ভারতের গভর্নর-জেনারেল (Governor general) (১৮৫৮ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় এবং গভর্নর-জেনারেল অথবা শুধু ভারতের ভাইসরয়) ছিলেন ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনের প্রধান। পরবর্তী কালে স্বাধীন ভারতের ব্রিটিশ রাজার প্রতিনিধি। ১৮৫৮ সালের সিপাহী বিদ্রোহের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নিয়ন্ত্রনে থাকা যাবতিয় এলাকা এবং সম্পদ সরাসরি ব্রিটিশ রাজের অধিনে নিয়ে আসা হয়। ব্রিটিশ রাজার প্রতিনিধি হিসাবে গভর্ণর জেনারেল সমস্ত ব্রিটিশ প্রদেশগুলো শাসন করত। এদের মধ্যে ছিল পাঞ্জাব, বেঙ্গল, বোম্বে, মাদ্রাজ এবং সংযুক্ত প্রদেশ (আগ্রা ও জম্মু, কাশ্মীর)। এর পাশাপাশি অন্যান্য কিছু এলাকা ব্রিটিশদের অধিনে ছিল।[১] যদিও সমগ্র ভারত সরাসরি ব্রিটিশ রাজের শাসনাধীন ছিল না। প্রায় একশতরও বেশি দেশীয় রাজ্য তখন ব্রিটিশ রাজের অধিকার স্বীকার করে নিয়ে তাদের নিজ নিজ রাজ্য শাসন করত। মুঘল সম্রাটদের উত্তরাধিকার হিসাবে তারা সরাসরি ব্রিটেনের রাজ সিংহাসনের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছিল। ১৮৫৮ সালের পর গভর্নর জেনারেলকে রাজপ্রতিনিধি হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হলে এসকল দেশী রাজ্যগুলোর উপরও তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন গভর্নর জেনারেলকে ভাইসরয় হিসাবে ডাকা হতো।
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি দেশের জন্ম হলে ভাইসরয় উপাধির বিলোপ হয়। তবে গভর্নর জেনারেল পদটি ভারতে ১৯৫০ সাল পর্য়ন্ত ও পাকিস্তানে ১৯৫৬ সাল পর্য়ন্ত টিকে ছিল। যতদিন না পর্য়ন্ত উভয় রাষ্ট্র একটি প্রজাতন্ত্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
১৮৫৬ সাল পর্যন্ত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স গভর্নর জেনারেলকে নিয়োগ করত। এরপর ব্রিটিশ সরকারের ভারত বিষয়ক সচিব এ পদের নিয়োগ দিতেন। ১৯৪৭ সালের পর ভারত সরকারের পরামর্শক্রমে এই পদের নিয়োগ প্রদান করা হতো।
ইতিহাস
ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক অংশ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (১৬০০ সালে প্রতিষ্ঠিত) দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, যা নামমাত্র মুঘল সম্রাটের এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছিল। প্রারম্ভিক ব্রিটিশ প্রশাসকরা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির রাষ্ট্রপতি বা গভর্নর ছিলেন। ১৭৭৩ সালে, কোম্পানির দুর্নীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, ব্রিটিশ সরকার ১৭৭৩-রেগুলেটিং আইন পাসের সাথে সাথে ভারতের শাসনের উপর আংশিক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। বাংলার ফোর্ট উইলিয়ামের প্রেসিডেন্সির উপর শাসন করার জন্য একজন গভর্নর-জেনারেল এবং বাংলার সুপ্রিম কাউন্সিল নিযুক্ত করা হয়েছিল। এই আইনে প্রথম গভর্নর জেনারেল ও কাউন্সিলের নাম উল্লেখ করা হয়।
১৮৩৩ সালের চার্টার অ্যাক্ট গভর্নর-জেনারেল এবং ফোর্ট উইলিয়ামের কাউন্সিলকে গভর্নর-জেনারেল এবং কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সাথে প্রতিস্থাপন করে। গভর্নর-জেনারেল নির্বাচন করার ক্ষমতা কোর্ট অফ ডিরেক্টরস দ্বারা বজায় রাখা হয়েছিল, তবে পছন্দটি ইন্ডিয়া বোর্ডের মাধ্যমে সার্বভৌমের অনুমোদনের সাপেক্ষে হয়ে ওঠে।
১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পরে, ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অঞ্চলগুলি সার্বভৌমত্বের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল। ভারত সরকার আইন ১৮৫৮ সার্বভৌমে গভর্নর জেনারেল নিয়োগের ক্ষমতা অর্পণ করে। গভর্নর-জেনারেল, পরিবর্তে, সার্বভৌমদের অনুমোদন সাপেক্ষে, ভারতের সমস্ত লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ করার ক্ষমতা ছিল।
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীনতা অর্জন করে, কিন্তু রিপাবলিকান সংবিধান লেখা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি জাতির উপর গভর্নর জেনারেল নিয়োগ অব্যাহত থাকে। বার্মার মাউন্টব্যাটেন স্বাধীনতার পর কিছু সময়ের জন্য ভারতের গভর্নর-জেনারেল ছিলেন, তবে এই দুই দেশের নেতৃত্বে ছিলেন স্থানীয় গভর্নর জেনারেল। ১৯৫০ সালে ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়; ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান একটি ইসলামী দেশ হয়ে ওঠে।
প্রায় ১৮৮৫ সাল থেকে, ভারতের ভাইসরয়কে একটি ইউনিয়ন জ্যাক ওড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে 'স্টার অফ ইন্ডিয়া' একটি ক্রাউন দ্বারা পরাভূত ছিল। এই পতাকাটি ভাইসরয়ের ব্যক্তিগত পতাকা ছিল না; এটি ভারতের গভর্নর, লেফটেন্যান্ট গভর্নর, চিফ কমিশনার এবং অন্যান্য ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের দ্বারাও ব্যবহৃত হয়েছিল। সমুদ্রে থাকাকালীন, কেবল ভাইসরয় মূলমাস্ট থেকে পতাকাটি ওড়ান, অন্য কর্মকর্তারা এটি পূর্বমাস্ট থেকে উড়িয়ে নিয়ে যান।
১৯৪৭ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত, ভারতের গভর্নর-জেনারেল রাজকীয় ক্রেস্ট (ক্রাউনের উপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি সিংহ) সহ একটি গাঢ় নীল পতাকা ব্যবহার করেছিলেন, যার নীচে সোনার ম্যাজুস্কুলগুলিতে 'ভারত' শব্দটি ছিল। একই নকশা এখনও অন্যান্য অনেক কমনওয়েলথ রাজত্ব গভর্নর-জেনারেল দ্বারা ব্যবহৃত হয়। এই শেষ পতাকাটি ছিল শুধুমাত্র গভর্নর জেনারেলের ব্যক্তিগত পতাকা।
ভারতের ভাইসরয়ের ব্যাজ (১৮৭৬-১৯০৪) সেন্ট এডওয়ার্ডস ক্রাউনের সাথে চিত্রিত
ভাইসরয় এবং গভর্নর-জেনারেলের ব্যাজ (১৯০৪-১৯৪৭) টিউডর ক্রাউনের সাথে চিত্রিত
ভাইসরয় এবং গভর্নর-জেনারেলের স্ট্যান্ডার্ড (১৮৮৫-১৯৪৭)
গভর্নর-জেনারেলের স্ট্যান্ডার্ড (১৯৪৭-৫০)
গভর্নর জেনারেলদের(বড়লাট) তালিকা
বাংলার গভর্নর জেনারেল (রাজ্যপাল)
রবার্ট ক্লাইভ, প্রথম ব্যারন ক্লাইভ অব পলাশি -(১৭৫৭-১৭৬০)
এরপর গভর্নরের পদ গভর্নর জেনারেলের হাতে থাকে। ১৮৫৩ সালের চার্টার আইনানুসারে ১৮৫৪ সালে লেফটেন্যান্ট গভর্নর জেনারেল (উপরাজ্যপাল, ছোটলাট) পদ তৈরি হয়। ১৯১২ সালে দুই বঙ্গ একীভূতকরণ হওয়ার পর গভর্নর জেনারেল ও লেফটেন্যান্ট গভর্নর জেনারেল পদ পুনরায় প্রবর্তন করা হয়।যুক্তবঙ্গে লেফটেন্যান্ট গভর্নর জেনারেল একজন ছিলেন।
Forrest, G.W., CIE, (editor), Selections from The State Papers of the Governors-General of India - Warren Hastings (2 vols), Blackwell's, Oxford, 1910.
Encyclopædia Britannica ("British Empire" and "Viceroy"), London, 1911, 11th edition, Cambridge University Press.
James, Lawrence, Raj: The Making and Unmaking of British India London: Little, Brown & Company, 1997, আইএসবিএন০-৩১৬-৬৪০৭২-৭
Keith, A. B. (editor), Speeches and Documents on Indian Policy, 1750–1921,Oxford University Press, 1922.