রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি
১৯৫০ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি |
|
পূর্ণ নাম | রবার্ট জুলিয়ান ক্রিস্টিয়ানি |
---|
জন্ম | (১৯২০-০৭-১৯)১৯ জুলাই ১৯২০ জর্জটাউন, ব্রিটিশ গায়ানা |
---|
মৃত্যু | ৪ জানুয়ারি ২০০৫(2005-01-04) (বয়স ৮৪) টরন্টো, কানাডা |
---|
ডাকনাম | সুগারফুট |
---|
উচ্চতা | ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি (১.৭৮ মিটার) |
---|
ব্যাটিংয়ের ধরন | ডানহাতি |
---|
বোলিংয়ের ধরন | ডানহাতি অফ ব্রেক |
---|
ভূমিকা | ব্যাটসম্যান, উইকেট-রক্ষক |
---|
সম্পর্ক | সিরিল ক্রিস্টিয়ানি (ভ্রাতা), বার্টি ক্রিস্টিয়ানি (ভ্রাতা), হ্যারল্ড ক্রিস্টিয়ানি (ভ্রাতা) |
---|
|
জাতীয় দল | |
---|
টেস্ট অভিষেক (ক্যাপ ৫৩) | ২১ জানুয়ারি ১৯৪৮ বনাম ইংল্যান্ড |
---|
শেষ টেস্ট | ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ বনাম ইংল্যান্ড |
---|
|
---|
|
প্রতিযোগিতা |
টেস্ট |
এফসি |
---|
ম্যাচ সংখ্যা |
২২ |
৮৮ |
রানের সংখ্যা |
৮৯৬ |
৫,১০৩ |
ব্যাটিং গড় |
২৬.৩৫ |
৪০.৫০ |
১০০/৫০ |
১/৪ |
১২/২৭ |
সর্বোচ্চ রান |
১০৭ |
১৮১ |
বল করেছে |
২৩৪ |
১,৬০৯ |
উইকেট |
৩ |
১৮ |
বোলিং গড় |
৩৬.০০ |
৬০.৪৪ |
ইনিংসে ৫ উইকেট |
০ |
০ |
ম্যাচে ১০ উইকেট |
০ |
০ |
সেরা বোলিং |
৩/৫২ |
৩/১১ |
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং |
১৯/২ |
৯৬/১২ | |
|
---|
|
রবার্ট জুলিয়ান ক্রিস্টিয়ানি (ইংরেজি: Robert Christiani; জন্ম: ১৯ জুলাই, ১৯২০ - মৃত্যু: ৪ জানুয়ারি, ২০০৫) তৎকালীন ব্রিটিশ গায়ানার জর্জটাউনে জন্মগ্রহণকারী ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৪৭-৪৮ মৌসুম থেকে ১৯৫৩-৫৪ মৌসুম পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে ব্রিটিশ গায়ানার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ উইকেট-রক্ষক হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে অফ ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন ‘সুগারফুট’ ডাকনামে পরিচিত রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি।
শৈশবকাল
প্রথিতযশা ক্রিকেট পরিবার থেকে রবার্ট ক্রিস্টিয়ানির উদ্ভব ছিল। পরিবারের ছয় ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ হিসেবে ক্রীড়ায় সহজাত দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন। প্রশিক্ষক এবং বিদ্যালয় ও ক্লাবের খেলায় স্কোর সংগ্রাহক মাতার কাছ থেকে উজ্জ্বীবিত হন। রবার্টের চেয়ে প্রায় সাত বছরের বড়ো সিরিল ক্রিস্টিয়ানি ১৯৩৩ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন ও ১৯৩৪-৩৫ মৌসুমে ফিরতি সফরে আসা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চার টেস্টের সবকটিতেই অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৩৮ সালে মাত্র ২৪ বছর বয়সে ম্যালেরিয়ায় সিরিলের প্রাণহানি ঘটে।
কিশোর অবস্থাতেই ১৯৩৯ সালে ইংল্যান্ড গমনের জন্যে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে এ সফরে যেতে পারেননি। যুদ্ধের পর জ্যামাইকার বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ১৮১ রান তুলেন। এরফলে ১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে গাবি অ্যালেনের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড বিপক্ষে খেলার জন্য মনোনীত হন।
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
১৯৩৮-৩৯ মৌসুম থেকে ১৯৫৩-৫৪ মৌসুম পর্যন্ত রবার্ট ক্রিস্টিয়ানির প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ২২ টেস্টে অংশ নিয়ে ২৬.৩৫ গড়ে রান তুলেছেন। তবে, প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ১২ সেঞ্চুরি সহযোগে ৪০.৫০ গড়ে ৫,১০৩ রান সংগ্রহ করে স্বীয় যোগ্যতার সাথে একাত্মতা পোষণ করেছেন।
১৯৪০-এর দশকে বার্বাডোস, ব্রিটিশ গায়ানা ও ত্রিনিদাদের বিপক্ষে শুভেচ্ছা ক্রীড়াগুলোয় স্বল্প কয়েকজন ব্যাটসম্যানের মধ্যে তাকে নিয়মিতভাবে খেলতে দেখা যেতো।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২২ টেস্টে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য হয়েছিল তার। ২১ জানুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখে ব্রিজটাউনে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে রবার্ট ক্রিস্টিয়ানির। একই দলের বিপক্ষে জর্জটাউনে ২৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৪ তারিখে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম টেস্টে অংশগ্রহণ।
১৯৪৭-৪৮ মৌসুমে যুদ্ধের পর নিজ দেশে আসা সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার জন্যে তাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলে রাখা হয়। ঐ টেস্টে ১২জন ক্রিকেটারের একযোগে অভিষেক ঘটেছিল। ক্লাইড ওয়ালকট, রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি, উইলফ্রেড ফার্গুসন, বার্কলি গ্যাসকিন, জন গডার্ড ও প্রায়র জোন্স - এ সাতজন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এবং জিম লেকার, মরিস ট্রেমলেট, ডেনিস ব্রুকস, উইনস্টন প্লেস ও জেরাল্ড স্মিথসন - এ পাঁচজন ইংল্যান্ডের ছিলেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে কেন ক্রান্সটনের বলে এলবিডব্লিউর কবলে পড়ে ৯৯ রানে বিদায় নেন।[১][২] বিশ্রামকক্ষে ফিরে আসার প্রাক্কালে তিনি কাঁদতে কাঁদতে এসেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে মাত্র তিনজন খেলোয়াড়ের একজন হিসেবে অভিষেক টেস্টে মাত্র এক রানের জন্যে সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন।[৩] টেস্টটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল।[৪]
ভারত গমন, ১৯৪৮-৪৯
পরবর্তী তিনটি সফরে একটি টেস্ট বাদে সবকটিতেই অংশ নিয়েছেন। পরের বছর নভেম্বর মাসে ভারত গমন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। কলকাতা টেস্টে নিয়মিত উইকেট-রক্ষক ক্লাইড ওয়ালকট মাঠে আঘাত পেলে তিনি উইকেটের পিছনে দাঁড়ান। দুইটি স্ট্যাম্পিং করেছিলেন তিনি।[৫] তবে, টেস্ট খেলায় একবারই কেবল গ্লাভস পরিহিত অবস্থায় স্ট্যাম্পের পিছনে অবস্থান করেছিলেন।
এ সফরে তিনি তার প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকান। ১৯৪৮-৪৯ মৌসুমে দিল্লি টেস্টে আট নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১০৭ রান তুলেন। এরফলে তার দল ৬৩১ রান তুলে। এ পর্যায়ে চারজন খেলোয়াড়ের একজন হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে তিন অঙ্কের কোটা স্পর্শ করেছিলেন। গায়ানীয়দের মধ্যে তিনিই প্রথম সেঞ্চুরি করেন। এরফলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ইংল্যান্ডের রেকর্ডের সমকক্ষ হয়। এছাড়াও, ২২ টেস্ট খেলে রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি এই একবারই ১০০ রান তুলেছিলেন।[৬]
১৯৫০ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। চার টেস্টের সবকটিতেই স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেন্ সেখানে তিনি ধারাবাহিকভাবে
রান তুলেছিলেন। ১৯৫১-৫২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া গমন করেন। রে লিন্ডওয়াল ও কিথ মিলারের পেস বোলিং আক্রমণ সামাল দিয়ে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দেন। অ্যাডিলেডে বড়দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একমাত্র জয় এনে দেন। পঞ্চম উইকেটে জেরি গোমেজের সাথে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ৯২ রান তুলেন। তখন তার বয়স ৩০ ছিল। এরপর তিনি আর মাত্র ছয় টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। সিডনি টেস্টে ৭৬ রান করেন। বড়দিনে জয়সূচক রান তুলেন। ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমের ইংল্যান্ড সফরের পর অবসর নেন।
খেলার ধরন
রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি প্রকৃতমানের অল-রাউন্ডার ছিলেন। অসাধারণ ফিল্ডার হিসেবেও তার সুনাম ছিল। বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যতম সেরা ও আকর্ষণীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিন্তু, দলটিতে থ্রি-ডব্লিউজ নামে পরিচিত ওয়ালকট, উইকস ও ওরেলের অংশগ্রহণে তার খেলোয়াড়ী জীবন প্রায়শঃই ঢাকা পড়ে যেতো।
৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি উইকেট-রক্ষণে সিদ্ধ হস্তের পরিচয় দিয়েছেন। ক্লাইড ওয়ালকটের বিকল্প উইকেট-রক্ষক হিসেবে দলে থাকতেন। ক্রিস্টিয়ানির অংশগ্রহণকৃত সবগুলো টেস্টের সাথে এভারটন উইকস জড়িত ছিলেন। সচরাচর ৬ কিংবা ৭ নম্বরে মাঝারিসারিতে ব্যাটিংয়ে নামতেন রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি। উইকসসহ অপর দুই ডব্লিউ - ফ্রাঙ্ক ওরেল ও ক্লাইড ওয়ালকটের পর ব্যাটিংয়ে নামতেন।
স্যার এভারটন উইকসের অভিমত, ক্রিস্টিয়ানি দলে বেশ ভালো চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। নিঃস্বার্থপর ও চমৎকার হিসেবে খেললেও তিনি তার প্রতিভার সবটুকু উজাড় করে দিতে পারেননি। তার ন্যায় ব্যাটসম্যানেরা খুব সহজে ৪০-এর কোটায় রান সংগ্রহের অধিকারী হলেও তিনি তা করে যেতে পারেননি।[৭]
ক্রিকেটের পাশাপাশি হকি ও ফুটবল খেলায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তিনি। হকিতে ফরোয়ার্ড এবং ফুটবলে গোলরক্ষকের ভূমিকায় থেকে ব্রিটিশ গায়ানার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।[৮]
অবসর
খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ক্লাইড ওয়ালকটকে ইক্ষু জমি ক্রয় করে ক্রিকেট মাঠ তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। এরফলে রোহন কানহাই, জো সলোমন ও ব্যাসিল বুচারের ন্যায় খেলোয়াড়ের উদ্ভব ঘটে।
খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর কানাডায় অভিবাসিত হন। টরন্টোতে বসবাস করতেন। কানাডার টরন্টো সিটি হলে কাজ করেন। সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান অল-রাউন্ডার চার্লি স্টেয়ার্সের ব্রিটেনে দেহাবসানের সংবাদ শ্রবণের কয়েকদিন পরই রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি’র মৃত্যু হয়। রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি আলঝেইমার’স ডিজিজে ভুগছিলেন।[৫]
জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সিরিল ক্রিস্টিয়ানি ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে টেস্ট খেলায় অংশ নিয়েছেন। অন্যদিকে কনিষ্ঠ ভ্রাতাদ্বয় - বার্টি ক্রিস্টিয়ানি ও হ্যারল্ড ক্রিস্টিয়ানি তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় ব্রিটিশ গায়ানার পক্ষে অংশ নিয়েছেন।[৩] ৪ জানুয়ারি, ২০০৫ তারিখে ৮৫ বছর বয়সে কানাডার টরন্টোতে রবার্ট ক্রিস্টিয়ানি’র দেহাবসান ঘটে।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
বহিঃসংযোগ