সুলতান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ (১৯২৫ - ২২ অক্টোবর ২০১১) (আরবি: سلطان بن عبدالعزيز آل سعود) (সুলতান আল-খাইর (আরবি: سلطان الخير, উত্তমের সুলতান নামেও পরিচিত) ছিলেন সৌদি আরবের যুবরাজ।[১] তিনি ২০০৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুবরাজ পদে ছিলেন।
প্রারম্ভিক জীবন
সুলতান ১৯২৫ সালে রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তিনি বাদশাহ আবদুল আজিজের ১২তম পুত্র।[৩] তার মা হাসা বিনতে আহমেদ আল সুদাইরি।[৪] সুদাইরি ভ্রাতৃবৃন্দের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় ছিলেন।[৫][৬] অন্যান্য ভাইদের মত তিনিও রাজ দরবারের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভ করেছেন।[২][৬]
সরকারি দায়িত্ব
১৯৪০ সালে তাকে রিয়াদের গভর্নর নাসের বিন আবদুল আজিজের ডেপুটি নিয়োগ দেয়া হয়।[৬] ১৯৪৭ সালে তিনি নাসেরের স্থলে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান।[৭][৮][৯] এসময় জাতীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তিনি বাদশাহ আবদুল আজিজকে সহায়তা করেছেন।[৭] ১৯৪৭ সালে তিনি দাম্মাম থেকে রিয়াদ পর্যন্ত আরামকোর রেলপথ নির্মাণ কাজের তদারক করেছেন। ১৯৫৩ সালে তিনি দেশের প্রথম কৃষ্টিমন্ত্রী হন।[৭] ১৯৫৫ সালে তিনি যোগাযোগমন্ত্রী হন।[১০]
প্রতিরক্ষা ও বিমান মন্ত্রী
১৯৬৩ সালে ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ তাকে প্রতিরক্ষা ও বিমান মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।[৮][১১] তিনি সৌদি সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। বাদশাহ ফয়সালের শাসনামলে সুলতান ইয়েমেন নিয়ে আগ্রহী ছিলেন।[১২] বাদশাহ খালিদের শাসনামলে তার প্রভাব হ্রাস পায়।[১২] তার সময়ে সৌদি আরব ছিল মার্কিন অস্ত্রের সর্ববৃহৎ আমদানিকারক। মার্কিন-সৌদি মিত্রতার তিনি অন্যতম শক্ত সমর্থক ছিলেন।[১৩]
১৯৬৫ সালে তিনি ব্রিটিশ এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের সাথে চুক্তি করেন। তিনি ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধের একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন।[১৪] ১৯৯৯ সালে তিনি ইরান সফর করেছেন। এটি ছিল ১৯৭৯ সালের পর কোনো সৌদি মন্ত্রী ইরানে রাষ্ট্রীয় সফর।[১৫]
দ্বিতীয় উপপ্রধানমন্ত্রী
১৯৮২ সালের ১৩ জুন বাদশাহ খালিদের মৃত্যুর পর ফাহাদ বাদশাহ হন এবং সুলতানকে দ্বিতীয় উপপ্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।[৮][১৬] তবে তার দুই সৎ ভাই মুসাইদ বিন আবদুল আজিজ ও বন্দর বিন আবদুল আজিজ এতে বিরোধিতা করেছিলেন। পরবর্তীতে এই বিরোধ নিরসন হয়।[১৭]
১৯৯৫ সালে তৎকালীন যুবরাজ আবদুল্লাহর ওমান সফরকালে সুলতান ক্ষমতা নিতে চেষ্টা করেন।[১৮] তবে এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।[১৮]
যুবরাজ
২০০৫ সালের ১ আগস্ট সুলতান বিন আবদুল আজিজ যুবরাজ হিসেবে নিয়োগ পান।[১৯] বাদশাহ ফাহাদের মৃত্যুর ফলে এসময় তিনি সুদাইরি ভ্রাতৃবৃন্দের প্রধান ছিলেন।[২০]
অন্যান্য দায়িত্ব
সুলতান সৌদি আরবের মহাপরিদর্শক হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি সৌদি বিমান সংস্থার বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। চেয়ারম্যানের পদে থাকাকালে তিনি সৌদি বিমানবন্দরে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছিলেন।[২১] ১৯৮৬ সালে তিনি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য সৌদি জাতীয় কমিশন গঠন করেছেন।[২২] তিনি ইসলামি বিষয়ের উচ্চতর কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করেছেন। এই কাউন্সিল পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়কে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।[৮][২৩]
শিক্ষায় ভূমিকা
তিনি প্রিন্স সুলতান বিন আবদুল আজিজ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর ওয়াটারের প্রতিষ্ঠাতা। ২০০২ সালে এটি চালু হয়।[২৪][২৫] বাদশাহ ফাহাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে পরিবেশ প্রকৌশলের চেয়ার রয়েছে। তার সাথে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সংক্রান্ত চুক্তির ফলে সৌদি শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মানবিক বিজ্ঞানের উপর ব্যাচেলর, মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে পড়ার সুযোগ পায়।[২৬]
দাতব্য কর্ম
১৯৯৫ সালে তিনি দাতব্য সংস্থা সুলতান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ ফাউন্ডেশন স্থাপন করেন। এই ফাউন্ডেশন বিভিন্ন দেশে কেন্দ্র স্থাপন করেছে।[২৬]
বিতর্ক
২০০২ সালে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার আদালতে সুলতানসহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ সৌদি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আলকায়েদাকে সহায়তার অভিযোগ করে।[২৭] তবে প্রয়োজনীয় প্রমাণের অভাবে মার্কিন ফেডারেল আদালতের বিচারক মামলা খারিজ করে দেন।[২৭]
ব্যক্তিগত জীবন
সুলতান একাধিকবার বিয়ে করেছেন। তার বত্রিশজন সন্তান রয়েছে। তার ছেলেরা বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালন করেছেন। তার জ্যেষ্ঠ পুত্র খালিদ বিন সুলতান তার মৃত্যুর পর উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী হন এবং ২০১৩ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্বপালন করেন।[২৮] বন্দর বিন সুলতান ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মহাসচিব ছিলেন। এছাড়াও তিনি গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান ছিলেন। ফাহাদ বিন সুলতান তাবুক প্রদেশের গভর্নরের দায়িত্বপালন করেছেন। সালমান বিন সুলতান সাবেক উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন।[২৯]
২০০৪ সালে সুলতানের কোলন ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০০৯ সালে তিনি আলঝেইমারে আক্রান্ত হন।[৩১][৩২]
মৃত্যু
২০১১ সালের ২২ অক্টোবর সুলতান বিন আবদুল আজিজ নিউ ইয়র্কের নিউ ইয়র্ক-প্রেসবাইটেরিয়ান হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।[৩৩][৩৪][৩৫]
২৪ অক্টোবর তার মরদেহ নিউ ইয়র্ক থেকে রিয়াদ আনা হয়।[৩৬] ২৫ অক্টোবর রিয়াদের ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহ মসজিদে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।[৩৭] রিয়াদের আল আউদ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।[৩৮] তার জানাজায় বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।[৩৬]
↑ কখSultan bin Salman Al Saud (মার্চ ২০০১)। "Supporting Peace, Justice and Equality"। Presidents and Prime Ministers। 10 (2): 16। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৩। – via Questia (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
↑George Kheirallah (১৯৫২)। Arabia Reborn। Albuquerque: University of New Mexico Press। পৃষ্ঠা 254। ১০ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১৫। – via Questia (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
↑Fatima Sidiya (১৯ অক্টোবর ২০১০)। "Kingdom bans smoking at airports"। Arab News। ২০ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০১০।