বোস্টন টি পার্টি ছিল বোস্টনে সন অব লিবার্টিদের একটি রাজনৈতিক প্রতিবাদ, ১৬ ডিসেম্বর, ১৭৭৩ সালে। অংশগ্রহণকারীরা, কেউ কেউ আদিবাসী মার্কিনীদের ছদ্মবেশে, ১০ই মে, ১৭৭৩ সালের চা আইনের বিরোধিতায়, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক প্রেরিত চায়ের একটি গোটা চালান ধ্বংস করে দেন। তারা জাহাজে উঠে পড়েন এবং চায়ের সিন্দুকগুলো বোস্টন পোতাশ্রয়ে ছুড়ে ফেলেন। ব্রিটিশ সরকার কঠোরভাবে জবাব দেয় এবং এই ঘটনাটি মার্কিন বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে টি পার্টিটি এ ঐতিহাসিক ঘটনায় পরিণত হয়, এবং অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিবাদসমূহ যেমন ১৭৮০ এর পরের টি পার্টি আন্দোলন স্পষ্টভাবে এর দিকে ইঙ্গিত করে।
টি পার্টিটি ছিল চা আইনের, যা ব্রিটিশ সংসদ দ্বারা ১৭৭৩ সালে পাশ হয়, বিরুদ্ধে সমগ্র ব্রিটিশ আমেরিকা জুড়ে এক প্রতিবাদ আন্দোলনের চরম সীমা। উপনিবেশবাসীরা চা আইনের বিরোধিতা করেন কারণ তারা বিশ্বাস করতেন যে তা ইংরেজ হিসেবে তাদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে "প্রতিনিধিত্ব ছাড়া কোন শুল্ক নয়" এর জন্য, যার অর্থ হচ্ছে, শুধুমাত্র তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা শুল্ক আরোপ হওয়া এবং কোন ব্রিটিশ সংসদ দ্বারা নয় যেখানে তাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল না। প্রতিবাদকারীরা সাফল্যের সাথে আরও তিনটি উপনিবেশে শুল্ক আরোপিত চা খালাসে বাধাদান করেন, কিন্তু বোস্টনে, যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত রাজকীয় গভর্নর টমাস হাচিনসন চাপাতাগুলো ব্রিটেনে ফেরত পাঠাতে অস্বীকার করেন।
মার্কিন বিপ্লবের তীব্রতা বৃদ্ধিতে বোস্টন টি পার্টি ছিল এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। সংসদ ১৭৭৪ সালে জবাব দেয় দমনমূলক আইন, বা অসহনীয় আইন দিয়ে, যা, অন্যান্য বিধানের সাথে, ম্যাসাচুসেস্টসের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের সমাপ্তি ঘটায় এবং বোস্টনের বাণিজ্য বন্ধ করে। তেরটি উপনিবেশের উপরনিচের উপনিবেশগুলো দমনমূলক আইনের জবাব দেয় অধিক প্রতিবাদ দিয়ে, এবং প্রথম মহাদেশীয় সভা আহ্বানের মাধ্যমে, যা ব্রিটিশ সম্রাটকে আইনগুলো রদ করতে আবেদন জানায় এবং ঔপনিবেশিক প্রতিরোধের সমন্বয় করে। সঙ্কট বৃদ্ধি পেল, এবং বোস্টনের কাছে ১৭৭৫ সালে মার্কিন বৈপ্লবিক যুদ্ধ শুরু হয়।
পটভূমি
বোস্টন টি পার্টি ১৭৬৫ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মোকাবেলা দুটি সমস্যার থেকে উত্থিত হয়ঃ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আর্থিক সমস্যা; এবং সংসদের কর্তৃত্বের সীমা নিয়ে এক চলমান বিতর্ক, যদি কোনটা থাকে, ব্রিটিশ আমেরিকান উপনিবেশগুলো নিয়ে কোন নির্বাচিত প্রতিনিধি উপবিষ্ট না করে। উত্তর মন্ত্রিদলের এইসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা এক চরম পরীক্ষা সৃষ্টি করে যা অবশেষে বিপ্লবে পরিণত হয়।
১৭৬৭ সালের চা বাণিজ্য
১৭দশ শতাব্দীতে ইউরোপিয়ানদের মধ্যে যখন চায়ের প্রতি এক প্রবৃত্তি গড়ে উঠল, চীন থেকে দ্রব্য আমদানির জন্যে বিরোধী কোম্পানি গড়ে তোলা হল। ইংল্যান্ডে, সংসদ ১৬৯৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে একচ্ছত্র মালিকানা দিল চা আমদানিতে। যখন চা ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠল, সংসদ বিদেশী প্রতিযোগিতা দূর করতে চাইল ১৭২১ সালে এক আইন পাশ করে যা ঔপনিবেশিকদের শুধুমাত্র গ্রেট ব্রিটেন থেকে চা আমদানি করা বাধ্যতা জারি করল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উপনিবেশগুলোতে চা রপ্তানি করত না; আইনগত কারণে, কোম্পানিকে তার চা পাইকারিভাবে ইংল্যান্ডে নিলামে বিক্রি করতে বাধ্য হল। ব্রিটিশ ব্যবসায়ালায়গুলো এই চা কিনত এবং উপনিবেশগুলোতে রপ্তানি করত, যেখানে তারা তা আবার বিক্রি করত বোস্টন, নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, এবং চার্লসটনের ব্যবসায়ীদের কাছে।
১৭৬৭ সাল পর্যন্ত, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রায় ২৫% সমমূল্যের কর প্রদান করত গ্রেট ব্রিটেনে তাদের আমদানিকৃত চায়ের উপর। সংসদ ব্রিটেনে ভোগের জন্য বিক্রিত চায়ের উপর আরও অতিরিক্ত কর বসাল। এই চড়া করগুলো, ডাচ প্রজাতন্ত্রে আমদানিকৃত চায়ের উপর ওলন্দাজ সরকার দ্বারা কোন করারোপ ছিল না এই ঘটনার সাথে একত্রিত হয়ে, এই বুঝাল যে ব্রিটেনের অধিবাসীরা এবং ব্রিটিশ আমেরিকানরা অনেক সস্তা মূল্যে চোরাই ওলন্দাজ চা কিনতে পারত। অবৈধ চায়ের সবচেয়ে বড় বাজার ছিল ইংল্যান্ড- ১৭৬০ সাল নাগাদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতি বছর ৪০০,০০০ পাউন্ড লোকসান দিচ্ছিল গ্রেট ব্রিটেনের চোরাচালানকারীদের কাছে- কিন্তু ওলন্দাজ চা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্রিটিশ আমেরিকায়ও চোরাচালান হত।
১৭৬৭ সালে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ওলন্দাজ চায়ের সাথে প্রতিযোগিতায় সাহায্য করার জন্যে, সংসদ ইনডেমনিটি আইন পাশ করে, যা গ্রেট ব্রিটেনে ভোগ করা চায়ের কর কমায়, এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে যেসব চা উপনিবেশগুলোতে পুনরায় রপ্তানি করা হয় তাতে ২৫% কর প্রত্যর্পণ করে। সরকারের রাজস্বের এই লোকসানের ভারসাম্য করার জন্যে, সংসদ ১৭৬৭ সালের টাউনশেড কর আইনও পাশ করে, যা নতুন কর আরোপ করে, চায়ের উপর একটি সহ, উপনিবেশগুলোতে। চোরাচালানের সমস্যা সমাধান করার বদলে, যাইহোক, টাউনশেন্ড করগুলো উপনিবেশগুলোতে সংসদের অধিকার নিয়ে এক বিতর্কের জন্ম দেয়।
টাউনশেন্ড শুল্ক সঙ্কট
গ্রেট ব্রিটেন এবং উপনিবেশগুলোর মধ্যে বিবাদ উত্থান হয় ১৭৬০ সালে যখন সংসদ চাইল, প্রথমবারের মত, উপনিবেশগুলোতে সরাসরি এক কর আরোপ করতে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে। কিছু ঔপনিবেশিক, উপনিবেশগুলোতে হুইগ নামে পরিচিত, নতুন কর কার্যক্রমের বিরোধিতা করলেন, এই যুক্তি দেখিয়ে যে তা ব্রিটিশ সংবিধানের উল্লঙঘন। ব্রিটেনবাসীরা এবং ব্রিটিশ আমেরিকানরা একমত হলেন যে, সংবিধান অনুযায়ী, ব্রিটিশ প্রজারা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সম্মতি ছাড়া করারোপিত হতে পারে না। গ্রেট ব্রিটেনে, এর অর্থ ছিল যে কর শুধুমাত্র সংসদ দ্বারা আরোপ হতে। উপনিবেশবাসীরা, যাইহোক, সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত করেনি, এবং তাই মার্কিন হুইগরা যুক্তি দেখালেন যে উপনিবেশগুলো এই দল দ্বারা করারোপিত হতে পারেনা। হুইগদের মতে, উপনিবেশবাসীরা শুধুমাত্র তাদের নিজস্ব ঔপনিবেশিক পরিষদ দ্বারা করারোপিত হতে পারে। ঔপনিবেশিক বিরোধিতাগুলোর ফল হয় ১৭৬৬ সালে স্ট্যাম্প আইনের রদ, কিন্তু ১৭৬৬ সালের ঘোষণামূলক আইনে, সংসদ দৃঢ়ভাবে বলতে লাগল যে তাদের উপনিবেশগুলোতে "যে কোন ক্ষেত্রে যে কোন কিছুতে" আইন প্রয়োগ করার অধিকার আছে।
যখন ১৭৬৭ সালের টাউনশেন্ড কর আইনে নতুন কর আরোপ করা হল, হুইগ ঔপনিবেশিকরা আবার প্রতিবাদ এবং বর্জন দ্বারা জবাব দিল। ব্যবসায়ীরা এক অ-আমদানি চুক্তি গঠন করলেন, এবং অনেক ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ চা পান করা থেকে বিরত থাকার শপথ নিলেন, নিউ ইংল্যান্ডে বিকল্প প্রচার করার সাথে, যেমন ল্যাব্রাডর চা। চোরাচালান দ্রুত গতিতে চলতে থাকল, বিশেষ করে নিউ ইয়র্ক এবং ফিলাডেলফিয়াতে, যেখানে চোরাচালান সবসময় বোস্টনের চেয়ে বেশি ছিল। কর বসান চা বোস্টনে আমদানি হতেই লাগল, যাইহোক, বিশেষ করে রিচা্র্ড ক্লার্ক এবং ম্যাসাচুসেস্টস গভর্নর টমাস হাচিনসনের পুত্রদের দ্বারা, ম্যসাচুসেস্টস হুইগরা তাদের অ-আমদানির চুক্তি মানতে বাধ্য করার আগ পর্যন্ত।
[২]
সংসদ অবশেষে প্রতিবাদের জবাব দেয় ১৭৭০ সালে টাউনশেন্ড কর রদ করে, চা শুল্ক ব্যতীত, যা প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ "মার্কিনদের করারোপ করার অধিকার" বলে দাবি করতে থাকেন। করের এই আংশিক রদ ১৭৭০-এর অক্টোবরের মধ্যে অ-আমদানি আন্দোলনের এক সমাপ্তি আনতে যথেষ্ট ছিল। ১৭৭১ থেকে ১৭৭৩ পর্যন্ত, ব্রিটিশ চা আরেকবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উপনিবেশগুলোতে আমদানি হল, প্রতি পাউন্ডে ব্যবসায়ীদের তিন পেন্স কর দেওয়ার সাথে। বোস্টন ছিল বৈধ চায়ের সবচেয়ে বড় ঔপনিবেশিক আমদানিকারক; নিউ ইয়র্ক এবং ফিলাডেলফিয়াতে তখনও চোরাচালানকারীরা রাজত্ব করতে লাগল।
১৭৭৩ সালের চা আইন
১৭৬৭ সালের ক্ষতিপূরণ আইন, যা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে উপনিবেশগুলোতে পুনরায় রপ্তানি করা চায়ের উপর শুল্কের অর্থ ফেরত দেয়, উপনিবেশগুলোতে ১৭৬৭ সালে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। সংসদ ১৭৭২ সালে এক নতুন আইন পাশ করে, যা এই অর্থ ফেরতে্র পরিমাণ কমিয়ে দেয়, কার্যকরভাবে ব্রিটেনে আমদানিকৃত চায়ের উপর ১০% শুল্ক অব্যহত রেখে।[৩] আইনটি ১৭৬৭ সালে ব্রিটেনে যেসব চা কর রদ করা হয়েছিল তা আবার আবার চালু করে, তার জায়গায় উপনিবেশগুলোতে টাউনশেন্ড শুল্কের তিন পেন্স রেখে যায়। এই নতুন করের বোঝা ব্রিটিশ চায়ের মুল্য বাড়িয়ে দেওয়ার সাথে, বিক্রি দ্রুত নেমে আসে। কোম্পানি ব্রিটেনে চা আমদানি অব্যহত রাখল, অবশ্যই, কেউ কিনবে না এমন উদ্বৃত্ত দ্রব্যের বিশাল স্তূপ জমিয়ে।[৪] এইসব এবং অন্যান্য কারণে, ১৭৭২ সালের শেষের দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, ব্রিটেনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্মপূর্ণগুলোর একটি, এক ভয়াবহ আর্থিক সঙ্কটে ছিল।[৫]
সঙ্কট সমাধানের একটি সুস্পষ্ট সমাধান ছিল কিছু কর বাতিল করা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে তাউনশেন্ড শুল্ক রদ করতে চেয়েছিল, কিন্তু নর্থ মন্ত্রিত্ব অনিচ্ছুক ছিল কারণ এ ধরনের পদক্ষেপ উপনিবেশগুলোতে সংসদের কর আরোপ করার অধিকার আছে সেই অবস্থান থেকে পিছিয়ে যাওয়া হিসেবে দেখা হতে পারে।[৬] আরও গুরুত্মপূর্ণভাবে, টাউনশেন্ড শুল্ক থেকে প্রাপ্ত অর্থ কিছু ঔপনিবেশিক গভর্নর এবং বিচারকদের বেতন দেওয়ার কাজে ব্যয় হত।[৭] এটা আসলে টাউনশেন্ড শুল্কের উদ্দেশ্য ছিলঃ পূর্বে এইসব কর্মকর্তা ঔপনিবেশিক পরিষদের মাধ্যমে বেতন পেত, কিন্তু সংসদ এখন তাদের বেতন দেয় তাদের উপনিবেশবাসিদের কাছে দায়বদ্ধ থাকার বদলে ব্রিটিশ সরকারের উপর নির্ভরশীল থাকার জন্য।[৮]
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গুদামগুলোতে চায়ের স্তূপ কমানোর আরেকটি সম্ভাবনা ছিল তা ইউরোপে সস্তায় বিক্রি করা। এই সম্ভাব্যতা তদন্ত করা হল, কিন্তু এটা নির্ধারণ করা হল যে চা কেবল পুনরায় গ্রেট ব্রিটেনে চোরাচালান করা হবে, যেখানে তা করারোপিত দ্রব্যের চেয়ে সস্তায় বিক্রি হবে।[৯] ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উদ্বৃত্ত চায়ের সেরা বাজার ছিল, এটাই মনে হয়েছিল, মার্কিন উপনিবেশগুলো, যদি তা চোরাই ওলন্দাজ চায়ের চেয়ে সস্তা করার কোন উপায় বের করা যায়।[১০]
নর্থ মন্ত্রীবর্গের সমাধান ছিল চা আইন, যা রাজা জর্জের অনুমোদন পায় ১০ই মে, ১৭৭৩ সালে।[১১] এই আইন ব্রিটেনে চা আমদানিতে শুল্কের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দেয়া পুনরায় শুরু করে, এবং কোম্পানিকে অনুমতিও দেয়, প্রথমবারের মত, উপনিবেশগুলোতে নিজেদের মত করে চা রপ্তানি করার। এটা কোম্পানিকে যেসব দালাল লন্ডনে পাইকারি নিলামে চা কেনে তাদের অপসারণ করার সুযোগ দেবে।[28়়] দালালের কাছে বিক্রি করার বদলে, কোম্পানি এখন ঔপনিবেশিক ব্যবসায়ীদের নিয়োগ দিল চালানে চা গ্রহণ করার জন্য; চালানকারিরা সেই চা বিক্রি করবে কমিশনের বদলে। ১৭৭৩ সালের জুলাই মাসে, নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, বোস্টন, এবং চার্লসটনে চা চালানকারি নিয়োগ দেওয়া হয়।[১২]
চা আইন উপনিবেশগুলোতে আমদানিকৃত চায়ের ওপর টাউনশেন্ড শুল্কের তিন পেন্স অব্যাহত রাখে। সংসদের কিছু সদস্য এই কর রদ করতে চেয়েছিলেন, এই যুক্তি দেখিয়ে যে আরেকটি ঔপনিবেশিক বিতর্ক প্ররোচিত করার কোন অর্থ নেই। রাজস্ব বিভাগের প্রাক্তন উপদেষ্টা উইলিয়াম ডাউডেসওয়েল, উদাহরণস্বরূপ, লর্ড নর্থকে সতর্ক করেন যে মার্কিনীরা যদি টাউনশেন্ড শুল্ক অব্যহত থাকে তাহলে চা গ্রহণ করবে না।[১৩] কিনু নর্থ টাউনশেন্ড শুল্ক থেকে প্রাপ্ত অর্থ ত্যাগ করতে ইচ্ছুক ছিলেন না, প্রথমত কারণ তা ঔপনিবেশিক কর্মকর্তাদের বেতন প্রদানে ব্যবহৃত হত; মার্কিনীদের উপর করারোপ করার অধিকার বজায় রাখা ছিল দ্বিতীয় কারণ।[১৪] ঐতিহাসিক বেঞ্জামিন লেবারি-এর মতে, "একরোখা লর্ড নর্থ না জেনেই প্রাচীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরিণতি ত্বরান্বিত করেন।"[১৫]
যদিও টাউনশেন্ড শুল্ক কার্যকর ছিল, চা আইন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সুযোগ দেয় আগের চেয়ে অনেক সস্তায় চা বিক্রি করার, চোরাচালানকারীদের প্রস্তাবিত মূল্যের চেয়ে কমে, কিন্তু সাথে সাথে ঔপনিবেশিক চা আমদানিকারকদের চেয়ে কম দামে, যারা কর দিতেন এবং কোন অর্থ ফেরত পেতেন না। ১৭৭২ সালে, বৈধভাবে আমদানিকৃত বোহি, চায়ের সবচেয়ে প্রচলিত প্রভেদ, প্রতি পাউন্ডে ৩ শিলিং (৩এস) মুল্যে বিক্রি হত।[১৬] চা আইনের পর, ঔপনিবেশিক চালানকারিরা তা প্রতি পাউন্ডে ২ শিলিং (২এস) করে বিক্রি করতে সক্ষম হবে, চোরাচালানকারীদের ২ শিলিং এবং ১ পেনি (২এস ১ডি) মূল্যের চেয়ে ঠিক কম মুল্যে।[১৭] টাউনশেন্ড শুল্কের প্রদেয় অঙ্ক রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল তা উপলব্ধি করে, কোম্পানি করটি হয় উপনিবেশগুলোতে একবার চা খালাসের পর লন্ডনে, নাহলে চা বিক্রির পর চালানকারিদের চুপচাপ শুল্কগুলো প্রদান করার মাধ্যমে আড়াল করার আশা করল। ঔপনিবেশিকদের কাছ থেকে কর আড়াল করার এই প্রচেষ্টা অসফল ছিল।[১৮]
চা আইনের বিরোধিতা
১৭৭৩ সালের সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চা বহনকারী সাতটি জাহাজ উপনিবেশগুলোতে পাঠানো হয়ঃ চারটির গন্তব্য ছিল বোস্টন, এবং একটি করে নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, এবং চার্লসটন।[১৯] জাহাজগুলোতে প্রায় ৬০০,০০০ পাউন্ড চা সংবলিত ২,০০০ এর বেশি সিন্দুক ছিল।[২০] চা আইনের বিশদ সম্পর্কে মার্কিনীরা জাহাজগুলো যখন পথে ছিল তখন জানতে পারে, এবং বিরোধিতা চরম হতে থাকে।[২১] হুইগেরা, নিজেদের মাঝেমাঝে সন অব লিবার্টি বলে অভিহিত করত, সচেতনতা সৃষ্টির এক প্রচারণা শুরু করে এবং চালানকারীদের পদত্যাগ করতে প্রণোদিত বা বাধ্য করে, ১৭৬৫ সালের ডাকটিকিট আইন সঙ্কটে ঠিক যেভাবে ডাকটিকিট পরিবেশকদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।[২২]
বোস্টন টি পার্টির সাথে যেই বিক্ষোভ আন্দোলন গড়ে ওঠে তা চড়া কর নিয়ে বিতর্কের ব্যাপারে ছিল না। ১৭৭৩ সালের চা আইনের পর বৈধভাবে আমদানিকৃত চায়ের মূল্য আসলে কমে যায়। বিক্ষোভকারীরা তার বদলে অন্যসব সমস্যা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। পরিচিত "প্রতিনিধি ছাড়া কোন করারোপ নয়" যুক্তিটি, উপনিবেশগুলোতে করারোপ করায় সংসদের অধিকারের সীমার প্রশ্নের সাথে, লক্ষণীয় থাকল।[২৩] স্যামুয়েল আ্যডামস ব্রিটিশ চায়ের একাধিপত্যকে "একটি করের সমতুল্য" বলে গণ্য করতেন এবং এতে করারোপ হোক আর না হোক একই প্রতিনিধিত্বের সমস্যা উত্থান করা।[২৪] কেউকেউ কর কার্যক্রমের উদ্দেশ্যকে- ঔপনিবেশিক প্রভাবমুক্ত নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা তৈরিতে- ঔপনিবেশিক অধিকারের এক বিপজ্জনক লঙ্ঘন বলে মনে করতেন।[২৫] এটা বিশেষ করে সত্য ছিল ম্যাসাচুসেস্টসের বেলায়, একমাত্র উপনিবেশ যেখানে টাউনশেন্ড কার্যক্রম পুরোপুরিভাবে আরোপিত ছিল।[২৬]
ঔপনিবেশিক ব্যবসায়ীরা, যাদের কেউ কেউ চোরাচালানকারী, বিক্ষোভে এক তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কারণ চা আইন বৈধভাবে আমদানিকৃত চায়ের মূল্য কমায়, তা ওলন্দাজ চা চোরাচালানকারীদের ব্যবসা ঝুঁকির সম্মুখীন করে।[২৭] বৈধ চা আমদানিকারকরা যারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা চালানকারী হিসেবে উদ্ধৃত হয়নি তারাও চা আইনের দ্বারা আর্থিক ধ্বংসের ঝুঁকিতে পড়ে।[45] ব্যবসায়ীদের আরেকটি প্রধান চিন্তা ছিল যে চা আইন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে চা বাণিজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য দেবে, এবং এটা আশঙ্কা করা হয় যে এই সরকার-সৃষ্ট একাধিপত্য হয়তবা ভবিষ্যতে অন্যান্য দ্রব্যের অন্তর্ভুক্তকরণে প্রসারিত হবে।[২৮]
বোস্টনের দক্ষিণে, বিক্ষোভকারীরা সফলভাবে চা চালানকারীদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করে। চার্লসটনে, চালানকারীরা ডিসেম্বরের গোড়ার দিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়, এবং দাবি না করা চা শুল্ক কর্মকর্তা দ্বারা জব্দ হয়।[২৯] ফিলাডেলফিয়ায় গণবিক্ষোভ সভা হয়। বেঞ্জামিন রাশ তার স্বদেশবাসীকে অনুরোধ করেন চায়ের খালাসের বিরোধিতা করতে, কারণ চালানটি "দাসত্বের বীজ" বহন করে।[৩০] ডিসেম্বরের গোঁড়ার মধ্যে, ফিলাডেলফিয়ার চালানকারীরা পদত্যাগ করে এবং চায়ের জাহাজ ইংল্যান্ডে তার চালান নিয়ে ফেরত যায় জাহাজের ক্যাপ্টেনের সাথে মোকাবেলার পর।[৩১] নিউইয়র্কের দিকে রওনা হওয়া জাহাজটির খারাপ আবহাওয়ার জন্যে বিলম্বিত হয়; যেই সময়ে তা পৌঁছে, চালানকারীরা পদত্যাগ করে, এবং জাহাজটি চা নিয়ে ইংল্যান্ডে ফেরত আসে।[৩২]
বোস্টনে বর্জন
ম্যাসাচুসেস্টস ছাড়া প্রতিটি উপনিবেশে, বিক্ষোভকারীরা চা চালানকারিদের পদত্যাগ করতে বা চা ইংল্যান্ডে ফেরত পাথাতে বাধ্য করতে সক্ষম হয়।[৩৩] বোস্টনে, অবশ্য, গভর্নর হাচিনসন তার অবস্থান ধরে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন। তিনি চা চালানকারিদের প্রণোদিত করলেন, যাদের দুইজন তার পুত্র ছিল, পিছু না হঠতে।[৩৪]
যখন জাহাজ ডার্টমাথ বোস্টন পোতাশ্রয়ে নভেম্বর মাসের শেষে পৌঁছে, হুইগ নেতা স্যামুয়ল আ্যডামস ১৭৭৩ সালের নভেম্বর মাসের ২৯ তারিখে ফ্যানিউল হলে এক গণসভা আহ্বান করেন। হাজার হাজার লোক উপস্থিত হয়, এত সংখ্যক যে সভাটি ওল্ড সাউথ মিটিং হলে সরিয়ে নেওয়া হয়।[৩৫] ব্রিটিশ আইনানুযায়ী ডার্টমাথকে মাল খালাস এবং শুল্ক প্রদান করতে হবে বিশদিনের মধ্যে নাহলে শুল্ক কর্মকর্তারা চালান জব্দ করে নেবে।[৩৬] গণসভা একটি সংকল্প পাশ করল, আ্যডামসের দ্বারা প্রস্তাবিত এবং ফিলাডেলফিয়ায় প্রচারিত সংকল্পের মত একই রকম, ডার্টমাথের ক্যাপ্টেনকে আমদানি শুল্ক প্রদান না করে জাহাজটি ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করে। এরমধ্যে, সভা পঁচিশজনকে পাঠায় জাহাজ পাহারা দিতে এবং চা- লন্ডনের ডেভিসন, নিউম্যান এবং কো. বেশসংখ্যক সিন্দুকসহ- খালাস হতে বাঁধা দেওয়ার জন্য।[৩৭]
গভর্নর হাচিনসন ডার্টমাথকে শুল্ক প্রদান না করে ত্যাগ করার আনুমতি দানে অস্বীকৃতি জানান। আরও দুটি চায়ের জাহাজ, দ্যা এলিনর এবং দ্যা বিভার, বোস্টন পোতাশ্রয়ে পৌঁছায় (বোস্টনের দিকে রওনা দেওয়া আরেকটি জাহাজ ছিল, দ্যা উইলিয়াম, কিন্তু তা এক ঝড়ের মুখে পড়ে এবং তার গন্তব্যে পৌঁছানর আগেই ধ্বংস হয়ে যায়[৩৮]). ডিসেম্বর- ডার্টমাথের সময়সীমার শেষ দিন- প্রায় ৭,০০০ লোক ওল্ড সাউথ মিটিং হাউসের কাছে জড় হয়।[৩৯] গভর্নর হাচিনসন আবার জাহাজ ত্যাগ করার অনুমতি দেননি এই সংবাদ শুনে, আ্যডামস ঘোষণা দেন যে "দেশকে বাঁচানর জন্যে এই সভা আর কিছু করতে পারবে না।" এক জনপ্রিয় গল্প অনুসারে, আ্যডামসের বক্তব্য "টি পার্টি" শুরু হওয়ার পূর্বপরিকল্পিত এক সঙ্কেত ছিল। তবে, এই দাবিটি ঘটনাটির প্রায় এক শতাব্দী আগে ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হয়নি, তার প্রপৌত্র দ্বারা লিখিত আ্যডামসের এক জীবনীতে, যিনি প্রমাণটির ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন।[৪০] প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনানুযায়ী, জনগণ আ্যডামসের তথাকথিত "সঙ্কেতের" দশ বা পনের মিনিটের আগে সভাত্যাগ করেনি, এবং আ্যডামস আসলে জনগণকে চলে যেতে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কারণ তখনও সভাটি শেষ হয়নি।[৪১]
চায়ের ধ্বংসকরণ
যখন স্যামুয়েল আ্যডামস সভার নিয়ন্ত্রণ পুনরায় নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, জনগণ ওল্ড সাউথ মিটিং হাউস থেকে স্রোতের মত বেরিয়ে এল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। কিছু ক্ষেত্রে, এর অন্তর্ভুক্ত ছিল যাকে বিশদভাবে প্রস্তুত মোহক পোশাক।[৪২] যদিও তাদের নিজস্ব চেহারা লুকনো অপরিহার্য ছিল, তাদের বিক্ষোভের অবৈধতার কারণে, মোহক যোদ্ধাদের মত পোশাক পড়া ছিল এক বৈশিষ্ট্যসূচক এবং প্রতীকী নির্বাচন। এটা প্রমাণ করল যে সন অব লিবার্টিরা আমেরিকার সাথে অভিন্ন, গ্রেট ব্রিটেনের প্রজা হিসেবে তাদের দাপ্তরিক পরিচয়ের ওপরে।[৪৩]
সেই সন্ধ্যায়, ৩০ থেকে ১৩০ জন লোকের একটি দল, কেউকেউ মোহক যোদ্ধাদের ছদ্মবেশে, তিনটি জাহাজে উঠে পড়ল, এবং, তিন ঘণ্টা পরে, ৩৪২তি চায়ের সিন্দুকের সব কয়টি পানিতে ফেলে দিল।[৪৪] টি পার্টির গ্রিফিন ঘাটের সঠিক অবস্থান দীর্ঘ অনিশ্চয়তার বিষয় হয়ে আছে; এক বিস্তৃত গবেষণা[৪৫] একে হাচিনসন স্ট্রীটের (বর্তমান পার্ল স্ট্রীট) পাদদেশের কাছে বলে শনাক্ত করে।
প্রতিক্রিয়া
স্যামুয়েল আ্যডামস বোস্টন টি পার্টির পরিকল্পনা করতে সাহায্য করেছিলেন কিনা তা বিতর্কিত, কিন্তু তিনি সাথে সাথে তা প্রচার এবং সমর্থন করার কাজে নেমে পড়েন।[৪৬] তিনি তর্ক করেন যে টি পার্টি উচ্ছৃঙ্খল কোন জনতার কাজ নয়, বরং তা এক নৈতিক বিক্ষোভ ছিল এবং তাদের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করার জন্য জনগণদের কাছে একমাত্র অবশিষ্ট উপায় ছিল।[৪৭]
"সংবিধান" বলতে তিনি সকল সরকারের একটি সংবিধান আছে এই ধারনাটি নির্দেশ করেন, লিখিত হোক বা না হোক, এবং এইযে গ্রেট ব্রিটেনের সংবিধানকে প্রতিনিধি ছাড়া করারোপের নিষেধাজ্ঞা বলে ব্যাখ্যা করা হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ১৬৮৯ সালের অধিকারের বিল প্রতিষ্ঠিত করে যে দীর্ঘকালীন কর সংসদ ব্যতীত আরোপ করা যাবে না, এবং অন্যান্য নজির বলে যে সংসদ নিশ্চয়ই যেসব জনগণকে তা শাসন করে তার প্রতিনিধিত্ব করে, "গণনা" করার জন্যে।
গভর্নর টমাস হাচিনসন লন্ডনকে প্ররোচিত করছিলেন সন অব লিবার্টিদের ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ করতে। তিনি যদি অন্যান্য রাজকীয় গভর্নররা করেছেন তা করতেন এবং জাহাজ মালিকদের এবং ক্যাপ্টেনদের ঔপনিবেশিকদের সাথে সমস্যা সমাধান করতে দিতেন, দ্যা ডার্টমাথ, এলিনর এবং দ্যা বিভার, কোন চা খালাস না করেই চলে যেতে পারত।
ব্রিটেনে, যেসব রাজনীতিবিদ উপনিবেশগুলোর বন্ধু বলে পরিগণিত ছিলেন এমনকি তারাও শঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং এই ঘটনা সকল দলকে উপনিবেশের বিরুদ্ধে একজোট করে। প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ বললেন, "ফলাফল যাই হোক না কে, আমাদের কোন একটা ঝুঁকি নিতেই হবে; যদি আমরা তা না করি, সব শেষ হয়ে যাবে।"[৪৮] ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করল যে এই ঘটনা শাস্তিহীন থাকতে দেওয়া যেতে পারেনা, এবং বোস্টন বন্দর বন্ধ করে দিয়ে এবং "দমনমূলক আইন" নামক অন্যান্য আইন স্থাপিত করে তার জবাব দিল। বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন বললেন যে ধ্বংসকৃত চায়ের মুল্য অবশ্যই দিতে হবে, নব্বই হাজার পাউন্ডের পুরোটা (যা, প্রতি পাউন্ডে দুই শিলিং মূল্যে, আসে ৯,০০০, অথবা ১.০৩ মিলিয়ন [২০১৪, প্রায়. ১.৭ মিলিয়ন ইউএস])।[৪৯] রবার্ট মুরে, নিউ ইয়র্কের এক ব্যবসায়ী, লর্ড নর্থের কাছে আরও তিনজন ব্যবসায়িকে নিয়ে যান এবং লোকসানের মুল্য দিতে চাইলেন, কিন্তু প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হয়।[৫০]
Inflation-fn
1
UK
আমেরিকায় ঘটনাটির একই ফলাফল হয় যখন বোস্টন টি পার্টির সংবাদ জানুয়ারি মাসে লন্ডনে পৌঁছায় এবং সংসদ একসারি আইন যেগুলো উপনিবেশগুলোতে সম্মিলিতভাবে পরিচিত ছিল অসহনীয় আইন নামে তা দিয়ে জবাব দেয়। এসবের উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিগত সম্পদ ধ্বংস করার জন্য বোস্টনকে শাস্তি দেওয়া, ম্যাসাচুসেস্টসে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব পুনঃবহাল করা, এবং তানাহলে আমেরিকায় ঔপনিবেশিক সরকার সংস্কার করা। যদিও প্রথম দুটি, বোস্টন বন্দর আইন এবং ম্যসাচুসেটস সরকার আসিন, শুধুমাত্র ম্যসাচুসেস্টসের জন্য প্রযোজ্য ছিল, এই উপনিবেশের বাইরের উপনিবেশগুলো আশঙ্কা করে যে তাদের সরকারগুলোও এখন ইংল্যান্ডের আইন-প্ররণয়নকারী হুকুমের দ্বারা পরিবর্তিত হতে পারে। অসহনীয় আইনগুলোকে সাংবিধানিক অধিকারসমূহ, প্রাকৃতিক অধিকার, এবং ঔপনিবেশিক দলিলের লঙ্ঘন বলে দেখা হয়, এবং সমগ্র আমেরিকায় বহু ঔপনিবেশিককে সঙ্ঘবদ্ধ করে,[69়]
১৭৭৪ সালের সেপ্টেম্বরের প্রথম মহাদেশীয় কংগ্রেসের আহ্বান দ্বারা উদাহরণস্বরূপ হয়ে।
ঔপনিবেশিকদের একদল বোস্টন টি পার্টি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল একই রকম কাজে, যেমন পেগি স্টুয়ার্টের প্রজ্বলন। বোস্টন টি পার্টি শেষ পর্যন্ত মার্কিন বিপ্লবী যুদ্ধের দিকে চালিত করার অনেকগুলো প্রতিক্রিয়ার একটি প্রমাণিত হয়। ১৭৭৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর তারিখে তার দিনলিপিতে এক লেখায়, জন আ্যডামস লেখেনঃ
গত রাতে বোহি চা ভর্তি তিনটি চালান সাগরে ঢালা হয়। আজ সকালে একটি রণতরী পানিতে ভাসে।
এটি হচ্ছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ চমৎকার আন্দোলন। সেখানে এক মর্যাদা, এক ঐশ্বর্য, এক মাহাত্ম ছিল, দেশপ্রেমিকদের এই শেষ প্রচেষ্টায়, আমি যার গভীর প্রশংসা করি। জনগণের কখনই উত্থান করা উচিৎ নয়, মনে রাক্ষা মত কিছু না করলে- চমকপ্রদ এবং লক্ষণীয় কিছু না করলে। চায়ের এই ধ্বংসকরণ এত দুঃসাহসিক, এত নির্ভীক, এত দৃঢ়, নিরাতঙ্ক ও দৃঢ়সংকল্পের ছিল, এবং এটার নিশ্চয়ই খুব গুরুত্মপূর্ণ পরিণতি আছে, যে আমি একে ইতিহাসের এক যুগ সন্ধিক্ষণ হিসেবে না দেখে পারছি না।[70়়]
সেখানে ১৭৭৪ সালের ৭ মার্চ আরেকটি অনুষ্ঠান হয়, কিন্তু তা অনেক কম ধ্বংসাত্মক ছিল।[৫১]
১৭৭৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ব্রিটেন শান্তিজনক সংকল্প পাশ করে, যা যে কোন উপনিবেশ যা সন্তোষজনকভাবে সাম্রাজ্যিক প্রতিরক্ষা এবং সাম্রাজ্যিক কর্মকর্তাদের সংরক্ষণ যোগান দেয় সেখানে করারোপ বন্ধ করে। চায়ের উপর কর ১৭৭৮ সালের উপনিবেশে করারোপ আইন দ্বারা রদ হয়, সংসদের শান্তিরক্ষার আরেকটি চেষ্টার অংশ যা ব্যর্থ হয়।
উত্তরাধিকার
জন আ্যডামস এবং আরও অনেক মার্কিনী বোস্টন টি পার্টির পর চা পানকে দেশপ্রেমহীনতা বলে মনে করেন। বিপ্লবের সময়ে এবং পরে চা পানের পরিমাণ কমে যায়, যার ফলাফল হয় পছন্দের গরম পানীয় হিসেবে কফির দিকে পরিবর্তন।[৫২]
ঐতিহাসিক আলফ্রেড ইয়াং-এর মতে, "বোস্টন টি পার্টি" পরিভাষাটি ছাপার অক্ষরে ১৮৩৪ সালের আগে আসেনি।[৫৩] এই সময়ের আগে, ঘটনাটি সাধারণত "চায়ের ধ্বংস" হিসেবে উল্লেখিত হয়। ইয়াং-এর বক্তব্যনুসারে, মার্কিন লেখকেরা বহু বছর ধরে সম্পদের ধ্বংস আপাতদৃষ্টিতে উদযাপন করতে অনিচ্ছুক ছিলেন, আর তাই ঘটনাটি সাধারণত মার্কিন বিপ্লবের ইতিহাসে উপেক্ষিত হয়েছিল। তা ১৮৩০ সালের দিকে পরিবর্তন হতে থাকে, তবে, বিশেষত জর্জ রবার্ট টুয়েলভ হুয়েস-এর, "টি পার্টির", সেই সময়ে এই নামে পরিচিত, অল্পসংখ্যক জীবিত অংশগ্রহণকারীদের একজন, জীবনী প্রকাশের সাথে।[৫৪]
এই কারণটি কখনই করের ব্যাপারে ছিল না বরং কীভাবে করটি মার্কিন নিবেশ ছাড়া পাশ হয়; যুক্তরাষ্ট্রীয় কংগ্রেস চায়ে ১৭৮৯ থেকে ১৮৭২ সাল পর্যন্ত কর বসায়।[৫৫]
বোস্টন টি পার্টি প্রায়ই অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিবাদে উল্লেখিত হয়। যখন মোহনদাস কে গান্ধী ১৯০৮ সালে সাউথ আফ্রিকায় ভারতীয় নিবন্ধন কার্ড গণ পোড়ানোর নেতৃত্ব দেন, একটি ব্রিটিশ পত্রিকা ঘটনাটিকে বোস্টন টি পার্টির সাথে তুলনা করেন।[৫৬] যখন গান্ধী ১৯৩০ সালে ভারতীয় লবণ বিক্ষোভের প্রচারণার পর ব্রিটিশ ভাইসরয়ের সাথে দেখা করেন, গান্ধী কিছু শুল্ক-মুক্ত লবণ তার শাল থেকে বের করেন এবং বলেন, এক টুকরো হাসির সাথে, যে এই লবণ হচ্ছে "আমাদের বিখ্যাত বোস্টন টি পার্টির কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যে।"[৫৭]
বিভিন্নরকমের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মার্কিন সক্রিয় কর্মীরা টি পার্টিকে প্রতিবাদের এক প্রতীক হিসেবে গণ্য করেন। ১৯৭৩ সালে, টি পার্টির ২০০তম বার্ষিকীতে, ফেনিউল হলে এক গনসভায়, রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের অভিশংসন আহ্বান এবং চলমান তেল সঙ্কটে তেল কোম্পানিগুলোকে প্রতিবাদ করে। পরবর্তীতে, প্রতিবাদকারীরা বোস্টন পোতাশ্রয়ে এক নকল জাহাজে আরোহণ করেন, নিক্সনের পুত্তলিকা ফাঁসিতে ঝোলান, এবং বেশকিছু খালি তেলের ড্রাম পোতাশ্রয়ে ফেলেন।[৫৮] ১৯৯৮ সালে, দুজন রক্ষণশীল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যান একটি সিন্দুকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কর কোড সংযোজন করেন এবং তা পোতাশ্রয়ে ফেলে দেন।[৫৯]
২০০৬ সালে, "বোস্টন টি পার্টি" নামের এক উদারপন্থী রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। ২০০৭ সালে, রন পল "টি পার্টি" চাঁদা সংগ্রহ, বোস্টন টি পার্টির ২৩৪তম বার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত হয়, একদিনের চাঁদা সংগ্রহের ইতিহাস ভাঙে ২৪ ঘণ্টায় ৬.০৪ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে।[৬০] পরবর্তীতে, এইসব "টি পার্টি" চাঁদা সংগ্রহ টি পার্টি আন্দোলনে পরিণত হয়, যা পরবর্তী দুই বছর ধরে রাজনীতিকে কর্তৃত্ব করে, রিপাবলিকানদের জন্যে যারা ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অফ রেপ্রেজেন্টেটিভ-এ ব্যাপক নির্বাচিত আসন লাভ করে তাদের এক ভোটার বিজয়ের শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছে দেয়।
বোস্টন টি পার্টি জাহাজসমূহ এবং জাদুঘর
বোস্টন টি পার্টি জাদুঘর বোস্টনের কংগ্রেস স্ট্রিট ব্রিজে অবস্থিত। এতে পুনঃবিধিবদ্ধ আইন, একটি তথ্যচিত্র, এবং কিছু সংখ্যক মিথস্ক্রিয় প্রদর্শনী আছে। জাদুঘরে আছে সেই যুগের জাহাজের দুটি প্রতিরূপ, দ্যা এলেনর এবং দ্যা বিভার । তার সাথে, জাদুঘরটি মূল ঘটনার পরিচিত চায়ের সিন্দুকের মালিক, এর স্থায়ী সংগ্রহের অংশ।[৬১]
অংশগ্রহণকারীরা
ফিনিস স্টার্নস[৮২]
আরও দেখুন
যুক্তরাষ্ট্রের বিপ্লবের ইতিহাসের সময়সীমা (১৭৬০-১৭৮৯)
↑Diary of John Adams, March 8, 1774; Boston Gazette, March 14, 1774
↑(1) Adams, John (জুলাই ৬, ১৭৭৪)। "John Adams to Abigail Adams"। The Adams Papers: Digital Editions: Adams Family Correspondence, Volume 1। Massachusetts Historical Society। ২০১৪-০২-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০২-২৫। I believe I forgot to tell you one Anecdote: When I first came to this House it was late in the Afternoon, and I had ridden 35 miles at least. “Madam” said I to Mrs. Huston, “is it lawfull for a weary Traveller to refresh himself with a Dish of Tea provided it has been honestly smuggled, or paid no Duties?” “No sir, said she, we have renounced all Tea in this Place. I cant make Tea, but I'le make you Coffee.” Accordingly I have drank Coffee every Afternoon since, and have borne it very well. Tea must be universally renounced. I must be weaned, and the sooner, the better.
Thomas, Peter D. G. Tea Party to Independence: The Third Phase of the American Revolution, 1773–1776. Oxford: Clarendon Press, 1991. আইএসবিএন০-১৯-৮২০১৪২-৭.