সারায়নু মসজিদ (তুর্কি: Sarayönü Camii), যেটি সেরাই মসজিদ নামেও পরিচিত। বর্তমানে এটি সাইপ্রাসের উত্তর নিকোসিয়ায় অবস্থিত নিকোসিয়া শহরের দেয়াল ঘেরা একটি মসজিদ। এটি সারায়নু স্কোয়ারের খুব কাছাকাছি অবস্থিত এবং ঐতিহাসিকভাবেই ঐ স্কোয়ারে রয়েছে।
ইতিহাস
ক্যামিল এনলার্ট এর ভাষ্য মতে, ১৪তম এবং ১৫তম শতকে, লুসিগনান এবং ভেনিসীয় সময়কালে, মসজিদের স্থানটি একটি কারমেলাইট গির্জার আবাসস্থল ছিল। এ্রর মধ্যে একটি গম্বুজ ছিল এবং এটি একটি কবরস্থান দ্বারা বেষ্টিত ছিল। এতে জেরুসালেমের রাজা, নরম্যান্ডির একজন ডিউক এবং অন্যান্য অভিজাতদের সমাধিস্থল ছিল। উসমানীয়দের সাইপ্রাস বিজয়ের পর ১৫৭১ সালে সারায়নু স্কোয়ারে একটি সেনা ছাউনি স্থাপন করা হয় এবং সৈন্যদের উপাসনার সুবিধার্থে কারমেলাইট চার্চটিকে একটি মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। রূপান্তরিত ভবনটির বাইরের অংশে যেখানে অভ্যন্তরীণ ধ্রুপদী উসমানীয় স্থাপত্য প্রদর্শন করা হয়েছিল, সেখানে গথিক স্থাপত্য প্রদর্শন করা হয়। তুর্কি ভাষায় এর নামকরণ করা হয় "Orduönü Mescidi", যার অর্থ "সেনা ছাউনির সামনের মসজিদ"। [১] [২]
পরবর্তীতে উসমানীয় শাসনামলে সাবেক কারমেলাইট গির্জার পরিবর্তে একটি নতুন মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এই মসজিদের নির্মাণের তারিখ বিভিন্ন সূত্রমতে বিভিন্নরূপ। কিছু উত্স দাবী করে, মসজিদটি ১৬৯০-১৬৯১ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয় এবং এটি "Kıncı (Kılıç) আলী পাশা নির্মাণ করে। আবার কেউ কেউ বলে, এটি ১৮২০ থেকে ১৮২৪ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয় এবং এটি নির্মাণ করে আলী পাশা। এই মসজিদের ভিতরের অংশে ঐতিহ্যবাহী উসমানীয় স্থাপত্য ছিল। এটির একটি ছাদ ছিল, যা দুটি তীক্ষ্ণ খিলান এবং একটি অসজ্জিত মিনার দ্বারা সমর্থিত ছিল। এ. এল সালভাতর ১৮৭৩ সালে মসজিদটি পরিদর্শন করেন। তিনি লিখেন যে, মসজিদের আঙ্গিনায় গ্রীক শিলালিপিসহ একটি সারকোফ্যাগাস অবস্থিত ছিল এবং এটি নামাজের আগে অযু করার জন্য ব্যবহৃত হত। সারকোফ্যাগাস ১৯৮০ সালে হায়দার পাশা মসজিদের চত্বরে স্থানান্তরিত করা হয়। [১]
১৯০০ সালের জানুয়ারিতে একটি ভূমিকম্পের ফলে মসজিদটি ধ্বংস হয়ে যায়। ব্রিটিশ স্থপতি ফেন্টন অ্যাটকিনসন একই বছরে বর্তমান মসজিদের একটি পরিকল্পনা আঁকেন। তবে, অ্যাটকিনসন আন্দালুসিয়ার স্মৃতিচারণ থেকে অনুপ্রাণিত হন বলে কথিত আছে। বর্তমান মসজিদের নির্মাণকাজ ১৯০১ সালের ২৬ নভেম্বরে শুরু হয় এবং সম্ভবত ১৯০৩ সালে শেষ হয়। [১] [৩]
১৯৬৩-৬৪ সালে রক্তাক্ত ক্রিস্টমাস নামে পরিচিত আন্তঃসাম্প্রদায়িক সংঘাতের পর, তুর্কি সাইপ্রাসীদের আনুষ্ঠানিক বিবাহ অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি ভবনও উপলব্ধ ছিল না। তাই মসজিদটিকে বিবাহ অফিসে রূপান্তরিত করা হয়। [৪] মেঝের কার্পেট সরিয়ে মসজিদে বেঞ্চ বসানো হয় বলে কথিত আছে। আন্তর্জাতিক পত্রিকা জামান সহ তুরস্কের রক্ষণশীল এবং মধ্যপন্থী ইসলামি ব্যাক্তিবর্গের চাপের ফলে ২০০৪ সালে এটিকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়। [৫]
স্থাপত্য
মসজিদটি মুরিশ স্থাপত্য শৈলীতে ডিজাইন করা হয়, [১] তবে কিছু কিছু ভারতীয় ছাপও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মসজিদটির স্থাপনা অবশ্য আয়তাকার এবং এটি ঐতিহ্যবাহী সাইপ্রিয়ট শৈলীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এর সম্মুখভাগে বিদেশী ছাপ লক্ষ্য করা যায়। সম্মুখভাগ মূলত পাঁচটি অংশ নিয়ে গঠিত, যার মধ্যে তীক্ষ্ণ ঘোড়ার নলের আকৃতির খিলান রয়েছে। পূর্বের উসমানীয় মসজিদের মিনারটি পাথরের তৈরি এবং সেটি মসজিদের মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। [৬]
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
সাইপ্রাসের মসজিদ |
---|
মসজিদ | | |
---|
অন্যান্য | |
---|