১৯৯৬ সালের বাংলাদেশ অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ছিল একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা। সেনাবাহিনী প্রধান অব স্টাফ আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের বিরুদ্ধে এই অভ্যুত্থান শুরু করার অভিযোগ উঠে। সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয় এবং সেনা বাহিনী প্রধানকে বরখাস্ত করা হয়। [১]
পটভূমি
১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাচন তখনকার বিরোধী দলের প্রধান বিরোধী দল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্জন করেছিলেন, যারা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করেছিল। পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছিল এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে, মেজর জেনারেল জি এইচ মুর্শেদ খান এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হামেদুর রেহমান দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছিলেন। রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমকে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছিলেন। নাসিম প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যার ফলে রাষ্ট্রপতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেছিলেন।[২] জি এইচ মোর্শেদ খান ছিলেন বগুড়া ক্যান্টনমেন্টের জিওসি এবং হামিদুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমানে- বিজিবি) উপ-প্রধান। [৩]
অভ্যুত্থান
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিম রাষ্ট্রপতি আদেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। তিনি তার অনুগত সৈন্যদের সংগঠিত করেছিলেন। রাষ্ট্রপতির অভিযোগে নাসিমকে বরখাস্ত করার পরে নাসিমকে সরকারের অনুগত সৈন্যরা তাকে গৃহবন্দি করে এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল [৩] সরকারের অনুগত সৈনিকরা রাজধানী ঢাকার দিকে যাওয়ার রাস্তাও অবরোধ করে রাখে কারণ তারা জেনারেল নাসিমের অনুগত সৈন্য আনতে ব্যবহৃত হতে পারে। উত্তর বগুড়া সেনানিবাসের পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ ছিল যেখানে জিওসি, মেজর জেনারেল জি এইচ মুরশেদ খানকে রাষ্ট্রপতি বরখাস্ত করেছিলেন। সৈন্যরা সরকারী টিভি এবং রেডিও স্টেশনগুলিকেও দখল করেছিলো। [৪] জেনারেল নাসিমকে মিলিটারি পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিল এবং ভিআইপি কর্মকর্তাদের মেসে রাখা হয়েছিল। বগুড়া সেনানিবাস এবং ময়মনসিংহ সেনানিবাসের সৈন্যরা জেনারেল নাসিমকে সমর্থন করেছিলেন। ময়মনসিংহ সেনানিবাসের সৈন্যরা মার্চ মাসে ঢাকায় যাওয়ার চেষ্টা করলেও রাষ্ট্রপতি তাদের আদেশ দেওয়ার পরে তাদের ঘাঁটিতে ফিরে যায়। যমুনা নদী পার হতে না পারায় বগুড়া সেনানিবাস থেকে সৈন্যরা ঢাকায় পৌঁছাতে পারেনি। যমুনা নদীর অপর প্রান্তটি সাভার সেনানিবাসের সেনাবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল যারা রাষ্ট্রপতির অনুগত ছিল। [৫]
ফলাফল
মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান রাষ্ট্রপতি দ্বারা নতুন সেনাপ্রধান নিযুক্ত হন। [৪] তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিচালিত সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা বিজয়ী হয়েছিলেন। [২] জেনারেল মাহবুবুর রহমান অবসর নেওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দিয়েছিলেন। [৬] ব্যর্থ অভ্যুত্থান বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে এবং গণতন্ত্রকে সমর্থন করার ইচ্ছাকে আরও মজবুত করে। [৭]
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র