সুভাষ ভৌমিক (২ অক্টোবর ১৯৫০ – ২২ জানুয়ারি ২০২২) ছিলেন একজন কিংবদন্তি ভারতীয় বাঙালি ফুটবল খেলোয়াড়, ম্যানেজার এবং প্রবাদপ্রতিম কোচ। তিনি তার ক্রীড়া জীবনে কলকাতার দুই প্রধান ফুটবল মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল দলের হয়ে খেলেছেন।[২] এছাড়াও তিনি ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ সময়ে ভারতের জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি পশ্চিমবঙ্গের ফুটবল অঙ্গনে ভোম্বল নামে পরিচিত ছিলেন।[৩]
ক্লাব জীবন
ভৌমিক ১৯৬৯ সালে ইস্টবেঙ্গল এফসিতে যোগ দেন এবং সেখানে এক মৌসুম কাটানোর পর ১৯৭০ সালে মোহনবাগানে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে মৌসুমের শেষদিকে তিনি ইস্ট বেঙ্গলে ফিরে আসেন এবং ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলেন, এরপর তিনি পুনরায় মোহনবাগানে যোগ দেন।
১৯৭৫ সালে তিনি কলকাতায় আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ৫-০ গোলে মোহনবাগানকে বিধ্বস্ত করা ইস্টবেঙ্গল দলের অন্যতম প্রধান মুখ ছিলেন। ১৯৭৭-৭৮ মৌসুমের পর তিনি পুনরায় ইস্টবেঙ্গলে ফিরে আসেন এবং ১৯৭৯ সালে অবসর গ্রহণ করেন। খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি একজন শক্তিশালী ফরোয়ার্ড হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যার ভালো গোল করার ক্ষমতা ছিল। তিনি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৭ সালের মধ্যে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে ৮৩টি এবং মোহনবাগানের হয়ে ৮২টি গোল করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক জীবন
ভৌমিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ১৯৭০ সালে তিনি এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জয়ী ভারতীয় ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন। তিনি মারডেকা টুর্নামেন্ট এবং পেস্তা সুকান কাপেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
কোচিং জীবন
বিতর্ক
২০০৫ সালের ২ ডিসেম্বর, দক্ষিণ কলকাতার কলকাতা সাউথ ক্লাবের কাছে একটি জায়গায় ঘুষ নিতে গিয়ে সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েন সুভাষ ভৌমিক ও ঘুষের মামলায় গ্রপ্তার হন।[৪] ভৌমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে তিনি সেন্ট্রাল এক্সাইজের তত্ত্বাবধায়ক থাকাকালীন এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা ঘুষ চান। সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (সিবিআই) মতে, তিনি বেহালার এক ব্যবসায়ীর সমস্যা নিষ্পত্তি করার জন্য ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এই অর্থ দাবি করেন। গোপনে সিবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই ব্যবসায়ী। পরে ঘুষ আনতে গেলে সুভাষ ভৌমিক ধরা পড়েন।[৫] ২০১৮ সালের জুনে, সিবিআই আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাকে তিন বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত করে।[৬] দুর্নীতি বিতর্কের পর তার সুনামও ক্ষুণ্ণ হয়।
সম্মাননা
খেলোয়াড় হিসেবে
- ভারত
- বাংলা[১০]
- ইস্টবেঙ্গল[১১]
- মোহনবাগান
ম্যানেজার হিসেবে
- ইস্টবেঙ্গল
- চার্চিল ব্রাদার্স
মৃত্যু
প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ সুভাষ ভৌমিক দীর্ঘদিন ধরে সুগার ও কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। তিন মাস ধরে তাকে নিয়মিত ডায়ালিসিস নিতে হচ্ছিল। আগে একবার তার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। বুকে সংক্রমণ নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার এক নার্সিংহোম ভরতি হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ জানুয়ারি শনিবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।[১৭]
আরও দেখুন
শ্যামল ঘোষ
তথ্যসূত্র