গোপুরম বা গোপুর (তামিল: கோபுரம், প্রতিবর্ণী. কোপুরাম্, তেলুগু: గోపురం, মালয়ালম: ഗോപുരം, কন্নড়: ಗೋಪುರ) বলতে কোনো দক্ষিণ ভারতীয়হিন্দু মন্দিরের আকর্ষণীয় প্রবেশদ্বারকে বোঝায়।[১] ভারতের অন্যান্য জায়গার মন্দিরের প্রবেশদ্বার তুলনায় সাদামাটা হলেও দক্ষিণ ভারতের মন্দিরের প্রবেশদ্বার অনেকসময় মন্দিরটির সর্বোচ্চ অংশ হয়।
ব্যুৎপত্তি
"গোপুরম" শব্দের ব্যুৎপত্তি নিয়ে একাধিক তত্ত্ব বিদ্যমান:
তামিল শব্দ கோ (কো, "রাজা") ও புறம் (পুরাম্, "বহিরাবরণ") থেকে উদ্ভূত।[২]
তেলুগু শব্দ కోపు (কোপু, "উপর") ও అరం (আরাম্, "বিদ্যমান থাকা") থেকে উদ্ভূত।[৩]
সংস্কৃত শব্দ गो (গো, "শহর, গোরু") ও पुरम् (পুরম্, "শহর, বসতি") থেকে উদ্ভূত।[৪]
স্থাপত্য
একতলা গোপুরম
দোতলা গোপুরম
গোপুরমের আকৃতি সাধারণত আয়তাকার হয় এবং এটি উপরের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে যায়। এর এর তলায় কাঠের দরজা থাকে, যা অনেকসময় অলংকারে পরিপূর্ণ হয়।[৫]
প্রাচীন ও আদি-মধ্যযুগীয় মন্দিরের গোপুরমগুলি তুলনায় ছোট হয়, কিন্তু পরবর্তী মন্দিরে এগুলি দ্রাবিড় স্থাপত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে।[৬] অনেকসময় মন্দির চত্বরকে প্রসারিত করা হয় এবং নতুন সীমানা বরাবর নতুন গোপুরম তৈরি করা হয়। এর উপর কলশম বসানো থাকে। গোপুরম মন্দির চত্বরের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে।[৭] মন্দিরের মাঝে অবস্থিত সুউচ্চ স্থাপনাকে বিমান বা বিমানম বলে। বাস্তুশাস্ত্রের নিয়ম অনুযায়ী গোপুরম ও বিমান তৈরি করা হয়।[৮]
সর্বোচ্চ গোপুরমের মধ্যে দুটি কমপক্ষে আংশিক আধুনিক। তামিলনাড়ুরতিরুচিরাপল্লীতে অবস্থিত শ্রী রঙ্গনাথস্বামী মন্দিরে ২১টি গোপুরম বর্তমান, যার মধ্যে ২৩৯.৫ ফুট (৭৩.০ মি) লম্বা রাজগোপুরমকে (প্রধান প্রবেশদ্বার) এশিয়ার সর্বোচ্চ মন্দির স্থাপত্য হিসেবে দাবি করা হয়েছে। ১৩ তলবিশিষ্ট এই রাজগোপুরম ১৯৮৭ সালে সম্পন্ন হয়েছিল এবং কিলোমিটার জুড়ে এটি ভূদৃশ্যের প্রাধান্য লাভ করে। বাকি ২০টি গোপুরম চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।[৯] আধুনিক মুরুদেশ্বর মন্দিরের ২০ তলবিশিষ্ট ২৪৯ ফুট (৭৬ মি) লম্বা গোপুরম "সর্বোচ্চ" উপাধির জন্য লড়াই করছে এবং অস্বাভাবিকভাবে এই গোপুরমে একটি লিফট বর্তমান।[১০]
ইতিহাস
পল্লব আমলে গোপুরমের আদিরূপ লক্ষ করা যায়, এবং এটি উত্তর ভারতেরশিখরের সঙ্গে সম্পর্কিত। দ্বাদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যে পাণ্ড্য, নায়ক ও বিজয়নগরের সময় হিন্দু মন্দির ক্রমশ নাগরিক জীবনযাপনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। সেই সময় এই গোপুরম প্রবেশদ্বারগুলি মন্দিরের বহিরাঙ্গের এক মূল বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছিল, এবং বিশালাকৃতি ও অলংকারের পরিমাণের জন্য এরা ক্রমশ অভ্যন্তরীণ গর্ভগৃহকে ম্লান করে দেয়।[৫] অনেকসময় একটি মন্দিরের জন্য একাধিক গোপুরম থাকতে পারে।[১]
দশম শতাব্দীর গোপুরমগুলি সাধারণত সাদামাটা হয়, যেমন মহাবলীপুরমের উপকূল মন্দির। তাঞ্জাবুরে অবস্থিত একাদশ শতাব্দীর বৃহদীশ্বর মন্দিরের দুটি বহুতল গোপুরম ব্যবহৃত হয়েছে, যা আগের গোপুরমের থেকে অনেক বড়, যদিও মূল মন্দিরের বিমানের তুলনায় অনেক ছোট। চিদম্বরম নটরাজ মন্দিরের চারটি গোপুরমের নির্মাণ ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে শুরু হলেও অনেক পরে এর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছিল।[১১]
↑Ananth, Sashikala (১ জানুয়ারি ২০০০)। Penguin Guide to Vaastu: The Classical Indian Science of Architecture and Design (2 সংস্করণ)। Mumbai: Penguin। আইএসবিএন014027863X।