বাস্তুতন্ত্র (ইংরেজি: Ecosystem) হচ্ছে জৈব, অজৈব পদার্থ ও বিভিন্ন জীবসমন্বিত এমন প্রাকৃতিক একক যেখানে বিভিন্ন জীবসমষ্টি পরস্পরের সাথে এবং তাদের পারিপার্শ্বিক জৈব ও অজৈব উপাদানের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একটি জীবনধারা গড়ে তোলে।[২]জীব ও তার পরিবেশের পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক চর্চার বিষয়কে বাস্তুবিদ্যা বা ecology বলে। জার্মান বিজ্ঞানী হাকেল (Haeckel) ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম Oekologie (গ্রিক 'Oikos অর্থ বাসস্থান এবং 'Logos অর্থ জ্ঞান) শব্দটি প্রয়োগ করেন। এই Oekologic থেকে ecology শব্দটির উৎপত্তি। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে বাস্তুবিদ এ. জি. ট্যান্সলি (A. G Tansley) বাস্তুতন্ত্র বা ecosystem শব্দটি প্রথম চয়ন করেন। তিনি eco শব্দটিকে পরিবেশ অর্থে ব্যবহার করেন। বিজ্ঞানী ওয়েস্টার (Webster) System শব্দটির ব্যাখ্যা প্রদান করে। তাঁর মতে, পৃথ্বীকৃত বস্তুসমূহের পারস্পরিক আস্তা বিক্রিয়ার ফলে সংযোগ সাধিত হয়। বাস্তুবিদ ওডাম (Odum, ১৯৭১) বাস্তুবিদ্যার নিম্নরূপ বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা প্রদান করেন—
"যে বিশেষ পদ্ধতিতে কোনো বসতিধানে অবস্থিত জীবগোষ্ঠীগুলি একে অপরের সঙ্গে এবং এই বসতি অঞ্চলের অজৈব পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে একটি সুস্থিত তন্ত্র গঠন করে, সেই সুস্থিত তন্ত্র গঠনের ক্রিয়া পদ্ধতিকে বাস্তুতন্ত্র বলে।"
বাস্তুতন্ত্রের উপাদানসমূহ
বাস্তুতন্ত্রের কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানী ওডাম (১৯৬৬) বাস্তুতন্ত্রের উপাদানসমূহকে দুইভাগে ভাগ করেন। এরা যথাক্রমে—
কার্যভিত্তিক উপাদান
স্বভোজী উপাদান
পরভোজী উপাদান
সাংগঠনিক উপাদান
নির্জীব উপাদান
সজীব উপাদান
আবার গঠনগতভাবে বাস্তুতন্ত্রের উপাদানসমূহকে নিম্নলিখিত উপায়ে ভাগ করা যায়—
নির্জীব উপাদান
অজৈব উপাদান
জৈব উপাদান
ভৌত উপাদান
সজীব উপাদান
উৎপাদক
খাদক
প্রথম শ্রেণির খাদক
দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক
সর্বোচ্চ শ্রেণির খাদক
বিয়োজক
প্রত্যেক বাস্তুতন্ত্রে মূলত তিনটি উপাদান রয়েছে, যথা-
জড় উপাদান
ভৌত উপাদান
জীবজগতের উপাদান
জড় উপাদান কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা;
অজৈব বস্তু
জৈব বস্ত
অজীব উপাদান
অজীব উপাদানের মধ্যে পরিবেশের মৌলিক অজৈব, জৈব ও ভৌত উপাদান অন্তর্ভুক্ত।
মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদি জৈব যৌগ। এগুলো জৈবরাসায়নিক গঠনরূপে অজীব ও সজীব উপাদানের মধ্যে যোগসূত্র রচনা করে।
ভৌত উপাদান
নির্দিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি ও মাটি সম্পর্কিত উপাদান নিয়ে গঠিত।
জলবায়ু : এতে আলো, তাপ, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত।
ভূ-প্রকৃতি : এতে নির্দিষ্ট অঞ্চলের অক্ষাংশ, পর্বতমালা ও উপত্যকার দিক, ঢাল বা খাড়া অবস্থা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত।
মাটি সম্পর্কিত উপাদান : এতে নির্দিষ্ট জায়গার মাটির গঠন, এর ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণ এবং এ সম্পর্কিত বিস্তারিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
সজীব উপাদান
বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত যাবতীয় নির্দিষ্ট বস্তু। যেমন-প্রাণী, উদ্ভিদ, অণুজীব প্রভৃতি হলো সজীব উপাদান। সজীব উপাদান তিন প্রকারের যথা-উৎপাদক, খাদক এবং বিয়োজক।
উৎপাদক
এগুলো বাস্তুতন্ত্রের স্বভোজী জীব অর্থাৎ সবুজ গাছপালা যারা সৌরশক্তিকে সংবন্ধন ও সরল অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে খাদ্যরূপে জটিল জৈব যৌগ সংশ্লেষ করে। ক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, শৈবাল ইত্যাদি থেকে শুরু করে জলে ভাসমান উদ্ভিদ ও ছোট-বড় স্থলজ উদ্ভিদ সবই উৎপাদক। আরও সহজে বোঝায় যে পরিবেশের যে সকল উপাদান খাদ্যের জন্য অন্য কোন উপাদানের উপর নির্ভরশীল নয়, তাকে উৎপাদক বলে।
খাদক
বাস্তুতন্ত্রে যে সব উপাদান উৎপাদকের তৈরি খাদ্য উপাদানের উপর নির্ভরশীল, সেসব জীবকে খাদক বলে। এগুলো বাস্তুতন্ত্রের প্রাণী সদস্য বা ম্যাক্রোখাদক নামেও পরিচিত।
একটি বাস্তুতন্ত্রে তিন ধরনের খাদক পাওয়া যায়।
প্রথম স্তরের খাদক
দ্বিতীয় স্তরের খাদক
তৃতীয় বা সর্বোচ্চ স্তরের খাদক
প্রথম শ্রেণির খাদক :
যেসব প্রাণী সরাসরি উদ্ভিদ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে তাদের প্রথম শ্রেণির বা তৃণভোজী জীব বলে। যেমন- ঘাস ফড়িং, মুরগি, গরু, ছাগল, হরিণ, হাতি ইত্যাদি।
দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক:
যেসব প্রাণি তৃণভোজী প্রাণীদের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে তাদের বলা হয় গৌণ খাদক বা দ্বিতীয় শ্রেণির খাদক বলে। এরা মাংসাশী প্রাণী। যেমন-ব্যাঙ, শিয়াল, বাঘ ইত্যাদি।
তৃতীয় শ্রেণির খাদক:
যেসব প্রাণী গৌণ খাদকদের খেয়ে বেচে থাকে তারাও মাংসাশী প্রাণী। এদের বলা যায় তৃতীয় শ্রেণির বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ খাদক। যেমন- সাপ, ময়ূর, বাঘ ইত্যাদি।
একটি বিশেষ শ্রেণির খাদক জীবন্ত প্রাণীর চেয়ে মৃত প্রাণীর মাংস বা আবর্জনা খেতে বেশি পছন্দ করে। যেমন- কাক, শকুন, শিয়াল, হায়েনা ইত্যাদি। এদের নাম দেয়া হয়েছে আবর্জনাভুক বা ধাঙড় (Scavenger). এরা পরিবেশ পরিষ্কার রাখে।
বিয়োজক
যে সজীব উপাদান কোনো বাস্তুতন্ত্রে মৃত জীবের কলাভুক্ত জটিল জৈব যৌগগুলোকে বিশ্লিষ্ট বা বিয়োজিত করে তা থেকে কিছু অংশ নিজেরা শোষণ করে এবং বাকি অংশের জটিল যৌগগুলোকে ভেঙে সরল জৈব যৌগে পরিণত করে পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়,তাকে বিয়োজক বলে।
এর মাধ্যমে পরিবেশের
ভারসাম্য বজায় থাকে।
বাস্তুতন্ত্রে শক্তির প্রবাহ
বাস্তুতন্ত্রে বা ইকোসিস্টেমে শক্তির প্রবাহ:(Energy Flow in Ecosystem)
কাজ করার জন্য শক্তি প্রযোজন। জীবদেহে এই শক্তি খাদ্যের জারণে বা শ্বসনে উৎপন্ন হয়।
পৃথিবীর সমস্ত শক্তির উৎস সূর্য। এই শক্তি হল সৌরশক্তি (Solar Energy)। সৌরশক্তি সবুজ উদ্ভিদের দেহে তথা উৎপাদকের দেহে সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে স্থিতিশক্তি বা রাসায়নিক শক্তি (Chemical Energy) হিসেবে আবদ্ধ হয়। জানা গেছে, পাতার ওপরে পড়া সৌরশক্তির মাত্র ১% থেকে ২% সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে আবদ্ধ হয়। বাকি তাপশক্তি হিসেবে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
সবুজ উদ্ভিদদেহে বা উৎপাদকের দেহে আবদ্ধ হওয়া শক্তি খাদ্য (Food) হিসেবে থাকে। এই শক্তি প্রথমে তৃণভোজী প্রাণীর (প্রথম স্তরের খাদক) দেহে গৃহীত হয়। তারপর পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় স্তরের খাদক, তৃতীয় স্তরের খাদক, চতুর্থ স্তরের খাদক সেই শক্তি পায়। এইভাবে শক্তি বিভিন্ন খাদ্যস্তর অতিক্রম করে সর্বোচ্চ খাদকের দেহে চালিত হয়। একেই ইকোসিস্টেমে শক্তির প্রবাহ (Energy Flow in Ecosystem) বলা হয়।
খাদ্যস্তরের বিভিন্ন জীব জৈবনিক কাজ পরিচালনার জন্য শক্তিকে কাজে লাগায়। আবার বেশ কিছু শক্তি তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ফলে স্তরে স্তরে শক্তির পরিমাণও কমে। প্রাকৃতিক নিয়মে ইকোসিস্টেমের মধ্যে এইভাবে একমুখী শক্তিপ্রবাহ (Unidirectional Energy Flow) ধাপে ধাপে চলতে থাকে।
ইকোসিস্টেমে শক্তি-প্রবাহের সময় দেখা যায়, প্রতি খাদ্যস্তরে মাত্র ১০% হারে শক্তি কাজে লাগে। বাকি শক্তি কোন কাজে লাগে না।
ফলে পর্যায়ক্রমে খাদ্যস্তরে শক্তির পরিমাণ কমে। তাই খাদ্যস্তর যত উঁচুতে থাকে জীবের সংখ্যাও সেক্ষেত্রে কমে যায়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নির্দিষ্ট ইকোসিস্টেমে উৎপাদক যদি ১০০০০ কিলো ক্যালরি শক্তি আবদ্ধ করে তাহলে বিভিন্ন স্তরের খাদকের মধ্যে নিম্নলিখিত পরিমাণে শক্তি প্রবাহ ঘটে।
জড়বস্তুর সঙ্গে জীবের সম্পর্ক:
মাটি, জল, বাতাস ইত্যাদি জড়বস্তু থেকে বিভিন্ন উপাদান সংগ্রহ করে জীব পুষ্টি সাধন করে। ক্লোরোফিলযুক্ত উদ্ভিদ পরিবেশ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড ও জল গ্রহণ করে সূর্যালোকের উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদন করে, তাই সব সবুজ উদ্ভিদ উৎপাদক (Producer)। শৈবাল থেকে শুরু করে স্থলজ সপুষ্পক উদ্ভিদ সবই উৎপাদক। উৎপাদক খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে নিজের দেহের পুষ্টি ঘটায় ও অন্যান্য জীবকে (খাদক = consumer) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সেই উৎপন্ন খাদ্য যোগায়। খাদক সেই খাদ্য গ্রহণ করে নিজদেহের পুষ্টি সাধন করে।
জীবের ক্রিয়াকর্ম পরিচালনার জন্য শক্তি দরকার। পরিবেশে থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে জীব সবাত শ্বসন চালায়। শ্বসনের ফলে খাদ্যবস্তুর জারণ ঘটে ও শক্তি উৎপন্ন হয়। এইভাবে দেখা যাচ্ছে, পরিবেশ থেকে বিভিন্ন জড়বস্তু গ্রহণ করে জীবের জীবনধারণ সম্ভব হচ্ছে। তাই জড়বস্তুর সঙ্গে জীবের সম্পর্ক খুবই গভীর।
জীবের সঙ্গে জীবের সম্পর্ক
বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে বিভিন্ন পরিবেশে জীবের সঙ্গে জীবের সম্পর্ক নানাভাবে গড়ে উঠেছে। এই সম্পর্কগুলি নীচে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হল:
(১)উৎপাদক ও খাদকের সম্পর্ক:
উৎপাদক যে খাদ্য উৎপন্ন করে খাদক তা প্রত্যক্ষভাবে গ্রহণ করে পুষ্টি চালায়। এজন্য খাদক (Consumer) উৎপাদক (Producer) ছাড়া জীবনধারণ করতে পারে না।
(২) শিকার ও শিকারীর সম্পর্ক:
মাংসাশী প্রাণীরা অন্যান্য প্রাণীকে হত্যা করে তার দেহ-মাংস খায় বলে আমরা জানি। ব্যাঙ বা টিকটিকি যখন জ্যান্ত পোকামাকড় ধরে খায়, সাপ যখন ব্যাঙ গেলে, বিড়াল যখন ইঁদুরকে উদরসাৎ করে, বাজপাখি যখন ছোঁ মেরে ইঁদুর বা পাখি ধরে, আর বনের বাঘ বা সিংহ যখন নিরীহ খরগোস বা হরিণের ঘাড় মটকে তার মাংসে উদরপূর্তি করে, তখনই এই শিকার-শিকারীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকি উদ্ভিদ জগতেও এরকম সম্পর্কের কথা জানা যায়, কেননা পতঙ্গভুক উদ্ভিদ (যেমন, কলসীপত্রী উদ্ভিদ) পাতার ফাঁদে জ্যান্ত পোকামাকড় আটকে ফেলে তার দেহরস শোষণ করে।
এই প্রসঙ্গে জেনে রাখা ভালো যে, সব মাংসাশীই শিকারী নয়। অনেক মাংসাশী প্রাণী অপরের দ্বারা নিহত পশুপাখির মাংস অর্থাৎ মৃতদেহ খেয়ে জীবন ধারণ করে।
এদের শবভোজী বলা যেতে পারে। শকুন এ ধরনের প্রাণী, কেননা ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া গবাদি পশুর শব জলে ভেসে যাওয়া শবদেহ এদের খেতে দেখা যায়।
(৩)পরজীবী ও পোষকের সম্পর্ক:
দুটি জীবের মধ্যে যখন এমন ঘনিষ্ঠ দৈহিক যোগাযোগ ঘটে যাতে একে অপরের দেহ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যরস আহরণ করে তখন সেই যোগাযোগের ব্যাপারটিকে পরজীবিতা (Parasitism) বলা হয়। এই যোগাযোগের ফলে সবসময়েই একে উপকৃত বা লাভবান হয় ও অন্যের ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। যে উপকৃত হয় তাকে পরজীবী (Parasite) ও যে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাকে পোষক (Host) বলে। উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতে এইরকম পরজীবী- পোষক সম্পর্কের ভুরি ভুরি উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায়। উদ্ভিদের মধ্যে ব্যাকটিরিয়া নানান ধরনের ছত্রাক, স্বর্ণলতা প্রভৃতির নাম করা যেতে পারে ও প্রাণীর মধ্যে আছে মনোসিস্টিস, ওপালিনা, প্লাসমোডিয়াম, গোলকৃমি, ফিতাকৃমি ইত্যাদি।
পরজীবী যখন পোষকের দেহাভ্যন্তরে আশ্রয় নেয় তখন তাকে বলে অন্তঃপরজীবী (Endoparasite) (যেমন, মনোসিস্টিস, গোলকৃমি ইত্যাদি) আর পোষকের দেহের বাইরে থাকলে তা হয় বহিঃপরজীবী (Ectoparasite) (যেমন, উকুন ইত্যাদি)।
যাই হোক, পরজীবিতার মাধ্যমে জীবের সঙ্গে জীবের যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তা ঠিক বন্ধুত্বের নয়, শত্রুতার সম্পর্ক।
(৪) মিথোজীবিতার সম্পর্ক:
অনেকসময় দুটি জীবের মধ্যে এমনভাবে সংযোগ ঘটে যাতে একে অপরের দেহে আশ্রয় নিলেও একে অন্যের ক্ষতি করে না বরঞ্চ এই সংযোগের ফলে উভয়েই উপকৃত হয়। এই ব্যাপারকেই মিথোজীবিতা (Symbiosis) বলা হয়।
শিম্ব-গোত্রের উদ্ভিদের মূলে গুটি তৈরি করে যে ব্যাকটিরিয়া (রাইজোবিয়াম) বাসা বাঁধে তার কথা আমরা জানি। এই ব্যাকটিরিয়া বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেন শোষণ করে নাইট্রোজেন-ঘটিত খাদ্য তৈরি করে তা উদ্ভিদকে দেয়। বিনিময়ে ব্যাকটিরিয়া উদ্ভিদের মূল থেকে শর্করা জাতীয় খাদ্যরস গ্রহণ করে। কাজেই এই যোগাযোগ গাছ ও ব্যাকটিরিয়া উভয়ের পক্ষেই লাভজনক।
গবাদি পশুর পৌষ্টিকনালীতে বসবাসকারী আর এক ধরনের ব্যাকটিরিয়া শাকপাতার সেলুলোজ (Cellulose) হজম করতে সাহায্য করে। গবাদি পশুরা নিজেরা যা হজম করতে পারে না, ব্যাকটিরিয়ার সাহায্যে তা পরিপাক করে দেহের পুষ্টি ঘটায়। আবার ব্যাকটিরিয়া অস্ত্রের মধ্যে পায় নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যবস্তুর সরবরাহ। এই যোগাযোগে উভয়েই লাভবান হচ্ছে বলে একে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বলা চলে। ব্যাকটিরিয়ার সঙ্গে এ ধরনের যোগাযোগ স্থাপিত না হলে প্রচুর তৃণলতা থাকা সত্ত্বেও গবাদি পশুদের প্রায় অনাহারে থাকতে হতো।
(৫) প্রতিযোগিতার সম্পর্ক:
উদ্ভিদজগতে প্রধানত সূর্যালোকের জন্য আর প্রাণীদের মধ্যে খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য যে প্রতিযোগিতা চলে তাতেও বিশেষ ধরনের পারস্পরিক সম্পর্কের সূচনা হয়। প্রাণিজগতে সর্বদাই এ নিয়ে একটা চাপা উত্তেজনার ভাব বজায় থাকে। একই প্রজাতিভুক্ত প্রাণীর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা চলে তাকে অন্তঃপ্রজাতি প্রতিযোগিতা (Intra- specific Competition) বলে ও ভিন্নতর প্রজাতি পরস্পর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলে তা আন্তঃপ্রজাতি প্রতিযোগিতা (Inter-specific Competition) নামে আখ্যাত করা যায়। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির প্রাণী একই খাদ্যবস্তুর উপর নির্ভরশীল হলে প্রতিযোগিতা দেখা দেয়,
যেমন গোরু, ছাগল, মেষ ইত্যাদিবা একই ঘাস-পাতা খায়, কিংবা বনের বাঘ, সিংহ, নেকড়ে, হায়না প্রভৃতিরা খাদ্যের জন্যে খরগোস, হরিণ ইত্যাদি নিরীহ তৃণভোজীর উপর নির্ভর করে। বাসোপযোগী অঞ্চলের সীমাবদ্ধতাও বিভিন্ন প্রাণীকে প্রতিযোগিতার পথে ঠেলে দেয়। এই প্রতিযোগিতায় যারা জয়ী হয় তারাই বংশবৃদ্ধি বা বিস্তাবলাভের সুযোগ পায় বেশী। এই কারণে জীবের সংখ্যাধিক্য তাদের সাফল্য সূচিত করে। উদ্ভিদজগতে দুর্বাঘাস, আর প্রাণী-জগতে পোকামাকড় বা মানুষকে এই হিসেবে অত্যন্ত সফল গোষ্ঠী বলা যেতে পারে।[৪]
↑Tansley (1934); Molles (1999), p. 482; Chapin et al. (2002), p. 380; Schulze et al. (2005); p. 400; Gurevitch et al. (2006), p. 522; Smith & Smith 2012, p. G-5
Gurevitch, Jessica (২০০৬)। The Ecology of Plants (Second সংস্করণ)। Sunderland, Massachusetts: Sinauer Associates। আইএসবিএন978-0-87893-294-8।অজানা প্যারামিটার |coauthors= উপেক্ষা করা হয়েছে (|author= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)