ওসমানী জাদুঘর হচ্ছে বাংলাদেশের সিলেট জেলার কোতোয়ালী থানায় অবস্থিত একটি জাদুঘর। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক (১২ এপ্রিল ১৯৭১– ৭ এপ্রিল ১৯৭২) বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর পৈতৃক নিবাস থেকে পরিবর্তন করে বর্তমান ওসমানী জাদুঘরে স্থানান্তর করা হয়। এটি সিলেটের ধোপা দিঘীর পাড় এলাকায় অবস্থিত।
অবস্থান এবং বিবরণ
ওসমানী জাদুঘর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে এবং সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযোদ্ধা এম এ জি ওসমানীর অসামান্য অবদানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক এই জাদুঘরটি রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালিত হয়।
এই জাদুঘর নতুন প্রজন্মের জন্য নিঃসন্দেহে উদ্দীপনার উৎস হয়ে কাজ করবে। এই জাদুঘরের ভিত্তি প্রস্তর ১৯৮৫ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি স্থাপন করা হয় এবং ৪ মার্চ ১৯৮৭ সালে তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ কর্তৃক উদ্বোধন করা হয়।
নূর মঞ্জিল হচ্ছে পাশের এবং কিছু কক্ষ সমেত টিনের-চালার একটি বিশাল ভবন যার সামনে একটি বারান্দা রয়েছে। জাদুঘরে পৌঁছানোর জন্য প্রধান গেট থেকে মাত্র কয়েক মিটার হাঁটতে হয়। প্রবেশকক্ষে দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা জানাতে জেনারেলের বিপুল প্রতিকৃতি রয়েছে। অথিতিদের স্বাগত জানানোর জন্য অভ্যর্থনাকারীরা রয়েছেন। অভ্যর্থনা কক্ষে একজন দর্শনার্থীদের নাম এবং ঠিকানা লিখায় নিয়োজিত থাকেন। প্রবেশকক্ষে বসার জন্য একটি মানানসই জায়গাও রয়েছে। ঐতিহাসিক এই জাদুঘরটিতে তিনটি গ্যালারী আছে, যেখানে জেনারেল ওসমানীর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঐতিহাসিক আলোকচিত্র সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। ভবনের পশ্চিম এবং পূর্ব উভয় পাশে দুটি ছোট্ট কক্ষ বিদ্যমান, যেখানে সহকারী রক্ষক এবং তত্ত্বাবধায়কের কামরা অবস্থিত।[১]
গ্যালারী ১
সম্পূর্ণ কক্ষটি নানান ধরনের শোপিস দিয়ে শয়নকক্ষের মতো করে সাজানো হয়েছে। বেতের তৈরি ৪ টি চেয়ার এবং দুটি কেন্দ্রীয়-টেবিল, একটি সাধারণ ওয়ারড্রব এবং উভয় দিকে টেবিল সহ একটি কাঠের পালঙ্ক রয়েছে। জেনারেল ওসমানীর হাতঘড়ি, যা তিনি মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পড়েছেন; সামরিক লাঠি, দুটি ব্রিফক্যাস, একটি টেলিফোন সেট, কিছু সংখ্যক বইপত্র এবং ব্যবহৃত মাটির বাসনপত্র একপাশে রয়েছে। অন্যপাশে একটি আলনা, যেটাতে দুটি স্যুট, দুটি ইউনিফিরম (খাকি এবং গাঁড় সবুজ), দুটি শার্ট (সাদা এবং ঈষৎ নীল), দুটি পাঞ্জাবী, বাদামী হাতাসহ একটি কোট, চার জোড়া জুতা যার মধ্যে একজোড়া হচ্ছে মিলিটারি বুট, একটি কালো ছাতা এবং পিঙ্গলবর্ণের সুসজ্জিত চলার লাঠি দিয়ে কক্ষটি সাজানো। একটি চক্রাকার টেবিল এবং কাঠের বইয়ের-তাক আছে যেটাতে "হোজ হো ইন দ্য ওয়ার্ল্ড" (সংস্করণ: ১৯৭৮–১৯৭৯ এবং ১৯৮০–১৯৮১) সহ দেশি বিদেশি বই ও ম্যাগাজিন এক কোণায় রয়েছে। ওসমানীর অতিপ্রিয় পিতার কোলে ছবি সহ দেয়ালে একজন মানবসম প্রতিকৃতি রয়েছে এমনকি প্রদর্শনের জন্য অনেক আলোকচিত্রও রয়েছে।[১]
গ্যালারী ২
বসার কক্ষের মতো করে সাজানো কক্ষে রয়েছে, বেতনির্মিত কিছু আসবাবপত্র, যেমন– চারটি ১-আসন বিশিষ্ট, একটি ৩-আসন বিশিষ্ট এবং একটি ২-আসন বিশিষ্ট চেয়ার, একটি কেন্দ্রীয় টেবিল, দুটি পার্শ্ব টেবিল ইত্যাদি। বহু মূল্যবান এবং ঐতিহাসিক জিনিসপত্র সমেত তিনটি সোকেস রয়েছে। এর প্রথমটিতে জেনারেলের ব্যাজসমূহ, পদক, পদমর্যাদা ক্রম এবং জেনারেল ওসমানীর পাসপোর্ট রয়েছে। দ্বিতীয়টিতে স্মারকচিহ্ন, স্মরণিকা এবং ক্রেস্টসমূহ রয়েছে। এবং তৃতীয় সোকেসে বহুসংখ্যক প্রমাণপত্রাদি প্রদর্শন করা হয়, যেগুলোর মধ্যে স্বাধীনতা পুরস্কার-১৯৮৫ এবং এর নিমন্ত্রণ পত্র, একই সাথে পুরস্কার বিজেতার সংক্ষিপ্ত জীবনীও রয়েছে। একটি কার্ডে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অটোগ্রাফ সংবলিত খাম রয়েছে যা তিনি জেনারেল ওসমানীর কাছে প্রেরণ করেছিলেন। আটটি বিশাল চিত্রকর্ম উপরের দেয়ালে টাঙানো আছে। কক্ষটির দেয়ালে অনেক ঐতিহাসিক ছবিও রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হল; ১৯৭২ সালে সিলেট বিমানবন্দরে অবতরণের পর, জেনারেল ওসমানী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে প্রত্যাবর্তনের পর আগমন উপলক্ষে ১০ মার্চ ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনী কর্তৃক আয়োজিত সম্মান প্রদর্শন অনুষ্ঠানে দর্শকদের সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন, জেনারেল ওসমানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের সাথে, মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সাথে,বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের সাথে, ১৯৮১ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট কেন্দ্রে শহীদ পরিবারের সাথে ইত্যাদি।[২]
গ্যালারী ৩
কালো বর্ণের একটি পড়ার টেবিল এবং চেয়ার, পালঙ্ক, নামাযের চৌকি, জায়নামাজ, নামাযের টুপি ইত্যাদি প্রদর্শনের জন্য নিখুঁতভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যান্য যেসব জিনিসপত্র আছে তার মধ্যে- একটি কৃষ্ণকায় আলমারি, একটি ফ্রিজ, ছয়টি চেয়ার সহ একটি খাবার-টেবিল, প্রাচীন চীনামাটির বাসনকোসন এবং অন্যান্য জিনিস উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জেনারেলের ব্যবহৃত বাংলাদেশের অপারেশনাল মানচিত্রও (স্কেল ১: ২,৫০,০০) প্রদর্শনের জন্য এই কামরায় রাখা হয়েছে, যেখানে সভ্য সমাজ কর্তৃক উপস্থাপিত বহু প্রমাণপত্রাদিও রয়েছে।[২]
সম্পর্কিত তথ্য
ওসমানী জাদুঘর শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার ছাড়া বাকি দিনগুলোতে খোলা থাকে। রবি থেকে বুধবার পর্যন্ত এটি সকাল ১০ঃ৩০ থেকে বিকাল ৫ঃ৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্র এবং শনিবার এটি বিকাল ৩ঃ৩০ থেকে ৫ঃ৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এম এ জি ওসমানীর জন্মদিন (১লা সেপ্টেম্বর) এবং মৃত্যুবার্ষিকী (১৬ ফেব্রুয়ারি) উদ্যাপন করে থাকে, এর পাশাপাশি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস (২৬শে মার্চ) এবং বিজয় দিবস (১৬ই ডিসেম্বর) পালন করা হয়।
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ রাজা, দেওয়ান মোহাম্মদ তাসওয়ার, ও জেনারেল মাই জেনারেল (জেনারেল এম এ জি ওসমানীর জীবনী ও কর্ম)" (ইংরেজি ভাষায়), পৃষ্ঠা390, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৮৬৬-১৮-৪
- ↑ ক খ রাজা, দেওয়ান মোহাম্মদ তাসওয়ার, ও জেনারেল মাই জেনারেল (জেনারেল এম এ জি ওসমানীর জীবনী ও কর্ম)" (ইংরেজি ভাষায়), পৃষ্ঠা391, আইএসবিএন ৯৭৮-৯৮৪-৮৮৬৬-১৮-৪
আরো দেখুন
আরো পড়ুন
- রাজা, দেওয়ান মোহাম্মদ তাসওয়ার (২০১০)। ও জেনারেল মাই জেনারেল (জেনারেল এম এ জি ওসমানীর জীবনী ও কর্ম)। ওসমানী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, ঢাকা, বাংলাদেশ। আইএসবিএন 978-984-8866-18-4।
- Leung, Mikey; Meggitt, Belinda (২০১২)। Bangladesh। Bradt Travel Guides। পৃষ্ঠা 197।
- "Osmani Museum"। Lonely Planet।
- সিলেট: ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি। ১৯৯৯। পৃষ্ঠা 713। আইএসবিএন 978-9843104786।
বহিঃসংযোগ
|
---|
খুলনা | |
---|
চট্টগ্রাম | |
---|
ঢাকা | |
---|
বরিশাল | |
---|
ময়মনসিংহ | |
---|
রাজশাহী | |
---|
রংপুর | |
---|
সিলেট | |
---|