ফরহাদ মজহার (জন্ম: ৯ আগস্ট ১৯৪৭) একজন বাংলাদেশি কবি, দার্শনিক, মানবাধিকার কর্মী ও পরিবেশবাদী।[১][২][৩][৪][৫] বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি ১৯৭২ সালে প্রবর্তিত সংবিধানের একজন বড় সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।[৬][৭][৮]
জীবনী
ফরহাদ মজহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে ঔষধশাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন এবং পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দি নিউ স্কুল ফর সোশাল রিসার্চ থেকে অর্থশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সামাজিক অর্থনীতিতেও গবেষণা করেছেন। চিন্তা নামক একটি পত্রিকার সম্পাদক মজহার উবিনীগ এনজিও গঠন করে নয়াকৃষি আন্দোলনও শুরু করেন।[৯]
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হল: প্রস্তাব, মোকাবিলা, এবাদতনামা ও মার্কস পাঠের ভূমিকা।
সমালোচনা
ফরহাদ মজহার সহিংসতায় উস্কানি দেওয়ার জন্য ২০১৩-২০১৪ সালে গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন।[১০][১১]সলিমুল্লাহ খানের সাথে তাঁর বিতর্ক লেখক ও বুদ্ধিজীবী মহলে বেশ সাড়া ফেলেছিল।[১২]
অপহরণ বিষয়ক বিতর্ক
২০১৭ সালের ৩ জুলাইঢাকার শ্যামলীর আদাবরের নিজ বাড়ি থেকে ভোর পাঁচটার দিকে ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়। এর ১৮ ঘণ্টা পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁকে যশোরের অভয়নগরে একটি বাস থেকে উদ্ধার করে।[১৩][১৪][১৫][১৬] পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও পুলিশ অবশ্য এই সন্দেহ প্রকাশ করে যে, ফরহাদ মজহারকে গুম করা হয়নি, বরং তিনি নিজেই আত্মগোপন করেছিলেন। অবশ্য গুম নাকি আত্মগোপন, কোনোটির স্বপক্ষেই যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ফরহাদ মজহার অবশ্য সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাকে অপহরণ করে সীমান্তের ওপারে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। তিনি বলেন, "আমি মৃত্যু ভয়ে ভীত, বিধ্বস্ত শারীরিক অসুস্থতায় নির্জীব হয়ে পড়ি। শোরগোল শুনে আমি জেগে উঠি। কিছু শাদা পোশাকের লোক জোর করে আমাকে আবার নামিয়ে আনার চেষ্টা করে। শাদা পোশাকের কিছু লোক বন্দুক তুলে শাসিয়ে আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে উভয়ের মধ্যে প্রচণ্ড তর্কাতর্কি হয়। কিন্তু র্যাব ছোটখাটো যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে আমাকে তাদের গাড়িতে উঠায়। এবং আমার স্ত্রী ফরিদা আক্তারের সঙ্গে ফোনে কথা বলিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করে।অপহরণকারীরা ওই এলাকায় থাকতে পারে ভেবে র্যাব আমাকে নিয়ে খুলনায় ঘটনাটি তদন্ত করতে চাইলেও কে বা কারা র্যাবের গাড়ির দুদিকে রাস্তায় রাতের ট্রাক থামিয়ে দু'দিকের পথরোধ করে। এবং র্যাবের গাড়িসহ আমাকে একটি জায়গায় নিয়ে আসে। আমাকে তখন র্যাবের গাড়ি থেকে নামানো হয়। আমার সঙ্গে তারা প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করে। এবং জিজ্ঞাসাবাদের নামে আমাকে বলতে বাধ্য করা হয় যে আমি বিনোদনের জন্যে বেরিয়েছি।" তিনি জানান, এর পর তাকে ক্যামেরাসহ কিছু লোকের সামনে দাঁড় করানো হয়। "সাংবাদিকদের সামনে আমি বিনোদনের জন্যে স্বেচ্ছায় বেরিয়েছি এটা স্বীকার করার জন্যে প্রচণ্ড চাপ দেওয়া হয়। অনেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে আমাকে পুলিশের একটি গাড়িতে নিয়ে উচ্চস্বরে গান গাইতে গাইতে ঢাকার পথে রওনা হয়। সারা পথে নানা ভাবে আমাকে মানসিক নির্যাতন করা হয়।"
তিনি বলেন, ঢাকায় নিয়ে আসার পরেও বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাকে তার পরিবারের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। পরে তাকে গোয়েন্দাদের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত অবস্থায় তাকে জেরা করা হয়।
ফরহাদ মজহার বলেন, আদালতকে তিনি জানান তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ডিবি অফিস তাকে দিয়ে যা লিখিয়ে নিয়েছে সেটাই তিনি আদালতে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, "পরে জানতে পারি এবং এখন বুঝতে পারি অপহরণকারীরা খুলনা যশোর সীমান্তের দিক দিয়ে আমাকে সীমান্তের ওপাশে নিতে চেষ্টা করেছিলো।"
তিনি অভিযোগ করেন পুলিশ ঘটনাটিকে অন্যদিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছে।"তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রেস কনফারেন্স করে আমাকে সামাজিকভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা করেন। পুলিশের প্রতিবেদন চ্যালেঞ্জ করলে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন," বলেন মি. মজহার।
তিনি জানান, গোয়েন্দা পুলিশ পরেও তাদেরকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে পুলিশের প্রতিবেদনে সায় না দিলে তাদেরকে সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন।
মি. মজহারের স্ত্রী ফরিদা আক্তার সংবাদ সম্মেলনে জানান, তারা এখন এর সুবিচার চেয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন।[১৭][১৮][১৯]
গ্রন্থতালিকা
গদ্য
প্রস্তাব (১৯৭৬)
সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থান এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উত্থান প্রসঙ্গে (১৯৮৫)