একুশে পদক (১৯৯১) আজীবন সম্মাননা পুরস্কার - চ্যানেল আই চলচ্চিত্র মেলা
আমিনুল হক (১ জুলাই ১৯২১ - ৩১ জুলাই ২০১১) যিনি চলচ্চিত্র জগতে আমিন নামে অধিক পরিচিত একজন বাংলাদেশী চলচ্চিত্র অভিনেতা, নাট্যকার এবং নির্দেশক ছিলেন।[২] এছাড়াও, তিনি অভিনয় করেছেন মঞ্চ, বেতার ও টেলিভিশন নাটকেও। ১৯৪৪ সালে শিশির কুমার ভাদুড়ীর নির্দেশনায় তার অভিনেতা হিসেবে অভিষেক ঘটে। ১৯৪৬ সালে বাবু ফণী বর্মণ পরিচালিত ‘মন্দির’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। দেশবিভাগের পরে তিনি ১৯৫৬ সালে আব্দুল জব্বার খান নির্মিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম বাংলা ও সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ চলচ্চিত্রে একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেন।
ফতেহ লোহানীর পরিচালনায় ১৯৫৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এফডিসি থেকে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র "আকাশ আর মাটি" চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন।[৩] তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের প্রথম নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।[৪][৫] তিনি ষাটের দশক থেকে আশির দশক পর্যন্ত চলচ্চিত্রে নিয়মিত ছিলেন। তিনি মোট ৩৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে মুখ ও মুখোশ (১৯৫৬), আকাশ আর মাটি (১৯৫৯), তোমার আমার (১৯৬১), জোয়ার এলো (১৯৬২), গোধূলীর প্রেম (১৯৬৫), অপরাজেয় (১৯৬৭), জয় বাংলা (১৯৭১), এপার ওপার (১৯৭৫), জানোয়ার (১৯৭৬), অচেনা অতিথি (১৯৭৮) ও নাজমা (১৯৭৮) উল্লেখযোগ্য। ১৯৯১ সালে তার দীর্ঘ নাট্যজীবনের স্বীকৃতি স্বরূপ নাট্যকলা বিভাগে একুশে পদক লাভ করেন।
প্রথম জীবন
আমিনুল হক ১৯২১ সালের ১ জুলাই অবিভক্ত বাংলার মালদহে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। মালদহ জিলা স্কুল থেকে এস,এস,সি পাশ করেন।[৪] ১৯৪৪ সালে কলকাতার শ্রীরঙ্গণ থিয়েটারে তার অভিনয় জীবন শুরু হয়।[২] সেখানে শিশির কুমার ভাদুড়ীর নির্দেশনায় তার অভিনেতা হিসেবে অভিষেক ঘটে। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় বাবু ফণী বর্মণ পরিচালিত মন্দির চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গসহ ঢাকা বেতারে শ্রুতি নাটকেও অভিনয় করতেন। স্বল্পসময়ের জন্য (১৯৪৪-৪৬ সাল) কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের প্রথম ডিভিশনে ফুটবলও খেলেছেন।[২] ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের সময় ঢাকায় চলে আসেন ও ঢাকা বেতারে চাকরি নেন। বেতার কেন্দ্রে বেশ কিছু শ্রুতি নাটক করেছেন হক।
কর্ম জীবন
অভিনয়
১৯৫৩ সালে আব্দুল জব্বার খান পূর্ব পাকিস্তানের তথা বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র মুখ ও মুখোশ চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এ সময় এ চলচ্চিত্রের অন্যতম অভিনেতা হিসেবে তাকে নির্বাচন করা হয়। [৬] ১৯৫৫ সালের ৩০ অক্টোবর ছবির কাজ শেষ হয় ও ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট মুক্তি পায়। হক মুখ ও মুখোশ' চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দারুণভাবে প্রশংসিত হন।
১৯৫৭ সালে চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি) প্রতিষ্ঠিত হলে ফতেহ লোহানীর পরিচালনায় এফডিসি থেকে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র আকাশ আর মাটি তে হক নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এতে নায়িকা হিসেবে ছিলেন সুমিতা দেবী। ১৯৫৯ সালে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। এরপর পরপর পাঁচটি ছবিতে নায়কের ভূমিকায় এবং পরবর্তীতে আরও প্রায় ত্রিশটি ছবিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন। [২]
১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত আমিনুল হক বুলবুল ললিতকলা একাডেমির নাট্য বিভাগের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকে তিনি অভিনেতা, নাট্যকার এবং নির্দেশক হিসেবেও কাজ করেছেন।
১৯৯১ সালে আমিনুল হক তার দীর্ঘ নাট্যজীবনের স্বীকৃতি স্বরূপ নাট্যকলা বিভাগে একুশে পদক লাভ করেন।[২]
ব্যক্তিগত জীবন
আমিনুল হক পিয়ারি বেগমকে বিয়ে করেন। তিনিও একজন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে নাজমা নামে পরিচিত ছিলেন। মুখ ও মুখোশ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় তাদের পরিচয় হয়। তাদের একমাত্র সন্তান রবিউল আলম, যিনি বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একজন প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন।[৮]
মৃত্যু
২০১১ সালের ৩১ জুলাই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকার উত্তরায় ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[৯][১০] তিনি বার্ধক্যসহ দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন। ঢাকার উত্তরার সিটি কর্পোরেশন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।[৮][১১]
↑ কখগআলম, ফখরুল (মে ২০১১)। আমাদের চলচ্চিত্র (প্রথম প্রকাশ সংস্করণ)। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। পৃষ্ঠা ১৯। আইএসবিএন9789843336132।|সংগ্রহের-তারিখ= এর |ইউআরএল= প্রয়োজন (সাহায্য)