তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
জন্ম(১৮৯৮-০৭-২৩)২৩ জুলাই ১৮৯৮
লাভপুর, বীরভূম জেলা, বাংলা, ব্রিটিশ ভারত (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
মৃত্যুসেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৭১(১৯৭১-০৯-১৪)
কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
পেশারাজনীতিবিদ, সাহিত্যিক
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্বব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৮-১৯৪৭)
ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৭১)
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, কলকাতা
সাউথ সাবার্বান কলেজ, কলকাতা
সময়কাল১৯২৬-১৯৭১
উল্লেখযোগ্য পুরস্কাররবীন্দ্র পুরস্কার
সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার
জ্ঞানপীঠ পুরস্কার
পদ্মভূষণ
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূর্তি, লাভপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (২৩ জুলাই, ১৮৯৮−সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৭১) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর এক বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তিনি ৬৫টি উপন্যাস, ৫৩টি ছোটোগল্প-সংকলন, ১২টি নাটক, ৪টি প্রবন্ধ-সংকলন, ৪টি স্মৃতিকথা, ২টি ভ্রমণকাহিনি, একটি কাব্যগ্রন্থ এবং একটি প্রহসন রচনা করেন। আরোগ্য নিকেতন উপন্যাসের জন্য তারাশঙ্কর ১৯৫৫ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার ও ১৯৫৬ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার এবং ১৯৬৭ সালে গণদেবতা উপন্যাসের জন্য জ্ঞানপীঠ পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া ১৯৬২ সালে তিনি পদ্মশ্রী এবং ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ সম্মান অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন।[]

তারাশঙ্করের উপন্যাস ও ছোটোগল্প অবলম্বনে বাংলা ভাষায় একাধিক জনপ্রিয় ও সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে সত্যজিৎ রায় পরিচালিত জলসাঘরঅভিযান, অজয় কর পরিচালিত সপ্তপদী, তরুণ মজুমদার পরিচালিত গণদেবতা, তপন সিংহ পরিচালিত হাঁসুলী বাঁকের উপকথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

জীবনী

জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়

১৮৯৮ সালের ২৩ জুলাই ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির (অধুনা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের) অন্তর্গত বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে এক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। উল্লেখ্য, ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারের সমস্যা ও লাভপুর-সন্নিহিত অঞ্চলের সাধারণ জনজীবন পরবর্তীকালে তারাশঙ্করের আঞ্চলিক উপন্যাস গুলির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছিল। তাঁর পিতার নাম ছিল হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতার নাম ছিল প্রভাবতী দেবী। তারাশঙ্করের পিতৃ বিয়োগ হয় ১৩১৩ সালের আশ্বিন মাসে নবমীর দিন। হিসাব মতো সেটি ছিল ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ, তারাশঙ্করের বয়স তখন আট বছর। তারাশঙ্কর ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯১৬ সালে। আগের বছর পরীক্ষা দিয়েও পাস করতে পারেননি, ১৯১৬ সালে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন। ১৯১৬ সালে লাভপুরের যাদবলাল এইচ. ই. স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি উচ্চশিক্ষার্থে কলকাতায় আসেন এবং প্রথমে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ও পরে সাউথ সাবআর্বান কলেজে (অধুনা আশুতোষ কলেজ) ভর্তি হন। কিন্তু ভগ্ন স্বাস্থ্য ও স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে তিনি লেখাপড়া সম্পূর্ণ করতে পারেননি।[]

১৯১৬ সালেই উমাশশী দেবীর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন তারাশঙ্কর। তাঁদের দুই পুত্র সনৎকুমার ও সরিৎকুমারের জন্ম যথাক্রমে ১৯১৮ ও ১৯২২ সালে এবং তিন কন্যা গঙ্গা, বুলু ও বাণীর জন্ম যথাক্রমে ১৯২৪, ১৯২৬ ও ১৯৩২ সালে। মধ্যম কন্যা বুলু ১৯৩২ সালেই মারা যায়।[]তারাশঙ্কর কোনও দিনই বিধানসভার সদস্য হননি। ১৯৫২ সালে বিধান পরিষদের মনোনীত সদস্য হয়েছিলেন, ১৯৬০ সালে রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত হওয়ার আগে পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন। নোবেল পুরস্কারের জন্যে তিনি মনোনীত হয়েছিলেন, কিন্তু মৃত্যু হওয়াতেই তিনি তা পাননি। যতদূর জানা যায় চূড়ান্ত মনোনয়নের আগে বাছাইপর্বে আরও কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর নামও বিবেচিত হয়েছিল, সে সময়েই তাঁর মৃত্যু হওয়ায় সে নাম আর চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছায়নি।

সম্প্রতি নোবেল কমিটি জানিয়েছেন যে ১৯৭০ সালে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন, কিন্তু সঠিক অনুবাদের অভাব এবং তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণে সেই নোবেল আর পাওয়া হয়নি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সে বছরে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন চিলির পাবলো নেরুদা।

তারাশঙ্কর যে সব পুরস্কার পেয়েছিলেন তা সবই কলকাতা বসবাসের সময়ে। স্বাভাবিক ভাবেই পুরস্কারের সবগুলি স্মারকও তাঁর টালা পার্কের বাড়িতে রক্ষিত ছিল। তারাশঙ্করের সমস্ত পুরস্কার ও অন্য স্মৃতিচিহ্নগুলি বর্তমানে টালার বাসভবনে (এখন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের এক্তিয়ারভুক্ত), পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমিতে এবং কলকাতা জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। অল্প কিছু জিনিস আছে লাভপুরের ধাত্রীদেবতায়, সেগুলি পাওয়া গিয়েছে তারাশঙ্করের বংশধরদের সৌজন্যে।

সাহিত্যকীর্তি: প্রাক্-স্বাধীনতা যুগ

১৯৩০ সালে রাজনৈতিক আন্দোলনে যোগদান করে তারাশঙ্কর গ্রেফতার হয়েছিলেন; সেই বছর ডিসেম্বর মাসে কারাগার থেকে মুক্তি লাভও করেন। ১৯৩২ সালে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয় তাঁর। সেই বছরই প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস চৈতালী ঘূর্ণি[]

১৯৩৫ ও ১৯৩৭ সালে লাভপুরের অধিবাসীরা তারাশঙ্করকে দুই বার সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন। এরপর ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত হয় ধাত্রী দেবতা উপন্যাসটি। ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে একটি বাড়ি ভাড়া করে নিজের পরিবারবর্গকে কলকাতায় নিয়ে আসেন। ১৯৪১ সালে তিনি সপরিবারে চলে যান কলকাতার উত্তর শহরতলি অঞ্চলের বরানগরে। ১৯৪২ সালে তিনি বীরভূম জেলা সাহিত্য সম্মেলনের পৌরোহিত্য করেন। সেই বছরই তিনি ফ্যাসিবাদ-বিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি কানপুর প্রবাসী সাহিত্য সম্মেলনে পৌরহিত্য করেন। এই সময়কালের মধ্যেই একে একে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস কালিন্দী (১৯৪০), গণ দেবতা (১৯৪৩), মন্বন্তর (১৯৪৩), পঞ্চগ্রাম (১৯৪৪), কবি (১৯৪৪), সন্দীপন পাঠশালা (১৯৪৬) ও অভিযান (১৯৪৬)। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতায় আয়োজিত প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেছিলেন। সেই বছরই তিনি বোম্বাইতে অনুষ্ঠিত সুবর্ণ জয়ন্তী প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন। ১৯৪৭ সালেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তারাশঙ্করকে শরৎ স্মৃতি পদক প্রদান করে। সেই বছর জুলাই মাসে জীবনের পঞ্চাশ-বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের লেখকেরা তাঁকে সম্বর্ধনা দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতার টালা পার্ক অঞ্চলে নতুন বাড়ি তৈরি করে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন তারাশঙ্কর।[]

সাহিত্যকীর্তি: স্বাধীনতা-উত্তর যুগ

১৯৫১ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের একটি আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৫২ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য মনোনীত হয়েছিলেন।[]

১৯৫৪ সালে তিনি মায়ের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৫৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আরোগ্য নিকেতন উপন্যাসের জন্য তাঁকে রবীন্দ্র পুরস্কারে সম্মানিত করে। ১৯৫৬ সালে চীনা লেখক লু-শুনের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ভারত সরকার তাঁকে চীনে প্রেরণ করে; কিন্তু পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি রেঙ্গুন থেকেই ফিরে আসেন। সেই বছরই তিনি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে চীন সরকারের আমন্ত্রণে তিনি চীন সফরে যান। ১৯৫৮ সালে তিনি আফ্রো-এশীয় লেখক সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক সমিতিতে যোগ দিতে সোভিয়েত ইউনিয়নে যান। সেই বছরই আফ্রো-এশীয় লেখক সম্মেলনের ভারতীয় লেখকদের নেতা হিসেবে তিনি গিয়েছিলেন তাসখন্দে[]

১৯৫৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তারাশঙ্করকে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক প্রদান করে। সেই বছরই মাদ্রাজে আয়োজিত সর্বভারতীয় লেখক সম্মেলনে পৌরোহিত্য করেন তিনি। ১৯৬০ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা থেকে অবসর গ্রহণ করেন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংসদের সদস্য মনোনীত হন। এই উপলক্ষ্যে হাওড়া জেলার বাঁটরার অধিবাসীবৃন্দ তাঁকে গণসম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেছিল। একই বছর লাভপুরের অধিবাসীরাও তাঁকে তৃতীয়বার সম্বর্ধিত করেন। ১৯৬২ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মান লাভ করেন। এই বছরই তাঁর জ্যেষ্ঠ জামাতা শান্তিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু ঘটলে ভগ্নহৃদয় তারাশঙ্কর অন্যদিকে মনোযোগ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য ছবি আঁকা ও কাঠের পুতুল তৈরিতে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি শিশিরকুমার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি সংসদের সদস্যপদ থেকে অবসর নেন। ১৯৬৬ সালে তিনি নাগপুর বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে পৌরোহিত্য করেন। ১৯৬৭ সালে গণদেবতা উপন্যাসের জন্য তিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন। এই উপলক্ষ্যে কলকাতা পৌরসংস্থা তাঁকে গণসম্বর্ধনা দিয়েছিল।[]

সত্তর বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসীরা মহাজাতি সদনে তাঁকে আরেকটি সম্বর্ধনা দিয়েছিল। ১৯৬৮ সালে তিনি পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত হন। সেই বছরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডি.লিট. প্রদান করে। ১৯৬৯ সালে তিনি সাহিত্য অকাদেমির ফেলো নির্বাচিত হন। সেই বছরই তাঁর মা প্রভাবতী দেবী প্রয়াত হন এবং তারাশঙ্কর বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি এবং ত্রৈমাসিক পত্রিকা শতরূপা-র সম্পাদকীয় পর্ষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালে তিনি লাভপুরে চতুর্থ সম্বর্ধনা লাভ করেন। ১৯৭১ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে তিনি নৃপেন্দ্রচন্দ্র স্মৃতি বক্তৃতা প্রদান করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁকে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় স্মৃতি বক্তৃতা প্রদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।[]

মৃত্যু

১৯৭১ সালের জুলাই মাসে তিনি শরীরে সাইনাস-জাতীয় ব্যথা অনুভব করেন। ১৩ অগস্ট তিনি হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যান; কিন্তু বিকেলের মধ্যেই আবার সুস্থ হয়ে ওঠেন। ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁর শরীর মোটামুটি ঠিকই ছিল। তারপরই আরেক বার তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ১৪ সেপ্টেম্বর ভোরে তাঁর মৃত্যু ঘটে। জ্যেষ্ঠপুত্র সনৎকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তর কলকাতার নিমতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।[]

সাহিত্যকর্ম

উপন্যাস

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত ঔপন্যাসিক।[] তাঁর রচিত উপন্যাসের সংখ্যা প্রায় ৬০। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় তারাশঙ্করের উপন্যাসগুলিকে সময়কাল অনুযায়ী পাঁচটি পর্বে ভাগ করেছেন: []

  1. ১৯৩১ থেকে ১৯৩৭: চৈতালী ঘূর্ণি থেকে আগুন
  2. ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৬: ধাত্রীদেবতা থেকে ঝড় ও ঝরাপাতা
  3. ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৮: হাঁসুলী বাঁকের উপকথা থেকে ডাকহরকরা
  4. ১৯৬০ থেকে ১৯৬৭: মহাশ্বেতা থেকে কীর্তিহাটের কড়চা
  5. ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১: মণিবৌদি থেকে নবদিগন্ত

প্রথম পর্ব: চৈতালী ঘূর্ণি থেকে আগুন

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস চৈতালী ঘূর্ণি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৩২ সালে। তাঁর প্রথম পর্বের অন্যান্য উপন্যাসগুলি হল পাষাণ পুরী (১৯৩৩), নীলকণ্ঠ (১৯৩৩), রাইকমল (১৯৩৫), প্রেম ও প্রয়োজন (১৯৩৬) ও আগুন (১৯৩৮)। তারাশঙ্করের প্রথম উপন্যাস চৈতালী ঘূর্ণি সম্পর্কে প্রেমেন্দ্র মিত্র লিখেছিলেন, "তারাশঙ্কর সাহিত্য জীবনে রাঢ়ের গ্রামাঞ্চল নিয়ে বহু সার্থক ও সুবৃহৎ উপন্যাস লিখেছেন। কিন্তু সে সমস্ত উপন্যাসের প্রায় তাবৎ উপাদানই বীজাকারে যেন তুলনায় নিতান্ত ক্ষুদ্রাকার ‘চৈতালী ঘূর্ণি’র মধ্যেই সঞ্চিত।"[] পাষাণপুরী উপন্যাসে নায়ক কালী কর্মকারের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক বন্ধন মুক্তির আকুলতা এবং রাইকমল উপন্যাসে বৈষ্ণবী নায়িকার মুক্তি সন্ধানের সুর ধ্বনিত হলেও, ড. মুখোপাধ্যায়ের মতে এই দুই উপন্যাস ছিল অপরিণত।[] মহাশ্বেতা দেবী রাইকমল উপন্যাস প্রসঙ্গে ড. মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত না হলেও,[] পাষাণ পুরীনীলকণ্ঠ উপন্যাস দু’টিকে বলেছেন আখ্যান সর্বস্ব ও যেনতেনভাবে রচিত।[]

দ্বিতীয় পর্ব: ধাত্রীদেবতা থেকে ঝড় ও ঝরাপাতা

তারাশঙ্করের উপন্যাস রচনার দ্বিতীয় পর্বে প্রকাশিত উপন্যাসগুলি হল: ধাত্রী দেবতা (১৯৩৯), কালিন্দী (১৯৪০), গণদেবতা (১৯৪৩), মন্বন্তর (১৯৪৩), পঞ্চগ্রাম (১৯৪৪), কবি (১৯৪৪), সন্দীপন পাঠশালা (১৯৪৬), অভিযান (১৯৪৬) ও ঝড় ও ঝরাপাতা (১৯৪৬)। এই উপন্যাসগুলির বিষয়বস্তু রাজনৈতিক বন্ধন মুক্তি ও মানুষের সনাতন জীবন-মুক্তির সাধনা, সমাজের নিচুতলার মানুষের জীবনযাত্রা ও নানাপ্রকার অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। তাই এই উপন্যাসগুলি আদর্শবাদের চড়া সুরে বাঁধা। ধাত্রী দেবতা-র নায়ক শিবনাথ স্বদেশ চেতনা, মাতৃভক্তি ও জনকল্যাণের ত্রিবেণী সঙ্গমে উপনীত হয়েছে। যুগ্ম উপন্যাস গণদেবতা-পঞ্চগ্রাম-এর নায়ক দেবু ঘোষ শোষণ ও বঞ্চনাবিহীন এক ভারতের স্বপ্ন দেখেছে, যেখানে কর্মের পথে নারী হবে পুরুষের সহপথিক। সন্দীপন পাঠশালা-র নায়ক সীতারাম পণ্ডিতও অনুরূপভাবে ভারতের এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। অপর দিকে কবি উপন্যাসের নায়ক নিতাইয়ের পারিবারিক জাত ব্যবসা চুরি ছেড়ে কবিয়ালের বৃত্তি গ্রহণ করে উপলব্ধি করে জীবনের পরম সত্য।[]

তৃতীয় পর্ব: হাঁসুলী বাঁকের উপকথা থেকে ডাকহরকরা

তৃতীয় পর্বে এসে তারাশঙ্করের উপন্যাসগুলি এক নতুন মোড় নিয়েছে। এই পর্বের উপন্যাসগুলি হল: পদচিহ্ন (১৯৫০), উত্তরায়ণ (১৯৫০), হাঁসুলী বাঁকের উপকথা (১৯৫১), তামস তপস্যা (১৯৫২), নাগিনী কন্যার কাহিনী (১৯৫২), আরোগ্য নিকেতন (১৯৫৩), চাঁপাডাঙার বৌ (১৯৫৪), পঞ্চপুত্তলি (১৯৫৬), বিচারক (১৯৫৭), সপ্তপদী (১৯৫৮), বিপাশা (১৯৫৯), রাধা (১৯৫৯), মানুষের মন (১৯৫৯) ও ডাকহরকরা (১৯৫৯)। ড. অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, "আঞ্চলিক উপন্যাসের সার্থক রূপ এখানে দেখি। তার চেয়ে বড় কথা এখানে লেখক হয়ে উঠেছেন কালের রূপকার ‘ক্রনিক্লার’।… বোধ করি এই পর্বটি তারাশংকরের উপন্যাসের সমৃদ্ধতম পর্ব।"[] হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, তামস তপস্যা, পঞ্চপুত্তলিনাগিনী কন্যার কাহিনী-তে পিছিয়ে পড়া জনসমাজের কথা, আরোগ্য নিকেতন, বিচারকসপ্তপদী উপন্যাসে আধুনিক শহুরে শিক্ষিত মানুষের কথা, আবার রাধা উপন্যাসে অষ্টাদশ শতাব্দীর তৃতীয় দশকের প্রেক্ষাপটে বীরভূমের বৈষ্ণব সমাজে মা-মেয়ের জীবনের জটিল রহস্যের কথা ফুটে উঠেছে। অন্যভাবে দেখলে আরোগ্য উপন্যাসহাঁসুলী বাঁকের উপকথা-য় রয়েছে অতীত ও বর্তমানের দ্বন্দ্ব, বিচারক-এ চিত্রিত হয়েছে আধুনিক মানুষের বিবেকের ন্যায়-অন্যায়ের সংঘাত, আবার রাধা উপন্যাসে চিত্রিত হয়েছে সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর জীবন ধর্ম ও প্রেমের তীব্র টানাপোড়েন।[]

চতুর্থ পর্ব: মহাশ্বেতা থেকে কীর্তিহাটের কড়চা

এই পর্বের উপন্যাসগুলি হল: মহাশ্বেতা (১৯৬১), যোগভ্রষ্ট (১৯৬১), না (১৯৬১), নাগরিক (১৯৬১), নিশিপদ্ম (১৯৬২), যতিভঙ্গ (১৯৬২), কান্না (১৯৬২), কালবৈশাখী (১৯৬৩), একটি চড়ুই পাখি ও কালো মেয়ে (১৯৬৩), জঙ্গলগড় (১৯৬৪), মঞ্জরী অপেরা (১৯৬৪), সংকেত (১৯৬৪), ভুবনপুরের হাট (১৯৬৪), বসন্তরাগ (১৯৬৪), স্বর্গমর্ত্য (১৯৬৫), বিচিত্রা (১৯৬৫), গন্না বেগম (১৯৬৫), অরণ্যবহ্নি (১৯৬৬), হীরাপান্না (১৯৬৬), মহানগরী (১৯৬৬), গুরুদক্ষিণা (১৯৬৬), শুকসারি কথা (১৯৬৭), কীর্তিহাটের কড়চা (১৯৬৭) ও শক্করীবাঈ (১৯৬৭)। এই পর্বের উপন্যাসে তারাশঙ্কর জনজীবনের চিত্রন ছেড়ে আকৃষ্ট হয়েছেন নিয়তির খেলা ও অধ্যাত্মবাদের প্রতি। এই পর্বের প্রথম উপন্যাস মহাশ্বেতা-য় তারাশঙ্কর এঁকেছেন এক ভাগ্যবিড়ম্বিতা নারীর ছবি। এই পর্বেই তারাশঙ্কর লিখেছেন নিশিপদ্মযতিভঙ্গ-এর মতো অন্য ধরনের উপন্যাস, মঞ্জরী অপেরা-র মতো বিচিত্র স্বাদের ঘটনাবহুল উপন্যাস, সাঁওতাল বিদ্রোহ নিয়ে লেখা ঐতিহাসিক উপন্যাস অরণ্যবহ্নি, আবার কীর্তিহাটের কড়চা-র মতো মহাকাব্যিক উপন্যাস, যার বিস্তার ১৭৯৯ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সাত পুরুষের কাহিনিতে। তৃতীয় পর্বের আরোগ্য নিকেতন উপন্যাসে তারাশঙ্কর জীবনের প্রতি যে গভীর ভালোবাসার পরিচয় দিয়েছিলেন, তা আরেকবার দিয়েছেন চতুর্থ পর্বের সপ্তপদী উপন্যাসে এসে।[] আবার যোগভ্রষ্ট উপন্যাসে "মানবতাবাদ নয়, গান্ধীবাদ বা সাম্যবাদ নয়, এক রহস্যময় অধ্যাত্মবাদের রূপায়ণ" দেখা যায়।[১০]

পঞ্চম পর্ব: মণিবৌদি থেকে নবদিগন্ত

তারাশঙ্করের উপন্যাস রচনার সর্বশেষ এই পর্বের উপন্যাসগুলি হল: মণিবৌদি (১৯৬৯), ছায়াপথ (১৯৬৯), কালরাত্রি (১৯৬৯), রূপসী বিহঙ্গিনী (১৯৭০), অভিনেত্রী (১৯৭০), ফরিয়াদ (১৯৭১), সুতপার তপস্যা (১৯৭১) ,একটি কালো মেয়ের কথা (১৯৭১), নবদিগন্ত (১৯৭৩)। এই পর্বে তারাশঙ্কর উপন্যাস রচনার প্রচলিত রীতিটিকে ভেঙেছেন। মণিবৌদি, অভিনেত্রী, ফরিয়াদ, একটি কালো মেয়েসুতপার তপস্যা উপন্যাসে ঘটনার বিন্যাসে কথকতার পারম্পর্য রক্ষিত হয়নি। লেখকের বক্তব্য ও চরিত্রের কথা সমান্তরালভাবে এসেছে এবং তার সঙ্গে মিশে গেছে আখ্যানভাগ। ড. অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, "এ-গুলিতে আছে দুটি করে কাহিনী-ধারা – একটি মূল কাহিনীর ধারা, অপরটি শাখা-কাহিনীর ধারা। কিন্তু শেষোক্তর আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমোক্তের অবসান। অনেকটা স্মৃতিচারণের ঢঙে লেখা, তবে তা জনান্তিকে নয়।"[১০] এই উপন্যাসগুলির প্রেক্ষাপট ১৯১০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ষাট বছরের বাংলা। ড. মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, এই বিক্ষুব্ধ সময়ে "মানুষের আমূল পরিবর্তনের পিছনে যে তপস্যা, লেখক তারই রূপ ও কারণ সন্ধান করেছেন শেষ পর্বের উপন্যাসে।"[১০]

মূল্যায়ন

তারাশঙ্কর যে সময় আঞ্চলিক উপন্যাস রচনায় অগ্রসর হন, সেই সময় বাংলা সাহিত্যে গ্রামীণ জীবনকে কেন্দ্র করে আধুনিক উপন্যাস রচনায় কিছুটা ভাটা পড়েছিল।[১১] এই পরিস্থিতিতে তারাশঙ্কর সারা জীবন ধরে নিজের পরিচিত ভূখণ্ডের জনজীবন থেকেই নিজের উপন্যাসের উপাদান সংগ্রহ করে গিয়েছেন। ক্ষেত্রবিশেষে তাঁর উপন্যাসে কল্পনার অবকাশ থাকলেও এগুলি প্রধানত বাস্তব জীবন ও সমাজ চিত্রের আধারে গড়ে উঠেছে। এই কারণে গবেষক সুরেশচন্দ্র মৈত্র লিখেছেন, তারাশঙ্কর হলেন "রাঢ়ের অকৃত্রিম একনিষ্ঠ শিল্পী; চণ্ডীদাসের পর বাংলা সাহিত্যে রাঢ়ের এত বড় নাগরিক দেখা দেননি। রাঢ়ই তাঁর পৃথিবী, বসুন্ধরা।… তারাশংকর রাঢ়ের আদিম প্রকৃতির আধুনিক প্রতিভূ।"[১২] তারাশঙ্করের সমসাময়িক কল্লোল গোষ্ঠীর লেখকদের প্রধান উপজীব্য ছিল বৈধ ও অবৈধ প্রেম। সেই প্রসঙ্গ তারাশঙ্করও গ্রহণ করেছেন, তবে জীবনের অন্যান্য প্রসঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করে তার মূল্য বিবেচনা করেছেন।[১৩] উপন্যাসের "‘ক্রনিকল’-ধর্মিতা" বজায় রাখার ব্যাপারে তারাশঙ্কর তৎপর ছিলেন। ধাত্রীদেবতা, কালিন্দী, গণদেবতা, পঞ্চগ্রাম, হাঁসুলী বাঁকের উপকথা প্রভৃতি উপন্যাসগুলি মূলত সমাজজীবনের উপাখ্যান। পরবর্তীকালে তারাশঙ্কর বাহ্যজীবন থেকে মানুষের অন্তর্জীবনের উপরেও আলোকপাত করেছেন। এই প্রসঙ্গে আরোগ্য নিকেতনসপ্তপদী উপন্যাস দু’টির নাম বিশেষভাবে উল্লেখনীয়।[১৪]

ছোটোগল্প

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা অনেক গল্পই "আখ্যায়িকা"-ধর্মী (Tale)।[১৫] তারাশঙ্করের ছোটোগল্পে সমাজের নানা শ্রেণির মানুষেরা উঠে এসেছে – এদের মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছে দুলে, বাগদি, কাহার প্রভৃতির অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষ, আবার অন্যদিকে রয়েছে ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততন্ত্রের প্রতিনিধিস্থানীয়েরাও। গভীর আস্তিক্যবোধ তাঁর মানসিকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। অধ্যাত্মবাদ ও মহাত্মা গান্ধীর অহিংসার আদর্শকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাশঙ্করের সৃষ্ট চরিত্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে।[১৬] তারাশঙ্করের গান্ধীবাদী মনোভাব তাঁর "শেষকথা", "শবরী" ও "নব মহাপ্রস্থান উপাখ্যান" প্রভৃতি গল্পে ফুটে উঠেছে।[১৭] তারাশঙ্করের "পৌষলক্ষ্মী", "বোবাকান্না", "ইস্কাপন", "অহেতুক" ইত্যাদি গল্পে পঞ্চাশের মন্বন্তর ও সমসাময়িক যুদ্ধ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।[১৮]

লেখার বৈশিষ্ট্য

তারাশঙ্করের লেখায় বিশেষ ভাবে পাওয়া যায় বীরভূম-বর্ধমান অঞ্চলের সাঁওতাল, বাগদি, বোষ্টম, বাউরি, ডোম, গ্রাম্য কবিয়াল সম্প্রদায়ের কথা। ছোট বা বড় যে ধরনের মানুষই হোক না কেন, তারাশঙ্কর তার সব লেখায় মানুষের মহত্ত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন, যা তার লেখার সবচেয়ে বড় গুণ। সামাজিক পরিবর্তনের বিভিন্ন চিত্র তার অনেক গল্প ও উপন্যাসের বিষয়। সেখানে আরও আছে গ্রাম জীবনের ভাঙনের কথা, নগর জীবনের বিকাশের কথা।

চলচ্চিত্রায়ন

তারাশঙ্করের উপন্যাস, গল্প ও নাটক নিয়ে চল্লিশটিরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। সত্যজিৎ রায় তারাশঙ্করের জলসাঘর এবং অভিযান উপন্যাসের সফল চিত্ররূপ দিয়েছেন। তার যেসব রচনা চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে সেগুলির মধ্যে আছে:[১৯][২০]

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস/ছোটোগল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্রের তালিকা
চলচ্চিত্র তারিখ পরিচালক অতিরিক্ত তথ্য
দুই পুরুষ ১৯৪৫ সুবোধ মিত্র
ধাত্রীদেবতা ১৯৪৮ কালীপ্রসাদ ঘোষ
কবি ১৯৪৯ দেবকী বসু
সন্দীপন পাঠশালা ১৯৪৯ অর্ধেন্দু মুখোপাধ্যায়
চাঁপাডাঙ্গার বৌ ১৯৫৪ নির্মল দে নির্মল দে প্রোডাকশনসের ব্যানারে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেন মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, উত্তম কুমার, অনুভা গুপ্ত, কানু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তুলসী চক্রবর্তী[২১]
কালিন্দী ১৯৫৫ নরেশ মিত্র
রাইকমল ১৯৫৫ সুবোধ মিত্র
জলসাঘর ১৯৫৮ সত্যজিৎ রায় ১৯৫৯ সালে শ্রেষ্ঠ বাংলা ভাষার পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী
ডাকহরকরা ১৯৫৮ অগ্রগামী
বিচারক ১৯৫৯ প্রভাত মুখোপাধ্যায়
সপ্তপদী ১৯৬১ অজয় কর
অভিযান ১৯৬২ সত্যজিৎ রায়
কান্না ১৯৬২ অগ্রগামী
আগুন ১৯৬২ অসিত সেন
বিপাশা ১৯৬২ অগ্রদূত
হাঁসুলী বাঁকের উপকথা ১৯৬২ তপন সিংহ
পডিতল মট্টুম পোদুমা ১৯৬২ এ ভীমসিং না উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত তামিল চলচ্চিত্র
উত্তরায়ণ ১৯৬৩ অগ্রদূত
জয়া ১৯৬৫ চিত্ত বসু
আরোগ্য নিকেতন ১৯৬৯ বিজয় বসু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-বিজয়ী
শুকসারী ১৯৬৯ সুশীল মজুমদার "হারানো সুর" ছোটোগল্প অবলম্বনে নির্মিত।
মঞ্জরী অপেরা ১৯৭০ অগ্রদূত
ফরিয়াদ ১৯৭১ বিজয় বসু
দুই পুরুষ ১৯৭২ সুশীল মুখোপাধ্যায়
হার-মানা হার ১৯৭২ সলিল সেন মহাশ্বেতা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত।
কবি ১৯৭৫ সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়
গণদেবতা ১৯৭৯ তরুণ মজুমদার
অগ্রদানী ১৯৮৩ পলাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
বেদেনি ২০১০

রচিত গ্রন্থাবলি

[২২]

উপন্যাস

চৈতালি ঘূর্ণি (১৯৩২), পাষাণপুরী (১৯৩৩), নীলকণ্ঠ (১৯৩৩), রাইকমল (১৯৩৫), প্রেম ও প্রয়োজন (১৯৩৬), আগুন (১৯৩৮), ধাত্রীদেবতা (১৯৩৯), কালিন্দী (১৯৪০), গণদেবতা (১৯৪৩), মন্বন্তর (১৯৪৪), পঞ্চগ্রাম (১৯৪৪), কবি (১৯৪৪), সন্দীপন পাঠশালা (১৯৪৬), ঝড় ও ঝরাপাতা (১৯৪৬), অভিযান (১৯৪৬), সন্দীপন পাঠশালা (কিশোরপাঠ্য সংস্করণ, ১৯৪৮), পদচিহ্ন (১৯৫০), উত্তরায়ণ (১৯৫০), হাঁসুলীবাঁকের উপকথা (১৯৫১), তামস তপস্যা (১৯৫২), নাগিনী কন্যার কাহিনী (১৯৫২), আরোগ্য নিকেতন (১৯৫৩), চাঁপাডাঙার বৌ (১৯৫৪), পঞ্চপুত্তলি (১৯৫৬), বিচারক (১৯৫৭), সপ্তপদী (১৯৫৮), বিপাশা (১৯৫৯), রাধা (১৯৫৯), মানুষের মন (১৯৫৯), ডাকহরকরা (১৯৫৯), মহাশ্বেতা (১৯৬১), যোগভ্রষ্ট (১৯৬১), না (১৯৬১), নাগরিক (১৯৬১), নিশিপদ্ম (১৯৬২), যতিভঙ্গ (১৯৬২), কান্না (১৯৬২), কালবৈশাখী (১৯৬৩), একটি চড়–ইপাখি ও কালো মেয়ে (১৯৬৩), জঙ্গলগড় (১৯৬৪), মঞ্জরী অপেরা (১৯৬৪), সংকেত (১৯৬৪), ভুবনপুরের হাট (১৯৬৪), বসন্তরাগ (১৯৬৪), স্বর্গমর্ত্য (১৯৬৫), বিচিত্রা (১৯৬৫), গন্না বেগম (১৯৬৫), অরণ্যবহ্নি (১৯৬৬), হীরাপান্না (১৯৬৬), মহানগরী (১৯৬৬), গুরুদক্ষিণা (১৯৬৬), শুকসারী কথা (১৯৬৭), শক্করবাঈ (১৯৬৭), মণিবৌদি (১৯৬৯), ছায়াপথ (১৯৬৯), কালরাত্রি (১৯৭০), রূপসী বিহঙ্গিনী (১৯৭০), অভিনেত্রী (১৯৭০), ফরিয়াদ (১৯৭১), শতাব্দীর মৃত্যু (১৯৭১), কিষ্কিন্ধ্যা কাণ্ড (কিশোর উপন্যাস, ১৯৭২)।

ছোটোগল্প

ছলনাময়ী (১৯৩৭), জলসাঘর (১৯৩৮), রসকলি (১৯৩৯), তিন শূন্য (১৯৪২), প্রতিধ্বনি (১৯৪৩), বেদেনী (১৯৪৩), দিল্লী কা লাড্ডু (১৯৪৩), যাদুকরী (১৯৪৪), স্থলপদ্ম (১৯৪৪), তেরশো পঞ্চাশ (১৯৪৪), প্রসাদমালা (১৯৪৫), হারানো সুর (১৯৪৫), ইমারত (১৯৪৭), রামধনু (১৯৪৭), শ্রীপঞ্চমী, কামধেনু (১৯৪৯), মাটি (১৯৫০), শিলাস্থান (১৯৫২), বিস্ফোরণ (১৯৫৫), কালান্তর (১৯৫৬), বিষপাথর (১৯৫৭), রবিবারের আসর (১৯৫৯), পৌষলক্ষ্মী (১৯৬১), আলোকাভিসার, চিরন্তনী (১৯৬২), অ্যাক্সিডেন্ট (১৯৬২), তমসা (১৯৬৩), আয়না (১৯৬৩), চিন্ময়ী (১৯৬৪), একটি প্রেমের গল্প (১৯৬৫), তপোভঙ্গ, দীপার প্রেম (১৯৬৬), নারী রহস্যময়ী (১৯৬৭), পঞ্চকন্যা (১৯৬৭), শিবানীর অদৃষ্ট (১৯৬৭), গোবিন সিংয়ের ঘোড়া (১৯৬৮), জয়া (১৯৬৮), এক পশলা বৃষ্টি (১৯৬৯), মিছিল (১৯৬৯), উনিশশো একাত্তর (১৯৭১)।

নাটক

কালিন্দী (১৯৪২), দুইপুরুষ (১৯৪৩), পথের ডাক (১৯৪৩), বিংশ শতাব্দী (১৯৪৫), দ্বীপান্তর (১৯৪৫), যুগবিপ্লব (১৯৫১), কবি (১৯৫৭), কালরাত্রি (১৯৫৭), সংঘাত (১৯৬২), আরোগ্য নিকেতন (১৯৬৮)

প্রবন্ধ সংকলন

সাহিত্যের সত্য (১৯৬১), ভারতবর্ষ ও চীন (১৯৬৩), রবীন্দ্রনাথ ও বাংলার পল্লী (১৯৭১)। স্মৃতিকথা: আমার কালের কথা (১৯৫১), বিচিত্র স্মৃতিকাহিনী (১৯৫৩), আমার সাহিত্য জীবন, প্রথম খণ্ড (১৯৫৩), কৈশোর স্মৃতি (১৯৫৬), আমার সাহিত্য জীবন, দ্বিতীয় খণ্ড (১৯৬২)

রচনা-সংকলন

তারাশঙ্করের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৪৭), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৫০), তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রিয় গল্প (১৯৫৩), স্বনির্বাচিত গল্প (১৯৫৪), গল্প-সঞ্চয়ন (১৯৫৫), ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৫৬), রচনাসমগ- প্রথম খণ্ড (১৯৫৯), প্রেমের গল্প (১৯৬১), ছোটদের ভালো ভালো গল্প (১৯৬২), গল্প-পঞ্চাশৎ (১৯৬৩), কিশোর সঞ্চয়ন (১৯৬৬), ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৬৯)

প্রহসন

চকমকি (১৯৪৫)

ভ্রমণসাহিত্য

মস্কোতে কয়েক দিন (১৯৫৯)

কাব্যগ্রন্থ

ত্রিপত্র (১৯২৬)

পুরস্কার

১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছ থেকে “রবীন্দ্র পুরস্কার” লাভ করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে “সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার” পান। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চীন সরকারের আমন্ত্রণে চীন ভ্রমণে যান। এর পরের বছর তিনি অ্যাফ্রো-এশিয়ান লেখক সঙ্ঘের কমিটি গঠনের প্রস্ততিমূলক সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন গমণ করেন। এর পর তিনি তাসখন্দে অনুষ্ঠিত অ্যাফ্রো-এশিয়ান লেখক সম্মেলনে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তারাশঙ্কর ভারত সরকারের পদ্মশ্রী ও ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন।[২৩] কৃষ্ণ কৃপালনী ১৯৭১ সালে তাঁর নাম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য সুইডিশ একাডেমির নিকট পাঠিয়েছিলেন।

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. "Nomination Archive - Tarashankar Bandyopadhyay"NobelPrize.org। এপ্রিল ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০২০ 
  2. মেকার্স অফ ইন্ডিয়ান লিটারেচার: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (ইংরেজি), মহাশ্বেতা দেবী, সাহিত্য অকাদেমি, নতুন দিল্লি, ১৯৮৩, পৃ. ৭৭-৭৯
  3. সাহিত্যের ইয়ারবুক ২০১০, জাহিরুল হাসান, পূর্বা, কলকাতা, ২০১০, পৃ. ৩৭
  4. কালের প্রতিমা: বাংলা উপন্যাসের পঁচাত্তর বছর (১৯২৩-১৯৯৭), অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০১৯ সংস্করণ, পৃ. ৩৫-৩৬
  5. "তারাশঙ্কর", প্রেমেন্দ্র মিত্র, দেশ, ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সংখ্যা; উদ্ধৃত হয়েছে: কালের প্রতিমা: বাংলা উপন্যাসের পঁচাত্তর বছর (১৯২৩-১৯৯৭), অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০১৯ সংস্করণ, পৃ. ৩৬-এ
  6. কালের প্রতিমা: বাংলা উপন্যাসের পঁচাত্তর বছর (১৯২৩-১৯৯৭), অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০১৯ সংস্করণ, পৃ. ৩৬
  7. মেকার্স অফ ইন্ডিয়ান লিটারেচার: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (ইংরেজি), মহাশ্বেতা দেবী, সাহিত্য অকাদেমি, নতুন দিল্লি, ১৯৮৩, পৃ. ৪৮
  8. মেকার্স অফ ইন্ডিয়ান লিটারেচার: তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় (ইংরেজি), মহাশ্বেতা দেবী, সাহিত্য অকাদেমি, নতুন দিল্লি, ১৯৮৩, পৃ. ৩৪
  9. কালের প্রতিমা: বাংলা উপন্যাসের পঁচাত্তর বছর (১৯২৩-১৯৯৭), অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০১৯ সংস্করণ, পৃ. ৩৭
  10. কালের প্রতিমা: বাংলা উপন্যাসের পঁচাত্তর বছর (১৯২৩-১৯৯৭), অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়, দে’জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০১৯ সংস্করণ, পৃ. ৩৮
  11. "তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়: উপন্যাসে ও উপকথায় অকৃত্রিম", সুরেশচন্দ্র মৈত্র, প্রসঙ্গ: বাংলা উপন্যাস, সম্পাদনা: ড. অরুণ সান্যাল, ওয়েস্টবেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৬০ সংস্করণ, পৃ. ২৯৩-৯৫
  12. "তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়: উপন্যাসে ও উপকথায় অকৃত্রিম", সুরেশচন্দ্র মৈত্র, প্রসঙ্গ: বাংলা উপন্যাস, সম্পাদনা: ড. অরুণ সান্যাল, ওয়েস্টবেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৬০ সংস্করণ, পৃ. ২৯৫-৯৬, ৩১৮
  13. "তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়: উপন্যাসে ও উপকথায় অকৃত্রিম", সুরেশচন্দ্র মৈত্র, প্রসঙ্গ: বাংলা উপন্যাস, সম্পাদনা: ড. অরুণ সান্যাল, ওয়েস্টবেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৬০ সংস্করণ, পৃ. ২৯৬
  14. "তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়: উপন্যাসে ও উপকথায় অকৃত্রিম", সুরেশচন্দ্র মৈত্র, প্রসঙ্গ: বাংলা উপন্যাস, সম্পাদনা: ড. অরুণ সান্যাল, ওয়েস্টবেঙ্গল পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৬০ সংস্করণ, পৃ. ৩১৩
  15. সাহিত্যে ছোটগল্প, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৪০৫ সংস্করণ, পৃ. ১৯৪
  16. "রবীন্দ্রোত্তর বাংলা ছোটগল্প: আধুনিকতার নানা মাত্রা", সাবিত্রী নন্দ চক্রবর্তী, প্রবন্ধ সঞ্চয়ন, সম্পাদনা: ড. সত্যবতী গিরি ও ড. সমরেশ মজুমদার, রত্নাবলী, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ১২৬০
  17. "বিংশ শতাব্দীর বঙ্গীয় গণআন্দোলন ও বাংলা কথাসাহিত্য", রবীন পাল, প্রবন্ধ সঞ্চয়ন, সম্পাদনা: ড. সত্যবতী গিরি ও ড. সমরেশ মজুমদার, রত্নাবলী, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ১২৭০
  18. "দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মন্বন্তর ও দেশভাগ: বাংলা কথাসাহিত্যে তার চিত্ররূপ", প্রণতি চক্রবর্তী, প্রবন্ধ সঞ্চয়ন, সম্পাদনা: ড. সত্যবতী গিরি ও ড. সমরেশ মজুমদার, রত্নাবলী, কলকাতা, ২০০৬, পৃ. ১২৭০
  19. তারাশঙ্কর ও বাংলা চলচ্চিত্র : ধ্রুবগোপাল মুখোপাধ্যায়। সাহিত্য ও সংস্কৃতি:তারাশঙ্কর স্মৃতি সংখ্যা, ১৩৯৯
  20. বিশ শতকের বাংলা ছবি : সম্পাদনা তপন রায়, ২০০১
  21. "চাঁপাডাঙ্গার বৌ (১৯৫৪) - রিভিউ, স্টার কাস্ট, নিউজ, ফোটোজ"সিনেস্তান। ২০২০-০৪-১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-১১ 
  22. https://www.sylhettoday24.news/news/details/Literature/8923
  23. "পুরস্কার" 

বহিঃসংযোগ

Read other articles:

Драфт НБА 2022 года Дата 23 июня 2022 Место Барклайс-центр, Бруклин, Нью-Йорк Выбрано игроков 58 Раундов 2 Первая трансляция ESPN, ABC Первый выбор Паоло Банкеро (Орландо Мэджик) 20212023 Драфт НБА 2022 года состоялся 23 июня 2022 года в спортивном комплексе «Барклайс-центр» в Бруклин...

 

  Pesi piumaParigi 1924 Informazioni generaliLuogoVélodrome d'hiver, Parigi Periodo21 luglio 1924 Partecipanti21 da 11 nazioni Podio Pierino Gabetti  Italia Andreas Stadler  Austria Arthur Reinmann  Svizzera Edizione precedente e successiva Anversa 1920 Amsterdam 1928 Voce principale: Sollevamento pesi ai Giochi della VIII Olimpiade. Sollevamento pesi aParigi 1924 Pesi piuma Pesi leggeri Pesi medi Pesi massimi-leggeri Pesi massimi La competizione della categoria pesi ...

 

Футбол на Середземноморських іграх 1979Деталі турніруГосподар  ЮгославіяМісто СплітДата 21 – 29 вересняКількість команд 8 (з 2 конфедерацій)ПризериПереможець  Югославія (2-й титул)Фіналіст Франція3-тє місце  Алжир4-те місце  ГреціяСтатистика турніруМатчів зігр...

كاتدرائية غرناطة معلومات أساسيّة تعديل مصدري - تعديل   كاتدرائية غرناطة. كاتدرائية غرناطة (بالإسبانية: Catedral de Granada)‏ أو كنيسة التجسد الكاتدرائية المقدسة المتروبوليتانية في غرناطة (بالإسبانية: Santa Iglesia Catedral Metropolitana de la Encarnación de Granada)‏ هي كاتدرائية مقرها مدينة غرناطة،[1]...

 

بيريسترويكا البيريسترويكا (بالروسية: перестрoйка) وتعني «إعادة الهيكلة» هي برنامج للإصلاحات الاقتصادية أطلقه رئيس للاتحاد السوفييتى، ميخائيل غورباتشوف وتشير إلى إعادة بناء اقتصاد الاتحاد السوفيتى. صاحبت البيريسترويكا سياسة غلاسنوست والتي تعني الشفافية. يطرح البعض أن ت...

 

Berikut adalah Daftar perguruan tinggi swasta di Papua, yang pembinaannya berada di bawah Kementerian Pendidikan dan Kebudayaan Republik Indonesia dan Perguruan Tinggi Swasta Keagamaan, yang pembinaannya berada di bawah Kementerian Agama. Daftar ini tidak termasuk Perguruan Tinggi Kedinasan yang pembinaannya berada dibawah masing-masing kementerian/lembaga. Universitas Universitas Internasional Papua, Jayapura Universitas Ottow Geissler, Jayapura Universitas Sains Dan Teknologi Jayapura, Jaya...

Tokajski region winiarski[a] Obiekt z listy światowego dziedzictwa UNESCO Państwo  Węgry Typ kulturowy Spełniane kryterium III, V Numer ref. 1063 Region[b] Europa i Ameryka Północna Historia wpisania na listę Wpisanie na listę 2002na 26. sesji Położenie na mapie WęgierTokajski region winiarski 48°07′17″N 21°24′44″E/48,121389 21,412222 ↑ Oficjalna nazwa wpisana na listę UNESCO ↑ Oficjalny podział dokonany przez UNESCO Ten artykuł dotyczy regionu winia...

 

Commune in Occitania, FranceMantet MentetCommuneA general view of Mantet Coat of armsLocation of Mantet MantetShow map of FranceMantetShow map of OccitanieCoordinates: 42°28′41″N 2°18′28″E / 42.4781°N 2.3078°E / 42.4781; 2.3078CountryFranceRegionOccitaniaDepartmentPyrénées-OrientalesArrondissementPradesCantonLe CanigouGovernment • Mayor (2020–2026) Jean-Luc Blaise[1]Area132.15 km2 (12.41 sq mi)Population (Jan....

 

Benjamín Aráoz Gobernador de Tucumán 20 de febrero de 1894-28 de noviembre de 1895Predecesor Domingo Teófilo PérezSucesor Agustín Segundo Sal (Provisional) Información personalNacimiento 29 de enero de 1856 San Miguel de Tucumán (Argentina) Fallecimiento 28 de noviembre de 1895 (39 años)Nacionalidad ArgentinaFamiliaPadres Epifania Ormaechea Saravia Jesús María AráozInformación profesionalOcupación médico, políticoPartido político Autonomista[editar datos en Wikidata]...

Indian actress and model Kayadu LoharKayadu Lohar in 2022Born (2000-04-11) 11 April 2000 (age 23)Tezpur, Assam, IndiaOccupationsActressModelYears active2021 – present Kayadu Lohar (pronounced [kəjɑːd̪uː loːɦɑːrə]; born 11 April 2000[1]) is an Indian actress and model.[2] She made her acting debut with the Kannada film, Mugilpete (2021).[3][4][5][6] Early life Kayadu Lohar hails from Tezpur, Assam, India, and current...

 

Japanese basketball player Monica OkoyeNo. 99 – Fujitsu Red WavePositionSmall forwardLeagueWJBLPersonal informationBorn (1999-02-07) 7 February 1999 (age 24)Tokyo, JapanNationalityJapaneseListed height5 ft 11 in (1.80 m)Listed weight159 lb (72 kg) Medals Representing  Japan Olympic Games 2020 Tokyo Team FIBA Asia Cup 2021 Jordan 2023 Australia Asian Games 2022 Hangzhou team Monica Okoye (オコエ 桃仁花, Okoe Monika, born 7 February 1999) is a ...

 

Zakłady Budowy Maszyn i Aparatury im. Ludwika Zieleniewskiego w Krakowie SA Najstarsza zachowana część fabryki przy ul. św. Krzyża 16 w Krakowie, stan w 2018 roku. Państwo  Polska Siedziba Kraków Adres ul. Grzegórzecka 69 Data założenia 1804 Forma prawna spółka akcyjna Nr KRS 0000159806 Położenie na mapie KrakowaZakłady Budowy Maszyn i Aparatury im. Ludwika Zieleniewskiego w Krakowie SA Położenie na mapie PolskiZakłady Budowy Maszyn i Aparatury im. Ludwika Zieleniewski...

This article does not cite any sources. Please help improve this article by adding citations to reliable sources. Unsourced material may be challenged and removed.Find sources: Senapati Mahal – news · newspapers · books · scholar · JSTOR (December 2009) (Learn how and when to remove this template message) Senapati Mahal Senapati Mahal is an Indian palace in Kulpahar. See also Senapati fortress This article about a palace in India is a stub. You can hel...

 

British-Australian scholar (born 1969) For the Egyptian weightlifter, see Sara Ahmed (weightlifter). Sara AhmedAhmed lecturing in Geneva in 2019Born (1969-08-30) 30 August 1969 (age 54)Salford, EnglandNationalityBritish and AustralianAlma mater University of Adelaide Cardiff University Occupation(s)Writer, professor, independent feminist scholarKnown forFeminist theory, lesbian feminism, queer theory, critical race theory, postcolonialism, affect theoryWebsitewww.saranahmed.com...

 

Sanskrit school The Universal Gurukul(श्री तिमली संस्कृत पाठशाला)LocationTimli, P.O. DevikhetPauri Garhwal – 246144UttarakhandIndiaInformationSchool typeIndependent boarding schoolMotto'विद्या धर्मेण शोभिते' (Vidya Dharmena Shobhite) – Knowledge Shines with Righteousness.Founded1882School districtPauri GarhwalSpecialistSanskrit and computersPublicationGurukul PatrikaWebsitewww.shritimli.org Shri Timli S...

Southern Luzon CommandCoat of Arms of the AFP Southern Luzon CommandActive1 January 1987 – 15 January 2001; 27 March 2001 – PresentCountry PhilippinesRoleConventional and Unconventional Warfare, Anti-Guerrilla OperationsPart ofArmed Forces of the PhilippinesGarrison/HQCamp Guillermo Nakar, Lucena City, QuezonNickname(s)SOLCOMMotto(s)KatapanganMascot(s)DaggerAnniversariesJanuary 1EngagementsAnti-guerilla operations against the NPA and local criminal elementsDecorations Philippine Repu...

 

American financier (1837–1905) Charles YerkesBornCharles Tyson Yerkes(1837-06-25)June 25, 1837Northern Liberties, Pennsylvania, U.S.DiedDecember 29, 1905(1905-12-29) (aged 68)New York City, New York, U.S.Occupation(s)Entrepreneur and investorKnown forUrban transit financeSpouses Susanna Guttridge Yerkes Mary Adelaide Moore Yerkes Parent(s)Charles Tyson Yerkes Sr. and Elizabeth Link YerkesSignature Charles Tyson Yerkes Jr. (/ˈjɜːrkiːz/ YUR-keez; June 25, 1837 – December 29, 1...

 

This article needs additional citations for verification. Please help improve this article by adding citations to reliable sources. Unsourced material may be challenged and removed.Find sources: St Neots Rowing Club – news · newspapers · books · scholar · JSTOR (April 2023) (Learn how and when to remove this template message) St Neots Rowing ClubLocationSt Neots, Cambridgeshire, United KingdomHome waterRiver Great OuseFounded1865; 158 year...

French racecar driver (born 1980) Nicolas MilanMilan in 2023Nationality FrenchFull nameNicolas MilanBorn (1980-05-07) 7 May 1980 (age 43) Nicolas Milan (Cenon, Gironde, France, May 7 of 1980), is a French automobile racing driver. He specializes in single-brand touring car races. His 15 titles to date make him one of the best drivers in the history of the Clio Cup. Career Nicolas Milan began his career in motorsport in 1999, competing in the French Supertouring Championship with a P...

 

  لمعانٍ أخرى، طالع جوش هاريس (توضيح). هذه المقالة يتيمة إذ تصل إليها مقالات أخرى قليلة جدًا. فضلًا، ساعد بإضافة وصلة إليها في مقالات متعلقة بها. (أبريل 2019) جوش هاريس معلومات شخصية الميلاد 22 يناير 1991 (33 سنة)  دانكنفيل  مواطنة الولايات المتحدة  الطول 71 بوصة  الوزن...

 

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!