আধুনিক পাটনা শহরের নিকটবর্তী অঞ্চলে ব্যাপকহারে পুরাতাত্ত্বিক খননকার্য চালানো হয়েছে।[২] ২০শ শতাব্দীর প্রথম দিকে চালানো খননকার্যের ফলে জানা গিয়েছে, এখানে একটি বড়ো আকারের দুর্গ অবস্থিত ছিল। এও জানা গিয়েছে যে, সেই দুর্গটিকে শক্তপোক্ত করার জন্য কাঠের ব্যবহার করা হয়েছিল।[৩]
নাম ব্যুৎপত্তি
পাটলীপুত্রের নামকরণের ইতিহাস অস্পষ্ট। ‘পুত্র’ শব্দের অর্থ ছেলে। ‘পাটলী’ ধানের একটি প্রজাতির নাম (বিগনোনিয়া সুয়াভেওলেনস)। [৪] একটি কিংবদন্তি অনুসারে,[৫] ধানের উক্ত প্রজাতিটির নামেই এই শহরের নামকরণ করা হয়েছিল।[৬] অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে, ‘পাটলীপুত্র’ নামটির অর্থ পাটলীর পুত্র। এই পাটলী ছিলেন রাজা সুদর্শনের কন্যা।[৭] এই শহরটি আগে পাটলীগ্রাম নামেও পরিচিত ছিল। কোনো কোনো গবেষকের মতে ‘পাটলীপুত্র’ শব্দটী এসেছে ‘পাটলীপুর’ শব্দটি থেকে।[৮]
ইতিহাস
আদি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলির (তিপিটক ও আগম) আগে পাটলীপুত্রের কোনো লিখিত উল্লেখ পাওয়া যায় না। উক্ত ধর্মগ্রন্থগুলিতে এটিকে পাটলীগ্রাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে এই অঞ্চলের প্রধান শহরগুলির তালিকায় পাটলীগ্রামের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।[৯] আদি বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলি থেকে জানা যায় যে, গৌতম বুদ্ধের জীবনের শেষ পর্যায়ে পাটলীগ্রামের কাছে একটি শহর তৈরি হচ্ছিল। পুরাতাত্ত্বিক খননকার্য থেকেও জানা গিয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় বা ৪র্থ শতাব্দীর আগে ওই অঞ্চলে নগরায়ণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।[৯] খ্রিস্টপূর্ব ৩০৩ অব্দে গ্রিক ঐতিহাসিক ও রাজদূত মেগাস্থিনিস তাঁর গ্রন্থ ইন্ডিকাতে পাটলীপুত্রের নাম উল্লেখ করেন।[১০]
পাটলীপুত্র শহরটি উত্তর মধ্য ভারতে অবস্থিত থাকায় এখানেই পরপর অনেকগুলি রাজবংশ তাদের রাজধানী স্থাপন করেছিল। এই রাজবংশগুলির মধ্যে নন্দ, মৌর্য, শুঙ্গ, গুপ্ত ও পাল রাজবংশ উল্লেখযোগ্য।[১১]গঙ্গা, গণ্ডকী ও সোন নদীর সংযোগ স্থলে অবস্থিত পাটলীপুত্র ছিল একটি ‘জলদুর্গ’।[১২] এই অবস্থানগত সুবিধের জন্য মগধ সাম্রাজ্যের গোড়ার দিকে সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে উক্ত সাম্রাজ্যের শাসকদের সুবিধে হয়েছিল। পাটলীপুত্র ছিল ব্যবসা ও বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। বণিক ও বিদ্বজ্জনেরা এই শহরে এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। বিশিষ্ট কূটনীতিবিদ চাণক্য এই শহরে বাস করতেন।
মৌর্য সম্রাটচন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও মহামতি অশোকের রাজত্বকালে পাটলীপুত্র সমৃদ্ধির মধ্যগগনে আরোহণ করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে পাটলীপুত্র ছিল সেকালের বিশ্বের বৃহত্তম শহরগুলির অন্যতম। মৌর্য শাসনে এই শহরের উন্নতির বিবরণ লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলেন গ্রিক রাজদূত মেগাস্থিনিস। তিনি এই শহরটিকে "পালিবোথরা" বলে উল্লেখ করেন।
পাটলীপুত্রে অশোকের প্রাসাদ ও সারা ভারতে তাঁর স্তম্ভগুলি নির্মিত হয়েছিল আখমানেশীয় প্রাসাদ ও পারসেপোলিস স্তম্ভগুলির আদলে। পাটলীপুত্রের অভ্যন্তরীণ স্থাপত্য ও অশোকের স্তম্ভগুলি পারস্যের অ্যাকিমেনিড স্থাপত্যের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।[১৩]
পাটলীপুত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ কেন্দ্র ছিল। এখানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ মঠ অবস্থিত ছিল। গুপ্ত (খ্রিস্টীয় ৩য়-৬ষ্ঠ শতাব্দী) ও পাল (খ্রিস্টীয় ৮ম-১২শ শতাব্দী) সাম্রাজ্যেও পাটলীপুত্র ছিল রাজধানী। হিউয়েন সাং যখন এই শহরে এসেছিলেন, তখন এটি অনেকাংশে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। ১২শ শতাব্দীতে মুসলমান আক্রমণের সময় এই শহর আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।[১৪] পরবর্তীকালে শেরশাহ সুরি পাটলীপুত্রকে রাজধানী করে এই শহরের নাম রাখেন পাটনা।
গঠন
পুরাতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে প্রাচীন শহরের একটি অংশের সন্ধান পাওয়া গেলেও, এর কিছু অংশ এখনও আধুনিক পাটনা শহরের মাটির নিচে অনাবিষ্কৃত অবস্থায় রয়েছে। মৌর্য রাজত্বকালে শহরটির আকৃতি ছিল চতুষ্কোণাকার। এটির দৈর্ঘ্য ছিল ১.৫ মাইল এবং প্রস্থ ছিল ৯ মাইল। শহরের কাঠের প্রাচীরের গায়ে ৬৪টি প্রবেশদ্বার ছিল। মনে করা হয়, অশোকের সময় কাঠের প্রাচীরের পরিবর্তে পাথরের প্রাচীর দেওয়া হয়।
উইকিমিডিয়া কমন্সে পাটলীপুত্র সংক্রান্ত মিডিয়া রয়েছে।
↑ কখKulke, Hermann; Rothermund, Dietmar (২০০৪), A History of India, 4th edition. Routledge, Pp. xii, 448, আইএসবিএন0-415-32920-5উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link) .
↑Scott, David (মে ১৯৯৫)। "Buddhism and Islam: Past to Present Encounters and Interfaith Lessons"। Numen। 42 (2)। ডিওআই:10.1163/1568527952598657।
আরও পড়ুন
Bernstein, Richard (2001). Ultimate Journey: Retracing the Path of an Ancient Buddhist Monk (Xuanzang) who crossed Asia in Search of Enlightenment. Alfred A. Knopf, New York. আইএসবিএন০-৩৭৫-৪০০০৯-৫