পৃথিবী পৃষ্ঠে অবস্থানকারী কোন পর্যবেক্ষকের মাথার সরাসরি উপরের দিকে যে বিন্দুটি কল্পনা করা হয় সেটাই পর্যবেক্ষকের ঐ অবস্থানের সুবিন্দু। এখন সূর্য ভূপৃষ্ঠস্থ কোন বিন্দুতে উলম্বভাবে অবস্থান করলে অর্থাৎ সূর্য ভূপৃষ্ঠস্থ ঐ বিন্দুটির সুবিন্দুতে অবস্থান করলে উল্লেখিত এই ভূপৃষ্ঠস্থ বিন্দুটিই সৌরপাদ বিন্দু তথা সাবসোলার বিন্দু। সহজভাবে বলা যায়, ভূপৃষ্ঠের যে বিন্দুটি সূর্যের ঠিক নিচে অবস্থান করে সেটাই সৌরপাদ বিন্দু। আবার অন্যভাবে বলা যায়, সূর্য ও পৃথিবীর কেন্দ্রদ্বয়ের সংযোগকারী সরল রেখা পৃথিবী পৃষ্ঠকে যে বিন্দুতে ছেদ করে সে বিন্দুটিই সৌরপাদ বিন্দু। কোন জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুর সৌরপাদ বিন্দু থেকে সূর্যের দূরত্ব হল ঐ জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু থেকে সূর্যের সর্বাপেক্ষা নিকটতম দূরত্ব।
পৃথিবী পৃষ্ঠের যে অংশের উপর সূর্য লম্বভাবে অবস্থান করে সেখানে অর্থাৎ সৌরপাদ বিন্দুতে ও সৌরপাদ বিন্দুসংলগ্ন অংশে কোন বস্তুর ছায়া সোজা নিচের দিকে পড়ে। একারণে বস্তুভেদে এ সময় আপাতভাবে সেখানে ছায়া অদৃশ্য হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরহাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের উপর দিয়ে সূর্যের অতিক্রমকালে একই ঘটনা ঘটে। সেখানে একে লাহাইনা দুপুর বলা হয়।[১]
সৌরপাদ বিন্দুর অবস্থান
পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতির ফলে পৃথিবীর সৌরপাদ বিন্দু প্রতিমুহূর্তে পরিবর্তিত হয়। পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করায় সৌরপাদ বিন্দু ধ্রুব হারে ক্রমাগত পশ্চিম দিকে যেতে থাকে এবং একদিনে একটি আবর্তন সম্পন্ন করে। তাছাড়াও সূর্যের ক্রমিক উত্তরায়ণ-দক্ষিণায়ন ঘটায় সৌরপাদ বিন্দুর অবস্থানের পরিবর্তনও ক্রমান্বয়ে উত্তরদিকে বা দক্ষিণদিকে হয় এবং তা ক্রান্তিরেখা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। মহাবিষুবের পর সৌরপাদ বিন্দু নিরক্ষ রেখা থেকে ক্রমাগত উত্তর গোলার্ধে সরে যায় এবং তা সর্বোপরি ২৩.৫° উত্তর অক্ষাংশ অর্থাৎ কর্কট রেখা পর্যন্ত গমন করে। কর্কট রেখায় সূর্যের গমনকে উত্তর অয়নান্ত বলা হয়। এরপর সূর্যের দক্ষিণায়ন ঘটে। ফলে সৌরপাদ বিন্দুও ক্রমশ দক্ষিণমুখী হয় এবং জলবিষুবে এটি পুনরায় নিরক্ষ রেখায় গমন করে। অতঃপর এটি আরও অগ্রসর হয়ে সর্বোচ্চ ২৩.৫° দক্ষিণ অক্ষাংশ অর্থাৎ মকরক্রান্তি রেখা পর্যন্ত গমন করে। একে দক্ষিণ অয়নান্ত বা মকর সংক্রান্তি বলা হয়। মকর সংক্রান্তির পর সৌরপাদ বিন্দুর উত্তর দিকে সরে যেতে শুরু করে।
সৌরপাদ সরাসরি উত্তরে বা দক্ষিণে গমন করে না। এর গতিপথ পশ্চিমমুখী হয়ে ধীরে ধীরে উত্তরে বা দক্ষিণে সরে যায়। তাই একটি বছরের প্রতিমুহূর্তের সৌরপাদ বিন্দুগুলো ধারাবাহিকভাবে সংযুক্ত করলে হেলিক্স আকৃতির গমন পথ পাওয়া যাবে।
নির্দিষ্ট মুহূর্তে সৌরপাদ বিন্দুর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ[২]:—
,
.
যেখানে
হলো ডিগ্রি এককে সৌরপাদ বিন্দুর অক্ষাংশ,
হলো ডিগ্রি এককে সৌরপাদ বিন্দুর দ্রাঘিমাংশ,
হলো ডিগ্রি এককে সূর্যের বিনতি কোণ (declination of the Sun),
প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা অনুসারে একটি বছরকে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এ ছয়টি ঋতুতে ভাগ করা হলেও পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে বর্ষা ও হেমন্ত ঋতু অনুপস্থিত।[৩] পাশ্চাত্য রীতিতে প্রতিটি ঋতুর ব্যাপ্তি তিন মাস। তা যাই হোক, একটি ঋতুতে সৌরপাদ বিন্দু কোথায় অবস্থান করছে তার মাধ্যমে ঐ ঋতুকে সংজ্ঞায়িত করা যায়।
উত্তর গোলার্ধে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিকভাবে বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীত ঋতু যথাক্রমে মহাবিষুব, উত্তর অয়নান্ত, জলবিষুব ও দক্ষিণ অয়নান্তের দিন থেকে শুরু হয়। তবে আবহাওয়াগতভাবে বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীত ঋতু শুরু হয় যথাক্রমে মার্চ, জুন, সেপ্টেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিন থেকে। আর দক্ষিণ গোলার্ধে আবহাওয়াগতভাবে বসন্ত, গ্রীষ্ম, শরৎ ও শীত ঋতু শুরু হবে যথাক্রমে সেপ্টেম্বর, ডিসেম্বর মার্চ ও জুন মাসের প্রথম দিন থেকে।
বিশেষ স্থান থেকে সৌরপাদ বিন্দুর পর্যবেক্ষণ
ছায়ার মাধ্যমে কেবলা পর্যবেক্ষণ: যখন সৌরপাদ বিন্দু সৌদি আরবের কাবাঘর বরাবর অতিক্রম, তখন ছায়া পর্যবেক্ষণ করে মুসলিম পবিত্র দিক (কেবলার অভিমুখ) কোন দিকে তা খুঁজে পাওয়া যায়।
↑Zhang, T., Stackhouse, P.W., Macpherson, B., and Mikovitz, J.C., 2021. A solar azimuth formula that renders circumstantial treatment unnecessary without compromising mathematical rigor: Mathematical setup, application and extension of a formula based on the subsolar point and atan2 function. Renewable Energy, 172, 1333-1340. DOI: https://doi.org/10.1016/j.renene.2021.03.047