ফারুক মাহফুজ আনাম (মঞ্চ নাম জেমস হিসাবেই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়; জন্ম: ২ অক্টোবর ১৯৬৪),[৪] হচ্ছেন একজন বাংলাদেশী গায়ক-গীতিকার, গিটারিস্ট, সুরকার এবং অভিনেতা। তিনি রক ব্যান্ড "ফিলিংস" (বর্তমানে নগর বাউল হিসাবে পরিচিত) এর প্রধান গায়ক, গীতিকার ও গিটারিস্ট, যা তিনি ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।[৫] জেমস নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন, এবং বেড়ে উঠেন চট্টগ্রাম শহরে।[৬]
জেমস ১৯৯০ এর দশকে ফিলিংসের মুখ্যব্যক্তি হিসাবে মূলধারার খ্যাতিতে উঠে এসেছিলেন, যা "বিগ থ্রি অফ রক" এর মধ্যে অন্যতম, যারা এলআরবি এবং অর্কের পাশাপাশি বাংলাদেশে হার্ড রক সংগীত বিকাশ ও জনপ্রিয় করার জন্য প্রশংসিত। ফিলিংসকে বাংলাদেশের সাইকেডেলিক রক এর প্রবর্তক হিসাবে বিবেচনা করা হয়।[৭]
তাকে প্রায়শই "গুরু" নামে অভিহিত করা হয়।[৮][৯]
জেমস ব্যান্ডের পাশাপাশি "অনন্যা" (১৯৮৯), "পালাবে কোথায়?" (১৯৯৫), "দুঃখিনি দুঃখ করোনা" (১৯৯৭), "ঠিক আছে বন্ধু" (১৯৯৯) এর মতো হিট অ্যালবাম দিয়ে সাফল্যের সঙ্গে তার সোলো ক্যারিয়ারও (একক কর্মজীবন) এগিয়ে নিয়ে যান। তিনি বলিউডের চারটি চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও করেন, এগুলো গ্যাংস্টার (২০০৬), ওহ লামহে (২০০৬), লাইফ ইন এ... মেট্রো (২০০৭), ওয়ার্নিং (২০১৩)।[১০]
প্রাথমিক জীবন
জেমসের জন্ম নওগাঁয়, তবে তিনি বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে।[১১] তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা, যিনি পরবর্তীতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সঙ্গীত জেমসের পছন্দের হলেও তার পরিবার তা পছন্দ করত না। গানের জন্য বাবার সাথে অভিমান করে ঘর ছাড়েন তিনি কিশোর বয়সে।[১২]চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং নামক একটি বোর্ডিং-এ তিনি থাকতে শুরু করেন। সেখানে থেকেই তার সঙ্গীতের ক্যারিয়ার শুরু হয়। এহসান এলাহী ফানটি ও কিছু বন্ধুদের নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ফিলিংস নামক একটি ব্যান্ড এবং ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও কন্ঠদাতা হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন।
কর্মজীবন
বাংলাদেশ
চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া ব্যান্ড দল ফিলিংস এর মাধ্যমে তিনি প্রথমে খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি এহসান এলাহী ফানটিকে নিয়ে নগর বাউল নামে ব্যান্ড দল গঠন করেন। তিনি নগর বাউল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরু করেন। গিটার বাজানোতেও তিনি দারুণ পটু। তিনি নগরবাউল ব্যান্ডের মূল ভোকাল ও গিটারিষ্ট হলেও তিনি মূলত তার সলো ক্যারিয়ারকেই বেশি গুরত্ব দেন। অনেক গীতিকার তার জন্য সঙ্গীত রচনা করেছেন। যাদের মধ্যে কবিশামসুর রাহমান, প্রিন্স মাহমুদ, শিবলি উল্লেখযোগ্য। কর্মজীবনের প্রথম দিকে তিনি জিম মরিসন, মার্ক নফলার এবং এরিক ক্লাপটনের মত সঙ্গীত শিল্পীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। ১৯৮৭ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম অ্যালবাম “স্টেশন রোড” মুক্তি পায়। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম একক অ্যালবাম অনন্যা। পরবর্তীতে তিনি ফিলিংস ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন “নগর বাউল”।
বলিউড
বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতে কাজ করার কারণে পশ্চিম বঙ্গেও খুব জনপ্রিয় ছিলেন জেমস। সেই সূত্রে ২০০৪ সালে বাঙালি সঙ্গীত পরিচালক প্রিতমের সাথে মিলিত হন তিনি। ২০০৫ সালে বলিউডের গ্যাংস্টার নামক একটি চলচ্চিত্রে তিনি প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া “ভিগি ভিগি” গানটি ব্যপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় তা বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল॥[১৩] ২০০৬ সালে তিনি ও লামহে নামক চলচ্চিত্রে “চল চলে” গানে কন্ঠ্য দেন। ২০০৭ সালে তিনি লাইফ ইন এ মেট্রো চলচ্চিত্রে আবারও প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গান দুইটি হল রিশতে এবং আলবিদা (রিপ্রাইস)। সর্বশেষ হিন্দি চলচ্চিত্রে তিনি প্লেব্যাক করেছেন ওয়ার্নিং নামক চলচ্চিত্রে। তার গাওয়া বেবাসি গানটি মুক্তি পায় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে।[১৪][১৫][১৬]
মডেলিং
২০০০ সালের প্রথম দিকে জেমস পেপসির একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে অংশগ্রহণ করেন। এটিই ছিল তার কাজ করা প্রথম বিজ্ঞাপন চিত্র। এই বিজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গে প্রচার করা হয়। এরপর তিনি ২০১১ সালে এনার্জি ড্রিংক ব্ল্যাক হর্সের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। বলিউড চলচ্চিত্র লাইফ ইন এ মেট্রোর কিছু অংশে জেমসকে দেখা যায়। যেখানে তিনি একটি ব্যান্ডের সদস্য চরিত্র কিছু অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে ওয়ার্নিং চলচ্চিত্রের বেবাসি গানের ভিডিও চিত্রেও কাজ করেন জেমস। সেখানে তিনি নিজের গাওয়া গানের সাথে ঠোঁট মিলিয়েছেন।
ব্যক্তিগত জীবন
জেমসের প্রথম স্ত্রীর নাম রথী যাকে তিনি ১৯৯১ সালে বিয়ে করেন।[৩] ২০০২ সালে তারা আলাদা হয়ে যান এবং জেমস বিয়ে করেন বেনজির সাজ্জাদকে।[১৭] যার সাথে ১৯৯৯ সালে একটি কনসার্টে তার প্রথম সাক্ষাত হয়। জেমসের দুইটি কন্যা সন্তান (জান্নাত এবং জাহান) ও একটি পুত্র সন্তান (দানেশ) আছে। [১৮][১৯]
রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট
জেমস গাজী আহমেদ শুভ্রর সাথে রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট নামক একটি প্রডাকশন হাউস পরিচালনা করেন। এই প্রডাকশন হাউস ২০১১ আইসিসিক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য বিউটিফুল বাংলাদেশ নামে একটি ভিডিও বিজ্ঞাপন চিত্র তৈরি করে। রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট প্রচুর রিয়ালিটি শো প্রযোজনা করেছে। এর মধ্যে দ্য রকস্টার ২, লাক্স চ্যানেল-আই সুপারস্টার, কে হতে চায় কোটিপতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া রেড ডট টেলিভিশন বিজ্ঞাপন চিত্রও নির্মাণ করে।
↑Md. Rokanuzzaman (১৩ মার্চ ২০১১)। "Wild Horses of Musical Conviction"। দ্য ডেইলি স্টার। ১১ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ অক্টোবর ২০১৩।