আবু সাঈদ চৌধুরীর ১৯২১ সালের ৩১শে জানুয়ারী টাঙ্গাইলেরকালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ি গ্রামের এক জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[২] জমিদার পরিবার ছাড়াও, তার পিতা আবদুল হামিদ চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের স্পিকার ছিলেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য তাকে খান বাহাদুর উপাধি প্রদান করেছিল।
আবু সাঈদ ১৯৪৭ সালে কলকাতা হাই কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। দেশভাগের পরে ১৯৪৮ সালে ঢাকা হাই কোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন।[২] ১৯৬০ সালে আবু সাঈদ চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানের অ্যাডভোকেট জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৬১ সালের ৭ জুলাই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান তাকে অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ করেন এবং দুই বছর পরে ঢাকা হাই কোর্টে স্থায়ী নিয়োগ পান। তিনি পাকিস্তানের সাংবিধানিক কমিশনের সদস্য (১৯৬০-৬১) এবং বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান (১৯৬৩-৬৮) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
আবু সাঈদ ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান।[২] একাত্তরের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনে যোগদানের জন্য জেনেভা যান। সেখানে জেনেভার একটি পত্রিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্রের মৃত্যু সংবাদ দেখে বিচলিত হয়ে ২৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক শিক্ষা সচিবকে পাকিস্তান দূতাবাসের মাধ্যমে প্রেরিত এক পত্রে লেখেন, “আমার নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর পর আমার ভাইস চ্যান্সেলর থাকার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। তাই আমি পদত্যাগ করলাম”।[৩] মুজিবনগরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত হিসেবে জেনেভা থেকে তিনি লন্ডন যান এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হন। একাজে তিনি বিশেষ সাফল্য অর্জন করেন।[৪]
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি
স্বাধীনতার পরে আবু সাঈদ বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালের ১০ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হন।[২] একই বছর তিনি পদত্যাগ করেন এবং একজন মন্ত্রীর পদমর্যাদায় বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালের ৮ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় তিনি বন্দর ও নৌপরিবহন মন্ত্রী ছিলেন। ১৫ই আগস্ট, ১৯৭৫ সালে মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি মোশতাক আহমেদ মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী হন এবং একই বছরের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন।[২]
জাতিসংঘ কমিটি
আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যের অবসান এবং তাদের নিরাপত্তা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। [২] ১৯৮৫ সালে তিনি জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি নির্বাচিত হন।[১]বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি প্রদান করে।
মৃত্যু
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৮৭ সালের ২ আগস্ট লন্ডনে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগবাড়িতে তাকে দাফন করা হয়।[৫]