পাইকগাছা হলো বাংলাদেশের খুলনা জেলার দক্ষিনে অবস্থিত একটি উপজেলা।দক্ষিণ খুলনার প্রাণকেন্দ্র হলো এই উপজেলা।খুলনা জেলার বৃহত্তম পৌরসভা হলো পাইকগাছা পৌরসভা।পৃথিবী বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন এর কোল ঘেষে গড়ে ওঠা এই উপজেলায় রয়েছে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।এছাড়া এই উপজেলার অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হলো মৎস্য শিল্প।সাদা সোনা নামে খ্যাত বিভিন্ন জাতের চিংড়ির চাষ হয়ে থাকে এই উপজেলায়।
ইতিহাস
১৯৭১ সালের ৪ জুলাই পাইকগাছা উপজেলার প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র কপিলমুনি বাজারে রায়বাহাদুর বিনোদ বিহারী সাধুর বাড়ীতে রাজাকারের ক্যাম্প স্থাপিত হয়। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ঐ রাজাকার ক্যাম্পটি দখলের জন্য যুদ্ধকালীন কমান্ডার রহমত উল্যাহ দাদু ও তার সহযোগী ইউনুস আলী, স,ম, বাবর আলী, আবুলকালাম আজাদ, শাহাদৎ হোসেন বাচ্চু ও যুদ্ধাহত খোকার নেতৃত্বে ঐ রাজাকার ক্যাম্পটি দখলের সাড়াসী অভিযান শুরু করেন। তিন দিন একটানা যুদ্ধের পর রাজাকার ও শান্তি কমিটির ১৫৬ জন সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে ৯ ডিসেম্বর কপিলমুনি যুদ্ধের অবসান হয়। ৭ নভেম্বর ১৯৮২ সালে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরনের আওতায় পাইকগাছা উপজেলায় উন্নিত হয়।
নামকরণ
সরল খাঁ যে এলাকায় বাস করতেন তার নাম হয় সরল। গরুর রাখালদের আবাসস্থল‘গোপালপুর’ গরু রাখার জন্য যেখানে গোশালা ছিল । সে গ্রামের নাম ‘ঘোষাল,’ গদাইপুরের নিকটে যেখানে সৈন্যরা গড়কেটে ডাকাতদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল । সেটা ‘গড়পার’,প্রাসাদের বান্দিদের আবাসস্থল ‘বান্দিকাটি’, প্রাসাদে বাতি জ্বালানো কার্যে নিয়োজিত কর্মচারীরা যে এলাকায় থাকত ‘বাতিখালী’,গাছে চড়ে পাইক-বরকন্দাজরা পাহারা দিত বলে ‘পাইকগাছা’ রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র এর শাসন এলাকা কৃষ্ণনগর নামে খ্যাত বর্তমান মিল কাটাখালী নামে পরিচিত এবং লোক- লস্কর দিয়ে যে দীঘি খনন করা হয়েছিল সে এলাকা ‘লস্কর’ গ্রাম হিসেবে পরিচিত। এভাবেই পাইকগাছা উপজেলার নাম করণ করা হয়।[২]
অবস্থান ও আয়তন
খুলনা জেলা সদর হতে পাইকগাছা উপজেলা ৬৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণে অবস্থিত। পাইকগাছা উপজেলার আয়তন ৩৮৩.১৫ বর্গ কিঃ মিঃ। ইহা ২২°২৮’’ এবং ২২°৪৩’’ উত্তর-দক্ষিণ দ্রাঘিমাংশ এবং ৮৯°১৪’’এবং ৮৯°২৮’’ পূর্ব পশ্চিম দ্রাঘিমার মধ্যে পাইকগাছা উপজেলা অবস্থিত। এই উপজেলার উত্তরে সাতক্ষীরা জেলারতালা উপজেলা ও ডুমুরিয়া উপজেলা, পূর্বে বটিয়াঘাটা উপজেলা ও দাকোপ উপজেলা, পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলারতালা উপজেলা ও আশাশুনি উপজেলা। খুলনা জেলা শহর হতে সড়ক পথে পাইকগাছা উপজেলার দুরত্ব ৬৫ কি.মি.। [২]
পাইকগাছার অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। এখানকার অধিকাংশ জমি এক ফসলি। শুধু মাত্র বর্ষা মৌসুমে চাষ হয়। তাছাড়াও চিংড়ি মাছ চাষ
বাগদা চিংড়ির চাষ হয়। প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, শাকসবজি। বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, কাউন, আখ। প্রধান ফল-ফলাদি: আম, জাম, কলা, কাঁঠাল, নারিকেল, পেঁপে, সুপারি, তরমুজ, লিচু, পেয়ারা, জামরুল, লেবু ইত্যাদি।
↑ড. অশোক বিশ্বাস, বাংলাদেশের নদীকোষ, গতিধারা, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১, পৃষ্ঠা ৩৮৯, আইএসবিএন৯৭৮-৯৮৪-৮৯৪৫-১৭-৯।
↑মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক (ফেব্রুয়ারি ২০১৫)। বাংলাদেশের নদনদী: বর্তমান গতিপ্রকৃতি। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৬০৯। আইএসবিএন984-70120-0436-4।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: ISBN ত্রুটি উপেক্ষিত (link)