চাদ জেমস সেয়ার্স (ইংরেজি: Chadd Sayers; জন্ম: ৩১ আগস্ট, ১৯৮৭) দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলছেন। এছাড়াও, ডানহাতে নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ে নামছেন ‘লিও’ ডাকনামে পরিচিত চাদ সেয়ার্স। বেশ কয়েক মৌসুম সাউথ অস্ট্রেলিয়ান গ্রেড ক্রিকেট লীগে খেলেন। এ সময়েই রাজ্যের সেরা পেস বোলার হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন। এরপর ২০১১ সালে শেফিল্ড শিল্ডে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশ নিতে থাকেন। ২০১৩ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া এ দলের পক্ষে কয়েকটি খেলায় অংশ নেন। বেশ কয়েকবছর টেস্ট খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ হারান। অবশেষে, ৩০ মার্চ, ২০১৮ তারিখে জোহেন্সবার্গে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।
আধুনিককালের বেশীরভাগ বোলারের সাথে তুলনান্তে ধীরগতিসম্পন্ন পেস নিয়ে সুইং বোলিং করে থাকেন চাদ সেয়ার্স। নির্ভুলতা ও ধারাবাহিকতা থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত পেসের অভাবহেতু ক্রিকেটের উচ্চ পর্যায়ে তার অংশগ্রহণ বাঁধার প্রাচীর গড়ে তুলে। মূলতঃ প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের সাথেই শখ্যতা গড়ে তুলেছেন তিনি ও কোন টুয়েন্টি২০ ক্রিকেট খেলছেন না।
ঘরোয়া ক্রিকেট
বেসবল খেলায় পটু চাদ সেয়ার্স ক্রিকেটের দিকে ধাবিত হয়ে পড়েন। উডভিল ক্রিকেট ক্লাবের মাধ্যমে গ্রেড ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন তিনি। শুরুতেই পিঠে আঘাত পান। ফলশ্রুতিতে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে থাকেন। আঘাতের সাথে সংগ্রাম করে দক্ষ পেস বোলার হয়ে উঠেন। স্বীয় ভ্রাতা আরনের সাথে উডভিলের শীর্ষস্থানীয় দলে খেলার সুযোগ লাভে সক্ষমতা দেখান।[১] ২০০৬-০৭ মৌসুমে সাউথ অস্ট্রেলিয়ান গ্রেড ক্রিকেটে শীর্ষস্থানীয় উইকেট সংগ্রাহকে পরিণত হন। ১৪.৬৫ গড়ে ৫৫ উইকেট দখল করেন তিনি।[২] মাত্র এক পয়েন্টের জন্যে মৌসুমের সেরা গ্রেড ক্রিকেটারের সম্মাননা হিসেবে ‘ব্র্যাডম্যান পদক’ লাভ থেকে বঞ্চিত হন।[৩] গ্রেড ক্রিকেটে বেশ ভালো করায় দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য দলের পক্ষে ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯ মৌসুমে রুকি চুক্তিতে খেলেন।[২][৪] এ দুই মৌসুমে গ্রেড ক্রিকেটে ৯০ উইকেট নিয়ে অসাধারণ ফলাফল করেন। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় একাদশের পক্ষে ৭/৬০ লাভের মাধ্যমে রেকর্ড গড়েন। তাসত্ত্বেও, সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলার সুযোগ পাননি। ২০০৯ সালে তাদের তালিকা থেকে বাদ পড়েন তিনি।[১]
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
উচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশগ্রহণের স্বার্থে অন্য রাজ্যে চলে যাবার সিদ্ধান্তের বিষয়ে ভাবতে থাকেন। তাসত্ত্বেও দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করতে থাকেন তিনি। এ পর্যায়ে তার খেলার মান আরও উন্নততর হতে থাকে। ২০১০-১১ মৌসুমে মাত্র ৮.৬৩ গড়ে ৬৫ উইকেট পান ও ‘ব্র্যাডম্যান পদক’ লাভ করেন।[১] অবশেষে, প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ ঘটে চাদ সেয়ার্সের। তাসমানিয়ার বিপক্ষে শেফিল্ড শিল্ডের খেলায় অভিষেক হয় তার। খেলায় তিনি দুই উইকেট পেয়েছিলেন।[৫]
২০১১ সালে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলার জন্যে চাদ সেয়ার্সকে পূর্ণাঙ্গ চুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়।[৬] ২০১১-১২ মৌসুমে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে আরও দুইটি খেলায় অংশ নেন তিনি।[৭] তন্মধ্যে, একটি খেলায় ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট দখল করেছিলেন তিনি।[৮] তবে, ২০১২-১৩ মৌসুমে খেলার জগৎ থেকে দূরে ছিলেন তিনি।[৭] পরের মৌসুমে পার্শ্ব ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে এক মাস খেলতে পারেননি তিনি।[৯] তাসত্ত্বেও ১৮.৫২ গড়ে ৪৮ উইকেট নিয়ে ঐ মৌসুমের শীর্ষ বোলারে পরিণত হয়েছিলেন। মৌসুমের সেরা দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড় হিসেবে ‘নীল ড্যানসি পদক’ বিজয়ী হন তিনি।[৭] সাবেক অস্ট্রেলীয় টেস্ট অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের তুলনায় তিনি মাত্র দুই পয়েন্টে পিছিয়ে থেকে বর্ষসেরা শেফিল্ড শিল্ড খেলোয়াড়ের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন।[১০]
অস্ট্রেলিয়া এ দল
২০১৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজের পূর্বে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া এ দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড গমন করেন। এভাবেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট খেলার সুযোগ হয় তার। এ সফরে ১১.৫৪ গড়ে ১১ উইকেট নিয়ে শীর্ষস্থানে ছিলেন। দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় কোচ ড্যারেন বেরি’র মতে, অ্যাশেজ খেলার জন্যে সম্মুখসারিতে অবস্থান করছিলেন তিনি।[১১] ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৩ সালের অ্যাশেজ সিরিজে কোন খেলায় অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয়নি তার। তবে, ২০১৩-১৪ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত অ্যাশেজ সিরিজে কয়েকজন পেস বোলারের অন্যতম ছিলেন তিনি।[১২] এবারও তাকে খেলানো হয়নি। টেস্ট অভিষেককে সামনে রেখে ২০১৩-১৪ মৌসুমের শেফিল্ড শিল্ডে ৩৬ উইকেট পান।[১৩] ২০১৪ সালেও অস্ট্রেলিয়া এ দলের পক্ষে সুন্দর খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে জাতীয় দল নির্বাচকমণ্ডলীর সুনজরে থাকেন।[১৩] তন্মধ্যে, ভারত এ দলের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট লাভের গৌরব অর্জন করেন তিনি।[১৪]
২০১৪-১৫ মৌসুমের প্রথমার্ধেও বেশ সুন্দর খেলা উপহার দেন তিনি। কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলায় হ্যাট্রিক লাভের মাধ্যমে প্রতিপক্ষের শীর্ষভাগে ধ্বস নামান। ফলশ্রুতিতে ১৯৭৭ সালের পর প্রথম দক্ষিণ অস্ট্রেলীয় হিসেবে হ্যাট্রিক লাভের অধিকারী হন।[১৫] তার এ সাফল্যের সাথে টিম লুডম্যানের নাম জড়িয়ে রয়েছে। পেস বোলারদের বোলিংয়ে দুষ্প্রাপ্য ঘটনা হিসেবে চাদ সেয়ার্সের বলে স্ট্যাম্পিং করতেন তিনি।[১৬] এছাড়াও প্রথমবারের মতো বিগ ব্যাশ লীগের টুয়েন্টি২০ দল অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্সের পক্ষে খেলার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। তবে, চাদ সেয়ার্স কখনও বিবিএলে খেলেননি। তখন থেকেই ক্রিকেটের দীর্ঘ সংস্করণের দিকে মনোনিবেশ ঘটান। পায়ের গোড়ালিতে আঘাতের কারণে অস্ত্রোপচার করতে হয়। ফলশ্রুতিতে, বিবিএলসহ শেফিল্ড শিল্ডের বাদ-বাকি সময়টুকুতে মাঠের বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হন তিনি।[১৭]
নভেম্বর, ২০১৫ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরে আসেন তিনি। নিজস্ব দ্বিতীয় খেলায় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নতুন বল হাতে নিয়ে খেলার প্রথম তিন উইকেট তুলে নেন।[১৮]
নিউজিল্যান্ড গমন, ২০১৫-১৬
আরোগ্য লাভের পর খেলায় ছন্দ ফিরে আসলে ২০১৫-১৬ মৌসুমে নিউজিল্যান্ড সফরের উদ্দেশ্যে ১৪-সদস্যের অস্ট্রেলীয় দলের সদস্যরূপে প্রথমবারের মতো তাকে দলে রাখা হয়। উপযোগী পরিবেশে তার সুইং বোলিং কার্যকরী হবার সম্ভাবনার কারণেই তাকে মনোনীত করা হয়েছিল।[১৯] টেস্টে তার অভিষেক না হলেও নিউজিল্যান্ডে অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলিং কোচ ক্রেগ ম্যাকডারমট ও প্রথিতযশা টেস্ট বোলার পিটার সিডলের সাথে থেকে নিজেকে পরিশীলিত করেন।[২০] অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে শেফিল্ড শিল্ডে খেলেন। এ পর্যায়ে তাসমানিয়ার বিপক্ষে ব্যক্তিগত সেরা ৭/৪৬ বোলিং পরিসংখ্যান গড়ে দলকে বড় ধরনের ইনিংস ব্যবধানে জয় এনে দেন।[২১]
২০১৬-১৭ মৌসুমে সুন্দর শুভসূচনা করেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে তাসমানিয়ার বিপক্ষে এগারো উইকেট লাভের মাধ্যমে পুনরায় ইনিংসের ব্যবধানে জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় ব্যক্তিগত সেরা ৬/৩২ লাভের পর[২২] দ্বিতীয় ইনিংসে ৫/৪৪ পান।[২৩] তন্মধ্যে ইনিংসের প্রথম ওভারেই দুই উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।[২৪]নভেম্বর, ২০১৬ সালে সফররত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টকে ঘিরে অস্ট্রেলীয় টেস্ট দলে তাকে যুক্ত করা হয়।[২৫] তবে এবারো তার খেলার সুযোগ হয়নি। তাসত্ত্বেও, ২০১৬-১৭ মৌসুমে সফরকারী পাকিস্তান দলের বিপক্ষে খেলার জন্যে তাকে রাখা হয়।[২৬] এবারো তাকে নিরাশ হতে হয়। ২০১৬-১৭ মৌসুমে টেস্ট অভিষেক হয়নি তার। তবে শেফিল্ড শিল্ডে খেলোয়াড়ী জীবনের ব্যক্তিগত সেরা খেলা উপহার দেন। শেফিল্ড শিল্ডের চূড়ান্ত খেলায় সাউথ অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে যান। খেলায় ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে ৭/৮৪ পান।[২৭] মৌসুম শেষে ৬২ উইকেট দখল করেন। এবারো তিনি নীল ড্যানসি পদক জয়ে সমর্থ হন।[২৮]
দক্ষিণ আফ্রিকা গমন, ২০১৭
২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের জন্যে আবারও অস্ট্রেলিয়া এ দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন। তবে, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যকার আর্থিক মতানৈক্যের কারণে এ সফর অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তিন বছরের চুক্তির মেয়াদ শেষের দিকে ছিল ও সফরের পূর্বে ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত না হলে খেলোয়াড়েরা অস্ট্রেলিয়া এ দলের সফর বানচালের হুমকি দেয়।[২৯] নতুন করে সমঝোতা না আসায় ঐ সফরটি বাতিল হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ গমনে টেস্ট খেলার সকল সম্ভাবনা তিরোহিত হয়ে তার।[৩০]
নভেম্বর, ২০১৭ সালে অ্যাশেজ সিরিজকে সামনে রেখে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলে তাকে রাখা হয়।[৩১] তবে, তৃতীয় টেস্ট শুরু হবার পূর্বে মিচ মার্শকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়।
টেস্ট ক্রিকেট
২০১৭-১৮ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া দল দক্ষিণ আফ্রিকা গমন করে। ঐ সফরে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সালে জ্যাকসন বার্ড আহত হলে তাকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়।[৩২] অবশেষে, ৩০ মার্চ, ২০১৮ তারিখে মিচেল স্টার্কের পরিবর্তে মাঠে নামেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় তার।[৩৩]এ্যাডাম ভোজেস তাকে ব্যাগি গ্রীন ক্যাপ পরিধান করান। দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স তার প্রথম টেস্ট উইকেট শিকারে পরিণত হন। ঐ একই ওভারে কাগিসো রাবাদাকে আউট করেন তিনি।[৩৪]
গ্রেড ক্রিকেট
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে পেশাদারী পর্যায়ে খেলার পাশাপাশি গ্রেড ক্রিকেটে উডভিল ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দুর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ উডভিলের অধিনায়কের দায়িত্বভার তার ওপর অর্পণ করা হয়। একই সময়ে শীর্ষসারির ব্যাটসম্যান হিসেবে তার ভাই আরন ক্লাবের সহঃঅধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তারা ক্লাবের অধিনায়ক ও সহঃঅধিনায়কের দায়িত্বে থাকাকালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার ও তাদের পিতা ডিন সেয়ার্স ক্লাবের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তাদের সন্তানদেরকে নেতৃত্বের দায়িত্বে রাখতেন। ২০১৪ সালে ক্লাব কর্তৃপক্ষ আরনের পরিবর্তে অন্য কাউকে সহঃঅধিনায়কের দায়িত্বে রাখার চিন্তা-ভাবনা করতে থাকে। কেননা, সেয়ার্সত্রয়ের মাঝে কর্তৃত্বের মনোভাব বজায় রাখার ধারণা প্রকাশ পেয়েছিল। ফলশ্রুতিতে, নির্ধারিত সময়ের এক বছর পূর্বেই ডিন সেয়ার্স কোচের দায়িত্বে থেকে অব্যাহতি নেন ও সেয়ার্স ভ্রাতৃদ্বয় ক্লাব ত্যাগ করেন।[৩৫] আরন সেয়ার্স পোর্ট অ্যাডিলেড ক্রিকেট ক্লাব ও চাদ সেয়ার্স গ্লেনেলগ ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দেন।[১]
খেলার ধরন
ফাস্ট মিডিয়াম বোলার হিসেবে চাদ সেয়ার্স ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে দেরীতে আউটসুইং বোলিংয়ে দক্ষতা প্রদর্শনে সক্ষমতা দেখিয়েছেন।[৭][১৩] একবিংশ শতাব্দীর অন্যান্য পেস বোলারদের ন্যায় চাদ সেয়ার্স অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন ফাস্ট বোলার ছিলেন না। তিনি নির্ভুল বোলিংয়ে মনোযোগী হন ও কার্যকরী সুইংয়ে উইকেট লাভের দিকে মনোনিবেশ ঘটান। পেস বোলারদের অনুপযোগী পিচেও তিনি নিজের সমর্থ তুলে ধরতে সক্ষম হন।[৩৬] সেয়ার্স প্রাচীনধর্মী ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেন ও তার পেস ব্যাটসম্যানদের মনে ভীতিপ্রদ অবস্থা আনয়ণ কিংবা বোলিংয়ের বিচিত্রতা আনয়ণ করতে পারেন যা টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটের মূল উপাদানবিশেষ। সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার অ্যাশলে মলেটের অভিমত, বব ম্যাসি ও টেরি অল্ডারম্যানের ন্যায় সাবেক অস্ট্রেলীয় সুইং বোলারের সাথে সেয়ার্সের তুলনা করা যায়। তাদের মতোই তিনি অত্যন্ত ধৈর্য্যশীল ও লক্ষ্য নিয়ে অগ্রসর হন।[১৬]
খেলোয়াড়ী জীবনের সূচনালগ্নে চাদ সেয়ার্সকে অত্যন্ত নিচুমানের ও ধীরগতিসম্পন্ন বোলার হিসেবে মনে করা হতো যা ক্রিকেটের উচ্চ পর্যায়ের উপযোগী নয়। এরফলেই তাকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার রাজ্য দলে থাকতে বেশ বাঁধার প্রাচীর গড়ে তুলেছিল। [১] এছাড়াও, ধীরগতিসম্পন্ন পেস বোলিংও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে প্রবেশের প্রধান অন্তরায় ছিল। অস্ট্রেলীয় কোচ ড্যারেন লেহম্যানের অভিমত, ১৪০ কিমি/ঘ গতিবেগের অধিক বোলিংয়ের উপযোগী বোলারদেরকেই তিনি দলে প্রাধান্য দেবেন যা সেয়ার্সের ছিল না।[১৬][৩৬][৩৭]
লিস্ট এ ক্রিকেট কিংবা টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটের চেয়ে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের দিকেই অধিক মনোযোগী তিনি। বেশ কয়েকবার শেফিল্ড শিল্ডের শীর্ষস্থানীয় উইকেট সংগ্রাহক হলেও পেস ও বলের বিচিত্রতা না থাকার কারণে টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটের প্রাধিকারপ্রাপ্ত দলগুলোর কাছ থেকে নিয়মিতভাবে উপেক্ষিত হয়ে আসছেন।[১৬]শেফিল্ড শিল্ডের খেলাগুলো গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে দুই মাসের বিরতি দেয়া হয়। এ সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রাধিকারপ্রাপ্ত টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতা বিগ ব্যাশ লীগ আয়োজন করা হয়ে থাকে। এরফলে ঐ দুই মাস তাকে ক্রিকেট খেলার বাইরে অবস্থান করতে হয়। ফলশ্রুতিতে টুয়েন্টি২০ দলের সাথে যুক্ত না থাকায় তাকে আর্থিক দৈন্যতার মুখোমুখি হতে হয়। [৩৮]