ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য

ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য
ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের জাতীয় পতাকা
পতাকা
ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য (সময়ানুগ নয়[])
  ওলন্দাজ পূর্ব ভারত কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত অঞ্চল বা সেগুলি থেকে উদ্ভূত অঞ্চল

  ওলন্দাজ পশ্চিম ভারত কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত অঞ্চল বা সেগুলি থেকে উদ্ভূত অঞ্চল

ক্ষুদ্র কমলা বর্ণের বর্গক্ষেত্রগুলি দিয়ে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র বাণিজ্যকুঠিগুলিকে (ওলন্দাজ ভাষায় তথাকথিত হান্ডেলসপোস্টেন) নির্দেশ করা হয়েছে।
  1. ইতিহাসে কোনও মুহূর্তেই ওলন্দাজ সাম্রাজ্য এই মানচিত্রের সবগুলি অঞ্চল একই সাথে শাসন করেনি। বরং এই মানচিত্রে ইতিহাসের যেকোনও সময়ে ওলন্দাজদের দ্বারা শাসিত স্থানগুলিকে একত্রে দেখানো হয়েছে।

ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বলতে ওলন্দাজ সনদপ্রাপ্ত কোম্পানিসমূহ (মূলত ওলন্দাজ পূর্ব ভারত কোম্পানি ও ওলন্দাজ পশ্চিম ভারত কোম্পানি), ও পরবর্তীতে ওলন্দাজ প্রজাতন্ত্র (১৫৮১-১৭৯৫) এবং তারও পরে ১৮১৫ থেকে আধুনিক নেদারল্যান্ডস রাজ্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও প্রশাসনিকভাবে পরিচালিত সামুদ্রিক অঞ্চল ও বাণিজ্যকুঠিগুলিকে বোঝায়।[] শুরুতে এটি একটি বাণিজ্যভিত্তিক ব্যবস্থা ছিল; বাণিজ্যিক উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক জাহাজপথগুলিতে কৌশলগতভাবে প্রতিষ্ঠিত কুঠির মাধ্যমে সেগুলির উপরে প্রতিষ্ঠিত ওলন্দাজ নিয়ন্ত্রণ ছিল এই ব্যবস্থাটির প্রতিপত্তির মূল উৎস, সাম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে ভূখণ্ড দখল অভিযান নয়।[][] ওলন্দাজরা ছিল স্পেনীয় সাম্রাজ্য ও পর্তুগিজ সাম্রাজ্যের পরে ইউরোপের সবচেয়ে প্রথম দিকের সাম্রাজ্য নির্মাণকারী জাতিগুলির একটি।

কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম বাদে ওলন্দাজ সামুদ্রিক সাম্রাজ্যের সিংহভাগই ছিল উপকূলীয় দুর্গ, কারখানা ও বন্দরভিত্তিক, যেগুলি বিভিন্ন মাত্রায় পশ্চাদভূমি ও পারিপার্শ্বিক অঞ্চলগুলিকে অঙ্গীভূত করে নিয়েছিল।[] ওলন্দাজ সনদপ্রাপ্ত কোম্পানিগুলি অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর জন্য তাদের অধিকৃত এলাকার পরিমাণ যতদূর সম্ভব কম রাখার নীতি পালন করত।[] যদিও কিছু ওলন্দাজ উপনিবেশ যেমন ওলন্দাজ অন্তরীপ উপনিবেশ ও ওলন্দাজ পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ সম্প্রসারণ লাভ করে (স্বাধীনতামনস্ক ওলন্দাজ বসতিস্থাপকদের কারণে), অন্যান্য উপনিবেশগুলি মূলত অবিকশিত, বিচ্ছিন্ন এবং স্থানীয় জাতির উপরে নির্ভরশীল বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবেই থেকে যায়।[] এটি ছিল ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের মূল উদ্দেশ্যের প্রতিফলন, যা হল বিরাট ভূখণ্ডের উপরে সার্বভৌম কর্তৃত্বের বিপরীতে বাণিজ্যিক লেনদেন[]

ওলন্দাজদের বিদ্যমান জাহাজ শিল্পের সামর্থ্য তাদের ঔপনিবেশিক উচ্চাভিলাষকে শক্তি যুগিয়েছিল। এছাড়া ইউরোপ ও প্রাচ্যের মধ্যে সামুদ্রিক বাণিজ্যের বিস্তারে তারা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল, সেটিও তাদেরকে উপনিবেশ স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করে।[] যেহেতু ছোট মাপের ইউরোপীয় বাণিজ্য কোম্পানিগুলি বৃহৎ মাপের কর্মকাণ্ড চালানোর পুঁজি ও জনবলের অভাব ছিল, তাই ১৭শ শতকের শুরুতে নেদারল্যান্ডসের স্টেটস জেনারেল অপেক্ষাকৃত বৃহৎ দুইটি সংস্থাকে (ওলন্দাজ পূর্ব ভারত কোম্পানি ও ওলন্দাজ পশ্চিম ভারত কোম্পানি) সনদ প্রদান করে।[] এগুলি ছিল সেই যুগের সারা বিশ্বের মধ্যে বৃহত্তম ও সবচেয়ে ব্যাপক অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত সামুদ্রিক বাণিজ্য কোম্পানি এবং একসময় এগুলি ইউরোপ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধ হয়ে এশিয়া পর্যন্ত জাহাজপথগুলির উপরে (পশ্চিম দিকে ম্যাজেলান প্রণালী হয়ে দক্ষিণ আমেরিকা ঘুরে এবং পূর্বদিকে উত্তমাশা অন্তরীপ হয়ে আফ্রিকা ঘুরে ) প্রায় সম্পূর্ণ একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের অধিকারী হয়েছিল। [] বিশ্ববাণিজ্যে এই কোম্পানি দুইটির আধিপত্যের কারণে ১৭শ শতকে নেদারল্যান্ডসে এক বাণিজ্যিক বিপ্লব ঘটে এবং সাংস্কৃতিক জোয়ার আসে, যেটি ওলন্দাজ স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচিত।[] এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে নতুন নতুন বাণিজ্যপথের সন্ধান করতে গিয়ে ওলন্দাজ নাবিক-অভিযাত্রীরা বহুদূরে অবস্থিত অনেক অঞ্চল যেমন নিউজিল্যান্ড, টাসমেনিয়া, ও উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলের কিছু অংশে অভিযান চালান ও মানচিত্রে এগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করেন।[] প্রত্ন-শিল্পায়ন পর্বে ওলন্দাজ সাম্রাজ্যটি ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের রপ্তানিকৃত ৫০% বস্ত্র ও ৮০% রেশমের ক্রেতা ছিল; মূলত মুঘল সাম্রাজ্যের অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও উন্নত অঞ্চল সুবাহ বাংলা অঞ্চলের সাথেই এটির সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ছিল।[][][][১০]

১৮শ শতকে ১৭৮০-১৭৮৪ সালের চতুর্থ ইঙ্গ-ওলন্দাজ যুদ্ধের পর থেকে ওলন্দাজ ঔপনিবেশ সাম্রাজ্যের অবক্ষয় শুরু হয়। ঐ যুদ্ধে ওলন্দাজরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের কাছে বেশ কিছু ঔপনিবেশিক অঞ্চল ও বাণিজ্যিক একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ হারায়। এদের মধ্যে পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সুবাহ বাংলা বিজয় ছিল ওলন্দাজদের উপরে এক বিরাট বাণিজ্যিক আঘাত।[১১][১২][১৩] তা সত্ত্বেও সাম্রাজ্যটির সিংহভাগই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান পর্যন্ত টিকে থাকে, যাদের মধ্যে ওলন্দাজ পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ও ওলন্দাজ গায়ানা (বর্তমান সুরিনাম) উল্লেখ্য। এরপর এগুলির বিউপনিবেশন ঘটে।[১৪] আজও ক্যারিবীয় সাগরের পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের তিনটি ঔপনিবেশিক আমলের দ্বীপ - আরুবা, কুরাচাওসিন্ট মার্টেন - নেদারল্যান্ডস রাজ্যের অধিভুক্ত তিনটি দেশ হিসেবে টিকে আছে।[১৪]

প্রাক্তন ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের অধিকারভুক্ত অঞ্চলসমূহ

এই তালিকাটিতে ওলন্দাজ পূর্ব ভারতীয় কোম্পানির বেশ কিছু প্রাক্তন বাণিজ্যকুঠি ও বসতি অন্তর্ভুক্ত হয়নি (যেমন জাপানের দেজিমা)।

অধিকৃত ভূখণ্ডের বিবর্তন

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Israel, Jonathan (২০০৩)। Empires and Entrepots: Dutch, the Spanish Monarchy and the Jews, 1585–1713। London: Hambledon Press। পৃষ্ঠা x–xii। আইএসবিএন 978-1852850227 
  2. Ward, Kerry (২০০৯)। Networks of Empire: Forced Migration in the Dutch East India Company। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 322–342। আইএসবিএন 978-0-521-88586-7 
  3. Andre du Toit & Hermann Giliomee (১৯৮৩)। Afrikaner Political Thought: Analysis and Documents, Volume One (1780–1850) (1983 সংস্করণ)। Claremont: David Philip (Pty) Ltd। পৃষ্ঠা 1–305। আইএসবিএন 0908396716 
  4. Hunt, John (২০০৫)। Campbell, Heather-Ann, সম্পাদক। Dutch South Africa: Early Settlers at the Cape, 1652–1708। Philadelphia: University of Pennsylvania Press। পৃষ্ঠা 2–13। আইএসবিএন 978-1904744955 
  5. Hsin-Hui, Chiu (২০০৮)। The Colonial 'civilizing Process' in Dutch Formosa: 1624–1662। Leiden: Tuta Sub Aegide Pallas। পৃষ্ঠা 3–8। আইএসবিএন 978-9004165076 
  6. Fisher, Ann Richmond (২০০৭)। Explorers of the New World Time Line। Dayton, Ohio: Teaching & Learning Company। পৃষ্ঠা 53–59। আইএসবিএন 978-1429113175 
  7. Junie T. Tong (২০১৬)। Finance and Society in 21st Century China: Chinese Culture Versus Western Markets। CRC Press। পৃষ্ঠা 151। আইএসবিএন 978-1-317-13522-7 
  8. John L. Esposito, সম্পাদক (২০০৪)। The Islamic World: Past and Present। Volume 1: Abba - Hist.। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 174। আইএসবিএন 978-0-19-516520-3 
  9. Nanda, J. N (2005). Bengal: the unique state। Concept Publishing Company. p. 10.। ২০০৫। আইএসবিএন 978-81-8069-149-2Bengal [...] was rich in the production and export of grain, salt, fruit, liquors and wines, precious metals and ornaments besides the output of its handlooms in silk and cotton. Europe referred to Bengal as the richest country to trade with. 
  10. Om Prakash, "Empire, Mughal", History of World Trade Since 1450, edited by John J. McCusker, vol. 1, Macmillan Reference USA, 2006, pp. 237–240, World History in Context. Retrieved 3 August 2017
  11. Indrajit Ray (২০১১)। Bengal Industries and the British Industrial Revolution (1757–1857)। Routledge। পৃষ্ঠা 57, 90, 174। আইএসবিএন 978-1-136-82552-1 
  12. Hobkirk, Michael (১৯৯২)। Land, Sea or Air?: Military Priorities- Historical Choices। Basingstoke: Palgrave-Macmillan। পৃষ্ঠা 77–80। আইএসবিএন 978-0312074937 
  13. Dalio, Ray. "The Big Cycles of the Dutch and British Empires and Their Currencies", LinkedIn, 21 May 2020
  14. Jones, Guno (২০১৪)। Essed, Philomena; Hoving, Isabel, সম্পাদকগণ। Dutch Racism। Amsterdam: Rodopi B.V.। পৃষ্ঠা 315–316। আইএসবিএন 978-9042037588 

গ্রন্থ ও উৎসপঞ্জি

আরও পড়ুন

বহিঃসংযোগ

Strategi Solo vs Squad di Free Fire: Cara Menang Mudah!