হান্টিং ফর হিডেন গোল্ড (ইংরেজি: Hunting For Hidden Gold; অনুবাদ: লুকানো সোনার শিকার) হল গ্রসেট অ্যান্ড ডানলপ প্রকাশিত আদি হার্ডি বয়েজ রহস্য ধারাবাহিকের পঞ্চম খণ্ড। বইটি পাবলিশার উইকলি-র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বকালের সর্বাধিক বিক্রীত ছোটোদের বইয়ের তালিকায় ১১১শ স্থান অর্জন করে। ২০০১ সাল পর্যন্ত এই বইটির মোট ১,১৭৯,৫৩৩টি কপি বিক্রি হয়েছিল।[১]
কাহিনির মূল উপজীব্য মন্টানার একটি মাইনিং ক্যাম্পে সোনা চুরির ঘটনা। প্রথমে ফেন্টন হার্ডি নিজে এই তদন্তভার গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তিনি আহত হয়ে তাঁর পুত্র ফ্র্যাংক ও জো-কে তাঁর সঙ্গে যোগ দিতে আহ্বান করেন। অনেক বাধা পেরিয়ে হার্ডি ভাইরা চুরি যাওয়া সোনা উদ্ধার করে এবং ডাকাতদের শেরিফের হাতে তুলে দেয়।
১৯২৮ সালে স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেটের হয়ে লেসলি ম্যাকফারলেন এই বইটি লিখেছিলেন।[২] ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে এই ধারাবাহিকের প্রথম ৩৮টি খণ্ড এডওয়ার্ড স্ট্রেটমেয়ারের কন্যা হ্যারিয়েট অ্যাডামসের পরিচালনাধীন একটি প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে প্রণালীবদ্ধভাবে সংশোধিত হয়।[৩] ১৯৬৩ সালে এই বইটির আদি সংস্করণটি অ্যালিস্টেয়ার হান্টার কর্তৃক পুনর্লিখিত হয়,[২] যার ফলে একই শিরোনামে দু’টি আলাদা গল্প লেখা হয়।
কাহিনি-সারাংশ (সংশোধিত সংস্করণ)
দুই ভাই ফ্র্যাংক ও জো হার্ডি তাদের বাবা ফেন্টন হার্ডিকে সাহায্য করতে মন্টানা অভিমুখে যাত্রা করে। একটি তদন্তের কাজে সেখানে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন তিনি। লাকি লোড নামে এক গ্রামে গিয়ে হার্ডি ভাইরা এক রহস্যের গন্ধ পায়। ইতিপূর্বে বেপরোয়া শিকারীদের গুলির হাত থেকে তারা একটি লোককে বাঁচিয়েছিল। লাকি লোডের রহস্যটি ঘনীভূত হয় সেই লোকটিকে ঘিরেই। লোকটির সোনা চুরি হয়ে গিয়েছিল। লাকি লোডের স্বর্ণখনিতে থাকাকালীন তার সন্দেহ হয় তারই এক সহকর্মী সোনার নিরাপত্তার অজুহাতে তা নিয়ে পালিয়ে যায়। লাকি লোকে মিস্টার বার্ক নামে একটি লোকের সঙ্গে হার্ডি ভাইদের দেখা হয়। লোকটি ছিল একটি জেনারেল স্টোরের মালিক। কিন্তু পরে তারা জানতে পারে যে মিস্টার বার্ক আসলে "স্লিপ গান" নামে পরিচিত এক গুপ্তচর, যে কাজ করে দুষ্কৃতি বিগ অ্যালের হয়ে। যে লোকটিকে তারা বাঁচিয়েছিল সে যখন লাকি লোডে থাকত তখন বিগ অ্যাল পরিচিত ছিল ব্ল্যাক পেপর নামে। হার্ডি ভাইরা বিগ অ্যালকে পরাজিত করে। লুকানো সোনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে হার্ডি ভাইরা একটি গুহাকে চিহ্নিত করে। কোথায় সোনা রয়েছে তার সূত্র পেতে তারা সেই গুহায় প্রবেশ করে। কিন্তু কোনও সূত্র পাওয়ার আগেই তারা এক পাল নেকড়ের সামনে পড়ে এবং গুহা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে নিতে হয় তাদের। তারা আরও জানতে পারল যে বার্ট ডসন হল বব ডজ, অর্থাৎ যে লোকটি তাদের মন্টানায় উড়িয়ে নিয়ে এসেছিল। জানা গেল তার স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে। শেষে তারা সোনা উদ্ধার করে এবং সব দুষ্কৃতিকে শাস্তি দেয়।
কাহিনি-সারাংশ (আদি সংস্করণ)
ফেন্টন হার্ডি মন্টানায় গিয়েছিলেন হারানো সোনার তদন্তের কাজে। সেই সময় তাঁর দুই ছেলে ফ্র্যাংক ও জো হার্ডি তাদের বন্ধু চেট মর্টন ও জেরি গিলরয়কে নিয়ে শ্যালো লেকে স্কেটিং করছিল। সেখানে দরিদ্র বৃদ্ধ জ্যাডবেরি উইলসনের সঙ্গে তাদের দেখা হল। তিনি ছিলেন মন্টানার প্রাক্তন খনি-খননকারী। উইলসনের কাছ থেকে তারা জানতে পারে, বার্ট ডসন নামে তাঁদের দলের এক বিশ্বস্ত সদস্য গুলির লড়াইয়ের সময় চার ব্যাগ সোনা নিরাপদে রাখার জন্য অন্যত্র সরিয়ে নেয়। কিন্তু সেই সোনা সে ফিরিয়ে দেয়নি। আহত উইলসনকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পরে হার্ডি ভ্রাতৃদ্বয় তাদের বাবার একটি টেলিগ্রাম পায়। তিনি অবিলম্বে মন্টানায় তাঁর সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা লিখেছিলেন।
ফেন্টন হার্ডির আইনজীবী পরিচয় দিয়ে এক অপরিচিত ব্যক্তি হার্ডি ভাইদের ভুল ট্রেনে তুলে দেয়। সেখান থেকে তাদের অপহরণ করা হলেও তারা পালাতে সক্ষম হয়। শেষে ছদ্মবেশে দুই ভাই মন্টানায় এসে লাকি বটমে তাদের বাবার সঙ্গে মিলিত হয়। তিনি বলেন যে, বার্ট ডসনের দাবি ডাকাত ব্ল্যাক পেপর ও তার দলবল তার সোনা চুরি করেছে। সেই সোনাই তিনি খুঁজছেন। পরদিন হার্ডি ভাইরা সোনার অনুসন্ধানে বের হলে একদল ডাকাত তাদের আক্রমণ করে। তারা অবশ্য পালিয়ে রাতে শহরে ফিরে আসতে সক্ষম হয়। তার পরের দিন তারা ডাকাতদলের এক সদস্যকে ধরতে সক্ষম হয়। তার থেকে তারা ব্ল্যাক পেপরের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। অনুসন্ধান চালিয়ে তারা ব্ল্যাক পেপরের ব্যবহার করা একটি কেবিন আবিষ্কার করে। সেখানে তারা খুঁজে পায় লুকানো সোনার হদিস দেওয়া এক মানচিত্র, আর তা থেকে বোঝা যায় সেই সোনা পোতা রয়েছে দ্য লোন ট্রি নামক খনিতে।
খনি অভিযানের সময় এক দল নেকড়ে হার্ডি ভাইদের আক্রমণ করে। নেকড়েদের তাড়া খেয়ে তারা নিচে অন্য একটি খনিকূপে নেমে যায়। ঘটনাচক্রে সেটিই ছিল প্রধান খনির প্রবেশপথ এবং ব্ল্যাক পেপরের কেবিন থেকে পাওয়া মানচিত্রের প্রথম দিকনির্দেশিকা। মানচিত্রটি অনুসরণ করে হার্ডি ভাইরা লুকানো সোনা উদ্ধার করে। যার ফলে ব্ল্যাক পেপর স্বয়ং তাদের আক্রমণ করে। কিন্তু হার্ডি ভাইরা উপরে উঠে আসতে সক্ষম হয় এবং ডাকাত ও সোনা দুই নিয়েই শহরের দিকে রওনা হয়। পরে তারা জানতে পারে বার্ড ডসন মনে করেছিল যে জ্যাডবেরি উইলসন মারা গিয়েছে; কিন্তু এখন তিনি জীবিত জেনে উদ্ধার করা সোনা তাঁর সঙ্গে ভাগ করে নিতে ইচ্ছুক। বার্ট ডসন ব্যাখ্যা দেয় যে, গুলির লড়াই চলাকালীন মাথায় গুলি লেগে তার স্মৃতিভ্রংশ ঘটেছিল। সেই জন্যই লড়াই থামতে সে সোনা নিয়ে ফিরতে পারেনি।
তথ্যসূত্র
টেমপ্লেট:দ্য হার্ডি বয়েজ