রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন (৬ই জানুয়ারি, ১৯৫৫, কনসেট) একজন ব্রিটিশ লেখক, অভিনেতা এবং কমেডিয়ান। তিনি সুপরিচিত মিস্টার বিন, সিটকম্ ব্লাকাডার এবং নট দ্য নাইন ও'ক্লক নিউস ব্যঙ্গরচনা স্কেচ শোর জন্য। তাকে ব্রিটিশ ৫০ জন কৌতুক অভিনেতাদের এক হিসেবে পর্যবেক্ষকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে,১৯৫৫ সালের ৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের ডুরহাম বিভাগের কনসেটে জন্মগ্রহণ করেন মি. বিন। তার পুরো নাম রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন হলেও ডাক নাম রো। তার বাবার নাম এরিক অ্যাটকিনসন এবং মায়ের নাম এলা মে। তার বাবা এরিক অ্যাটকিনসন একজন কৃষক এবং একটি কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট মি. বিন। ১৯৯০ সালে মেকআপ আর্টিস্ট সুনেত্রা শাস্ত্রীকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের সংসারে রয়েছে দুটি সন্তান- বেন এবং লিলি। অন্যদিকে মি. বিন একজন ব্রিটিশ লেখক এবং কমেডিয়ান। তবে তিনি সুপরিচিত মি. বিন, ব্যঙ্গরচনা এবং স্কেচ শোর জন্য। রুপালি পর্দার মতো বাস্তবেও রোয়ানকে সবাই ভাবেন হাসি-খুশি একজন মানুষ। আসলে ব্যক্তিগত জীবনে রোয়ান খুবই চুপচাপ স্বভাবের। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলতে তার মোটেও ভালো লাগে না। আর কথা কম বলতে পছন্দ করেন বলেই হয়তো মি. বিন চরিত্রে এর প্রতিফলন দেখা যায়। এছাড়া অ্যাটকিনসন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনার জন্য পরিচিত। তিনি যুক্তরাজ্যের ধর্মসংক্রান্ত একটি আইনের ত্রুটি আছে বলে ঘোষণা করেন।শিক্ষাজীবনমানুষ হাসানোর এই কারিগর পড়াশোনায় খুবই ভালো ছিলেন। প্রাথমিক পড়াশোনা করেছেন ডারহ্যামের কোরিস্টার্স স্কুলে। এরপর সেন্ট বিস স্কুলে। ১৯৭৫ সালে তিনি নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং কুইন্স কলেজ থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৬ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক ফেলো ডিগ্রি অর্জন করেন।[২] এবং ২০০৫ সালে একটি সহযোগী কমেডিয়ানের ভোটে প্রথম ৫০ জন ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন।[৩]
জন্ম ও পরিবার
১৯৫৫ সালের ৬ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের নিউক্যাসলে জন্মগ্রহণ করেন এই ইংলিশ অভিনেতা, কমেডিয়ান এবং নাট্যকার। তার পুরো নাম রোয়ান সেবাস্টিয়ান অ্যাটকিনসন। ডাক নাম রো। তার বাবার নাম এরিক অ্যাটকিনসন এবং মায়ের নাম এলা মে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট মি. বিন।
প্রাথমিক জীবন
অ্যাটকিনসন ৬ই জানুয়ারি, ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডের, ডুরহাম বিভাগের, কনসেটে জন্ম গ্রহণ করেন[৪]। তার পিতা এরিক অ্যাটকিনসন একজন কৃষক এবং কোম্পানি পরিচালক ছিল এবং তার মাতা এল্লা মে (née Bainbridge)[৪]। তার বড় দুই ভাই, রডনি অ্যাটকিনসন, একজন ইউরোসেপ্টিক অর্থনীতিবিদ, যে ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্র রাজ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি নেতৃত্ব নির্বাচন অল্পের জন্য হারিয়েছিল, এবং রুপার্ট।[৫][৬]
পড়াশোনা
মি. বিন ডারহামের ক্যাথেড্রাল স্কুল, নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করেন।
অভিনয় জীবন
ছোটবেলা থেকেই রোয়ান অ্যাটকিনসন ছিলেন বেশ হাসিখুশি একজন মানুষ। কিন্তু কথা খুব কম বলতেন। যেটা তার অভিনয়ে এখন দেখা যায়। রোয়ান অ্যাটকিনসন ডারহামের ক্যাথেড্রাল স্কুলে পড়তেন। সেখানে একটি ফিল্ম সোসাইটি ছিল। সেই ফিল্ম সোসাইটির প্রধান বিষয় ছিল হাসির ও শিশুতোষ বিষয়ক বিভিন্ন সিনেমা দেখানো। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত নিজের চোখে টেলিভিশন দেখা হয়ে ওঠেনি রোয়ান অ্যাটকিনসনের। স্কুলে যখন চার্লি চ্যাপলিন সহ আরও যারা কমেডি অভিনেতাদের মুভিগুলো দেখতেন এবং নিজের অজান্তেই তাদের নকল করা শুরু করেন। এরপর এক সময় মঞ্চের বেকস্টেজে কাজ করা শুরু করেন। বেকস্টেজ থেকে চলে আসেন মূল মঞ্চে। মঞ্চে রোয়ান অ্যাটকিনসন এর অভিনয় দেখে তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাকে অভিনয়কে সিরিয়াসভাবে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু পড়াশোনার ক্ষেত্রে রোয়ান অ্যাটকিনসন ছিলেন সিরিয়াস। কেননা পড়াশোনায় তিনি খুব ভালো ছিলেন। তাই পড়াশুনাটাকেই সবসময় প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে অভিনয় করা কিংবা কমেডিয়ান হওয়া কোনোটিই তার লক্ষ্য ছিল না। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন সময়ে রিচার্ড কার্টিসের সাথে পরিচয় হয় মি. বিনের। রিচার্ড কার্টিস ছিলেন একজন নাট্যকার ও গীতিনাট্য অভিনেতা। রিচার্ড সাধারণত কমেডি চরিত্রে অভিনয় করতেন। রিচার্ড কার্টিস ও রোয়ান অ্যাটকিনসন দুজনে মিলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তোলেন ‘অক্সফোর্ড নাট্যশালা’। রিচার্ড কার্টিসের সঙ্গে নাটক লেখাও শুরু করেন। সেইসঙ্গে কমেডি নাটকে অভিনয়। রিচার্ড কার্টিসের সঙ্গে একসাথে রোয়ান অ্যাটকিনসন বিবিসি রেডিও থ্রিতে দ্য অ্যাটকিনসন পিপল নামের একটি স্যাটারিক্যাল ইন্টারভিউধর্মী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতেন।
জনপ্রিয়তা
বর্তমান সময়ে মি. বিন তার অভিনীত মুভি ও টিভি অনুষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে জনপ্রিয় হলেও শুরুর দিকে কমেডি বই লিখে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন মি. বিন। ১৯৭৯ সালে তার লেখা স্কেচ কমেডি শো ‘নট দ্যা নাইট’ ও ‘ক্লোক নিউজ’ নামের বইয়ের মাধ্যমে পাঠক হৃদয়ে বেশ ভালোভাবে জায়গা করে নেন রোয়ান অ্যাটকিনসন। বইটি এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, বেস্ট সেলিং এর তকমাটা নিজের করে নেয়। এখানেই শেষ নয়। এই বইটি ব্রিটিশ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও আন্তর্জাতিক এমি অ্যাওয়ার্ডও জয় করে নেয়। পরবর্তীতে এই বই থেকে টিভি কমিক অনুষ্ঠান তৈরি করা হয় এবং তাতে অভিনয় করেন স্বয়ং রোয়ান অ্যাটকিনসন। প্রথমে লেখনি দিয়ে জয় করেছেন একাধিক পুরস্কার এবার অভিনয় দিয়েও জয় করলেন একাধিক পুরস্কার। এই টিভি কমিক অনুষ্ঠানে অভিনয় করে রোয়ান অ্যাটকিনসন জয় করেন ব্রিটিশ একাডেমি অ্যাওয়ার্ড ও বিবিসি বর্ষসেরা ব্যক্তিত্বের পুরস্কার। এই সিরিজে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৮০ সালের সেরা কমেডিয়ান হিসেবে নির্বাচিত হন রোয়ান অ্যাটকিনসন।
বৈবাহিক জীবন
১৯৯০ সালে রোয়ান অ্যাটকিনসন মেকআপ আর্টিস্ট সুনেত্রা শাস্ত্রির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বেনজামিন এবং লিলি নামে তাদের দুইটি সন্তান রয়েছে।
মি. বিন
১৯৯০ সালে ‘মি. বিন’ নিয়ে টেলিভিশন পর্দায় হাজির হন রোয়ান অ্যাটকিনসন। মি. বিন মূলত ১৪ পর্বের একটি হাস্যরসাত্মক ব্রিটিশ টিভি ধারাবাহিক। আইটিভি নামক একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এর প্রথম পর্বটি প্রচারিত হয় ১৯৯০ সালের প্রথম দিনটিতে। শেষ পর্বটির নাম 'হেয়ার বাই মি. বিন অব লন্ডন'। প্রথমে শুধু টিভি সিরিয়াল থাকলেও মি. বিন নিয়ে সিনেমা এমনকি কার্টুনও নির্মিত হয়েছে এবং মি. বিন প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। টানা বিশ বছর রোয়ান এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুরুর দিকে মি. বিন ছাড়াও এ সময় তিনি দ্যা ব্ল্যাক অ্যাডার এবং ফানি বিজনেসসহ বেশ কয়েকটি তুমুল জনপ্রিয় টিভি সিরিজে নিয়মিত অভিনয় করেন। কিন্তু সবগুলোকে ছাড়িয়ে যায় ‘মি. বিন’। এমনকি নিজের নামটাকেও হারাতে হয় রোয়ান অ্যাটকিনসনকে। তারই তালগোল পাকানো কাণ্ড-কারখানায় ভরপুর এ ব্রিটিশ কমেডি সিরিজের লেখক হলেন রবিন ড্রিসকল এবং রোয়ান অ্যাটকিনসন নিজে। ১৯৯৭ সালে ‘বিন: দ্য আলটিমেট ডিজাস্টার মুভি’ এবং ২০০৭ সালে ‘মিস্টার বিন’স হলিডে’ চলচ্চিত্র দুটি মুক্তি পায়। এছাড়া যুক্তরাজ্যের ‘আইটিভি ওয়ান’ চ্যানেলে ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ‘মিস্টার বিন’ কার্টুন প্রচারিত হয়।
মি. বিন থেকে রোয়ান অ্যাটকিনসনের বিদায়
২০১২ সালের নভেম্বরে রোয়ান অ্যাটকিনসন ডেইলি টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিন চরিত্রে আর হাজির না হওয়ার ঘোষণা দেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন এই চরিত্রটি দিনে দিনে তাকে শিশুতে রূপান্তর করে দিচ্ছে। এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য যে শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয় সেটিও আজকাল আর তিনি পাচ্ছেন না। এছাড়া তার মতে, একজন পঞ্চাশ ঊর্ধ্বের ব্যক্তিকে শিশুসুলভ অভিনয় করাটা একেবারেই বেমানান। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে আমি সিরিয়াসধর্মী চরিত্রগুলোতেই শুধু অভিনয় করব।’ সুতরাং এই চরিত্রে তাকে আর দেখা যাবে না কখনোই।
ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি
অ্যাটকিনসন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির সমালোচনার জন্য পরিচিত। তিনি যুক্তরাজ্যের ধর্ম সংক্রান্ত একটি আইনের ত্রুটি আছে বলে ঘোষণা করেন।
চলচ্চিত্র
পুরস্কার
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ