প্রমথ ভৌমিক

প্রমথ ভৌমিক
জন্ম৫ ডিসেম্বর ১৯০১
মৃত্যু২ জানুয়ারি ১৯৭৭
আন্দোলনসাম্যবাদ

প্রমথ ভৌমিক (৫ ডিসেম্বর ১৯০১ ― ২ জানুয়ারি ১৯৭৭) ছিলেন একজন সাম্যবাদী বিপ্লবী, সাংবাদিক ও কৃষক নেতা। তার আসল নাম প্রমথনাথ ভৌমিক।

প্রারম্ভিক জীবন

প্রমথ ভৌমিকের আদি বাড়ি খুলনার দেবীপুরে। তার পিতা পার্বতী চরণ ভৌমিক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাতে আগ্রহী ছিলেননা। নিজে নিজেই বিভিন্ন সাহিত্যের পাশাপাশি ধর্ম ও দর্শনশাস্ত্র পাঠ করতেন। অনুশীলন সমিতির মাধ্যমে স্বদেশী আন্দোলনে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে তার হাতেখড়ি হয়।

অসহযোগ ও সামাজিক আন্দোলন

১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অনুশীলন সমিতির সাথে যোগাযোগ হয় তাঁর। ১৯২১ এ অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনমাস কারাবরণ। খুলনায় সাতক্ষীরা মহকুমায় তীব্র দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে সেবাকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ১৯২২ এ নেতাজী সুভাষচন্দ্রের সাথে উত্তরবঙ্গ বন্যা পীড়িতদের সাহায্যে স্বেচ্ছাসেবী দলে যোগ দেন। ১৯২৪ সালে কপিলমুনি আশ্রমে অচ্ছুতদের প্রবেশাধিকারের দাবীতে সত্যাগ্রহ করেন।[]

ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম

সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে প্রখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা ভবানী সেনের সাথে যশোর-খুলনা যুব সংঘের কাজে। এই সংঘকে শাসকেরা নাম দেয় 'টেরো কমিউনিস্ট গ্রুপ'। সন্ত্রাসবাদের পথে সশস্ত্র বিপ্লবে দেশ হতে ইংরেজ বিতাড়ন ছিল এই সংঘের লক্ষ্য। প্রমথ ভৌমিক, শচীন বোস, সন্তোষ ঘোষ, বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়রা ছাত্র যুবদের মধ্যে বৈপ্লবিক ও ব্রিটিশ বিরোধী চেতনা প্রসারে ব্রতী হন।[] পুলিশ তাদের এজন্যে গ্রেপ্তার করে। প্রমথ ভৌমিক মুক্তি পেয়ে শ্রমিক আন্দোলনেও অংশ নেন। লিলুয়ার রেল কারখানা ধর্মঘটে যোগদান করেছিলেন। ১৯২৭ ও ১৯২৯ রাজনৈতিক ডাকাতির অভিযোগে পূনরায় কারান্তরালে। বেংগল অর্ডিন্যান্স এ গ্রেপ্তার হন ১৯৩০ সালে। এসময় প্রায় আট বছর জেলে থাকাকালীন মার্ক্সবাদী সাহিত্য পাঠ ও কমিউনিজমে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। বক্সা জেলে বন্দী থাকাকালীন তার প্রবন্ধ মার্ক্সবাদ বনাম বেদান্ত দর্শন অতি বিশিষ্ট রচনা।

কৃষক আন্দোলন

জেল থেকে বেরিয়ে পাকাপাকি ভাবে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ। ১৯৪৪ সালে পার্টি সদস্য পদ পান। যশোর-খুলনা এলাকায় কৃষক আন্দোলনে বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়ের সাথে মিলে ব্যপক সংগ্রাম পরিচালনা করেছেন। খুলনা দক্ষিণাঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টি গঠিত হলে কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন করার সঙ্গে সঙ্গে পার্টির পূর্ববঙ্গ (পূর্ব পাকিস্তান) প্রাদেশিক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির অন্যতম নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন প্রমথ ভৌমিক।[]

সাংবাদিকতা

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (অবিভক্ত) মুখপত্র কালান্তরের প্রকাশকাল থেকে আমৃত্যু সম্পাদনার গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন। নানা লেখালিখির সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রগতিশীল সাহিত্য পত্র পত্রিকার পক্ষ থেকে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের আমন্ত্রণে সেদেশে যান। শেষ জীবনে যশোর-খুলনা প্রাক স্বাধীনতা যুগের বিপ্লবী কর্মীদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ার কাজেও উদ্যোগী হয়েছিলেন।[]

তথ্যসূত্র

  1. প্রমথ খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (জানুয়ারি ২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৩০৮–৩০৯। আইএসবিএন 81-85626-65-0 
  2. নিপা মোনালিসা। "কমরেড রতন সেনের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি"। সময়ের খবর। সংগ্রহের তারিখ ২.০১.২০১৭  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!