বড় দেবী |
---|
বড়দেবী |
বড়দেবী হলেন পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের রাজবাড়ির কুলদেবী। বর্তমানে যে সকল দেবীর উপাসনা ও উৎসব বাংলার হাজার হাজার বছরের শক্তি আরাধনার পদ্ধতি অপরিবর্তিত রেখে এখনও স্বমহিমায় টিকে রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো কোচবিহারের রাজগৃহের কুলদেবী বড়দেবীর আরাধনা। তিনি উত্তরবঙ্গের বাঙালি ও অন্যান্য জনজাতির মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় দেবী।[১]
দেবীপূজার ইতিহাস
স্থানীয় কিংবদন্তি অনুসারে কোচবিহারের বড় দেবীর আরাধনা আনুমানিক ৪০০ বছরের পুরনো। বিশু আর শিশু নামে দুই ভাই বড় দেবীর আরাধনা করতেন। বিশু অর্থাৎ কোচবিহার রাজবাড়ীর তৎকালীন রাজা বিশ্বসিংহ স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হয়ে বড় দেবী এর উপাসনা শুরু করেন। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে রাজবাড়ীর মদনমোহন মন্দির প্রাঙ্গনে ময়না গাছের ডাল পুঁতে দেবীপুজো শুরু করেন।[২][৩]
দেবীর রূপবর্ণনা
বড়দেবীর রূপ খুব ভীতিপ্রদ। দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী দেবীর গাত্রবর্ণ লাল, অসুরের গাত্রবর্ণ সবুজ। দেবীর বাহন সিংহরাজ অসুরের এক পায়ে কামড়ে ধরেছে, অসুরের অপর দিকে হাতে কামড়ে ধরেছে ব্যাঘ্র। দেবীর দুই পাশে দেবীর দুই সখী জয়া ও বিজয়া। তাদের হাতে রয়েছে জ্বলন্ত মশাল।[২]
গুপ্তপূজা
প্রত্যেক বছর শারদীয়া দুর্গাপুজো চলাকালীন মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে বড় দেবীর মন্দির প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় গুপ্তপূজা। তখন মন্দিরে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ থাকে। মন্দিরের দ্বার রুদ্ধ থাকে। শুধুমাত্র রাজ পুরোহিতগণ ও রাজপরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতেই এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়। শোনা যায়, আগে গুপ্তপূজার সময়ে নরবলি হত। এখন সে প্রথা বিলুপ্ত। কিন্তু, এখনও প্রত্যেক বছর মায়ের পুজোয় নররক্ত লাগে। তাই প্রত্যেক বৎসর গুপ্তপূজা চলাকালীন রাজপরিবারের মধ্যে একজন নিজের আঙ্গুল থেকে কিছুটা রক্ত দেবীর পদতলে উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন। আগে ষষ্ঠী থেকে নিয়মিত বলি হত, ২৫০ বছর আগে রাজা নরনারায়ণ এই নরবলির প্রথার বিলুপ্তি ঘটান।
বলিদান ও ইতিহাস
প্রত্যেক বৎসর মহাঅষ্টমীর পুজোয় অসংখ্য পাঁঠা, পায়রা ও মহিষ বলি দেওয়া হয়। নরবলির প্রথা বিলুপ্ত হলেও নররক্তে আজও সন্ধিপূজো হয়ে আসছে। কথিত আছে, আজ হতে ৫০০ বছর পূর্বে রাজা নরনারায়ণ তার শৈশবে একদিন বন্ধু সাথে 'পুজো-পুজো' খেলতে গিয়ে, এক বন্ধুকে পাঁঠা সাজিয়ে গাছের ডাল দিয়ে কাল্পনিক বলি দিতে গেলে সত্যি বলি হয়ে যায়। রাতে রাজা মহিষাসুরমর্দিনী দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। সেই দিন থেকেই শুরু হয় নরবলির প্রথা।[২][৩]
দেবীপূজার ভোগ
ষষ্ঠী থেকে আড়ম্বর সহকারে পুজো হলেও মায়ের ভোগে থাকে শুধুই পায়েস। নবমীর দিন চাল, ডাল, সবজি ও বলির মাংস একত্র করে এক অভিনব ও বিশেষ আমিষ খিচুড়ি মায়ের প্রসাদে দেওয়া হয়। অঞ্জলি হওয়ার পরে সবাই সেই ভোগ গ্রহণ করে। প্রথমে জেলা শাসক, জেলার সরকারি কর্মচারী ও রাজবাড়ীর লোকেরা অঞ্জলি প্রদান করেন এবং পরে বাকিরা। এটাই রাজবাড়ীর দীর্ঘদিনের প্রথা।
চিত্রসম্ভার
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র