সিঙ্গাপুরের জাতীয় মর্যাদাবাহী নকশা (জাতীয় প্রতীক) একটি যুদ্ধের ঢালে অঙ্কিত নকশা সদৃশ ছাপা যা মূলত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ দেশ সিঙ্গাপুর এর প্রতীক। এটি ১৯৫৯ সালে চালু করা হয়েছিল, যে বছরে এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্য হতে স্বায়ত্বশাসন পায়। একটি কমিটি এটি নির্বাচিত করে, তৎকালীন উপ-প্রধান মন্ত্রী টো'হ শিন চায় এর কাছে প্রেরণ করেন, যিনি সিঙ্গাপুরের জাতীয় পতাকার এবং জাতীয় সঙ্গীত এর জন্য দায়িত্ব পালন করেন।
বিশেষ ছাপ টির কেন্দ্রে একটি লাল যুদ্ধ-ঢাল এবং তাতে একটি চন্দ্রিকা (একটি নতুন চাঁদ যা একটি নবীন,উদীয়মান জাতিকে প্রকাশ করে) এবং পাঁচটি সাদা রং এর তারা (বিভিন্ন জাতীয় ভাবধারা,বহুসংস্কৃতির সম্মিলন প্রকাশ করে), দাঁড়ানো অবস্থায় সিংহ এবং একটি বাঘ (সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া কে প্রকাশ করে); নিচে একটি নীল ফিতাতে স্বর্ণাক্ষরে লিখা রয়েছে মাজুলাহ সিঙ্গাপুরা , মালয় ভাষায় যার অর্থ "অগ্রগামী সিঙ্গাপুর"। যদিও জাতীয় প্রতীক ব্যবহার সরকারের জন্যই সংরক্ষণ করা হয়েছে, প্রতীকটি মুদ্রা এবং জাতীয় সাজসজ্জায় সর্বদা ব্যবহার্য, এবং জাতীয় পাসপোর্ট এর প্রচ্ছদে দেখা যায়।
ইতিহাস
১৯৫৯ সালে সিংগাপুরের স্বায়ত্বশাসন লাভের পর প্রধানমন্ত্রীলি কুয়ান ইউ তৎকালীন প্রচলিত যুক্তরাজ্যের জাতীয় প্রতীকের পরিবর্তে দেশটির জন্য একটি নতুন জাতীয় প্রতীক ও অন্যান্য জাতীয় প্রতীক প্রণয়ন করতে মনঃস্থির করে ।[১] উপপ্রধানমন্ত্রী টো'হ শিন চায় এর নেতৃত্বে জাতীয় প্রতীক প্রণয়ন করতে একটি কমিটি গঠিত হয়, যিনি এই চিহ্নটি ও সিঙ্গাপুরের জাতীয় পতাকা উভয়ের নকশাতে জাতীয় ঐক্যবদ্ধতা, ও বহু সম্প্রদায়ের পরিচিতি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।[২]
টো'হ এর কমিটি দুই মাস সময়ের মধ্যে কোট অফ আর্মস এবং জাতীয় পতাকা প্রণয়ন করেছিলেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী এস. রাজারত্নম কর্তৃক জাতীয় প্রতীক সংশ্লিষ্ট আইন এর একটি নথি সিংগাপুরের সংসদে উত্থাপন করেন। যা নভেম্বর ১৯৫৯ সালে অনুমোদিত হয়। ১৯৫৯ সালের ৩রা ডিসেম্বরে, কোট অফ আর্মস, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা প্রথমবারের মত মানুষের সামনে প্রকাশ করা হয়।[২]
টো'হ ১৯৮৯ সালে জাতীয় প্রতীকের শুরুর কার্যক্রম সম্পর্কে বলেছিলেন, "জাতীয় সংগীত ছাড়াও আমাদেরকে জাতীয় পতাকা ও প্রতীক প্রণয়ন করতে হয়েছিল ", এবং তিনি সিঙ্গাপুরের নতুন জাতীয় পতাকাকে ইউনিয়ন জ্যাক পাশে উড়তে দেখতে চান।[৩]
বৈশিষ্ট্যসমুহ
প্রতীকচিহ্নের পটভূমি লাল রঙের ঢাল টিতে সাদা রঙের পাঁচটি তারকা আর তার উপরিভাগে,সাদা রঙের একটি অর্ধচন্দ্র যা সিঙ্গাপুরের জাতীয় পতাকা এবং বেসামরিক জাহাজে ব্যবহার করা প্রতীক চিহ্ন এর মতই। লাল রং বোঝায় "সাম্যবোধের ও বিশ্ব ভাতৃত্ব বোধ" এবং সাদার মাধ্যমে "চির-বিশুদ্ধতা ও সদ-গুণাবলী" এর উপর জোর দেয়া হয়। অর্ধচন্দ্র টি নতুন উদিত চাঁদ, যা "একটি উদীয়মান বর্ধিষ্ণু জাতি" চিহ্নিত করে। এছাড়া পাঁচটি তারা হলো "গণতন্ত্র, শান্তি, প্রগতি, ন্যায়বিচার, ও সাম্য - এই পাঁচটি আদর্শের তাৎপর্যবাহী"।[৪]
ঢালটির(বর্ম) ধারক একটি সিংহ ও একটি বাঘ : বাঘটি চিহ্নিত করে মালয়েশিয়ার সাথে ঐতিহাসিক ও দৃঢ় সম্পর্ক (যাতে ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫ সাল সিঙ্গাপুর একটি প্রদেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল) যেখানে সিংহটি সিঙ্গাপুর নিজেই।[৫] অংশটির নিচে নীল ফিতা, তে স্বর্ণাক্ষরে লিখা রয়েছে "মাজুলাহ সিঙ্গাপুরা" ।[৫]"মাজুলাহ সিঙ্গাপুরা" অবশ্য এ দেশের জাতীয় সংগীতের নামও বটে; জাতীয় ভাষা, মালয় ভাষায় যার অর্থ "অগ্রগামী সিঙ্গাপুর"।
কার্যকারণ
১৯৮৫ সালে সিঙ্গাপুরের সার্বিক অর্থনীতির কতৃত্বকারী প্রতিষ্ঠান (মনিটরী অথরিটি অফ সিঙ্গাপুর তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের মুদ্রা অবমুক্ত করে। জাতীয় প্রতীকটি কয়েনের পেছনের পিঠে দেখা যায়, যা ঘিরে থাকে চারটি অন্যতম রাষ্ট্রভাষাতে (চীনা,মালয়, তামিল,ইংরেজি) দেশের নাম দ্বারা এবং প্রস্তুতের সাল। ১৯৮৭ সালে একই প্যাটার্নের ডলার কয়েনের মুদ্রা অবমুক্ত করা হয়।[৬]