সৌদি আরবে পতিতাবৃত্তি একটি অবৈধ জীবিকা। প্রচলিত আইন অনুযায়ী সর্বপ্রকারের পতিতাবৃত্তি এই ইসলামী দেশটিতে নিষিদ্ধ ও একটি অপরাধ।[১] পতিতাবৃত্তি ধরা পড়লে বিচারে কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে গোপনে পতিতাবৃত্তি চালু আছে মর্মে জানা যায়। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী পতিতাদের বেশিরভাগই নাইজেরিয়া থেকে আগত নারী।[২] এছাড়াও ইথিওপিয়া, ইয়েমেন, মরক্কো, পাকিস্তান এবং তাজিকিস্তান থেকে আগত কিছু নারী পতিতাবৃত্তিতে জড়িত।[৩]
পতিতাবৃত্তির শাস্তি
পতিতাবৃত্তির শাস্তি ছিলো কারাদণ্ড এবং বেত্রাঘাত।[৪] ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে সৌদি সুপ্রিম কোর্ট জেনারেল কমিশনের আদেশে বেত্রাঘাতের শাস্তি বাতিল করা হয়েছিল এবং এখন এটি জেল বা জরিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ।[৫][৬] বিদেশি নাগরিকদেরও শাস্তির পর দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়[৭] যদি কোন পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যভিচার এবং যৌন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়, তা পতিতা এবং তার মক্কেল উভয়েরই শাস্তি হতে পারে যেহেতু সেখানে বৈধ বিবাহ ব্যতিরেকে সমস্ত যৌন কার্যকলাপ অবৈধ এবং সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে।[৮]
ধর্মীয় পুলিশ বেত্রাঘাতের দায়িত্ব পালন করে। পতিতাদের প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করা হতে পারে। এর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বেত্রাঘাতের ফলে মৃত্যু হয়েছে।[৭] তবে, ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বেত্রাঘাতের শাস্তি বাতিল করা হয়ে এবং শাস্তি জরিমানা ও জেল এ সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল।[৯] সৌদি ভাইস পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হওয়া বিদেশী পতিতাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হয়।[২]
২০০৭ সালের জুন মাসে, ৮০ জন নারীকে পতিতাবৃত্তির জন্য এবং ২০ জন পুরুষকে পাচার বা দালালীর বিচারের আনা হয়েছিলো।[৭]
মিসইয়ার বা নাম মাত্র বিয়ে
মিসইয়ার বিয়ে পতিতাবৃত্তি রোধে প্রায়ই এটি সালাফি আইনের অধীনে যৌন আনন্দের জন্য একটি বৈধ আইনি সম্পর্ক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সম্পর্কটি একটি সাধারণ বিয়ের মতো, তবে স্বামীকে স্ত্রীর জন্য থাকার জায়গা দেওয়ার প্রয়োজন হয় না এবং কিছু ক্ষেত্রে তিনি স্ত্রীর মাসিক খরচ বহন করার জন্য দায়বদ্ধ থাকে না। তবে অন্যান্য কিছু ইসলামিক নিয়ম মেনে নিতে হয়। সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি, শায়খ আবদুল আজিজ আল-শাইখ এবং ৬০ জন আলেম তাদের ফতোয়ায় মিসইয়ারকে সমর্থন করেছেন।[১০] মিসিয়ার নিকাহ মুতাহ (শিয়া ইসলাম) থেকে পরিবর্তিত হয়ে এসেছে যে সম্পর্কের সময় উল্লেখ করা হয় না। তবে বিবাহ চুক্তিতে দুইজন সাক্ষী লাগে।[১০]
মানবপাচার
মানবপাচারকারীরা সৌদী আরবে আগত বিদেশী নারীদের জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে নিযুক্ত করে বলে অভিযোগ রয়েছে। সৌদি আরব প্রচুর গৃহকর্মী নিয়ে থাকে। সৌদির জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ বা ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষই অন্য দেশ থেকে আগত। সৌদিতে বিদেশি শ্রমিকদের পক্ষে আইন থাকলেও প্রায় তারা যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ, অতিরিক্ত কাজ করানো, মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়। কেউ কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া কোনো কোনো নারীকে অপহরণ করে পতিতাবৃত্তি করানো হয়েছে।[১১] কেনাবেচার ওয়েবসাইটে গৃহকর্মী কেনাবেচা করা হয়।[১১] ২০১৩ সালেও সরকারি কোন রিপোর্টে নারী পাচারের কোন মামলা দেখা যায় নি। ২০১৭ সালে ১৭৭ পাচারের মামলার বিচার হলেও তাদের একটিও মানব পাচারের মামলা ছিলো না।
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন