নারী উত্ত্যক্তকরণ বা ইংরেজি পরিভাষায় ইভ টিজিং প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি, পথেঘাটে উত্ত্যক্ত করা বা পুরুষ দ্বারা নারীনিগ্রহ নির্দেশক একটি কাব্যিক শব্দ যা মূলত ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও নেপালে[১] ব্যবহৃত হয়। "ইভ" দিয়ে পৌরাণিক আদিমাতা "হাওয়া" অর্থে সমগ্র নারীজাতিকে বোঝানো হয়।[২]
এটি তারুণ্যে সংঘটিত একধরনের অপরাধ[৩]। এটি এক ধরনের যৌন আগ্রাসন যার মধ্যে রয়েছে যৌন ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য, প্রকাশ্যে অযাচিত স্পর্শ, শিস দেওয়া বা শরীরের সংবেদনশীল অংশে হস্তক্ষেপ।[৪][৫][৬] কখনো কখনো একে নিছক রসিকতা গণ্য করা হয় যা অপরাধীকে দায় এড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।.[৭] অনেক নারীবাদী সংগঠন ইংরেজিতে আরো উপযুক্ত কোনও শব্দ দিয়ে "ইভ টিজিং"কে প্রতিস্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে "ইভ" শব্দের ব্যবহার নারীর আবেদনময়তাকে নির্দেশ করে যে কারণে উত্ত্যক্ত হওয়ার দোষ নারীর উপর বর্তায় আর পুরুষের আচরণ আগ্রাসনের পরিবর্তে স্বাভাবিক হিসেবে ছাড় পায়।[৮]
নারী উত্ত্যক্তকারীরা নানান সৃজনশীল কৌশলে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে থাকে। ফলে এ অপরাধ প্রমাণ করা কঠিন। এমনকি অনেক নারীবাদী একে "ছোটোখাটো ধর্ষণ" বলে আখ্যায়িত করেছেন।[৯]
কেউ কেউ নারী উত্ত্যক্তকরণ থেকে রেহাই পেতে নারীদের রক্ষণশীল পোশাক আশাক পরতে উৎসাহিত করেন। তবে রক্ষণশীল পোশাক পরিহিত নারীরাও নারী উত্ত্যক্তকরণের শিকার হচ্ছেন - এমন উদাহরণও অগণিত।
ধারণা
নারী উত্ত্যক্তকরণ মূলত প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি, পথেঘাটে উত্ত্যক্ত করা বা পুরুষ দ্বারা নারী নির্যাতনের নির্দেশক একটি শব্দ। ইংরেজিতে "ইভ" শব্দটি বাইবেলের ইভ(Eve) বা পবিত্র কোরআনের 'হাওয়াকে' বোঝায়।অন্যদিকে টিজিং শব্দটির আভিধানিক অর্থ 'পরিহাস বা জ্বালাতন'। সুতরাং 'ইভ' বলতে বুঝায় নারী বা রমণী এবং "টিজিং" বলতে বুঝায় উত্ত্যক্তকরণ বা বিরক্ত করা। একসময় সমাজের বখে যাওয়া একটি ক্ষুদ্র অংশ নারী উত্ত্যক্তকরণের সাথে জড়িত থাকলেও এখন উঠতি বয়সী তরুণ, কিশোর যুবকরা তো আছেই, অনেক মধ্যবয়সীরাও এর সাথে জড়িত হয়ে পড়ছে।
আধুনিক সমাজে 'ইভ টিজিং ' শব্দটি 'যৌন হয়রানি'(Sexual Harassment) হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। "'Oxford Dictionary"'-তে এজন্য 'ইভ টিজিং' শব্দটির অর্থ করা হয়েছে ""'Harassment of,or sexually aggressive behavior toward women or girls""'.যৌন হয়রানি' হচ্ছে সেই ধরনের কর্মকাণ্ড ও আচরণ যা মানুষের যৌনতাকে উদ্দেশ্য করে মানসিক ও শারীরিকভাবে করা হয়।
ইতিহাস
যদিও এই বিষয়টা ৬০-এর দশকের বেশি মনোযোগ পায় গণমাধ্যমে,[১০][১১] কিন্তু এটা আসলে বিপদজনকভাবে বৃদ্ধি লাভ করে পরবর্তী দশকে যখন অধিকসংখ্যক মেয়েরা বিদ্যালয় ও কর্মক্ষেত্রে যেতে থাকে ঐতিহ্য পরিপন্থী হয়ে পুরুষের সাহচর্য ছাড়া।[১২] শীঘ্রই ভারতীয় সরকার এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে থাকে বিচারিক ও আইনগতভাবে এই ধরনের বিপজ্জনক ব্যাপারকে প্রতিহত করতে এবং পুলিশ নারী উত্ত্যক্তকারীদের ধরতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে মহিলা পুলিশের প্রয়োগ ভাল ফলাফল দেয়।[১৩] বিভিন্ন ষরে মহিলা পুলিশের বিশেষ স্টেশন, মহিলাদের জন্য হেল্পলাইন চালু ও পুলিশের মাঝে নারী উত্ত্যক্তকরণ বিরোধী বিভাগ গঠনের মাধ্যমে বিষয়টা পরিলক্ষিত হয় তখন।[১৪]
এ সময়ে প্রচুর অভিযোগ আসতে থাকে যৌন হয়রানির মতো নারী উত্ত্যক্তকরণের অভিযোগ নিয়ে কারণ জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি পালটে গিয়েছিল নারী উত্ত্যক্তকারীদের প্রতি।তবে নারী উত্ত্যক্তকরণের মাত্রা বাড়তেই থাকে যেমন তা পৌছে এসিড সন্ত্রাস পর্যন্ত , তাই তামিল নাড়ু সরকার নারী উত্ত্যক্তকরণকে জামিনের অযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে। এ সময়ে আরো দেখা যায় যে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং কনেকে পুড়িয়ে মারার ঘটনাও বাড়তে থাকে। নারী উত্ত্যক্তকরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার আন্দোলনের ফলে দিল্লি নারী উত্ত্যক্তকরণ নিষিদ্ধকরণ বিল ১৯৮৪ পাস হয়।
১৯৯৮ সালে চেন্নাইয়ে সারিকা শাহ নামের ছাত্রীর মৃত্যুর ফলে নারী উত্ত্যক্তকরণের বিরুদ্ধে শাস্তি আরও জোরদার করা হয়।[১৫] এত ঘটনার পর কমপক্ষে আধা ডজন ঘটনা ঘটে আত্নহত্যার নারী উত্ত্যক্তকরণের কারণে।২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চারজন তরুণকে ভাদোদারার এম এস বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নির্যাতন করে পরিবার ও সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের কাছে কারণ তারা একটি ছাত্রীকে এসডি হল ছাত্রাবাসের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছাত্রীকে বাজে মন্তব্য করছিল।[১৬]
মাঝে মাঝে সামজিক লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েরা কোন অভিযোগও জানায় না, পুলিশ নারী উত্ত্যক্তকারীকে ছেড়ে দেয় লোকহাসানো "মুরগা" শাস্তি দিয়ে।[১৭][১৮] ২০০৮ সালে দিল্লিতে বিচারক একজন ১৯ বছর বয়সী তরুণকে ছেড়ে দেয় ৫০০ জনসতেচনতামূলক লিফলেট বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিলি করার শাস্তি দিয়ে ।[১৯]
Crimes Against Women and Protective Laws, by Shobha Saxena. Published by Deep & Deep Publications, 1995.
Sexual Harassment: Contemporary Feminist Perspectives, by Alison M. Thomas, Celia Kitzinger. Published by Open University Press, 1997. আইএসবিএন০-৩৩৫-১৯৫৮০-৬.
Chapt. 10: Sexual Harassment In India: A Case Study of Eve-Teasing in Historical Perspective. Rethinking Sexual Harassment, by Clare Brant, Yun Lee Too. Published by Pluto Press, 1994. আইএসবিএন০-৭৪৫৩-০৮৩৮-৪. Page 200.
↑Eve-TeasingThe Official Dictionary of Unofficial English, by Grant Barrett. Published by McGraw-Hill Professional, 2006. আইএসবিএন০-০৭-১৪৫৮০৪-২. Page 109
↑Eve-TeasingImage Makers: An Attitudinal Study of Indian Police, by Giriraj Shah. Published by Abhinav Publications, 1993
আইএসবিএন৮১-৭০১৭-২৯৫-০. Page 233-234.
↑Sexual HarassmentIndian Feminisms: Law, Patriarchies and Violence in India, by Geetanjali Gangoli. Published by Ashgate Publishing, Ltd., 2007. আইএসবিএন০-৭৫৪৬-৪৬০৪-১.Page 63-64
↑Rethinking Violence Against Women, by Russell Dobash, Harry Frank Guggenheim Foundation. Published by SAGE, 1998. আইএসবিএন০-৭৬১৯-১১৮৭-১Page 58
↑Eve teasing Women Police in a Changing Society: Back Door to Equality, by Mangai Natarajan. Published by Ashgate Publishing, Ltd., 2008. আইএসবিএন০-৭৫৪৬-৪৯৩২-৬. Page 54