ইস্পাততৈরির কাজটি লোহা আকরিক এবং/অথবা স্ক্র্যাপ থেকে ইস্পাত উৎপাদন করার প্রক্রিয়া। ইস্পাত তৈরিতে, নাইট্রোজেন, সিলিকন, ফসফরাস, সালফার এবং বাড়তি কার্বন (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভেজাল) -এর মত ভেজালগুলোকে আকরিক লোহা থেকে সরিয়ে ফেলা হয় এবং সংকর উপাদান হিসেবে ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, ক্রোমিয়াম এবং ভ্যানাডিয়াম যোগ করা হয় বিভিন্ন মানের ইস্পাত তৈরির জন্য। ইস্পাতের মধ্যে নাইট্রোজেন এবং অক্সিজেনের মতো দ্রবীভূত গ্যাসগুলি যতটা সম্ভব কমিয়ে ফেলা এবং তরল ইস্পাত -এর মধ্যে ভেজাল গুলোকে কমিয়ে ফেলা/সীমাবদ্ধ করা ইস্পাতের গুণগত মান নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ। [১]
ইস্পাত তৈরীর প্রচলন কয়েক হাজার বছর আগেই শুরু হয়েছিল, তবে চতুর্দশ শতাব্দীর শেষপর্যন্ত এটিকে বিশাল আকারে বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়নি। ইস্পাত তৈরির একটি প্রাচীন প্রক্রিয়া ছিল ক্রুশিবল প্রক্রিয়া । আঠারো শতকের ৫০ ও ৬০ এর দশকে, বেসামের প্রক্রিয়া এবং সিমেন্স-মার্টিন প্রক্রিয়া ইস্পাত তৈরীকে ভারী শিল্পে পরিণত করেছিল। আজ ইস্পাত তৈরির জন্য দুটি বড় বাণিজ্যিক প্রক্রিয়া রয়েছে, যথা: বেসিক অক্সিজেন স্টিলমেকিং,যেখানে স্ক্র্যাপ ইস্পাতকে বিস্ফোরণ চুল্লিতে মূল উপকরণ হিসাবে দেয়া হয় এবং তরল পিগ-আয়রন উৎপন্ন হয় ।আরেকটি প্রক্রিয়া হচ্ছে বৈদ্যুতিক আর্ক ফার্নেস (ইএএফ) স্টিলমেকিং, যা স্ক্র্যাপ স্টিল বা ডাইরেক্ট রিডিউসড আয়রন (ডিআরআই) প্রধান উপকরণ হিসাবে ব্যবহার করে।অক্সিজেন ইস্পাত তৈরী প্রক্রিয়ায় চুল্লির ভিতরে তাপোৎপাদী বিক্রিয়ার মাধ্যমে জ্বালানি চাহিদা পূরণ হয়ে যায়; বিপরীতে, ইএএফ ইস্পাত তৈরিতে,শক্ত স্ক্র্যাপকে গলানোর জন্য বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহৃত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে, ইএএফ স্টিলমেকিং প্রযুক্তি বিকশিত হয়ে অক্সিজেন স্টিলমেকিংয়ের নিকটবর্তী হয়েছে; কারণ প্রক্রিয়াতে রাসায়নিক শক্তির ব্যবহার আরো বেড়ে গিয়েছে। [২]
স্টিল মেকিং বিশ্বের অন্যতম কার্বন নিঃসরণকারী শিল্প। ২০২০-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সমস্ত গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের 7 থেকে ৯ শতাংশ স্টিলমেকিং প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। [৩] বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমাতে শিল্পকারখানা গুলোর গ্রীন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হবে। [৪] ২০২০ সালে, ম্যাককিনসি কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য বেশকিছু প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে । যার মধ্যে হাইড্রোজেন ব্যবহার, কার্বন আটকে ফেলা এবং পুনরায় ব্যবহার এবং দূষণহীন ভাবে উৎপন্ন শক্তি দ্বারা চালিত বৈদ্যুতিক চাপ চুল্লিগুলির সর্বাধিক ব্যবহার অন্যতম।
ইতিহাস
প্রাচীন, মধ্যযুগীয় এবং আধুনিক প্রযুক্তিগত সমাজগুলির বিকাশে ইস্পাত নির্মান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রাচীন ইরান, প্রাচীন চীন, ভারত এবং রোমে ধ্রুপদী/শাস্ত্রীয় যুগে ইস্পাত তৈরির প্রাথমিক প্রক্রিয়াগুলি তৈরি হয়েছিল, তবে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরে ইউরোপে প্রাচীন ইস্পাত তৈরির প্রক্রিয়াটি হারিয়ে যায়। [৫]
ঢালাই লোহা একটি শক্ত, ভঙ্গুর উপাদান যা দিয়ে কাজ করা কঠিন, অপরপক্ষে ইস্পাত সংকোচনযোগ্য, তুলনামূলকভাবে সহজে তৈরি করা যায় এবং একটি বহুমুখী কার্যকরী উপাদান। মানব ইতিহাসের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ইস্পাত কেবলমাত্র অল্প পরিমাণে তৈরি করা হয়েছে ।উনিশ শতকে বেসামের প্রক্রিয়া আবিষ্কার এবং ইনজেকশন প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের পরবর্তী প্রযুক্তিগত বিকাশ হওয়ার পরে, ইস্পাতের ব্যাপক উৎপাদন বৈশ্বিক অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং আধুনিক প্রযুক্তিগত বিকাশের মূল সূচক হয়ে উঠেছে।.[৬]
ইস্পাত উৎপাদনের প্রাথমিক আধুনিক পদ্ধতিগুলি প্রায়শই শ্রম-নিবিড় এবং অত্যন্ত দক্ষ শিল্প ছিল। যেমন:
ফাইনলি ফোর্জদ, স্টিল উৎপাদন করতে জার্মান ফিনিয়ার প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়।
ব্লিস্টার স্টিল এবং ব্লিস্টার স্টিলক্রুসিবল স্টিল ।
শিল্প বিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ফরজেবল ধাতু (বার আয়রন বা ইস্পাত) উৎপাদন করার বৃহত আকারের পদ্ধতির বিকাশ। ছিদ্র চুল্লিতে প্রাথমিকভাবে গড়া লোহা উৎপাদন করা হতো। তবে পরে ইস্পাত উৎপাদনে প্রয়োগ করা হয়েছিল।
আধুনিক ইস্পাত তৈরির প্রকৃত বিপ্লব ১৮৫০ এর দশকের শেষে কেবল শুরু হয়েছিল, যখন বেসামের প্রক্রিয়া উচ্চ পরিমাণে স্টিল তৈরির প্রথম সফল পদ্ধতি হয়ে ওঠে এবং পরবর্তীতে ওপেন-হার্থ চুল্লি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ।
আধুনিক প্রক্রিয়া
আধুনিক ইস্পাত তৈরির প্রক্রিয়াগুলিকে দুটি বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে: প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক।
প্রাথমিক ইস্পাত তৈরিতে মূলত অক্সিজেন স্টিলমেকিংয়ের মাধ্যমে একটি বিস্ফোরণ চুল্লি এবং ইস্পাত স্ক্র্যাপ থেকে তরল আয়রনকে স্টিলে রূপান্তর করা হয়,অথবা বৈদ্যুতিক চাপ চুল্লীতে স্ক্র্যাপ ইস্পাত বা সরাসরি হ্রাসকৃত আয়রন (ডিআরআই) গলানো।
মাধ্যমিক(গৌণ) ইস্পাত তৈরির মধ্যে ঢালাইয়ের আগে অশোধিত ইস্পাতকে পরিশোধিত করা জড়িত এবং বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপগুলি সাধারণত ল্যাডলে চালিত হয়। গৌণ ধাতববিদ্যায়, মিশ্রণকারী এজেন্ট যুক্ত করা হয়, ইস্পাতগুলিতে দ্রবীভূত গ্যাসগুলি হ্রাস করা হয় এবং কাস্টিংয়ের পরে উচ্চ-মানের ইস্পাত উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্ভুক্তিগুলি রাসায়নিকভাবে বাদ দেওয়া হয় বা রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়। [৭]
প্রাথমিক ইস্পাত তৈরি
বেসিক অক্সিজেন স্টিলমেকিং প্রাথমিক ইস্পাত তৈরির একটি পদ্ধতি যেখানে কার্বন সমৃদ্ধ গলিত কাঁচা লোহা ইস্পাতে রূপান্তরিত হয়। গলিত কাঁচা লোহার মধ্যে অক্সিজেন ফুঁকলে এতে কার্বন উপাদান কমে যায় এবং এটিকে ইস্পাতে পরিবর্তন করে।
প্রক্রিয়াটি ১৯৪৮ সালে রবার্ট ডুরারের দ্বারা বিকশিত হয়েছিল। তিনি বেসেমের এর প্রক্রিয়ায় বাতাস প্রদান এর পরিবর্তে অক্সিজেন প্রদান করে প্রক্রিয়াটি উদ্ভাবন করেন । প্রক্রিয়াটিতে গাছের ব্যবহার এবং লোহা গলনের সময়সীমা কমেছে, সেইসাথে শ্রমিকদের কার্যক্ষমতাও বেড়েছে। ১৯২০ থেকে ২০০০ এর মধ্যে, কারখানায় শ্রমের প্রয়োজনীয়তা ১০০০ ভাগের ১ ভাগে নেমে এসেছে। বিশ্বের বেশিরভাগ ইস্পাত উৎপাদিত হয় বেসিক অক্সিজেন চুল্লি ব্যবহার করে। ২০১১ সালে বিশ্বব্যাপী ইস্পাত উৎপাদনের ৭০ ভাগ ছিল এই প্রক্রিয়ায়। আধুনিক চুল্লিগুলি একবারেই ৩৫০ টন পর্যন্ত লোহা নিতে পারে এবং ৪0 মিনিটেরও কম সময়ে এটিকে ইস্পাতে রূপান্তরিত করে। [৮]
ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস ইস্পাত তৈরি হচ্ছে স্ক্রাপ বা সরাসরি বিয়োজিত আয়রনকে বৈদ্যুতিক চুল্লি তে গলিয়ে ইস্পাত তৈরি করা । ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস পদ্ধতিতে সাধারণত চুল্লিতে স্ক্র্যাপ বা সরাসরি বিয়োজিত আয়রন এর সাথে প্রয়োজনমতো গরম ইস্পাত প্রবেশ করানো হয় । তবে অনেক সময় কঠিন গরম ইস্পাত এর পরিবর্তে বিগলিত ইস্পাতও ব্যবহার করা হয়। গ্যাস বার্নার ব্যবহার করে চুল্লীর ভিতরে স্ক্রাপের স্তুপ গলানো হয়।প্রাথমিক ইস্পাত তৈরি পদ্ধতিতে চুল্লীর ভেতরের আবরণ রক্ষা করতে এবং ভেজাল সহজে নিষ্কাশন করতে ফ্লাক্স যোগ করা হয় ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস পদ্ধতিতে ব্যবহৃত চুল্লিরধারণক্ষমতা প্রায় ১০০ টন এবং প্রতিবারে এ পদ্ধতিতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০মিনিট।[৮]
মাধ্যমিক(গৌণ) ইস্পাত তৈরি
গৌণ ইস্পাত তৈরি প্রক্রিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ল্যাডলে পরিচালিত হয়। ল্যাডলে সঞ্চালিত কয়েকটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে ডি-অক্সিডেশন, ভ্যাকুয়াম ডিগ্যাসিং, অ্যালয় যোগ, অনুপ্রবেশকারী অপসারণ, অনুপ্রবেশকারী রসায়ন পরিবর্তন, ডি-সালফারাইজেশন এবং হোমোজিনাইজেশন। চুল্লিটির ঢাকনাটিতে বৈদ্যুতিক চাপ গরম করে গ্যাস-আলোড়িত লেডলগুলিতে ল্যাডেল ধাতুবিদ্যা অপারেশন করা এখন সাধারণ প্রক্রিয়া। ল্যাডল ধাতুবিদ্যার কঠোর নিয়ন্ত্রণ ইস্পাতের উচ্চ গ্রেড উৎপাদন করার সাথে সম্পর্কিত। [৭]
এইচসার্ন আয়রন তৈরির প্রক্রিয়াতে, আয়রন আকরিকটি প্রায় সরাসরি তরল আয়রন বা গরম ধাতু অবস্থায় প্রক্রিয়াজাত হয়। প্রক্রিয়াটি ঘূর্ণিঝড় রূপান্তরকারী ফার্নেস নামক এক ধরনের বিস্ফোরণ চুল্লির চারপাশে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়, যা বেসিক অক্সিজেন স্টিলমেকিং প্রক্রিয়ার মত প্রয়োজনীয় পিগ লোহা টুকরা উৎপাদন প্রক্রিয়া এড়ানো সম্ভব করে তোলে। যার কারণে এইচসার্ন প্রক্রিয়াটিতে তুলনামূলকভাবে শক্তি কম লাগে এবং প্রথাগত ইস্পাত তৈরির প্রক্রিয়াগুলির তুলনায় কম গ্রীন হাউজ গ্যাস উৎপন্ন হয়।
২০২০ সাল পর্যন্ত ইস্পাত তৈরির জন্য ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানীগুলো ৭ থেকে ৯ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী বলে ধারণা করা হচ্ছে ।[৩][৯]
আয়রন আকরিক থেকে অক্সিজেন দূর করার জন্য কয়লা ব্যবহার করা হয় । আকরিকের মধ্যে বিদ্যমান অক্সিজেনের সাথে কয়লা থেকে উৎপন্ন কার্বন মনো অক্সাইড বিক্রিয়া করে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় ।[১০]
Fe2O3(s) + 3 CO(g) → 2 Fe(s) + 3 CO2(g)
অন্যান্য রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো বেসিক অক্সিজেন স্টিল মেকিং, ক্যালসিনেশন এবং হট ব্লাস্টের সময় ঘটে।
বিস্ফোরণ চুল্লি
খাঁটি ইস্পাত তৈরি করতে লোহা ও কার্বন দরকার। এককভাবে লোহা খুব শক্তিশালী নয়। তবে কোন ইস্পাত-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো সেটির মধ্যে কার্বন অংশের (সাধারণত এক শতাংশের কম) উপর নির্ভর করে। কয়লা থেকে কার্বন এবং লোহার আকরিক থেকে লোহা নিয়ে ইস্পাত তৈরি করা হয়। তবে লোহার আকরিক লোহা, অক্সিজেন এবং অন্যান্য ট্রেস উপাদানগুলির মিশ্রণ। ইস্পাত তৈরি করতে লোহাটিকে অক্সিজেন থেকে আলাদা করতে হয় এবং একটি অল্প পরিমাণে কার্বন যুক্ত করতে হয়। উভয়ই প্রক্রিয়াই খুব উচ্চ তাপমাত্রায় (১,৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৩,০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) লোহার আকরিক গলিয়ে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে (বায়ু থেকে) এবং কোক নামক এক ধরনের কয়লার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এই তাপমাত্রায় লোহা আকরিকটি থেকে অক্সিজেন বের হয়ে যায় এবং সেই অক্সিজেন কোক-এর মধ্যে অবস্থিত কার্বনের সাথে বিক্রিয়া করে।
Fe2O3(s) + 3 CO(g) → 2 Fe(s) + 3 CO2(g)
আয়রন অক্সাইডের তুলনায় কার্বন ডাই অক্সাইডের শক্তিস্তর নিম্ন (অনুকূল) হওয়ার কারণে বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং এই বিক্রিয়াটির সক্রিয়করণ শক্তি অর্জনের জন্য উচ্চ তাপমাত্রা প্রয়োজন। আয়রনের সাথে অল্প পরিমাণে কার্বন যুক্ত হয়ে পিগ আয়রন তৈরি করে, যা ইস্পাতের আগে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা, কারণ এতে কার্বনের পরিমাণ খুব বেশি - প্রায় ৪%। [১১]
ডি-কারবুরাইজেশন
পিগ আয়রনে কার্বন উপাদান হ্রাস করতে এবং ইস্পাতের কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে কার্বন পেতে, পিগ আয়রনটি আবার গলানো হয় এবং বেসিক অক্সিজেন স্টিলমেকিং নামক একটি প্রক্রিয়াতে অক্সিজেন ঢুকানো হয়, যে প্রক্রিয়াটি একটি ল্যাডলে ঘটে। এই প্রক্রিয়ায়, অক্সিজেন অবাঞ্ছিত কার্বনের সাথে আবদ্ধ হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার মাধ্যমে বাইরে নির্গত হয়। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পিগ আয়রনে কার্বন উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে হ্রাস করে ইস্পাত তৈরি করা হয়।
ক্যালসিনেশন
চুনাপাথর ব্যবহারের ফলে আরও কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ ঘটে । এ প্রক্রিয়ায় ক্যালিকেশন নামক একটি বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং উচ্চ তাপমাত্রায় চুনাপাথর গলে যায়।
CaCO3(s) → CaO(s) + CO2(g)
চুনাপাথরে বিদ্যমান কার্বন কার্বন-ডাই-অক্সাইড হিসাবে পরিবেশে মুক্ত হয়। ক্যালসিয়াম অক্সাইড রাসায়নিক ফ্লাক্স হিসাবে কাজ করে এবং স্ল্যাগ আকারে ভেজাল দূর করে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালসিয়াম অক্সাইড সিলিকন অক্সাইডের ভেজাল দূর করার বিক্রিয়াটি :
SiO2 + CaO → CaSiO3
বিস্ফোরণ চুল্লিতে পিগ লোহা পেতে এবং প্রাথমিক অক্সিজেন ইস্পাত তৈরি প্রক্রিয়ায় ইস্পাত তৈরি করতে উভয় ক্ষেত্রেই ফ্লাক্স সরবরাহের জন্য চুনাপাথরের এই ব্যবহারটি করা হয়।
উত্তপ্ত বিস্ফোরণ
উত্তপ্ত বিস্ফোরণে আরও কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন ঘটে যা বিস্ফোরণ চুল্লির তাপমাত্রা বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। উত্তপ্ত বিস্ফোরণের মাধ্যমে গরম বাতাসকে বিস্ফোরণ চুল্লিতে পাম্প করে প্রবেশ করানো হয়, বিস্ফোরণ চুল্লিতে লোহা আকরিকটি পিগ লোহাতে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়াটি উচ্চ সক্রিয়করণ শক্তি অর্জনে সহায়তা করে। চুলার নকশা এবং অবস্থার উপর নির্ভর করে গরম বিস্ফোরণের তাপমাত্রা ৯০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৩,০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১,৬০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ২৩,০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) পর্যন্ত হতে পারে। তেল, টার, প্রাকৃতিক গ্যাস, গুঁড়ো কয়লা এবং অক্সিজেন কোকের সাথে একত্রিত করে চুল্লিতে ইনজেকশনের মাধ্যমে অতিরিক্ত শক্তি পাওয়া যেতে পারে এবং বিয়োজিত গ্যাসের পরিমাণ বাড়ানোর মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো যায়। যদি উত্তপ্ত বিস্ফোরণে জীবাশ্ম জ্বালানী জ্বালিয়ে ভেতরের বাতাস গরম করা হয় (যা প্রায়শই ঘটে থাকে), তাহলেও কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়। [১২]
পরিবেশের উপর প্রভাব
ইস্পাত উৎপাদন পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।ইস্পাত উৎপাদনের সময় কার্বন-মনোক্সাইড, সালফার-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎপন্ন হয়ে বাতাসে নির্গত হয় ।এসব গ্যাস মানুষ সহ সকল প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হয়, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ।[১৩] ইস্পাত উৎপাদনের সময় উপজাত হিসেবে বেশ কিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল আবর্জনা তৈরি হয়, যেগুলো পানিতে বা মাটিতে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করে।ইস্পাত উৎপাদনে বেশ কিছু কোড তৈরি করা হয়েছে, যে গুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করার মাধ্যমে পরিবেশগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব।