উম্ম আল কোয়াইন (আরবি: أمّ القيوين) সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি আমিরাতের মধ্যে অন্যতম আমিরাত। রাষ্ট্রের উত্তরে এর অবস্থান। সৌদ বিন রশিদ আল-মুয়াল্লা উম্ম আল কোয়াইনের শাসক। ২০০৩ সালে এখানকার লোকসংখ্যা ছিল ৬২,০০০ এবং এর আয়তন ৭৫০ কিমি২ (২৯০ মা২)। সাতটি আমিরাতের মধ্যে উম্ম আল কোয়াইনে সবচেয়ে কম লোকের বসবাস রয়েছে।
ইতিহাস
উম্ম আল কোয়াইনের প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব রয়েছে এবং এখানে বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন খুজে পাওয়া গেছে।[১] প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে জানা যায় যে খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম সহস্রাব্দে মেসোপটেমিয়ার সাথে এখানকার বাসিন্দাদের যোগাযোগ ছিল।
ব্রোঞ্জ যুগে (৩০০০-১৩০০ খ্রিষ্টপূর্ব) এই অঞ্চলে আধা-যাযাবর গোত্রের উপস্থিতি ছিল। তামা গলানোর উদ্দেশ্যে স্থানীয় একাশিয়া কাঠ সংগ্রহের জন্য তারা দলবদ্ধ হয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াত। এই ধাতু পারস্য উপসাগরের সব গুরুত্বপূর্ণ বন্দরে প্রেরণ করা হত। তামার ব্যবসা এই অঞ্চলে সমৃদ্ধি অর্জন করে। এই যুগে কৃষির উন্নতি হয় এবং বিভিন্ন শস্য চাষ হতে থাকে। উম্মুন নার যুগে এখানে ভবন, দুর্গ নির্মিত হয়। এই যুগের অন্যতম স্থাপনা হল বৃত্তাকার সমাধি।[২]
১৮শ শতাব্দীর মধ্যভাগে আল আলি গোত্র তাদের রাজধানী আল-সিন্নিয়া থেকে এখানে স্থানান্তরের পর মূলত উম্ম আল কোয়াইনের আধুনিক ইতিহাস শুরু হয়। ১৭৭৫ সালে আল আলি গোত্রের আল মুয়াল্লা শাখার প্রতিষ্ঠাতা শেখ মাজিদ আল মুয়াল্লা উম্ম আল কোয়াইনে স্বাধীন রাজ্য স্থাপন করেন।
১৮২০ সালের ৮ জানুয়ারি শেখ প্রথম আবদুল্লাহ যুক্তরাজ্যের সাথে সাধারণ উপকূলীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মাধ্যমে উসমানীয়দের দূরে রাখার জন্য ব্রিটিশদের নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়। আজমান, দুবাই, রাস আল-খাইমাহ ও শারজাহর মত উম্মুল কুয়াইনও ভারতের রুটের উপর অবস্থিত হওয়ায় একে তিনটি গান স্যালুট মর্যাদার রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
১৯০৩ সালে লরিমারের জরিপ অনুযায়ী উম্মুল কুয়াইনের শহরে ৫,০০০ বাসিন্দা ছিল এবং একে উপকূলের একটি প্রধান নৌকা নির্মাণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বছরে এখানে ২০টি নৌকা নির্মিত হত এবং দুবাই ও শারজাহতে এই সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১০ ও ৫।[৩]
১৮১৬–১৮৫৩ শেখ প্রথম আবদুল্লাহ বিন রশিদ আল মুয়াল্লা
১৮৫৩–১৮৭৩ শেখ আলি বিন আবদুল্লাহ আল মুয়াল্লা
১৮৭৩ – ১৩ জুন ১৯০৪ শেখ প্রথম আহমেদ বিন আবদুল্লাহ আল মুয়াল্লা
১৩ জুন ১৯০৪ –আগস্ট ১৯২২ শেখ দ্বিতীয় রশিদ বিন আহমেদ আল মুয়াল্লা
আগস্ট ১৯২২ – অক্টোবর ১৯২৩ শেখ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন রশিদ আল মুয়াল্লা
অক্টোবর ১৯২৩ – ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ শেখ হামাদ বিন ইবরাহিম আল মুয়াল্লা
৯ ফেব্রুয়ারি ১৯২৯ – ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ শেখ আহমেদ বিন রশিদ আল মুয়াল্লা
২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ – ২ জানুয়ারি ২০০৯ শেখ রশিদ বিন আহমেদ আল মুয়াল্লা
২ জানুয়ারি ২০০৯ শেখ সৌদ বিন রশিদ আল মুয়াল্লা
জলবায়ু
নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রা দিনে ২৭ °সে (৮১ °ফা) এবং রাতে ১৫ °সে (৫৯ °ফা) থাকে, তবে তা গ্রীষ্মে ৪০ °সে (১০৪ °ফা) [৪] পর্যন্ত পৌছাতে পারে। সেসময় আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায়। বছরে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪২ মিমি (১.৭ ইঞ্চি)। দিনের বেলা উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়।
এখানকার সংস্কৃতিতে ইসলাম ও ঐতিহ্যবাহী আরব প্রথা লক্ষ্য করা যায়। শুক্রবারের পবিত্রতা বিবেচনা করে ২০০৬ সালে শুক্র-শনি এই দুইদিনকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ধার্য করা হয়। [৬]
প্রকৃতি
আল-সিন্নিয়াহ দ্বীপ সংযুক্ত আরব আমিরাতে Phalacrocorax nigrogularis প্রজাতির সবচেয়ে বড় আবাসস্থল। এটি পৃথিবীতে এই প্রজাতির তৃতীয় বৃহত্তম আবাসস্থল। এখানে আরব গেজেল হরিণ রয়েছে। সমুদ্রসম্পদে প্রাচুর্য ও বৈচিত্রের দেখা পাওয়া যায়। সমুদ্রে ব্ল্যাকটিপ রীফ হাঙর ও সবুজ সাগর কাছিম দেখতে পাওয়া যায়। আল-সিন্নিয়াহ ও মূল ভূখণ্ডের মধ্যবর্তী স্থানে খুর আল-বাইদা নামে বালি ও কাদার প্রশস্ত স্থান রয়েছে। এখানে হাঁস দেখতে পাওয়া যায়।