শান্তাকুমারন শ্রীশান্ত (মালয়ালম: ശ്രീശാന്ത്; উচ্চারণⓘ; জন্ম: ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৩) কেরলর কোটমঙ্গলমে জন্মগ্রহণকারী সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার। ভারত ক্রিকেট দলে ডানহাতি ফাস্ট মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন। পাশাপাশি ডানহাতে নিচের সারির ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
কিশোর বয়সে শ্রীশান্ত লেগ-স্পিনার ছিলেন। ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও শীর্ষস্থানীয় টেস্ট উইকেট সংগ্রহকারী অনিল কুম্বলেকে তিনি অনুসরণ করতেন। কিন্তু বোলিংয়ে ইয়র্কারের অভ্যাস গড়ে ওঠায় জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার অনুপ্রেরণায় ফাস্ট বোলিংয়ের দিকে ধাবিত হন তিনি।[২] ২০০০ সালে চেন্নাইয়ের এমআরএফ ফাউন্ডেশনে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হন। ২০০২-০৩ মৌসুমে গোয়ার বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে শ্রীশান্তের। রঞ্জি ট্রফিতে ৭ খেলায় ২২ উইকেট সংগ্রহ করেন।[৩] একই মৌসুমে দিলীপ ট্রফিতেদক্ষিণাঞ্চলকে শিরোপা জয় করতে সহায়তা করেন।[৪]
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
ঘরোয়া সীমিত ওভারের চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে ব্যাপক সাফল্যের প্রেক্ষিতে ভারতীয় নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে খেলার জন্য মনোনীত হন।[৫] নতুন বল[৬] নিয়ে নাগপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বোলিংয়ে নামেন ও কুমার সাঙ্গাকারা-সনাথ জয়াসুরিয়ার হাতে নাকানি-চুবানি খেলেও খেলার শেষদিকে তিনি তার প্রথম দুই উইকেট শিকার করেন।[৭] সংরক্ষিত আসনে রাখা হলেও পরবর্তীকালে ব্যাটিং লাইন-আপ রক্ষার্থে কোচগ্রেগ চ্যাপেল ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ খেলায় তাকে অংশগ্রহণ করান। দলে অবস্থান করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫-খেলার সিরিজে মাঠে নামেননি।[৮] কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ৫-খেলার সিরিজের সবক’টিতে তিনি খেলার যোগ্য হন। তন্মধ্যে, করাচিতে অনুষ্ঠিত ৫ম ওডিআইয়ে ৪/৫৮ পান। এপ্রিল, ২০০৬ সালে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬.৩০ রান গড়ে ১০ উইকেট লাভ করেন। তন্মধ্যে ইন্দোরে অনুষ্ঠিত পঞ্চম ও চূড়ান্ত খেলায় তার নিজস্ব সেরা ৬/৫৫ পান। এরফলে ঐ খেলায় তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচেরপুরস্কার লাভ করেন।[৯] মে মাসে বিসিসিআই তাকে গ-শ্রেণীভূক্ত খেলোয়াড় হিসেবে চুক্তিবদ্ধ করায়।[১০]
সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মার্চ, ২০০৬ সালে জহির খানের পরিবর্তে প্রথম টেস্টে অভিষেক ঘটে তার। নাগপুরের ১ম টেস্টে ইরফান পাঠানের সাথে ৪/৯৫ পান।[১১] কিন্তু অসুস্থতার কারণে দ্বিতীয় টেস্টের বাইরে ছিলেন। মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিত তৃতীয় টেস্টে পাঁচ-উইকেট লাভসহ অপরাজিত ২৯* রান সংগ্রহ করেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পাঠানের সাথে তিনি দলের শীর্ষস্থানীয় পেস বোলার ছিলেন। আঘাতের কারণে ২য় টেস্টে খেলেননি। কিন্তু জামাইকার কিংস্টনে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টেস্টে ৫/৭২ পান।[১২]
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের রাজস্থান রয়্যালসের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে সোহেল তানভীরের পর শ্রীশান্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন। ২০০৯ সালে আইপিএলের দ্বিতীয়ার্ধ্বে অংশ নেন। কিন্তু আঘাতের কারণে দলের বাইরে ছিলেন। ২০১০ সালে কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব ও ২০১১ সালে কোচির সাথে খেলেন। ২০১২ সালে রাজস্থান রয়্যালসের সাথে থাকলেও আঘাতের কারণে খেলেননি। ২০১৩ সালে পাতানো খেলা নিয়ে বিতর্ক চলতে থাকলে রাজস্থান কর্তৃপক্ষ তার সাথে চুক্তি বাতিল করে।[১৩]
বিতর্ক
২৫ এপ্রিল, ২০০৮ তারিখে মোহালিতে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে নিজ দল কিংস ইলাভেন পাঞ্জাব জয়লাভ করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে তিন খেলায় পরাজয়বরণকারী মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হরভজন সিংয়ের চক্ষুশূলে পরিণত হন। পুরস্কার বিতরণের পূর্বে এ ঘটনাটি টিভি ক্যামেরায় দেখা যায়। শ্রীশান্ত পরবর্তীতে বড় ভাইসূলভ হরভজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনেননি। তবে, শ্রীশান্তের আচরণে হার্ড লাক বলেছিলেন। আইপিএল থেকে হরভজনকে পরবর্তী খেলাগুলোয় অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। দোষ প্রমাণের পর তার অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়। বিসিসিআই পৃথকভাবে ঘটনাটির তদন্ত চালায় ও জাতীয় পর্যায়ের চুক্তির আচরণবিধি ভঙ্গ করায় পরবর্তী ৫টি ওডিআইয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।[১৪][১৫][১৬][১৭]
ঐ বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া সফরে শ্রীশান্ত ঘোষণা করে যে তিনি ক্রিকেট মাঠে তার এ আগ্রাসী আচরণ ধরে রাখবেন। শ্রীশান্তের পথই হচ্ছে আগ্রাসী। শ্রীশান্ত সর্বদাই শ্রীশান্তই রয়ে যাবেন।[১৮]
পাতানো খেলায় অংশগ্রহণ
১৬ মে, ২০১৩ তারিখে দিল্লি পুলিশ শ্রীশান্ত ও তার অপর দুই দলীয় সঙ্গী - অজিত চণ্ডিলা ও অঙ্কিত চবনকে মুম্বাই থেকে আইপিএলের ৬ষ্ঠ আসরে পাতানো খেলার অভিযোগে গ্রেফতার করে।[১৯][২০] পরদিন ১৭ মে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেন তিনি।[২১] কিন্তু শ্রীশান্ত আবেগের বশবর্তী হয়ে ও জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি দেন বলে সবসময় বলে আসছেন।
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ তারিখে বিসিসিআইয়ের শৃঙ্খলা কমিটি শ্রীশান্ত ও অঙ্কিত চবনকে খেলা থেকে আজীবন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে।[২২]