শাল্মলী খোলগড়ে (মারাঠি: शाल्मली खोलगडे) একজন ভারতীয় নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী, তিনি মূলত হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রে গান করেন।[১] হিন্দি ছাড়াও তিনি অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় যেমন মারাঠি, বাংলা, তেলুগু এবং তামিল ভাষায়ও গান গেয়েছেন। তার সংগীত জীবনে তিনি দুবার মনোনয়ন পেয়ে একবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন এবং তার গানের শৈলীর জন্য প্রশংসিত হয়েছেন।[১]
সংগীত জীবন
কর্মজীবনের শুরুতে (২০০৪-২০১১)
শাল্মলী ১৬ বছর বয়সে গান পরিবেশন করতে শুরু করেছিলেন এবং ৮ বছর বয়স থেকেই তাঁর মা উমা খোলগড়ের অধীনে গান শেখা শুরু করেন। উমা খোলগড়ে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী ও নাট্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পরে তিনি শুভদা পারদকারের অধীনে তাঁর সংগীত শিক্ষা অব্যাহত রাখেন এবং সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেস কলেজ অফ মিউজিক এপ্রিল সেমিস্টারের জন্য তাকে গ্রহণ করতে রাজি হয়েছিল কিন্তু রেকর্ডিং প্রতিশ্রুতির কারণে সেখানে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। মুম্বাইয়ের ব্লু ফ্রগে শাল্মলী তার প্রিয় এক গায়ক অ্যামি ওয়াইনহাউসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই ঘণ্টা সময় দেন; সেখানে ব্যাপক দর্শক উপস্থিতি ছিল। তিনি মিকি ম্যাকক্লিয়ারির জনপ্রিয় কাজ 'দ্য বারটেন্ডার'-এর একজন কণ্ঠশিল্পী, সেখানে তিনি পুরাতন বলিউডের গানগুলি সংবেদনশীল, পুরাতন স্কুল জাজের স্বাদে পুনর্নির্মাণ করেছেন এবং তা তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম 'বি সেভেনটি' তে প্রদর্শিত হয়েছে। পারফর্মার হিসাবে তাঁর বহুমুখিতা আরও বাড়িয়ে শাল্মলী বোম্বালু নামের একটি সরাইখানায় লাত্ভীয় দলের সাথে একক সংগীত শিল্পী হিসেবে পরিবেশনা করেন, তারা মস্কো, ইয়েরেভান এবং আর্মেনিয়া ভ্রমণ করেছিল। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে মুম্বাইয়ে পেশাদার শিল্পী হিসেবে গান করছেন, এবং আলী জাফরের গানের সহায়তাকারি গায়ক হিসাবে কাজ করেছেন।[২]
চলচ্চিত্রের গানে অভিষেক এবং বিরাট সাফল্য-অর্জন (২০১২-বর্তমান)
শাল্মলী ২০১২ সালে অমিত ত্রিবেদীর সংগীতের অধীনে ইশকজাদে চলচ্চিত্রের "পেরেশান" গানের মাধ্যমে বলিউডের নেপথ্য সঙ্গীতে প্রধান কণ্ঠশিল্পী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন। গানটি সমালোচিত এবং বাণিজ্যিক ভাবে সফল ছিল, ভারত জুড়ে টপচার্টে শীর্ষে ছিল।[৩][৪]পেরেশান গানের জন্য খোলগড়ে শ্রেষ্ঠ মহিলা নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছিলেন।
২০১২ সালে তার অন্য দুটি গান, ককটেল ছবির "দারু দেশী"[৫][৬] এবং আইয়া ছবির "আগা বাই" জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।[৭] ২০১৩ সালে খোলগড়ের প্রথম ট্র্যাক, রেস ২ চলচ্চিত্রের "লাত লাগ গাইয়ে" ব্যপক বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছিল। গানটি বেশ কয়েক সপ্তাহ যাবৎ চার্টের শীর্ষে থাকে এবং নাচের ক্লাবগুলিতে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। খোলগড়ে ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি চলচ্চিত্রের "বালাম পিচকারি" ট্র্যাকটির জন্য আরও সমালোচনা এবং বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছে। গানটির জন্য খোলগড়ে দ্বিতীয়বার শ্রেষ্ঠ মহিলা নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারসহ অনেকগুলি মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তিনি শুদ্ধ দেশী রোম্যান্সের শিরোনাম ট্র্যাক, মেইন তেরা হিরো ছবির "বেশারমি কি হাইট" এবং "শনিবার রাতি", হাম্প্টি শর্মা কি দুলহানি ছবির "ডি সে ড্যান্স" এবং দাওয়াত-ই-ইস্ক ছবির "ছায়ারানা" গেয়েছিলেন, এগুলোর জন্য সমালোচকদের আরও প্রশংসা লাভ করেছিলেন। তিনি স্পোর্ট ড্রামা চলচ্চিত্র সুলতান (২০১৬) এর "বেবি কো বাস পছন্দ হ্যায়" গানের জন্যও প্রশংসা লাভ করেন। আইয়া (২০১২) ছবির "আগা বাই", গোরি তেরে পেয়ার মে (২০১৩) ছবির "চিঙ্গাম ছবক", বোম্বে ভেলভেট (২০১৫) ছবির "মহব্বত বুড়ি বেমারি", ওয়েলকাম টু করাচি (২০১৫) ছবির "শাকিরা", এবং এবিসিডি ২ (২০১৫) ছবির "নাচ মেরি জান" সহ ধারাবাহিক জনপ্রিয় গানে তিনি তাঁর গানের শৈলির জন্য সমালোচকদের উচ্চ প্রশংসা পান, সকল গানই চার্টে শীর্ষে ছিল।
২০১৩ সালের তামিল ছবি নান রাজাবাগা পোগিরেন এ খোলগড়ের প্রথম আঞ্চলিক গান "রাজা রাজা" বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। রোমান্টিক ছবি রাজা রানীতে তাঁর গান "ওডে ওডে" ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে সফল হয়েছিল এবং তাকে দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে একজন দক্ষ গায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এই সাফল্যের ফলে তিনি আরও আঞ্চলিক গানে কন্ঠ দেন এবং তা জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর মধ্যে আছে বাংলা চলচ্চিত্র প্রলয় (২০১৩) এর "কালা কই গেলি", তেলুগু চলচ্চিত্র তুফান (২০১৩) এর "প্রেমিনাচা", বাংলা চলচ্চিত্র হিরোগিরি (২০১৫) এর "মারিয়া", তেলুগু চলচ্চিত্র জিল (২০১৫) এর "জিল জিল জিল", মারাঠি ছবি টাইমপাস ২ (২০১৫) এর "তু মিলা "এবং মারাঠি চলচ্চিত্র হাইওয়ে (২০১৫) এর "ক্যাঙ্গারু" গানসমূহ। এগুলি ছাড়াও তিনি সনি এন্টারটেইনমেন্ট টেলিভিশনের আপাতবাস্তব টেলিভিশন অনুষ্ঠান ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়রের অডিশনের অন্যতম বিচারক ছিলেন।
খোলগড়ে ২০২০ সালে মুক্তি পেতে যাওয়া মারাঠি ছবি জুন এর মাধ্যমে সংগীত সুরকার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবেন।[৮]
অভিনয় জীবন
২০০৯ সালে রঞ্জন সিংয়ের পূর্ব ভারতের কোঙ্কণী-মারাঠি ছবি তু মাজা জীব চলচ্চিত্রে পার্শ্ব অভিনেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করে শাল্মলী চলচ্চিত্রে অভিনয় শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, ছবিটি মহারাষ্ট্র দিবসে মুক্তি পায়। ছবিটি ভারতের বক্স অফিসে একটি মাঝারি সাফল্য পায় এবং মিশ্র সমালোচনা অর্জন করে, তবে তার অভিনয়ের জন্য তিনি প্রশংসিত হন।[৯]