খাজুরা গ্রামের নামকরণের সঠিক ইতিহাস নির্ণয় করা না গেলেও দুইভাবে এর ব্যাখা এসেছে।
প্রথমত খাজুরা পরগণা, গোপালবাটী ও জনার্দনবাটী পরগণা – এই তিনটি মৌজা নিয়ে খাজুরা গ্রাম অবস্থিত । বহু পূর্বে এই অঞ্চল ভাতুড়িয়া পরগণার অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময় থেকেই এই এলাকায় কিছু সংখ্যক বারেন্দ্রী ভাদুড়ী জমিদারদের বসবাস ছিল। এদের মধ্যে কানাই ভদ্র নামে একজন জমিদার ছিলেন । তার সম্পর্কে কিছু অলৌকিক কথা শোনা যায় । জমিদার কানাই ভদ্রের নাম অনুসারে এই এলাকাটা ভদ্রভিটা নামেও পরিচিত ছিল । জনশ্রুতি আছে যে ভদ্রভিটার উত্তর দিকের নদীতে পাথরঘাটা ‘দহ’ আছে ।
পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে হিন্দু জমিদাররা বসবাস করলে খাজুরা নামটি পরিবর্তন করে সূর্যপুর নামকরণ করা হয় । আবার এই পরগণার জমিদারগন ৭ জন রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন বলে জামাত্রি ভবনও বলা হয় ।
দ্বিতীয়তঃ ১২০৫ খ্রিস্টাব্দের পর ভাতুড়িয়া পরগণা বিলুপ্ত হলে এলাকা জনশূন্য হয়ে পড়ে । সে সময় চলনবিল এলাকার দস্যুরা এখানে এসে অত্যাচার, নির্যাতন করত । কালক্রমে ভারতবর্ষে বড় ধরনের ভূমিকম্প ও প্রলয় হলে নদীতে প্রবল স্রোত ধারার সৃষ্টি হয় । তখন উত্তর পশ্চিম দিক থেকে স্রোতে ভেসে আসা দুই ব্রাহ্মণ- ব্রাহ্মণী নদীর চড়ে ওঠেন এবং এখানকার জনবসতির কাছ থেকে সাহায্য সহানুভূতির মাধ্যমে ভাতুড়িয়া পরগনার বিলের উত্তর পাড়ে আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলেন। তারা বংশানুক্রমে একদিন রাজা-জমিদারদের কাছ থেকে জমিদারী লাভের মাধ্যমে শ্রদ্ধাভাজন হয়ে ওঠেন এবং তাদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পায় । পরবর্তীকালে তারা কুলীন ব্রাহ্মণের রুপ ধারণ করেন । রাজা মহারাজাগণ তাদের করবিহীন জায়গা দান করেন । পরবর্তীকালে এখানে ৭ জন রাজ জামাতা এবং কয়েকজন জমিদার বসবাস করতেন বলে তাদের বংশ ও কুলের নামের সাথে মিলে জনার্দনবাটী নামকরণ করা হয় । সে সময় জমিদারদের মধ্যে লাহিড়ী পরিবার ছিল বেশি । পরে লাহিড়ী জমিদার বিলুপ্ত হয়ে ভাদুড়ী খাঁ জমিদারদের আবির্ভাব ঘটে । এদের মধ্যে তৈলক্ষ্য খাঁ ও ভোলানাথ খাঁ ছিলেন নাম করা জমিদার । জনশ্রুতি আছে খাঁ জমিদারদের নাম অনুসারেই খাজুরা নামকরণ করা হয়। অনেকের মতে ভাতুড়িয়া পরগনায় খাঁ ভাদুড়ীদের বসতি ছিল বলে খাজুরা হয়েছে ।
ময়মনসিংহের সুসং দুর্গাপুরের রাজকন্যার সাথে জমিদার জীবন্তীনাথ খাঁ’র বিবাহ হয়েছিল।
খাজুরা গ্রামের ২২ জমিদারের মধ্যে যে সব খাঁ/ভাদুড়ীর নাম পাওয়া যায় – কানাই ভদ্র(ভাদুড়ী) , ভোলানাথ খাঁ, তৈলক্ষ্য খাঁ, জ্ঞানেন্দ্র প্রসাদ খাঁ
এই গ্রামের জমিদার এবং তৎকালীন সময়ে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিযুক্ত জমিদার জীবন্তীনাথ খাঁ এবং জ্ঞানেন্দ্রনাথ খাঁ রাজশাহীর ভোলানাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমীর সুপ্রতিষ্ঠিতকরণে বিপুল অর্থসাহায্য করে এই বিদ্যালয়ের নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ফলে বিদ্যালয়ের পূর্ব নাম পরিবর্তন করে তাঁদের পিতা জমিদার ভোলানাথ খাঁর নামানুসারে ভোলানাথ একাডেমী রাখা হয়। ১৯২৯ সালের শেষের দিকে জীবন্তীনাথ খাঁ ও জ্ঞানেন্দ্রনাথ খাঁ একাডেমী পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব অনুকূল চক্রবর্ত্তী ও তাঁর জীবনাবসানে তাঁর উত্তরাধিকারীদের নিকট অর্পণ করেন।[৩][৪]
ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তন
নলডাঙ্গা উপজেলা সদর হতে পূর্ব দিকে অবস্থিত এ ইউনিয়নের মোট আয়তন ৯৭৪৯ একর[১] বা ৩৯.৪৬ বর্গকিলোমিটার।
প্রশাসনিক এলাকা
খাজুরা ইউনিয়ন মৌজা/গ্রাম নিয়ে গঠিত। মৌজা সমুহ ৯টি প্রশাসনিক ওয়ার্ডে বিভক্ত।
জনসংখ্যা
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী খাজুরা ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৯৫৪৫ জন[১], যারা ৪৯৯৩ টি পরিবারে বসবাস করে, যার মধ্যে পুরুষ হল ৯৬৫৪ জন এবং নারী হল ৯৮৯১ জন।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি
খাজুরা ইউনিয়নের গড় সাক্ষরতা হার ৫০.২%। তার মধ্যে নারী শিক্ষার হার ৪৫.৯% এবং পুরুষ শিক্ষার হার ৫৪.৬%। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যেঃ
↑ কখগPopulation & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ২: ইউনিয়ন পরিসংখ্যান। ঢাকা: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা ৩৭৭। ৯ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল(পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)