লি কুয়ান ইউ, জিসিএমজি, সিএইচ, এসপিমেজে (জন্ম: ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২৩ - মৃত্যু: ২৩ মার্চ, ২০১৫) স্ট্রেইট সেটেলম্যান্টসে (ব্রিটিশ আমলের সিঙ্গাপুর) জন্মগ্রহণকারী সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ছিলেন। সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মালয়েশিয়ার কাছ থেকে দেশের স্বাধীনতার পর ১৯৬৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করেন।[১] তিন দশকেরও অধিক সময় রাষ্ট্রপরিচালনার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। তাকে ‘সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতার জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।[২][৩]
প্রারম্ভিক জীবন
হক্কা ও চীনা পেরানাকান বংশোদ্ভূত চতুর্থ প্রজন্মের সিঙ্গাপুরী তিনি।[৪] ১৯৩১ সালে তেলক কুরাউ ইংলিশ স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৩৫ সালে র্যাফল ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। তার সহপাঠী ও একমাত্র বালিকা এবং ভবিষ্যতের সহধর্মীনি কোয়া জিওক চু এখানেই পড়তেন। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে কোয়া ইংরেজি ও অর্থনীতি বিষয়ে তাকে পরাজিত করতে পারতেন।[৫]
কর্মজীবন
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফিৎজউইলিয়াম কলেজ থেকে আইনে প্রথম শ্রেণীতে দ্বৈত তারকা প্রাপ্ত হন ও ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫০ সালে মিডল টেম্পলে ব্যারিস্টার মনোনীত হন ও ১৯৫৯ পর্যন্ত আইনজীবী ছিলেন। ১৯৫৪ সালে পিপলস অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) সহঃ প্রতিষ্ঠাতা হন ও ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দলের মহাসচিব ছিলেন। ধারাবাহিকভাবে দলকে আটটি বিজয়ে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৩ সালে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পূর্ব পর্যন্ত প্রচারণা চালান। মালয়েশিয়া ফেডারেশন গঠিত হলে সিঙ্গাপুরকে মালয়, সাবাহ ও সারাওয়াকের সাথে একীভূত করা হয়। এরফলে জাতিগত বিরোধ ও রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে দুই বছরের ব্যবধানে সিঙ্গাপুরের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
রাজনৈতিক জীবন
সংসদীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে লি ও তার মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা ঔপনিবেশিক আমলে কোনরূপ প্রাকৃতিক সম্পদবিহীন অনুন্নত অঞ্চলটি পরিচালনায় মনোনিবেশ ঘটান।
১৯৬৫ থেকে ১৯৯০ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনার পর পদত্যাগ করেন। তার উত্তরসূরী গোহ চক তং তাকে জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেন। এ পদে তিনি ২০০৪ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তার জ্যেষ্ঠ সন্তান লি সিয়েন লুং দেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হলে ২০১১ সাল পর্যন্ত তাকে মন্ত্রীপরিষদের উপদেষ্টা মনোনীত করেন। এরফলে তিনি ৫৬ বছর ধরে মন্ত্রী পর্যায়ের বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব সফলতার সাথে সমাপণ করেন। এছাড়াও, ২০১৫ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত প্রায় ৬০ বছর তানজং পাগার নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য মনোনীত হয়েছেন।[৬][৭][৮]
মূল্যায়ন
তার নীতির অন্যতম দিক হচ্ছে, অভিবাসিত জনগোষ্ঠী ও পাশ্চাত্য দেশসমূহের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকল্পে ইংরেজিকে প্রধান ভাষা করা। তার অনেকগুলো নীতি অদ্যাবধি লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসিতে শিক্ষা দেয়া হয়। জনবিক্ষোভ, প্রচারমাধ্যম নিয়ন্ত্রণসহ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার কারণে পশ্চিমাদের কাছ থেকে সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু, তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাজনৈতিক স্থিতিশলীলতা আনয়ণ ও আইনের শাসন প্রয়োগ করাকেই এরজন্য দায়ী বলে জানান।[৯][১০]
ব্যক্তিগত জীবন
৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০ তারিখে কোয়া জিওক চুয়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। উভয়েই ইংরেজিকে তাদের মূল ভাষা হিসেবে ব্যবহার করতেন। ১৯৫৫ সালে ৩২ বছর বয়সে চীনা ভাষা শিখতে আরম্ভ করেন।[১১][১২] যুব অবস্থায় জাপানী ভাষা শেখেন ও সিঙ্গাপুরে জাপানী আগ্রাসনকালীন তিনি জাপানী অনুবাদকের কাজ করেন।[৫][১৩] এ দম্পতির দুই পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে।[১৪] জ্যেষ্ঠ পুত্র সিঙ্গাপুর সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার-জেনারেল ছিলেন ও ২০০৪ সালে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হন।
২৩ মার্চ, ২০১৫ তারিখে লুং তার পিতার দেহাবসানের কথা ঘোষণা করেন।[১৫] কিছুদিন জাতীয় শোক পালন করা হয়।[১৬] ২৯ মার্চ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাকে সমাহিত করা হয়। এ সময় বিশ্বনেতারা উপস্থিত ছিলেন।[১৭]
Koh, Buck Song (2011). Brand Singapore: How Nation Branding Built Asia's Leading Global City. Singapore: Marshall Cavendish.
Plate, Tom. Conversations with Lee Kuan Yew: Citizen Singapore: How to Build a Nation (Giants of Asia Series). Marshall Cavendish 2010 (আইএসবিএন৯৮১২৬১৬৭৬৪)
Barr, Michael D. 2000. Lee Kuan Yew: The Beliefs Behind the Man. Washington D.C.: Georgetown University Press.