সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার একজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী। তিনি একজন বিধায়ক, ২০১১ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে মহিষাদল নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।[১][২][৩]
তাঁর স্ত্রী ডক্টর কাকলি ঘোষ দস্তিদার, একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত। তিনি পশ্চিমবঙ্গের বারাসত থেকে ১৫ তম, ১৬ তম ও ১৭ তম লোকসভার নির্বাচিত সদস্য এবং লোকসভায় তৃণমূলের উপ-নেতা। রাজ্য রাজনীতিতে আসার আগে ডক্টর সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার ১৯৮১ সাল থেকে ভারতের বন্ধ্যাত্ব নিয়ে গবেষণাকারীদের মধ্যে অন্যতম হিসাবে পরিচিত। তিনি দেশের নলজাতক শিশুর (টেস্ট টিউব বেবি) গবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ হিসাবে স্বীকৃত।
শিক্ষা
ডঃ সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার প্রথমে এমবিবিএস ডিগ্রি এবং তারপর ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগবিদ্যায় এমডি অর্জন করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত আর.জি.কর মেডিকেল কলেজ থেকে। পরবর্তী সময়ে তিনি বেশ কয়েকটি উন্নত প্রতিষ্ঠান, যেমন নিউ ইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ওয়েল মেডিকেল সেন্টার, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আলবার্ট আইনস্টাইন ইনস্টিটিউট এবং নেদারল্যান্ডসের ইরাসমাস বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তিনি অধ্যাপক রবার্ট এডওয়ার্ডসের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন এবং প্রশিক্ষণের জন্য ক্যামব্রিজের বোর্ন হল ক্লিনিকে যান।
গবেষণা আরম্ভ
ডঃ সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার প্রয়াত ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রিয় ছাত্র ছিলেন। ডাঃ সুভাষ মুখোপাধ্যায় ১৯৭৮ সালে সফল ভাবে ভারতের প্রথম টেস্ট টিউব বেবির জন্ম দিয়েছিলেন, সেই বছরেই ডাঃ রবার্ট এডওয়ার্ডস এবং প্যাট্রিক স্টেপটো ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে বিশ্বের প্রথম আইভিএফ শিশু প্রসব করিয়েছিলেন। মুখোপাধ্যায়ের এই অভিনব কাজটি চিকিৎসা সম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল যেহেতু তাঁর কাজটি মাইক্রো-ফোটোগ্রাফিক প্রমাণের ভিত্তিতে আদর্শভাবে নথিভুক্ত হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরে ডাঃ ঘোষ দস্তিদার এবং ডাঃ বি. চক্রবর্তী যৌথভাবে কলকাতায় বসে সফলভাবে একটি আইভিএফ গর্ভধারণ করিয়ে, ১৯৮৬ সালে ভারতের প্রথম আইভিএফ পুত্রের জন্ম দেন।
গবেষণা এবং কর্মজীবন
তাঁদের গবেষণা ১৯৮৬ সালে আইভিএফ দ্বারা ভারতের দ্বিতীয় টেস্ট-টিউব শিশু ইমরানকে প্রসব করাতে সফল হয়েছিল। এই ঘটনা প্রচুর আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং সাংবাদিকেরা এটিকে ব্যাপকভাবে প্রচার করেছিলেন। এর আগে তাঁরা আইইউআই দ্বারা গর্ভাবস্থা অর্জনে সফল হয়েছিলেন এবং ১৯৮৮ সালে, ফিনল্যান্ডের হেলসিংকিতে তৃতীয় আইভিএফ ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস এটি নথিবদ্ধ করেছিলেন। ১৯৯১ সালে ডঃ ঘোষ দস্তিদার স্বাধীনভাবে কলকাতার গড়িয়াহাটে ইনফার্টিলিটি ক্লিনিক এবং আইভিএফ সেন্টার নামে কলকাতার দ্বিতীয় টেস্ট টিউব বেবি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আইসিএসআই প্রযুক্তি দ্বারা ভারতের প্রথম টেস্ট-টিউব শিশুর জন্মের কৃতিত্ব দেওয়া হয় এই কেন্দ্রটিকেই, ১৯৭৮ সালে আইভিএফ-এ গবেষণার পর বন্ধ্যাত্ব গবেষণার ক্ষেত্রে এটি বৃহত্তম অগ্রগতি হিসাবে বিবেচিত। ২০০৫ সালে, তাঁর চিকিৎসার অধীনে, আইভিএফ-সারোগেসির মাধ্যমে এশিয়ার প্রথম, একক পিতার শিশুর জন্ম হয়। তিনি সারা বিশ্ব জুড়ে বক্তৃতা দিয়েছেন এবং তাঁর গবেষণা উপস্থাপন করেছেন। ২০০৭ সালে কলকাতার ভবানীপুরে তিনি ঘোষ দস্তিদার ইনস্টিটিউট ফর ফার্টিলিটি রিসার্চ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০১১ সালে, ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর মাইল্ড অ্যাপ্রোচ ইন অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকশান (ইসমারা) দ্বারা তাঁর কেন্দ্রটি নির্বাচিত হয়েছিল, কলকাতায় মাইল্ড অ্যাপ্রোচ ইন অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকশানের ওপর চতুর্থ বিশ্ব কংগ্রেস তত্ত্বাবধান করার জন্য। ভারতে এটি প্রথম অনুষ্ঠিত আইভিএফ-এআরটি ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস।
তথ্যসূত্র