আর্দ্রা (ইংরেজি: Betelgeuse) আকাশের কালপুরুষনক্ষত্রমন্ডলভুক্ত একটি তারা। বেয়ার নামকরণের নিয়মে এর নাম Alpha Orionis। আর্দ্রা আকাশের অষ্টম এবং কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডলের দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারা। এর ঋগ্বেদীয় নাম রুদ্র আর সৈদ্ধান্তিকরা ডাকে আর্দ্রা নামে।
এই তারাটি বিষম এবং এটির আপাত মান ০.২ থেকে ১.২ এর মধ্যে সীমিত। আর্দ্রা, লুব্ধক ও প্রভাস এই তিনটি তারা দিয়ে শীতকালীন ত্রিভুজের কল্পনা করা হয়।
খালি চোখে লালচে দেখতে এই তারাটি একটি লাল অতিদানবতারা। আমাদের জানা তারাদের মধ্যে আর্দ্রা অন্যতম বৃহৎ ও উজ্জ্বল তারা। আমরা যদি আর্দ্রাকে সূর্যের স্থানে ভাবি তাহলে সেটার পৃষ্ঠদেশ বৃহস্পতির কক্ষপথ ছাড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু আর্দ্রার দূরত্ত্ব মাপা সহজ হয় নি। গত একশো বছরে এই তারটির দূরত্ত্ব জ্যোতির্বিদরা সর্বনিম্ন ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ১৩০০ আলোকবর্ষ নির্ধারণ করেছিলেন। বর্তমানে এটির দূরত্ত্ব মোটামুটিভাবে ৬৪০ আলোকবর্ষ ধরা হচ্ছে। সেই হিসেবে এর পরম মান হবে -৬.০৫।
সূর্যের পরে আর্দ্রাই হচ্ছে প্রথম তারা যার ব্যাস মাপা সম্ভব হয়েছে (১৯২০ সনে)। যেহেতু সময়ের সাথে সাথে আর্দ্রার আকারের তারতম্য হয় তাই পরবর্তীকালে থেকে অনেক ধরনের দুরবীন ব্যবহার করা সত্ত্বেও আর্দ্রার যথার্থ ব্যাস নির্ধারণ করা একটু কঠিনই হয়েছে। বর্তমানে এর ব্যাস ধরা হয় ০.০৪৩ থেকে ০.০৫৬ কৌণিক সেকেন্ড। এই ব্যাস আবার যে তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে। এছাড়া আবার আর্দ্রার পৃষ্ঠ থেকে বিশাল গ্যাসীয় পুঞ্জ অসম ভাবে উৎক্ষিপ্ত হয়। জ্যোতির্বিদরা মনে করেন আর্দ্রার বয়েস মাত্র ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটি বছর, কিন্তু বড় ভরের জন্য তারাটির দ্রুত বিবর্তন হয়েছে। অনেকে মনে করেন তারাটি কালপুরুষের OB1 তারাসমষ্টি থেকে বের হয়ে এসেছে। কালপুরুষের বেল্টের তিনটি তারা - অনিরুদ্ধ (আলনিলাম), ঊষা (আলনিটাক) ও চিত্রলেখাকেও (মিনটাকা) এই তারাসমষ্টির অংশ ধরা হয়। আর্দ্রা তার জীবনের শেষ পর্যায়ে আছে এবং আগামী ১ মিলিয়ন বা ১০ লক্ষ বছরের মধ্যে সুপারনোভা হিসেবে তার বিস্ফোরিত হবার সম্ভাবনা আছে।
পর্যবেক্ষণের ইতিহাস
অতি প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ আর্দ্রার লাল রংকে খেয়াল করেছে। তবে টলেমী ও উলুগ বেগ একে লাল বলে বর্ণনা করলেও [১][২] প্রথম শতকের প্রাচীন চীনা পর্যবেক্ষকরা আর্দ্রাকে হলুদ বলেছেন [৩]।
বর্ণালির ভিত্তিতে তারাদের বর্তমান শ্রেণীকরণের পূর্বে ঊণবিংশ শতাব্দীতে ইতালীয় জ্যোতির্বিদ এঞ্জেলো সেচ্চি রোহিণী (আন্টারিস) ও আর্দ্রা এই দুটি তারাকে কমলা থেকে লাল রঙের III শ্রেণীভুক্ত করেন। [৪]
হার্শেলের পর্যবেক্ষণ
স্যার জন হার্শেলই সর্বপ্রথম আর্দ্রার উজ্জ্বলতার বিষমতা লক্ষ করেন। ১৮৩৬ সালে তার বই Outlines of Astronomy-তে এর উল্লেখ আছে। ১৮৩৬ থেকে ১৮৪০ পর্যন্ত তিনি তারাটির ঔজ্জ্বল্যের বৃদ্ধি দেখতে পান, তারপর আবার এর প্রভার হ্রাস হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিষম তারা পর্যবেক্ষকদের সংস্থার (AAVSO) তথ্য অনুযায়ী ১৯৩৩ এবং ১৯৪২এ আর্দ্রার মান ছিল সর্বোচ্চ ০.২, অথচ ১৯২৭ এবং ১৯৪১এ ছিল সর্বনিম্ন ১.২।[৫][৬] জোহান বায়ার ১৬০৩ খৃষ্টাব্দে আর্দ্রাকে কালপুরুষের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা বলে আলফা অরিয়নিস নামাকরণ করেছিলেন। কিন্তু বাণরাজা বা রাইজেল হচ্ছে কালপুরুষের উজ্জ্বলতম তারা। আর্দ্রার প্রভার বিষমতার কারণে হয়তো সেই সময় আর্দ্রাকে বাণরাজার থেকে উজ্জ্বল মনে হয়েছিল।[৭]
↑Brück, H. A. (July 11–15, 1978)। "P. Angelo Secchi, S. J. 1818–1878"। M. F. McCarthy, A. G. D. Philip, and G. V. Coyne। Spectral Classification of the Future, Proceedings of the IAU Colloq. 47। Vatican City। পৃষ্ঠা 7–20। বিবকোড:1979RA......9....7B।এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |year= / |date= mismatch (সাহায্য)উদ্ধৃতি টেমপ্লেট ইংরেজি প্যারামিটার ব্যবহার করেছে (link) উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: সম্পাদক প্যারামিটার ব্যবহার করছে (link)