অধিদপ্তর হল কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের নির্বাহী একটি শাখা অথবা দপ্তর। ১৯৯৬ সালের বাংলাদেশ কার্যবিধিতে সংজ্ঞায়িত করে বলা হয়েছে — “প্রত্যক্ষভাবে কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং যে দপ্তরকে সরকার কর্তৃক অধিদপ্তর ঘোষণা করা হয়েছে।” অধিদপ্তরের প্রধান নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অধিদপ্তরের আকার ও গুরুত্ব অনুসরণ করা হয়। যিনি প্রধান থাকেন তাকে সাধারণত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলা হয়। মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কর্তৃক গৃহীত নীতিমালা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন প্রকল্প অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়িত করে। কোন অধীনস্থ দপ্তরের চেয়ে অধিদপ্তর ব্যাপকভাবে ক্ষমতা ভোগ করে থাকে। এখানে অধীনস্থ দপ্তর বলতে বোঝানো হয় সরকারি দপ্তরকে। এই দপ্তর অধিদপ্তর হিসেবে ঘোষিত নয়, এবং এটি সাধারণত কোনো বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরাসরি কাজ করে না।[১]
মহাপরিচালক
মহাপরিচালক বা বিশেষ পরিচালক হলেন বিভাগীয় প্রধান। তিনি প্রধান হিসেবে তার যতগুলো অধীনস্থ দপ্তর থাকে সেগুলির কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তার এই দায়িত্ব পালনের কারণে সরকার তাকে প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা প্রদান করে।[১]
বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিদপ্তর
এমন আছে যে কোনো কোনো দপ্তরকে অধিদপ্তর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এর মধ্যে উদাহরণ হলো পুলিশ অধিদপ্তর, সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তর ইত্যাদি।
যেসব বিভাগের বা অধিদপ্তরের পদবি আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত সেগুলোর প্রধানের পদবিও হয় ভিন্নতর। উদাহরণস্বরূপ - ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব প্রিজনস, চিফ কনজারভেটর অব ফরেস্ট্স ইত্যাদি। [১]
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পাকিস্তানের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার এবং সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সরকার করাচিতে ‘প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ’-এর বদলে, ‘প্রত্নতত্ত্ব ও জাদুঘর অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৫১ সালে এই অধিদপ্তরের একটি শাখা সৃষ্টি হয়। শাখাটি হচ্ছে অনুসন্ধান শাখা। এই ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ময়নামতিস্থ শালবন বিহার, কুটিলা মুড়া এবং চারপত্র মুড়ায় খনন কাজ করা হয়।
সালে শালবন বিহার, খান জাহানের বসতবাটি, লালবাগ দুর্গ এবং মহাস্থানগড়ে খনন কাজ করা হয়। শালবন বিহার, এম.এম. দত্তের বাড়ি, শেখপাড়া মসজিদ, দক্ষিণ ডিহি এবং শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পূর্বপুরুষের বাড়ি সংস্কার করা হয় ২০০৯ সালে। [২]
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর হলো মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি বাংলাদেশ সরকারী সংস্থা, যা বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ শিল্পের তদারক করে। ডঃ আব্দুল জব্বার সিকদার প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক। [৩][৪][৫]
এই অধিদপ্তরের কাজ হলো দেশের সর্বত্র রীতিবদ্ধ ভূবৈজ্ঞানিক কার্যক্রম পরিচালনা ও ভূতাত্ত্বিক মানচিত্র প্রণয়ন করা। জিএসবির সদরদপ্তর ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত এবং এর বর্তমান মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব হলেন কাজী জেবুন্নেসা বেগম।[৬]
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে এমন আলোকিত মানুষ তৈরির জন্য সকলকে শিক্ষাগত সুবিধা সরবরাহের লক্ষ্যে কাজ করছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ স্তরের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর পরিষেবা সরবরাহের গুণমান বৃদ্ধি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় অ্যাক্সেসের সাম্যতা উন্নত করার জন্য মানের উন্নতি এবং নির্দিষ্ট পদক্ষেপের দিকে মনোনিবেশ করছে।[১০]
গণপূর্ত অধিদপ্তর
গণপূর্ত অধিদপ্তর হল বাংলাদেশের একটি সরকারি বিভাগ। এই বিভাগ সরকারি সংস্থা ও সংস্থার ভবন ও কাঠামো নির্মাণের জন্য দায়বদ্ধ। এর সদরদপ্তর বাংলাদেশের ঢাকায় অবস্থিত। এটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে ।[১১][১২][১৩][১৪][১৫]
খাদ্য অধিদপ্তর
দেশের সার্বিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করা খাদ্য অধিদপ্তরের লক্ষ্য। এই অধিদপ্তর জাতীয় খাদ্য নীতির কলাকৌশল বাস্তবায়ন করে থাকে। তাদের আরো একটি লক্ষ্যের মধ্যে আছে নররজাতীয় খাদ্য পদ্ধতি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা । নিরবচ্ছিন্ন খাদ্য শস্যের সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা। খাদ্য খাতে বিভিন্ন প্রকার উন্নয়নমূলক প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। দেশে যখন খাদ্য শস্য সরবরাহ পরিস্থিতি আসবে তখন উপর নজর রাখা তাদের আরো একটি লক্ষ্য। খাদ্যশস্য সংগ্রহ এবং বিতরণ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী যেমন- চিনি, ভৌজ্য তৈল, লবণ ইত্যাদি সংগ্রহ ও বিতরণ ব্যবস্থা করা। [১৬]
কারাগার বিভাগস্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অধিদপ্তর। বাংলাদেশের রাজধানীতে এই অধিদপ্তর অবস্থিত। এই সরকারি অধিদপ্তরটি বাংলাদেশের জেলখানা নিরাপত্তা ও পরিচালনায় বিশেষভাবে নিযুক্ত ও বর্তমান সময় পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে। এর মহাপরিদর্শক হলেন মোস্তফা কামাল পাশা।[১৭]
কৃষি বিপণন উপদেষ্টা কৃষি বিপণন বিভাগ তৈরি জন্য ১৯৩৪ সালে প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং পূর্ব বাংলায় কৃষি বিপণন বিভাগ ব্রিটিশ ভারতে গঠিত হয়েছিল ১৯৩৪ সালে। ১৯৪৩ সালে কৃষি ও শিল্প অধিদপ্তরের অধীনে স্থায়ীভাবে কৃষি বিপণন বিভাগ গঠন করে। [২৩]
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মূল উদ্দেশ্য হলো জনগণকে সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা। সঞ্চয় স্কীমের মাধ্যমে আহরিত অর্থ দ্বারা জাতীয় বাজেট ঘাটতি পূরণ করা। বৈদেশিক নির্ভরতা হ্রাস এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। [২৫]
চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর বাংলাদেশের তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি সরকারি সংস্থা বা অধিদপ্তর। দপ্তরটির প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার ১১২ সার্কিট হাউজ রোডে অবস্থিত।[২৬]
নৌপরিবহন অধিদপ্তর বাংলাদেশের সরকারের একটি স্বায়ত্তশাসিত অধিদপ্তর। নৌপরিবহন অধিদপ্তর মূলত নৌপরিবহন ও চলাচলের জন্য দায়বদ্ধ থাকে। এটি ঢাকা, বাংলাদেশে অবস্থিত। এই অধিদপ্তর পরিচালনার মূল দায়িত্ব নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।[২৭][২৮] এই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হলেন সৈয়দ আরিফুল ইসলাম।[২৯]
বন অধিদপ্তর হল বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সংযুক্ত একটি অধিদপ্তর। এটি প্রাকৃতিক বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং কৃত্রিম বনায়ন নিয়ে কাজ করে। সদরদপ্তর অবস্থিত বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। যিনি অধিদপ্তরের প্রধান তার পদবী হল সংরক্ষক এবং বর্তমান প্রধান বন সংরক্ষক হলেন মোহাম্মদ শফিউল আলম চৌধুরী।[৩০]
আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (আইএসআই) এর বিপরীতে থাকে। এমআই সম্পূর্ণরূপে তার সরকারি পোশাক পরিধান করা সেনা অফিসার এবং তারা সৈনিকদের সমন্বয়ে গঠিত। যাদের প্রাথমিক লক্ষ্য সামরিক সামর্থ্য এবং বৈরী দেশগুলির সামরিক বাহিনী সম্পর্কিত অন্যান্য যেকোন তথ্য নির্ধারণ করা। পাশাপাশি এটি আক্রমণাত্মক গণনা-বিদ্রোহী গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, স্লিপার সেল, বিদেশী ভ্রমণকারী এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অন্যান্য রাষ্ট্রবিরোধী উপাদান চিহ্নিতকরণ এবং তাদের সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সামরিক গোয়েন্দাকে তদন্তসহ আরো অনেক কাজ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। [৩৩]