আগ্নেয়গিরিটির দক্ষিণের ঢাল ধরে আরোহণ (উদ্গীরণ এলাকার সবচেয়ে সন্নিকটে)
সেন্ট হেলেনস পর্বত (আদিবাসী কৌলিটজদের কাছে লাওয়েতলাৎ'লা নামে এবং ক্লিকিট্যাটদের কাছে লুউইট বা লুওয়ালা-ক্লাউ নামে পরিচিত) আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ওয়াশিংটনের স্কামানিয়া কাউন্টিতে অবস্থিত সক্রিয় একটি মিশ্র-আগ্নেয়গিরি। এটি ওরিগনের পোর্টল্যান্ড শহরের ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) উত্তর-পূর্বে এবং ওয়াশিংটনের সিয়াটল শহরের ৯৬ মাইল (১৫৪ কিমি) দক্ষিণে অবস্থিত। ব্রিটিশ কূটনীতিক লর্ড সেন্ট হেলেন্সের নামে মাউন্ট সেন্ট হেলেন্স এর ইংরেজি নামকরণ করা হয়েছে, যিনি ছিলেন ১৮-শ শতাব্দীর শেষের দিকে এই অঞ্চলটিতে জরিপ পরিচালনাকারী অভিযাত্রী জর্জ ভ্যাঙ্কুভারের বন্ধু। আগ্নেয়গিরিটি ক্যাসকেড পর্বতশ্রেণীতে অবস্থিত এবং ক্যাসকেড আগ্নেয়গিরি বলয়ের অংশ, যা হলো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অস্থিতিশীল তট-বৃত্তের একটি অংশ যার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১৬০ টিরও বেশি সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। এই আগ্নেয়গিরি তার ছাই বিস্ফোরণ এবং অগ্নি-মেঘ প্রবাহের জন্য সুপরিচিত।
সেন্ট হেলেনস পর্বত ১৯৮০ সালের মে মাসের ১৮ তারিখে তার ভয়াবহ উদ্গীরণের জন্য কুখ্যাত, যা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক এবং অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংসাত্মক অগ্নুৎপাতের ঘটনা। ঐ অগ্নুৎপাতের ঘটনায় পঁচাত্তর জন নিহত হন; ২৫০টি বাড়ি, ৪৭টি সেতু, ১৫ মাইল (২৪ কিমি) রেলপথ এবং ১৮৫ মাইল (১৯৮ কিমি) মহাসড়ক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। রিখটার স্কেলের ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্পের বোরো ধরনের ভূমিধ্বসের মধ্য দিয়ে অগ্নুৎপাত শুরু হয়, যা পর্বতের চূড়ার উচ্চতা ৯৬৭৭ ফুট (২,৯৫০ মিটার) থেকে ৮৩৬৩ ফুট (২৫৪৯ মিটার) এ নামিয়ে আনে এবং এক মাইল (১.6 কিমি) চওড়া অশ্বখুরাকৃতির গর্ত চিহ্ন হিসেবে রেখে যায়। ধ্বসে পড়া ধ্বংসাবশেষের আয়তন ছিল ০.৭ ঘন মাইল (২.৯ ঘন কিমি)। আগ্নেয়গিরিটির সংরক্ষণের জন্য এবং অগ্ন্যুৎপাতের পরবর্তী ঘটনা বৈজ্ঞানিকভাবে অধ্যয়ন করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সেন্ট হেলেনস পর্বত জাতীয় আগ্নেয়গিরি স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছিল।
ক্যাসকেড রেঞ্জের বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরির মতো, সেন্ট হেলেন্স পর্বত হল লাভা শৈলযুক্ত ছাই, পিউমিস এবং অন্যান্য আকরিক স্তরের মধ্যে বিস্তৃত লাভা শিলা সমন্বিত একটি বৃহত উদ্গমশীল শঙ্কু। এই পর্বতটিতে বেসাল্ট এবং অ্যান্ডিসাইটের স্তর রয়েছে যার মাধ্যমে ড্যাসাইট লাভার কয়েকটি গম্বুজ ফেটে পড়েছে। বৃহত্তম ড্যাসাইট গম্বুজটি পূর্বের শীর্ষ শিখর গঠন করেছিল এবং এর উত্তরের অংশে ছোট গোট শিলা গম্বুজটি রয়েছে। উভয়ই ১৯৮০-এর বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
ভোগৌলিক কাঠামো ও অবস্থান
সাধারণ বর্ণনা
মাউন্ট সেন্ট হেলেন্স ক্যাসকেড রেঞ্জের পশ্চিম অংশে মাউন্ট অ্যাডামস থেকে ৩৪ মাইল (৫৫ কিলোমিটার) পশ্চিমে। পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত আগ্নেয়গিরির এই পর্বতগুলো ক্যাসকেড আগ্নেয়গিরির মধ্যে সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরির পর্বতমালা মাউন্ট রেইনির থেকে প্রায় ৫০ মাইল (৮০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত। ওরেগনে সর্ব নিকটে অবস্থিত অন্যতম প্রধান আগ্নেয় শৃঙ্গ হুড পর্বত সেন্ট হেলেন্স পর্বতের ৬০ মাইল (১০০ কিলোমিটার) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।
সেন্ট হেলেন্স পর্বত অন্যান্য প্রধান ক্যাসকেড আগ্নেয়গিরি পর্বতমালার তুলনায় ভূতাত্ত্বিক দিক বিবেচনায় তরুণ। এটি কেবল বিগত ৪০,০০০ বছরের মধ্যেই গঠিত হয়েছিল এবং ১৯৮০-এর পূর্বের শীর্ষ কোন প্রায় ২,২০০ বছর আগে জেগে উঠতে শুরু করেছিল। হলোসিন্ যুগের (গত ১০,০০০ বছর) ক্যাসকেড আগ্নেয়গিরি পর্বতগুলোর মধ্যে সর্বাধিক সক্রিয় বলে বিবেচিত হয়।
১৯৮০ সালের উদ্গিরণের পূর্বে সেন্ট হেলেন্স পর্বত ওয়াশিংটনের পঞ্চম সর্বোচ্চ শিখর ছিল। এটি ১৯৮০-এর পূর্বের শিখর শঙ্কুর প্রতিসাম্য এবং বিস্তৃত তুষার এবং বরফের আচ্ছন্নতার কারণে এটি আশেপাশের পাহাড়গুলি থেকে লক্ষ্যণীয়ভাবে দাঁড়িয়েছিল এবং এটি "আমেরিকার ফুজি-সান" ডাকনাম অর্জন করে। শিখরটি ভূমিতে তার ভিত্তির উপরে ৫,০০০ ফুট (১,৫০০ মি) এরও বেশি উপরে উঠেছিল, যেখানে নিচের অংশগুলি সংলগ্ন রাস্তার সাথে মিশে গেছে। পাহাড়টি তার গোড়ায় ৬ মাইল (৯.৭ কিমি) অবধি বিস্তৃত, যা উত্তর-পূর্ব দিকে ৪,৪০০ ফুট ১,৩০০ মিটার) এবং অন্য কোথাও ৪,০০০ ফুট (১,২০০ মি) উচ্চতায় অবস্থিত। প্রাক-অগ্ন্যুত্পাত বৃক্ষ রেখায় শঙ্কুটির প্রস্থ ছিল ৪ মাইল (৬.৪ কিমি)।
আগ্নেয়গিরিটিতে উৎপন্ন জলপ্রবাহগুলি তিনটি প্রধান নদী রূপে প্রবেশ করে: উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে টুটল নদী, পশ্চিমে কালামা নদী এবং দক্ষিণ ও পূর্বে লুইস নদী। প্রচুর বৃষ্টি এবং তুষার দ্বারা নদীগুলো তাদের প্রবাহ বজায় রাখে। গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৪০ ইঞ্চি (৩,৬০০ মিমি) এবং পাহাড়ের উপরের ঢালে জমে থাকা তুষারের গভীরতা ১৬ ফুট (৪.৯ মিটার) পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। জলবিদ্যুৎ উত্পাদনের জন্য লুইস নদীতে তিনটি বাঁধ দিয়ে জলাবদ্ধ করা হয়েছে। আগ্নেয়গিরির দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকের জলপ্রবাহগুলো উজানে প্রবাহিত সুইফট জলাধার নামক একটি জলধারায় বয়ে যায়, যা আগ্নেয়গিরির শিখরের সরাসরি দক্ষিণে ।
যদিও মাউন্ট সেন্ট হেলেন্স ওয়াশিংটনের স্কামানিয়া কাউন্টিতে রয়েছেন, পশ্চিমে কাউলিটজ কাউন্টি এবং উত্তরে লুইস কাউন্টি হয়ে পাহাড়ের অভিগমনের পথ রয়েছে। রাজ্য সড়ক ৫০৪, স্থানীয়ভাবে স্পিরিট লেক মেমোরিয়াল হাইওয়ে হিসাবে পরিচিত, পাহাড়ের পশ্চিমে ৪৯ মাইল (৫৫ কিলোমিটার) প্রান্তে আন্তঃ-রাজ্য ৫ মহাসড়কের সাথে সাথে সংযোগ স্থাপন করে। উত্তর-দক্ষিণ মহাসড়কটি কৌলিটজ নদীর তীরে ক্যাসল রক, লংভিউ এবং কেলসোর মতো নিম্নে অবস্থিত শহরগুলি ঘেঁষে চলে যায় এবং ৫০ মাইল (৪০ কিমি) দূরে ভ্যাঙ্কুভার, ওয়াশিংটন-পোর্টল্যান্ড, ওরেগন মহানগরীতে দক্ষিণ-পশ্চিমের মধ্য দিয়ে চলে যায়। আগ্নেয়গিরির নিকটবর্তী এলাকাটি হলো ওয়াশিংটনের কুগার, শিখরের ১১ মাইল (১৮ কিমি) দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে লুইস নদীর উপত্যকায় অবস্থিত। সেন্ট হেলেন্স পর্বতকে ঘিরে রয়েছে জিফোর্ড পিঞ্চট ন্যাশনাল ফরেস্ট।
ক্র্যাটার হিমবাহ ও অন্যান্য নব্য শৈল হিমবাহ
১৯৮০-১৯৮১ এর শীতের সময়, একটি নতুন হিমবাহ উদিত হয়। যা বর্তমানে সরকারীভাবে ক্র্যাটার হিমবাহ নামকরণ করা হয়েছিল, এটি পূর্বে টুলুটসন হিমবাহ হিসাবে পরিচিত ছিল। গর্তের দেয়ালের আড়ালে অবস্থান করে এবং ভারী তুষারপাত এবং পুনরাবৃত্ত তুষার ধ্বস এর বদৌলতে এটি দ্রুত বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়েছিল (পুরুত্বে প্রতি বছর ১৪ ফুট (৪.৩ মি)। ২০০৪ এর মধ্যে এটি প্রায় ০.৩৬ বর্গমাইল (০.৯৩ বর্গকিলোমিটার) জুড়ে বিস্তার লাভ করেছিল এবং এটি গম্বুজ দ্বারা একটি পশ্চিম এবং পূর্ব ভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। সাধারণত, গ্রীষ্মের শেষের দিকে, হিমবাহটি খাঁজের দেয়াল থেকে শৈল-পাত এবং অগ্ন্যুৎপাত থেকে উড়ে আশা ছাই এর দরুন কালচে দেখায়। ২০০৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, বরফটির গড় বেধ ছিল ৩০০ ফুট (১০০ মিটার) এবং সর্বাধিক ৬৫০ ফুট (২০০ মিটার), রেইনিয়ার পর্বতের কার্বন হিমবাহ কাছাকাছি গভীরতা সম্পন্ন এবং বেশ বড় ও অনেক পুরানো। এখানকার বেশিরভাগ বরফই ১৯৮০ সালের পরে গঠিত হয়েছে, যা হিমবাহটিকে ভৌগোলিক দিক বিবেচনায় খুব অল্প বয়সী করে তুলেছে। তবে, নতুন হিমবাহের আয়তন প্রায় ১৯৮০ সালের পূর্বের সমস্ত হিমবাহের আয়তনের সমান।
২০০৪ সালে সাম্প্রতিক আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা শুরু হওয়ার সাথে সাথে, নতুন আগ্নেয়গিরির শঙ্কুগুলির বৃদ্ধির দ্বারা হিমবাহের বিভিন্ন অংশগুলি একপাশে এবং উপরের দিকে চালিত হয়েছিল। হিমবাহের উপরিভাগ, একসময় যার বেশিরভাগ অংশে ফাটল বিহীন ছিল, জ্বালামুখের তলদেশের আন্দোলনের দরুন ফাটল এবং চূড়ার সহিত এলোপাথাড়ি অবস্থান করে বিসৃঙ্খল সংমিশ্রিত বরফপাতে পরিণত হয়েছিল। নতুন শীর্ষগুলি ক্র্যাটার হিমবাহকে প্রায় পূর্ব এবং পশ্চিমা অংশে বিভক্ত করেছে। আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা সত্ত্বেও, হিমবাহের শেষ প্রান্ত এখনও পশ্চিমা লোবে সামান্য অগ্রগতি লাভ করেছে এবং আরও আড়ালে থাকা পূর্ব লোবগুলিতে যথেষ্ট অগ্রগতির সাথে এগিয়েছে। অগ্রগতির কারণে, হিমবাহের দুটি অংশ ২০০৮ সালের মে মাসের শেষদিকে একসাথে সংযুক্ত হয়ে গেছিলো এবং এভাবে হিমবাহটি পুরোপুরি লাভা শীর্ষককে ঘিরে রেখেছে। তদ্ব্যতীত, ২০০৪ সাল থেকে, ক্র্যাটার হিমবাহের উপরিভাগে অবস্থিত জ্বালামুখে শিলা এবং বরফ জমা করার দরুন উপরে নতুন হিমবাহ তৈরি হয়েছে; ক্র্যাটার হিমবাহের পূর্ব অংশের উত্তরে দুটি শৈল হিমবাহ রয়েছে। ক্র্যাটার হিমবাহটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জানা শোনার মধ্যে একমাত্র অগ্রসরমান হিমবাহ।
University of Washington Libraries: Digital Collections:
Mount St. Helens Post-Eruption Chemistry Database This collection contains photographs of Mount St. Helens, post-eruption, taken over the span of three years to provide a look at both the human and the scientific sides of studying the eruption of a volcano.
Mount St. Helens Succession Collection This collection consists of 235 photographs in a study of plant habitats following the May 18, 1980 eruption of Mount St. Helens.
Audio slideshow: Mount St Helens (6:29 min) - Volcanologist Sarah Henton discusses the Cascade Mountains and explains the geology and impact of the 1980 Mount St Helens eruption.