আধুনিক ইহুদি ধর্মে ও ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ উভয়ের মধ্যেই ইয়াহ্ওয়েহ্ এর উপাসনা থাকলেও, দুটি বিশ্বাস ব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য বেশ স্পষ্ট। ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ তার থেকে উদ্ভূত ইহুদি ধর্মের মত না হয়ে একপ্রকাশবাদী/একোপাসনাবাদী ধর্ম ছিল, যেখানে ইয়াহ্ওয়েহ্কে ইজরায়েলের জাতীয় দেবতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল,[৩] কিন্তু সেই সাথে প্রাচীন সেমিটীয় ধর্মের অন্যান্য দেব-দেবীকে, নির্দিষ্ট করে বললে, যে কনানীয় বহুঈশ্বরবাদ থেকে ইয়াহ্ওয়েহ্বাদের উদ্ভব হয়েছে তার দেবদেবী যেমন বাআল, মোলক, আশেরাহ্ ও আস্তার্তিকে আবশ্যিকভাবে উপাসনা না করা হলেও তাদের অস্তিত্বকে ইয়াহ্উইবাদে মেনে নেয়া হত।
একোপাসনাবাদী ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ থেকে বর্তমানে স্বীকৃত একেশ্বরবাদী ইহুদি ধর্মের রূপান্তর ঠিক কোন সময়ে হয় তা স্পষ্ট নয়, তবে এটা স্পষ্ট যে এই ঘটনাটি আমূল সংস্কারবাদী সংশোধনী যেমন এলিয়পর সুসমাচার ও হিষ্কিয় ও যোশিয়ের সংস্কার দিয়ে শুরু হয় এবং সমাপ্ত হয় বাবিলীয় বন্দিদশার শেষে, যেখানে ইয়াহ্ওয়েহ্কে বিশ্বের একমাত্র ঈশ্বর হিসেবে স্বীকৃতি দান ইহুদি জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগকে সুরক্ষিত করে।
ইতিহাস
যদিও হিব্রু বাইবেল বলে যে, ঐতিহাসিকভাবে ইহুদি ধর্ম সর্বদাই একেশ্বরবাদী ছিল, প্রকৃতপক্ষে এটি সত্য নয়। বাইবেলীয় সময়ে লেভান্টের প্রত্নতাত্ত্বিক নথিসমূহ (যেমন, ব্রোঞ্জ যুগ/দ্বিতীয় লৌহ যুগ )[৪][৫] দেখায় যে ইহুদিরা যে ইজরায়েলীয়দের থেকে বা খুব ন্যুনতমভাবে তারা যে কেনানীয় জনগোষ্ঠী থেকে উত্থিত হয়েছিল, তারা ছিল বহুঈশ্বরবাদী (বা একপ্রকাশবাদী/একোপাসনাবাদী)। এটা প্রায় নিশ্চিত যে, যে ঐতিহাসিক জনগোষ্ঠী থেকে ইজরায়েলীয়দের উদ্ভব হয়েছে তারা কেনানীয় দেবতাদের উপাসনা করত, যাদের মধ্যে প্রধান দেবতা ছিলেন কানানীয় দেবতা এল।
কীভাবে, কোথায় বা কেন লেভান্ত অঞ্চলে ইয়াহ্ওয়েহ্ এর আবির্ভাব হয় তা স্পষ্ট নয়, এমনকি তার নামও একটি বিভ্রান্তির বিষয়।[৬] এই ঘটনার সঠিক তারিখটি নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে; ঐতিহাসিকভাবে ইজরায়েল শব্দটি প্রথম নথিভূক্ত হয় মার্নেপ্থা কেন্দ্রস্তম্ভে খ্রিস্টপূর্ব ১৩শ শতাব্দীতে, যেখানে ইয়াহ্ওয়েহ্ এর উপাসনা খ্রিস্টপূর্ব ১১শ শতাব্দীর প্রথমদিকে প্রমাণিত হয়,[৭] কিন্তু সেখানে ইয়াহ্ওয়েহ্ নামের উৎপত্তি বা অক্ষর দূরের কথা, ইয়াহ্ওয়েহ্ এর নামের কোন নথিই পাওয়া যায়নি। এরপর ৫০০ বছরেরও পর মেশা কেন্দ্রস্তম্ভে (খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতাব্দী) ইয়াহ্ওয়েহ্ এর নামের উল্লেখ পাওয়া যায়।[৪] কেনীয় অনুকল্প বেশ কিছু বাইবেলীয় অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রস্তাব করে যে, ইয়াহ্ওয়েহ্ একজন মিদীয় বা মিদিয়ানাইট অথবা কেনীয় বা কেনাইট দেবতা হয়ে থাকতে পারেন যার ধারণা কোনভাবে মোজিস ও জেথ্রো এর মিথোস্ক্রিয়ার সাথে সমরূপ হয়ে যায় এবং তা ইজরায়েলীয়দের মধ্যে প্রবেশ করে, এবং উত্তর দিকে তাদের বাসভূমিসমূহে বাহিত হয়। যাইহোক, ইজরায়েলীয়রা কেনানীয়দের থেকে একটি স্বাধীন সম্প্রদায় হিসেবে গড়ে ওঠে যারা ইয়াহ্ওয়েহ্কে সকল দেবতার প্রধান বলে মনে করত এবং তাকেই উপাসনা করত। এটি অবশ্য অন্যান্য দেব-দেবীদের প্রতি শ্রদ্ধাকে ব্যাহত করতে পারেনি, কারণ এটি স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, ইয়াহ্ওয়েহ্কে বেশ কয়েকজন অন্যান্য দেবতাদের সাথে একত্রে উপাসনা করা হত।[৮] এই মূলভাবটি সেই যুগের বাইবেলীয় নথি ও বাইবেলীয় নথির বাইরের নথি উভয়ের মধ্যেই পাওয়া যায়, যদিও বাইবেলীয় ও অবাইবেলীয় নথির মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। বাইবেলে অন্যান্য দেব দেবীর পাশাপাশি ইয়াহ্ওয়েহ্ এর উপাসনার কথা বলা থাকলেও, এখানে একে কেবল বৈধর্ম বা বিধর্মীয় আচরণ বা প্রচলিত মতের বিরুদ্ধ বিশ্বাসই বলা হয়নি (স্পষ্টতই সেই সময়ে একে বৈধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হত না), সেই সাথে সেই সময়ের পূর্বে এই ঐতিহ্য সম্পর্কিত বর্ণনা দেয়াতেও অবহেলা দেখা গেছে। বাইবেলের বিবরণগুলি অনুসারে ইহুদি ধর্মের গঠনমূলক পর্যায়ে আব্রাহাম, মোজিস প্রমুখের অধীনে ইয়াহ্ওয়েহ্ এর ধারণার উদ্ভব হয়, যা স্পষ্টতই ঐতিহাসিক নথিসমূহের বিরুদ্ধে যায়, এবং নির্দেশ করে যে, ইয়াহ্ওয়েহ্ এর অ-একেশ্বরবাদী উপাসনা পুরোপুরিভাবে ইলাইজাহ্ এর মত দেবদূতদের সময়ে সীমাবদ্ধ ছিল, যখন ইয়াহ্ওয়েহ্বাদের (ইহুদি ধর্মের বিপরীতে) পতন হচ্ছিল। যাই হোক, অন্যান্য কেনানীয় দেবদেবীর সাথে ইয়াহ্ওয়েহ্কে কয়েক শত বছর ধরে উপাসনা করা হয়, যদিও অন্য কোন দেবদেবী তার স্থানে উন্নীত হতে পারেন নি। লৌহ যুগে ইয়াহ্ওয়েহ্ ছিলেন ইজরাইলীয় রাজ্যগুলোর জাতীয় দেবতা।[৩] প্রাথমিক গোষ্ঠীগত বা উপজাতীয় যুগে প্রতিটি গোষ্ঠীর নিজস্ব রক্ষাকারী দেবতা বা প্যাট্রন দেবতা থাকত। তবে রাজতন্ত্রের উত্থানের পরে, রাষ্ট্র ইয়াহ্ওয়েহ্কে ইজরায়েলের জাতীয় দেবতা হিসেবে উন্নীত করে,[৩] এবং অন্যান্য দেবতাদের উপরে তাকে স্থান দেয়।
প্রাক-নির্বাসন ইজরায়েল তার প্রতিবেশীদের মতই বহু-ঈশ্বরবাদী ছিল,[৯] এবং ইজরায়েলীয় একেশ্বরবাদ ছিল অনন্য ঐতিহাসিক পরিস্থিতির ফলস্বরূপ।[১০]ধর্মীয় সংশ্লেষবাদের যুগে, ইজরায়েলীয়দের মধ্যে কেনানীয় দেবতা এলকে ইয়াহ্ওয়েহ্ এর সমান মনে করা মেনে নেওয়া হয়েছিল।[১১] যুক্তিসঙ্গতভাবে এটি ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ এর সমাপ্তির সূচনা এবং ইহুদি ধর্মের সূত্রপাত। ইহুদিদের ধর্মের মধ্যে এই ধারণাটি প্রচলিত হবার খুব শীঘ্রই এটা মনে করা হতে লাগল যে এল আর ইয়াহ্ওয়েহ্ সবসময় একই দেবতা ছিল, যার সাক্ষ্য এক্সোডাস ৬:২-৩ এ পাওয়া যায়,[১১] যা হচ্ছে:
#
ইংরেজি অনুবাদ
লিপ্যন্তর
আরামাইক / হিব্রু
1
এবং ঈশ্বর (এলোহিম) মোজিসের সাথে কথা বলেছিলেন, এবং তাকে বললেন: "আমি ইয়াহ্ওয়েহ্"।
কিন্তু আমার নাম হল ইয়াহ্ওয়েহ্, এবং আমি আমার এই পরিচয় তাদেরকে জানতে দেইনি।
ū·šə·mî Yah·weh, lō nō·w·ḏa‘·tî lā·hem.
שַׁדָּי; וּשְׁמִי יְהוָה, לֹא נוֹדַעְתִּי לָהֶם.
খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতাব্দীর পরে লৌহযুগের প্রধান গোত্র বা গোষ্ঠী বা সরদারিগুলো জাতিগত জাতিরাষ্ট্রসমূহের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। প্রতিটি রাজ্যে রাজা কেবল রাজা ছিলেন না, একই সাথে তিনি ছিলেন জাতীয় ধর্মের প্রধান এবং তাই তিনি ছিলেন পৃথিবীতে জাতীয় দেবতার প্রতিনিধি।[৪]জেরুজালেমে প্রতিবছর এর প্রতিফলন দেখা যেত যখন রাজা একটি অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করতেন, যে অনুষ্ঠানে ইয়াহ্ওয়েহ্কে পবিত্র মন্দিরের আসনে অধিষ্ঠিত করা হত।[১২]হিব্রু বাইবেল এমন ধারণা দেয় যে জেরুজালেমের মন্দিরটি সর্বদা ইয়াহ্ওয়েহ্ এর কেন্দ্রস্থল বা এমনকি একমাত্র মন্দির হিসাবে থাকবে, কিন্তু এমনটা ছিল না।[১৩] প্রাচীনতম ইস্রায়েলের উপাসনাস্থলটি হচ্ছে সামারিয়ার পাহাড়ে অবস্থিত একটি দ্বাদশ শতাব্দীর উন্মুক্ত-বায়ু বেদী যেখানে কেনানীয় ষাঁড়-রূপী এল এর ব্রোঞ্জ অবশেষ পাওয়া গেছে। এছাড়া ইজরায়েলের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তের ডান-এ, এবং জুডাহ্ অঞ্চলের নেগেভেরবের্-শেবা ও আরাদেও বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ পাওয়া গেছে।[১৪]শিলোহ, বেথেল, গিলগাল, মিজ্পাহ্, রামাহ্ এবং ডানও উৎসব, বলি, মানত করা, ব্যক্তিগত আচার অনুষ্ঠান এবং আইনি বিরোধ নিষ্পত্তির প্রধান স্থান ছিল।[১৫]
নতুন আদর্শ ও অনুশীলনের যুগের ইঙ্গিত প্রদানকারী দেবদূত বা নবীদের কারণে ইয়াহ্ওয়েহ্বাদের পতন এবং ইহুদী ধর্মের জন্ম আরও নিকটবর্তী হয়েছিল। হিব্রু রাজা হেজেকিয়াহ্ এবং জোসাইয়াহ্ ইয়াহ্ওয়েহ্ ছাড়া অন্য কোন দেবতার উপাসনা নিষিদ্ধ করেছিলেন, তবে তাদের সংস্কারগুলি তাদের উত্তরসূরিদের দ্বারা পরিবর্তিত হয়েছিল যারা একোপাসনাবাদী ইয়াহ্ওয়েহ্বাদকেই সমর্থন করেন।
এককভাবে ইয়াহ্ওয়েহ্ এর উপাসনা প্রথম খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতাব্দীতে ইলাইজাহ্ এর সময় থেকে এবং সর্বশেষে খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতকে হোসেয়ার সাথে শুরু হয়েছিল; কিন্তু তারপরেও এর সমর্থকগণ নির্বাসন ও উত্তর-নির্বাসন যুগে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবার পূর্বে কম সংখ্যক মানুষই এই রীতি অনুসরণ করত।[৯] এই অংশের প্রাথমিক সমর্থকগণ প্রকৃত একেশ্বরবাদী না হয়ে একোপাসনাবাদী হিসাবে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়,[১৬] কেননা ইয়াহ্ওয়েহ্কে একমাত্র ঈশ্বর ছিলেন বলে বিশ্বাস করার পরিবর্তে তারা বিশ্বাস করেছিল যে ইজরায়েলের লোকদের উচিৎ অন্যান্য দেবতাদের পরিবর্তে কেবল ইয়াহ্ওয়েহ্কেই উপাসনা করা,[১৭] অন্যান্য দেবতাদের অস্তিত্বকে বাতিল না করলেও এটা ছিল ইজরায়েলের ঐতিহ্যগত বিশ্বাসের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। নির্বাসনের জাতীয় সঙ্কটের সময়েই ইয়াহ্ওয়েহ্ এর অনুগামীরা আরও একধাপ এগিয়ে যায়, অবশেষে ইয়াহ্ওয়েহ্ ভিন্ন অন্যান্য দেবদেবীদেরও অস্তিত্ব অস্বীকার করে, এবং এভাবে একোপাসনাবাদ থেকে একেশ্বরবাদ ও ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ থেকে ইহুদিধর্মের রূপান্তর ঘটে।[১৮]
বিশ্বাস এবং অনুশীলন
ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ ইহুদি ধর্ম থেকে এখানেই পৃথক ছিল যে, এই ধর্মে ইয়াহ্ওয়েহ্ এর পাশাপাশি অন্যান্য দেবতাদের উপাসনা করা অনুমোদিত ছিল। ইয়াহ্ওয়েহ্বাদের সাথে ইহুদিধর্মের আচারের মধ্যে কিছু মিল রয়েছে।
যাকে ইয়াহ্ওয়েহ্ এর সাথে সবচেয়ে বেশি উপাসনা করা হত তিনি হলেন আশেরাহ্, যাকে ইয়াহ্ওয়েহ্ এর সঙ্গী[১৯] বা মা[২০] হিসেবে শ্রদ্ধা করা হত। কেনানীয় দেবদেবীর ধারণায় আশেরাহ্ ছিলেন এলের স্ত্রী। অন্যান্য দেবতা যেমন বাআলকে ইয়াহ্ওয়েহ্ এর সাথে সাধারণত উপাসনা করা হত, এটি সর্বদাই নিয়মিত অনুশীলন ছিল না, উদাহরণস্বরূপ বাল কেবলমাত্র ইলাইজাহ্ এর সময়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপ্রাপ্ত হয়েছিল, কিন্তু পরে তার আর এই অবস্থান ছিল না। বিভিন্ন বাইবেলের অনুচ্ছেদগুলি ইঙ্গিত দেয় যে জেরুজালেম, বেথেল এবং সামারিয়ায় অবস্থিত আশেরাহ্ এর মন্দিরে তার মূর্তি রাখা হয়েছিল।[২১][২০] " স্বর্গের রানী" নামে পরিচিত এক দেবী, যিনি সম্ভবত আস্তার্তি এবং মেসোপটেমীয় দেবী ইশতারের মিশ্রণ ছিলেন,[২১] তা সম্ভবত আশেরাহ্ এর উপাধি ছিল,[২০] যাকে উপাসনাও করা হত। বাল ও ইয়াহ্ওয়েহ্ এর পূজা ইজরায়েলের ইতিহাসের প্রাচীন যুগে সহাবস্থান করত, কিন্তু ইজরায়েলের রাজা আহাব ও তার রাণী জেজেবেল এর প্রচেষ্টায় বালকে জাতীয় দেবতার মর্যাদায় উন্নীত করার পর খ্রিস্টপূর্ব ৯ম শতাব্দীর পর তাদেরকে শত্রুভাবাপন্ন হিসেবে বিবেচনা করা হতো,[৮] যদিও বালের উপাসক সম্প্রদায় কিছু সময়ের জন্য অব্যাহত ছিল।[৮] ইজরায়েলের বাইরেও, ইয়াহ্ওয়েহ্ মিশরীয় দেবী অনাতকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন, খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীর মিশরের এলিফ্যান্টাইনেরইহুদি উপনিবেশ থেকে প্রাপ্ত রেকর্ড অনুসারে, সেই বসতির ইয়াহ্ওয়েহ্ এর মন্দিরে "আনাত-ইয়াহু" দেবীর উপাসনা করা হত।[২২]
ইয়াহ্ওয়েহ্ পূজা বিখ্যাত ছিল তার প্রতিমাহীনতাবাদের জন্য, যার মানে হল এখানে দেবতাকে কোন মূর্তি বা অন্য কোন প্রতীকীর দ্বারা দেখানো হয় নি। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে কোন প্রতীকী হিসেবে উপস্থাপিত হননি, এবং প্রথম দিকে ইজরায়েলীয় উপাসনাসমূহ সম্ভবত দাঁড়িয়ে থাকা পাথরের উপর ভিত্তি করে হত, কিন্তু বাইবেলের পাঠ্য অনুসারে জেরুজালেমের মন্দিরে ইয়াহ্ওয়েহ্ এর সিংহাসনটি ছিল দুটো শেরুবিম এর আকারে, তাদের অভ্যন্তরীণ ডানাগুলি আসন গঠন করেছিল, একটি বাক্স (আর্ক অফ দ্য কোভানেন্ট) ছিল পাদদেশ হিসাবে, আর সিংহাসনটি খালি ছিল।[২৩] ইজরায়েলীয় প্রতিমাহীনতাবাদের কোনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি এবং সাম্প্রতিক বেশিরভাগ পণ্ডিত যুক্তি দিয়েছেন যে, রাজতান্ত্রিক সময়ের শেষ দিকে হেজেকিয়াহ্ ও যোশাইয়াহ্ এর সংস্কারের আগে ইয়াহ্ওয়েহ্ এর প্রতিমা ছিল: একটি সাম্প্রতিক গবেষণার উদ্ধৃতি অনুসারে, "প্রথম দিকের প্রতিমাহীনতাবাদ, প্রকৃতপক্ষে বা অন্যথায়, খাঁটি উত্তর-নির্বাসন কাল্পনিকতার একটি প্রক্ষেপণ"।[২৪]
ইয়াহ্ওয়েহ্বাদের ধর্মীয় অনুশীলনগুলি সে সময়ের অন্যান্য সেমেটীয় ধর্মগুলির মতই ছিল। ইহুদী ধর্মে টিকে যাওয়া এরকম ধর্মীয় চর্চাগুলো ছিল উৎসব, বলি, মানত করা, ব্যক্তিগত আচার-অনুষ্ঠান এবং আইনি বিরোধ নিষ্পত্তি।[১৫] আনুষ্ঠানিক উপাসনায় প্রার্থনার খুব কম ভূমিকাই থাকত।[২৫]
বেদীগুলিতে পশু বলিদানগুলি ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ ও ইহুদি ধর্মে (৭০ খ্রিস্টাব্দেদ্বিতীয় মন্দির ধ্বংস হওয়ার পূর্বে) বিশাল ভূমিকা পালন করত, সেক্ষেত্রে বলির পর পশুকে পোড়ানো হত এবং তাদের রক্ত ছিটিয়ে দেয়া হত। এই চর্চাটি বাইবেলে বর্ণিত আছে, এবং এটি ইহুদিদের জন্য একটি নিয়মিত মন্দির প্রথা ছিল। বলিদানের সাথে সম্ভবত সংগীত বা বুক অফ সাল্ম্স এর আবৃত্তিও হত, তবে এর বিবরণ খুব কম।[২৬] কিছু পণ্ডিত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে লেভিটিকাস ১-১৬-তে এই আচারের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে, যেখানে পবিত্রতা ও প্রায়শ্চিত্তে জোর দেয়া হত, এবং এগুলো প্রকৃতপক্ষে ব্যাবিলনীয় নির্বাসনের সময় ও ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ থেকে ইহুদিধর্মে রূপান্তরের সময় অনুসরণ করা হত, আর পরিবারের প্রধান অনুষ্ঠানের চাহিদা অনুযায়ী বলিদান করতে পারত।[২৬]
বলিদানের পুরোহিত বা কোহেন ছিল ইয়াহ্ওয়েহ্বাদ ও পরবর্তীতে আসা ইহুদি ধর্মের একটি মহান ভূমিকা। এই কোহেনের ভূমিকা পালন করতেন দেবদূতগণ এবং মহাকাব্যিক বীরগণ, যা আধুনিক ইহুদি গ্রন্থগুলোতে সামসন, ইলাইজাহ্ এবং/অথবা জোশুয়া সম্পর্কিত কিংবদন্তীতে ফুটে উঠেছে। উপাসনাসমূহ আক্ষরিক অর্থেই উচ্চ স্থানে সঞ্চালিত হত জেরুজালেম মন্দিরে বসে সঙ্গে, যেমন মোরিয়াহ্ পর্বত/জায়ন পর্বতে জেরুজালেম মন্দির (ভবিষ্যতে টেম্পল মাউন্ট), এবং গেরিজিম পর্বতে অধিষ্ঠিত সামারিটীয়দের মন্দির, যদিও এই ব্যাপারটি ইচ্ছাকৃত অনুশীলনের চেয়ে একটি কাকতালীয় হয়ে থাকতে পারে। সম্ভবত তাবিজ এবং রহস্যময় টেরাফিম ব্যবহার করা হত। এটিও বেশ সম্ভব যে, জনপ্রিয় থাকাকালীন সময়ে ইয়াহ্ওয়েহ্বাদে পরমানন্দময় কাল্টগত আচার পালন করা হত (এক্ষেত্রে আর্ক অফ দ্য কোভানেন্টের সামনে ডেভিডের নগ্ন হয়ে নৃত্য করার বাইবেলীয় গল্পটির তুলনা করা যায়), এমনকি এক্ষেত্রে নরবলিও দেয়া হয়ে থাকতে পারে।[১০] ইয়াহ্ওয়েহ্বাদের ধর্মীয় রীতিনীতি কী ছিল তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে নরবলি একটি বিতর্কিত বিষয়, কারণ ইয়াহ্ওয়েহ্বাদীরা কখনও এটি পালন করেছিল কিনা তা অস্পষ্ট, সম্ভবত ইয়াহ্ওয়েহ্ এর সাথে যারা মোলকের উপাসনা করতেন তারা নরবলির চর্চা করতেন। আর যদি তাই হয়, তবে সেই বলিদান ইয়াহ্ওয়েহ্ এর উদ্দেশ্যে হত নাকি মোলকের উদ্দেশ্যে হত তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ইয়াহ্ওয়েহ্ এর উপাসনা তিনটি মহান বার্ষিক উৎসবকে কেন্দ্র করে সঞ্চালিত হত, যেগুলো গ্রামীণ জীবনের প্রধান ঘটনাসমূহের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল: মেষশাবকের জন্মের সাথে সম্পর্কিত পাসওভার, খাদ্যশস্য সংগ্রহের সাথে সম্পর্কিত শাভুওত, এবং ফল সংগ্রহের সাথে সম্পর্কিত সুক্কত।[৯] এগুলি সম্ভবত ইয়াহ্ওয়েহ্বাদের আগমনের পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল,[৯] তবে এগুলি ইজরায়েলের জাতীয় পৌরাণিক ঘটনার সাথে জড়িত হয়ে যায়: পাসওভার সম্পর্কিত হয় মিশর থেকে প্রস্থান বা দি এক্সোডাস এর সাথে, শাভুওত সিনাই এর আইন প্রণয়নের সাথে সম্পর্কিত হয়, এবং সুক্কত সম্পর্কিত হয় বনাঞ্চলে ভ্রমণের সাথে।[১৩] উৎসবগুলোতে তাই ইয়াহ্ওয়েহ্ এর দ্বারা ইজরায়েল, ইজরায়েলের মর্যাদা ও ইজরায়েলের পবিত্র মানুষের পরিত্রাণকে উদযাপন করা হত, যদিও উৎসবগুলোর পূর্ববর্তী কৃষিভিত্তিক অর্থগুলো পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি।[২৭]
Bennet, William Rose (১৯৬৫) [1948, 1955], The Reader's Encyclopedia (second সংস্করণ), New York City, New York: Thomas Y. Crowell Co.উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link)
Betz, Arnold Gottfried (২০০০)। "Monotheism"। Freedman, David Noel; Myer, Allen C.। Eerdmans Dictionary of the Bible। Eerdmans। আইএসবিএন9053565035।
Betz, Hans Dieter (১৯৯৬)। The Greek Magical Papyri in Translation Including the Demonic Spells (2 সংস্করণ)। Chicago, Illinois: University of Chicago Press। আইএসবিএন978-0-226-04447-7।
Arnold, Clinton E. (১৯৯৬)। The Colossian Syncretism: The Interface Between Christianity and Folk Belief at Colossae। Eugene, Oregon: Mohr Siebeck। আইএসবিএন978-1-4982-1757-6।
Gnuse, Robert Karl (১৯৯৯)। "The Emergence of Monotheism in Ancient Israel: A Survey of Recent Scholarship"। Religion। 29 (4): 315–36। ডিওআই:10.1006/reli.1999.0198।
McKenzie, John L. (১৯৯০)। "Aspects of Old Testament Thought""। Brown, Raymond E.; Fitzmyer, Joseph A.; Murphy, Roland E.। The New Jerome Biblical Commentary। New Jersey: Prentice Hall। 1287, S.v. 77:17।