স্বপন গুপ্ত (১৯৪৬ - ১১ অক্টোবর ২০২১) ছিলেন একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে "সঙ্গীত মহাসম্মান" প্রদান করে।[১]
জন্ম ও সঙ্গীতশিক্ষা জীবন
স্বপন গুপ্তর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে। দেশ ভাগের সময় তার পরিবার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় চলে আসেন। তখন স্বপন ছিলেন নিতান্তই শিশু। দৃষ্টিহীন অথচ মেধাবী স্বপন পড়াশোনা করেছেন প্রথমে কলিকাতা অন্ধ বিদ্যালয়ে। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ইংরাজী ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক হন এবং ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পড়াশোনার সাথে পিয়ানো অ্যাকর্ডিয়ান বাজাতেন, শখ করে গান করতেন তবে গোড়ার দিকে প্রথাগত সঙ্গীত শিক্ষা ছিল না। আর কোন দিন ভাবেননি যে, তিনি একজন সঙ্গীত শিল্পী হবেন।
১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে আকস্মিক ভাবেই নরেন্দ্রপুর কাছে জগদ্দলে এক সরস্বতী পুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী দেবব্রত বিশ্বাস তার কণ্ঠে শোনেন - 'আকাশভরা সূর্য-তারা'। স্বপন গুপ্তের মধ্যে অনেক সম্ভাবনা দেখতে পান তিনি। সাথে সাথেই মহান শিল্পীর সংস্পর্শে আসেন স্বপন এবং তার জীবনের অভিমুখ পরিবর্তিত হয়ে যায়। রবীন্দ্রগানের ছোঁয়ায় নতুন ভাবে জীবনকে উপলব্ধি করেন তিনি। প্রায় দশ বৎসর দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে গান শেখেন প্রথম দিকে সবার সাথে। জর্জ বিশ্বাসের অত্যন্ত প্রিয় ছাত্র হওয়ার কারণে পরে আলাদা করে শেখার সুযোগ পান। দেবব্রত বিশ্বাসের চেষ্টায় বছর দুয়েক পরই অডিশন দিয়ে গান গাওয়া সুযোগ পান আকাশবাণী র কলকাতা কেন্দ্রে। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দেই মায়া সেনের তত্ত্বাবধানে এইচএমভি থেকে ‘লুকালে বলেই খুঁজে বাহির করা’ আর ‘আমায় থাকতে দে-না আপন মনে’ গান দুটি নিয়ে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড। চলচ্চিত্র পরিচালক শৈবাল মিত্র পরিচালিত এবং ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘চিত্রকর’-এ নেপথ্যে কণ্ঠ দান করেছেন দুটি গানে। নিজে দৃষ্টিহীন হওয়ার কারণে ছবিতে দৃষ্টিহীন বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়ের চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে প্রবীণ অভিনেতা ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়কে সাহায্য করেছিলেন।[১] তাঁর বলিষ্ঠ প্রাঞ্জল গায়কিতে গাওয়া উল্লেখযোগ্য রবীন্দ্র সঙ্গীত হল:
- লিখন তোমার ধূলায় হয়েছে ধূলি
- কেন রে এই দুয়ারটুকু পার হতে সংশয়
- অনেক কথা যাও যে বলে
- ছি ছি চোখের জলে ভেজাস নে আর মাটি
- বৈশাখের এই ভোরের হাওয়া
- তোমায় কিছু দেবো ব'লে
- আমার ভুবন তো আজ হল কাঙাল
- আজি নির্ভরনিন্দ্রিত ভুবনে জাগে
- দুঃখের বরষায় চক্ষের জল যেই নামল
- নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে (চিত্রকর সিনেমায়)
সম্মাননা
রবীন্দ্রসঙ্গীতের বিশেষ গায়নশৈলীর শিল্পীকে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশেষভাবে সম্মানিত করেন। ২০০২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের সামাজিক ন্যায়বিচার মন্ত্রক জাতীয় পুরস্কার প্রদান করে। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার "সঙ্গীত মহাসম্মান" প্রদান করে।
জীবনাবসান
প্রবীণ রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী স্বপন গুপ্ত দীর্ঘদিন মলাশয়ের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০২১ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। এর পাশাপাশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন এবং কলকাতার নিউ টাউনের টাটা মেডিকেল সেন্টারে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। ৬ই অক্টোবর মহালয়ার দিন বাড়িতে ফিরেছিলেন। কিন্তু ১১ই অক্টোবর সোমবার সকালে মহাষষ্ঠীর দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৫ বৎসর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[২] তপতী গুপ্ত হলেন শিল্পীর স্ত্রী এবং কন্যা আত্রেয়ী গুপ্ত।
তথ্যসূত্র