জো ম্যাথু মেনি (ইংরেজি: Joe Mennie; জন্ম: ২৪ ডিসেম্বর, ১৯৮৮) নিউ সাউথ ওয়েলসের কফস হার্বার এলাকায় জন্মগ্রহণকারী পেশাদার অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য তিনি। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়কালে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।
ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়া ও মেলবোর্ন রেনেগেডেস দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলে থাকেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিং করেন জো মেনি।
শৈশবকাল
বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শাখায় অধ্যয়ন করছেন তিনি। শৈশবকালের অধিকাংশ সময়ই নিউ সাউথ ওয়েলসে বসবাস করেছেন। ২০১০ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের দ্বিতীয় একাদশে খেলার পর মূল দলে খেলেন। কিন্তু, তাকে যথেষ্ট সংখ্যায় অংশগ্রহণ না করানোয় সাউথ অস্ট্রেলিয়ার দিকে ধাবিত হন। সেখানে তাকে খুব দ্রুত প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট ও লিস্ট এ ক্রিকেটে খেলানো হয়। পাশাপাশি বোলিংয়েরও উত্তরণ ঘটান।
নিউ সাউথ ওয়েলসে কফস হার্বার এলাকায় শৈশবকাল অতিবাহিত করলেও কৈশোরকাল নেলসন বেতে পাড় করেন। এখানে অবস্থানকালেই নিউক্যাসলের কাছাকাছি ওয়েস্টার্ন সাবার্বস ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে গ্রেড ক্রিকেট খেলতে থাকেন। ঐ সময়ে তিনি ব্যাটিং অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। তবে, শারীরিক পূর্ণাঙ্গতা আসায় ফাস্ট বোলারে রূপান্তরিত হন। ১৭ বছর বয়সে জো মেনি কফস হার্বারে ফিরে আসেন। খুব শীঘ্রই নিউ সাউথ ওয়েলস কান্ট্রি কোল্টস দল ও সিডনি গ্রেড ক্রিকেটেওয়েস্টার্ন সাবার্বস ডিস্ট্রিক্টস ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন।
২০১০ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের দ্বিতীয় একাদশের সদস্য হন। কিন্তু, রাজ্য দলের পক্ষে খুব কমই খেলার সুযোগ পেতেন। ফলশ্রুতিতে, ২০১১ সালে অ্যাডিলেডে চলে যান। সেখানে অ্যাডিলেড বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলেন ও রুকি চুক্তিতে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য দলে খেলেন।[১][২][৩][৪]
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
২০১১ সাল থেকে জো মেনি’র প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান রয়েছে। ২০১৫-১৬ মৌসুমের শেফিল্ড শিল্ডে শীর্ষস্থানীয় উইকেট শিকারীতে পরিণত হন। ফলশ্রুতিতে, ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া এ-দলের পক্ষে তাকে যুক্ত করা হয়। এরপর, ২০১৬-১৭ মৌসুমে একদিনের আন্তর্জাতিক ও টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে।
অক্টোবর, ২০১১ সালে লিস্ট এ[৫] ও রেডব্যাকসদের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।[৬]ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সেরা খেলা উপহার দেন। ৭/৯৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়েন তিনি। তন্মধ্যে, ইনিংসের শেষ পাঁচ উইকেট নিয়ে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াকে গুটিয়ে দেন ও রেডব্যাকসদেরকে খেলায় ফেরান।[৭] ২০১১-১২ মৌসুমের শেফিল্ড শিল্ড প্রতিযোগিতায় সাউথ অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকারীতে পরিণত হন।[২] ২৬.২৬ গড়ে ২৩ উইকেট পান তিনি।[৩] ডিসেম্বর, ২০১১ সালে বিগ ব্যাশ লীগ টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় রায়ান ডাফিল্ডের সাথে তিনিও পার্থ স্কর্চার্সের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন। তারা আঘাতপ্রাপ্ত মিচেল জনসন ও মার্ক ক্যামেরনের স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু, অক্টোবর, ২০১২ সালের পূর্ব-পর্যন্ত তার টুয়েন্টি২০ অভিষেক হয়নি। ২০১২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতায় টাইটান্সের বিপক্ষে খেলার মাধ্যমে টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার।[৮]
স্বর্ণালী সময়
২০১২-১৩ মৌসুমের শেফিল্ড শিল্ড প্রতিযোগিতায় পূর্বেকার মৌসুমের তুলনায়ও বেশ ভালো খেলেন। এ পর্যায়ে তিনি ৬/৪৩ পান। এরফলে রেডব্যাকস ভিক্টোরিয়া দলকে মাত্র ১৩৬ রানে গুটিয়ে দিতে সক্ষম হয়।[৯] ঐ প্রতিযোগিতায় মাত্র ছয় খেলায় অংশ নিয়ে ২২.০৩ গড়ে ৩৩ উইকেট পান ও চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন।[৩] এছাড়াও, নিচেরসারিতে কার্যকরী ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে সচেষ্ট হন। কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ৭৯ রানের ইনিংস খেলেন। এটিই তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো অর্ধ-শতরানের ইনিংস ছিল।[১০] তবে, ২০১৩-১৪ মৌসুমে কম সফলতা পান। মাত্র ১৯ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী কয়েক মৌসুমও তাকে এ ধারা অব্যাহত রাখতে হয়।[৩] টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটেও তিনি খেলার ধারায় ছিলেন না। ফলে, দল পরিবর্তন করে পার্থ স্কর্চার্স থেকে হোবার্ট হারিকেন্সে চুক্তিবদ্ধ হন।[১১]
২০১৫-১৬ মৌসুমের শেফিল্ড শিল্ডের খেলায় পুনরায় নিজেকে মেলে ধরেন। পুরো মৌসুমে কোন ইনিংসে পাঁচ-উইকেট না পেলেও ২১.২১ গড়ে ৫১ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীতে পরিণত হন।[২][১২] ১৯৯৬ সাল থেকে প্রথমবারের মতো শেফিল্ড শিল্ডের চূড়ান্ত খেলায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধান রূপকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। পুরো মৌসুমে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সুন্দর খেলা উপহারের জন্যে অসাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে তাকে নীল ড্যানসি পদক প্রদান করা হয়। এছাড়াও, প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার হিসেবে তিনি মৌসুমের সেরা রাজ্য খেলোয়াড় পদক লর্ড হ্যাম্পেন ট্রফি লাভ করেন।[১৩]
অসাধারণ খেলার স্বীকৃতিস্বরূপ অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় দল হিসেবে পরিচিত অস্ট্রেলিয়া এ-দলের সদস্যরূপে ২০১৬ সালে অন্তর্ভুক্ত হন।[১৪] আগস্ট, ২০১৬ সালে পরবর্তী বিগ ব্যাশ লীগ মৌসুমকে ঘিরে সিডনি সিক্সার্সের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন।[১৫]
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একটিমাত্র টেস্টে ও দুইটিমাত্র একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন জো মেনি। ১২ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে হোবার্টে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এটিই তার একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল। এরপর আর তাকে কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে, টেস্ট অভিষেকের পূর্বেই ২ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে জোহেন্সবার্গে একই দলের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেক ঘটে তার। এরপর, ১২ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে কেপটাউনে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ ওডিআইয়ে অংশ নেন তিনি।
সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা গমনার্থে তাকে অস্ট্রেলিয়া একদিনের দলের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১৬] লিস্ট এ খেলার তুলনায় প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে বেশ সফলতা লাভের কারণে ক্ষুদ্রতম পর্যায়ের আন্তর্জাতিক খেলায় তার অন্তর্ভুক্তিতে বেশ বিস্ময়ান্বিত হন। ২০১৫-১৬ মৌসুমের ম্যাটাডোর বিবিকিউস ওয়ান-ডে প্রতিযোগিতায় তার খেলার মান বেশ দূর্বলতর ছিল। সংগৃহীত সাত উইকেটে তিনি ৫০.৮৫ গড়ে লাভ করেন ও ওভার প্রতি পাঁচের অধিক রান খরচ করেছিলেন।[১৭] ২ অক্টোবর, ২০১৬ তারিখে জোহেন্সবার্গে সিরিজের দ্বিতীয় ওডিআইয়ে দক্ষিণআফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক ঘটে তার।[১৮] ঐ খেলায় তিনি অভিষেকে যে-কোন অস্ট্রেলীয় বোলারের তুলনায় সবচেয়ে বাজে বোলিং করেন। অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়া দল মাত্র ১৪২ রানে গুটিয়ে যায়। জো মেনি নির্ধারিত ১০ ওভারে ৮২ রান খরচ করেন। অস্ট্রেলিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে দ্বিতীয় ও সর্বকালের মধ্যে পঞ্চম বড় ধরনের পরাজয়বরণ করে।[১৯]
টেস্ট অভিষেক
দক্ষিণ আফ্রিকায় ওডিআই সিরিজে দূর্বলমানের ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করলেও ২০১৬-১৭ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজ দেশে অনুষ্ঠিত টেস্ট সিরিজে অস্ট্রেলিয়া দলের সদস্য করা হয়। অস্ট্রেলিয়ার সর্বাপেক্ষা প্রতিষ্ঠিত পেস বোলার জ্যাকসন বার্ডকে পাশ কাটিয়ে তাকে রাখা হয়। কেননা, শেফিল্ড শিল্ডে নিচেরসারিতে তার ব্যাটিংয়ের মান শ্রেয়তর ছিল।[২০] সিরিজের প্রথম খেলায় তাকে অস্ট্রেলিয়ার দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়। ফলে, ২০১৬-১৭ মৌসুমের শেফিল্ড শিল্ডে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলার সুযোগ পান।[২১] তবে, প্রথম টেস্টে পিটার সিডল পিঠের আঘাতে আক্রান্ত হলে মেনিকে টেস্ট অভিষেকের জন্যে অস্ট্রেলিয়া দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[২২] ১২ নভেম্বর, ২০১৬ তারিখে জো মেনি’র টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয়। বেন হিলফেনহস তাকে ব্যাগি গ্রীন ক্যাপ উপহার দেন। দক্ষিণ আফ্রিকার তেম্বা বাভুমাকে বিদেয় করে তিনি তার প্রথম টেস্ট উইকেট লাভ করেন।[২৩]
টেস্ট অভিষেকের পর তাকে দলে রাখা হয়নি। বিবিএলের ষষ্ঠ আসরে সিডনি সিক্সার্সের পক্ষে খেলতে থাকেন। দুই খেলায় অংশ নেয়ার পর অনুশীলনীকালে বল তার মাথায় আঘাত হানে ও তাকে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। মস্তিষ্কে কিঞ্চিৎ রক্তক্ষরণের কথা উল্লেখ করা হয়।[২৪] দুই দিন পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। সিক্সার্সের সেমি-ফাইনালে খেলতে ব্রিসবেনে চলে যান। তবে, তিনি ঐ খেলায় অংশ নেননি।[২৫] এরপর তিনি শিল্ডের ক্রিকেটে অংশ নেনন। ঐ মৌসুমের শেষ খেলাটি বেশ ভালোভাবে শেষ করেন। তাসমানিয়ার বিপক্ষে ৫/৬৭ ও ৪/২১ নিয়ে সাউথ অস্ট্রেলিয়াকে উপর্যুপরী দ্বিতীয়বার চূড়ান্ত খেলায় নিয়ে যান।[২৬][২৭]
১০/১১
খেলার ধরন
সাধারণতঃ জো মেনি ফাস্ট বোলার নন। তার বোলিংয়ের গতিবেগ ঘণ্টায় কেবলমাত্র ১৩০ থেকে ১৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।[২৮] উইকেট লাভের জন্যে পেস বোলিং করলেও ধারাবাহিকতা ও নিখুঁতভাব বজায় রাখতে সচেষ্ট তিনি।[২] তার বোলিং ভঙ্গীমা সামনের দিকে ঝুঁকে থাকে যা অধিকাংশ পেস বোলারের চেয়ে ব্যতিক্রম। তবে, সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার ম্যাক্স ওয়াকারের সাথে তাকে তুলনা করা যেতে পারে।[২৮] উচ্চতার কারণে তিনি তার বোলিং থেকে পর্যাপ্ত বাউন্স আদায় করে নিতে সক্ষম। লেগ কাটারেই তিনি অধিক দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন। এরফলে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের দিকে বলটি বাঁক খায় ও স্লিপ অঞ্চলে দণ্ডায়মান ফিল্ডারের দিকে চলে যেতে বাধ্য।[২৮]