সাদ বিন জাফর হলেন পাকিস্তানে জন্মগ্রহণকারী কানাডীয় জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও বর্তমান দলের অধিনায়ক। [১] তিনি অলরাউন্ডার হিসেবে পারফর্ম করেন। জাফর একজন বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান এবং তিনি বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিন বোলিং করেন। [২] জাফর একটি টি টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে কোনো রান না দিয়ে নিজের সর্বোচ্চ ওভার (২০ ওভারের ম্যাচে ৪ ওভার) পূরণ করে বিশ্ব রেকর্ড করেছেন এবং টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ৫তম সর্বাধিক মেডেন ওভার বোলিং করেছেন। [৩]
প্রাথমিক জীবন
১০ বছর বয়সে জাফর রাস্তায় বন্ধুদের সাথে টেপ বল ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। পরে ১৪ বছর বয়সে তার স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক জাফরকে দেখেন এবং তাকে জুনিয়র স্কুল ক্রিকেট দলের জন্য বাছাই করে লেদার বল ক্রিকেটের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ২০০৪ সালে তিনি প্রিমিয়ার বিভাগে বিদেশী ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে ক্লাব ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। [৪] ২০১৫ সালের আগস্ট স্কারবোরো ক্রিকেট লিগ প্রিমিয়ার বিভাগে ৫০ ওভারের খেলায় তিনি অপরাজিত 262 রান করেন।[৫]
২০১৮ সালের ৩ জুন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি কানাডা টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী সংস্করণের প্লেয়ার্স ড্রাফটে তিনি ভ্যাঙ্কুভার নাইটসের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। [৭][৮] সাদ ছিলেন দ্বিতীয় কানাডীয় খেলোয়াড় যাকে ড্রাফটে নিখিল দত্ত রাউন্ড ৯-এ নির্বাচিত করা হয়েছিল। [৯] মন্ট্রিল টাইগার্সের বিপক্ষে তার তৃতীয় ম্যাচে তার বোলিং ফিগার ছিল ৪ ওভারে ৩/২১। তিনি শূন্য রানে সিকান্দার রাজা, জর্জ ওয়ার্কার ও নজিবুল্লাহ জাদরানের উইকেট নিতে সক্ষম হন। [১০] টরন্টো ন্যাশনালসের বিপক্ষে তার পঞ্চম ম্যাচে তিনি ৩.৫ ওভারে ২/২২ নেন এবং চ্যাডউইক ওয়ালটনের সাথে ৪৭ রানের জয়ী জুটিতে অপরাজিত ১২ রান করেন। [১১]
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বি ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে ২০১৮ গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি কানাডার ফাইনাল ম্যাচে তিনি ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের উইকেটসহ ২ উইকেট নিয়েছিলেন।এছাড়াও একটি উইকেট মেডেন ওভার ছিল। ভ্যাঙ্কুভার নাইটস তাড়া করতে একটি আদর্শ সূচনা করতে পারেনি। কারণ চ্যাডউইক ওয়ালটন, ক্রিস গেইল এবং বেন ডাঙ্ক তাদের ৩ উইকেটে ২২ রানে ছেড়ে দিয়ে সস্তায় পড়ে যান। কিন্তু জাফর ও রাসি ভ্যান ডের ডুসেন নাইটসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অপরাজিত ১২৬ রানের জুটি গড়ে তোলেন। ধাওয়া ট্র্যাকে ফিরে সাদ একজন আগ্রাসীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং নিয়মিত বাউন্ডারিতে ৩২ বলে ফিফটি আনেন। ৪৮ বলে অপরাজিত ৭৯ রানে তিনি আটটি চার ও তিনটি ছক্কা সংগ্রহ করেন। সাদ তার দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের জন্য ম্যাচের সেরা নির্বাচিত হন।[১২][১৩][১৪]
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর সিপিএল প্লেঅফের জন্য সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টস কর্তৃক বাংলাদেশের অলরাউন্ডার মাহমুদুল্লাহর বদলি খেলোয়াড় হিসেবে তাকে ডাকা হয়।[১৫] ২০১৯ সালের জুনে তিনি ২০১৯-গ্লোবাল টি-২০ কানাডা টুর্নামেন্টে ভ্যাঙ্কুভার নাইটস ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। [১৬] তিনি একটি সফল টুর্নামেন্ট করেন। কারণ তিনি ভ্যাঙ্কুভার নাইটসের পক্ষে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারী হন। [১৭] এডমন্টন রয়্যালসের বিপক্ষে ৪র্থ ম্যাচে তার বোলিং ফিগার ছিল ৪ ওভারে ২/৩৪। যার মধ্যে একটি গোল্ডেন ডাকে শাদাব খানের উইকেট ছিল। [১৮]
ব্রাম্পটন উলভসের বিপক্ষে কোয়ালিফায়ার-1 এ জাফর ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি শেষ ওভারে অসাধারণ বোলিং করেছিলেন, যেখানে তিনি মাত্র ১ রান দিয়ে ৩ উইকেট লাভ করেন। যার মধ্যে রয়েছে গোল্ডেন ডাকে শহীদ আফ্রিদির উইকেট ও অধিনায়ক কলিন মুনরো, যিনি টুর্নামেন্টের দ্রুততম ৫০ রান করেন। তার অসামান্য বোলিং স্পেল তাকে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার লাভ করতে সহায়তা এবং ভ্যাঙ্কুভার নাইটসকে ফাইনালে নিয়ে যায়। [১৯] উইনিপেগ হকসের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে শোয়েব মালিকের সাথে ৫ম উইকেটের জুটিতে ৮৬ রানের এবং আন্দ্রে রাসেলের সাথে ৬ষ্ঠ উইকেটে ৫৩ রানের জুটি গড়েন। উচ্চ রান রেটের কারণে ভ্যাঙ্কুভার হকস দ্বারা নির্ধারিত ১৯২ রানের টার্গেট তাড়া করে সফলতা পায়নি এবং সুপার ওভারে হেরে যায়। [২০]
২০১৯ সালের জুলাইয়ে তিনি ইউরো টিটোয়েন্টি স্ল্যাম ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী সংস্করণে আমস্টারডাম নাইটসের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন।[২১][২২] তবে পরের মাসেই টুর্নামেন্টটি বাতিল হয়ে যায়।[২৩] ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি কাতার T10 লিগে ফ্যালকন হান্টার্সের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। ফ্যালকন হান্টার্স সুইফ্ট গ্যালোপারসকে ৪ উইকেটে হারিয়ে উদ্বোধনী মরসুমে চ্যাম্পিয়ন হয়। মৌসুমের পঞ্চম শীর্ষ উইকেট শিকারী হয়ে জাফর তার দলের মতোই একটি সফল টুর্নামেন্ট করেন। তার ছয়টি ডিসমিসালেই তিনি মোহাম্মদ হাফিজ এবং কামরান আকমলের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। [২৪]
২০২০ সালের জুলাইয়ে ২০২০ ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগের সেন্ট লুসিয়া জুকস স্কোয়াডে তার নাম দেওয়া হয়েছিল।[২৫][২৬] ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ২০২১ মাইনর লিগ ক্রিকেট মৌসুমের জন্য হিউস্টন হারিকেনস স্কোয়াডে তাকে যোগ করা হয়েছিল। পরে তিনি মিশিগান ক্রিকেট স্টারদের সাথে চুক্তি করেন। তিনি ৫.৭ ইকোনমি রেটসহ মিশিগান ক্রিকেটারদের পক্ষে সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার ছিলেন এবং ১২ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিতে সক্ষম হন। [২৭] ২০২০ সালের জুলাই মাসে কাশ্মীর প্রিমিয়ার লিগের প্লেয়ার্স ড্রাফ্টের পরে তিনি মুজাফফরাবাদ টাইগার্সের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। [২৮] মুজাফফরাবাদ টাইগার্স পয়েন্ট টেবিলের নীচের দিকে শেষ হওয়া সত্ত্বেও তিনি জাফর ৫ ম্যাচে ৬.২৬ ইকোনমি রেটসহ মৌসুমের ৪র্থ সবচেয়ে মিতব্যয়ী বোলার হয়ে একটি সফল অবস্থান অর্জন করেন। [২৯]
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার
সাদ ২০০৮ সালের ৪ জুলাই বারমুডার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক করেন। সে খেলায় তিনি সেঞ্চুরির কাছাকাছি থাকা বারমুডার অধিনায়ক আরভিং রোমাইনের উইকেটসহ ৪ উইকেট নিয়ে অভিষেকে চিত্তাকর্ষক খেলা দেখান [৩০]
২০১০ সালের জানুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত ২০১০ আইসিসি বিশ্ব টুয়েন্টি২০ বাছাইপর্বের টুর্নামেন্টের জন্য কানাডার স্কোয়াডে তাকে মনোনীত করা হয়। টুর্নামেন্টের ৯তম ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে তার টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়। [৩১]
২০১৫ সালের জুনে স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড কর্তমক আয়োজিত ২০১৫ আইসিসি ওয়ার্ল্ড টুয়েন্টি২০ বাছাইপর্বের টুর্নামেন্টের জন্য তাকে কানাডার স্কোয়াডে নাম দেওয়া হয়। তিনি ৫ ম্যাচে ৬.২৩ ইকোনমি রেটসহ কানাডার পক্ষে সবচেয়ে কম রান খরচকারী বোলার ছিলেন। [৩২]
অক্টোবর 2019 সালে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে 2019 আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের টুর্নামেন্টের জন্য তাকে কানাডার স্কোয়াডে নাম দেওয়া হয়েছিল। পাঁচ ম্যাচে নয়টি ডিসমিসাল সহ তিনি টুর্নামেন্টে কানাডার হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী ছিলেন। [৪১]
২০২২ সালের জুলাইয়ে নেপালের কানাডা সফরে কানাডার স্কোয়াডের অধিনায়ক হিসাবে তাকে নিযুক্ত করা হয়। সফরে দুটি একদিনের ম্যাচ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টিতে প্রথম ম্যাচটি সম্পূর্ণ ভেস্তে যায়, তবে দ্বিতীয় ম্যাচে কানাডা নেপালের বিপক্ষে ৮৩ রানে জয়লাভ করে। [৪৫] ২০২২ সালের জুলাই মাসে ২০২২ কানাডা ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যালেঞ্জ লিগে টুর্নামেন্টের জন্য কানাডার স্কোয়াডে তার নাম দেওয়া হয়। [৪৬] টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ ম্যাচে তিনি মালয়েশিয়ার বিপক্ষে তিনি লিস্ট এ ক্রিকেটে তার প্রথম পাঁচ উইকেট শিকার করেন। [৪৭] ২০২২ সালের অক্টোবরে তাকে ২০২২ সালের মালয়েশিয়া ক্রিকেট বিশ্বকাপ চ্যালেঞ্জ লিগে টুর্নামেন্টের জন্য তাকে কানাডার স্কোয়াডের অধিনায়ক হিসাবে মনোনীত করা হয়।