিপক্ষে ইরানি ট্রফিতে খেলেন। খেলায় তিনি অপরাজিত ২৩৫ রান তুলেন। এ সংগ্রহটি ইরানি ট্রফি রেকর্ড হিসেবে ৩৮ বছর ধরে টিকেছিল। পরবর্তীতে ওয়াসিম জাফর রেকর্ডটি নিজের করে নেন।[১৩] ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।[১০]
মূল্যায়ন
ক্রিকইনফো লেখক পরতাব রামচাঁদ মন্তব্য করেছেন যে, সুরিন্দর অমরনাথ শিশুদানব ও ধ্রুপদী বামহাতি ক্রিকেটার।[১০] অমরনাথের খেলোয়াড়ী জীবন সম্পর্ক পরতাব রামচাঁদ আরও মন্তব্য করেন যে, টেস্ট ক্রিকেটে তার সূচনা দূর্দান্ত পর্যায়ের ছিল। তবে, তিনি এ প্রতিশ্রুতিশীলতা ধরে রাখতে পারেননি। সামগ্রিক পরিসংখ্যান হয়তোবা কিছুটা নিম্ন পর্যায়ের ছিল। কিন্তু, দল নির্বাচকমণ্ডলী থেকে উপেক্ষার পাত্রে পরিণত হয়েছেন।[১০] অত্যন্ত আগ্রাসী ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। রামচাঁদ আরও মন্তব্য করেন যে, গাছাড়া মনোভাব নিয়ে খেললেও তা ধরে রাখতে পারলে তার খেলা বেশ মনোমুগ্ধকর ছিল। এ পর্যায়ে তিনি সেরা বোলারদেরকেও ছেড়ে দিতেন না।[১০]
ব্যক্তিগত জীবন
সুরিন্দর অমরনাথের পিতা লালা অমরনাথ ও ভ্রাতা মহিন্দর অমরনাথ ভারতের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশ নিয়েছেন। আরেক ভ্রাতা রাজিন্দর অমরনাথ ১৯৭১ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত হরিয়ানার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছেন।[১৪] সুরিন্দরের পুত্র দিগ্বিজয় অমরনাথ শ্রীলঙ্কায় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছেন।[১৫]
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ