হরির চরণ ব্রত' হল বাংলার হিন্দুসমাজের অশাস্ত্রীয় বা মেয়েলি ব্ৰতগুলির অন্তর্গত একটি কুমারীব্রত। গ্রামীণ বাংলার বাঙালি হিন্দুঘরের কুমারী মেয়েরা বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকে বৈশাখ মাসের শেষদিন পর্যন্ত একমাসব্যাপী এই ব্রত পালন করে। ব্রতের উদ্দেশ্য হল নারীর সৌভাগ্যবৃদ্ধি ও সন্তানলাভ।[১]
ব্রতের নিয়ম
পর পর চার বৎসর ব্রত করার পর ব্রত উদযাপন হয়। অশাস্ত্রীয় মেয়েলি ব্রত হওয়ার দরুন ব্রতপালনে কোন মন্ত্র বা পুরোহিতের প্রয়োজন হয় না।
পুণ্যিপুকুর ব্রতের তিনটি পর্যায় আছে। যথা: আহরণ, ক্রিয়া ও ছড়া।[১]
প্রথম পর্যায়ে ব্রত পালনের প্রয়োজনীয় উপাচার অর্থাৎ একখানি তামার টাট, শ্বেত চন্দন, ধান, দূর্বা আর ফুল সংগ্রহ করতে হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ে তামার টাটে বেশ ভালো করে চন্দন মাখিয়ে আঙুল দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের দুখানি চরণ (পা) আঁকতে হয়।
তৃতীয় পর্যায়ে চার-ছয় পংক্তির ছড়া আবৃত্তি করে বুড়ো আঙুল আর মধ্যমা দিয়ে ফুল, দূর্বা, আর ধান ধরে মন্ত্রপাঠ করে সেসব সেই চরণ দুখানির উপর দিতে হয়। আবার কেউ কেউ বুড়ো আঙুল, তর্জনী আর মধ্যমা দিয়ে মল্লিকা ফুল (অভাবে তুলসী পাতা) ধরে মন্ত্রপাঠের পর তা চরণ দুখানিতে দিয়ে থাকে। তিনবার মন্ত্র পড়ে তিনবার এইভাবে পুজো করতে হয়।
ব্রত উদযাপনের সময় সোনা, রূপা আর তামার তিন জোড়া চরণ গড়িয়ে পুজো করতে হয়। তারপর তিনজন ব্রাহ্মণকে খাইয়ে তাঁদের প্রত্যেককে কাপড় আর গামছা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চরণ কয় জোড়াও (অভাবে কাঞ্চন-মূল্য) দান করতে হয়।[২]
তথ্যসূত্র
- ↑ ক খ বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ, দুলাল চৌধুরী, আকাদেমি অব ফোকলোর, কলকাতা: ৭০০০৯৪, প্রথম প্রকাশ:২০০৪, পৃষ্ঠা: ২৬০
- ↑ চক্রবর্তী, ড. বরুণকুমার সম্পাদিত (১৯৯৫)। বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতিকোষ। কলকাতা: অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স। পৃষ্ঠা ২৪৪। আইএসবিএন 81-86036-13-X।