শহীদ সিরাজুল ইসলাম (জন্ম: ১৯৫২ - মৃত্যু: ৮ আগস্ট, ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। [১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
শহীদ সিরাজুল ইসলামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার এলংজুরি ইউনিয়নের ছিলনী গ্রামে। তার বাবার নাম মকতুল হোসেন এবং মায়ের নাম গফুরন নেছা।
কর্মজীবন
সিরাজুল ইসলাম ১৯৭১ সালে স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে আসামের ইকো ওয়ান সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ৫ নম্বর সেক্টরের বড়ছড়া সাব-সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করেন। [২]
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান সাচনায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সেখানে পাকিস্তানি বাহিনীর শক্তিশালী একটি ঘাঁটি ছিল। ১৯৭১ সালের ৮ আগস্ট সারা রাত থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। চারদিকে কাদা আর পানি। নিঃশব্দে একদল মুক্তিযোদ্ধা এগিয়ে চলেছেন। এই দলে আছেন সিরাজুল ইসলাম। তাদের লক্ষ্য পাকিস্তানি সেনাদের একটি ঘাঁটি। পাকিস্তানি সেনারা কীভাবে যেন তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেল। বাংকার থেকে তারা ব্যাপক গুলি শুরু করল। আকস্মিক এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা হকচকিত। তারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করলেন। মুক্তিযোদ্ধারা চেষ্টা করছেন ক্রলিং করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু প্রবল গুলির কারণে তারা সামনে এগোতে পারছেন না। কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন। হতাহতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আর্তনাদ আর চিৎকার। গুলিতে একজন সহযোদ্ধা শহীদ এবং দুজন আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় সিরাজুল ইসলাম সহযোদ্ধাদের আর না এগিয়ে ওই অবস্থানে থেকে গুলি চালাতে বললেন। তারপর কয়েকটি গ্রেনেড নিয়ে তিনি একাই ক্রলিং করে এগিয়ে চললেন শত্রুর বাংকার অভিমুখে। শত্রুর চোখ ফাঁকি দিয়ে সফলতার সঙ্গেই তিনি গ্রেনেড চার্জ করলেন। তার সফল গ্রেনেড চার্জে শত্রুর দুটি বাংকার ধ্বংস হয়ে গেল। এ ঘটনায় পাকিস্তানি সেনারা একেবারে হতবুদ্ধি। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ আরও জোরদার করলেন। এরপর পাকিস্তানি সেনারাই কোণঠাসা হয়ে পড়ল। এই সাফল্য ও জয়ে সিরাজুল ইসলাম কিছুটা অভিভূত হয়ে পড়লেন। জয়ের অদম্য নেশায় তিনি পাকিস্তানি সেনাদের তৃতীয় বাংকারে গ্রেনেড চার্জ করতে গেলেন। আর ঠিক তখনই শত্রুর একটি গুলি এসে লাগল তার শরীরে। আহত সিরাজুল ইসলামকে তার সহযোদ্ধারা মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হন। চিকিৎসার জন্য তাকে ভারতে পাঠানো হয়। কিন্তু পথেই তিনি মারা যান। সেদিনের এ যুদ্ধে সিরাজুল ইসলামসহ ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং কয়েকজন আহত হন। পাকিস্তানি বাহিনীরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
তথ্যসূত্র
বহি:সংযোগ