গ্রেট হোয়াইট শার্ক(বৈজ্ঞানিক নাম:Carcharodon carcharias,ইংরাজি নাম:Great white shark,বাংলা অনুবাদে:মহান সাদা হাঙর বা সাদা হাঙর, আরো কিছু প্রচলিত নাম:গ্রেট হোয়াইট,হোয়াইট পয়েন্টার,হোয়াইট শার্ক,হইট ডেথ) এরা বৃহত্তর lamniform(ল্যামনিফ্রম) হাঙরের একটি প্রজাতি যেটিকে সমস্ত প্রধান মহাসাগরের উপকূলবর্তী পৃষ্ঠ জলের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় । গ্রেট হোয়াইট শার্ক প্রধানত এর আকার জন্য পরিচিত হয়, একটি প্রাপ্তবয়স্ক গ্রেট হোয়াইটের দৈর্ঘ্য ৬.১ মিটার (২০ ফুট) হয় এবং ওজনের দিক দিয়ে ২,২৬৪ কেজি (৫,০০০ পাউণ্ড) হয়,এই হাঙর ১৫ বছর বয়সে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় এবং সাধারণত ৩০ বছর বাঁচে ।
গ্রেট হোয়াইটকে পৃথিবীর বৃহত্তম শিকারী মাছ হিসাবে ধরা হয় (তর্কসাপেক্ষ) সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণিবিদের মুখ্য শিকারী এরা এবং খাদ্য সুশৃংখলে এরা সর্বোচচ শ্রেনীর খাদক । এরা স্তন্যপায়ী ছাড়াও মাছ ও সামুদ্রিক পাখি শিকার করে । এরা Carcharodon গনের একমাত্র প্রজাতি এবং সমস্থ হাঙর প্রজাতির মধ্য এরাই একমাত্র প্রজাতি যেটি জলের উপরও নিচে দুই জায়গাতেই শিকার করায় দক্ষ ।মানুষের উপর আক্রমণে এদের অবস্থান প্রথম স্থানে । আইইউসিএন তালিকায় একটিকে ঝুঁকির মধ্যে থাকা প্রজাতি হিসাবে ধরা হয় ।
পিটার বেঞ্চলি রচিত বিখ্যাত উপন্যাস জছ যেটি জার্সি সমুদ্রতীরে হাঙ্গর আক্রমণের ঘটনার উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল এবং স্টিভেন স্পিলবার্গ এর ১৯৭৫ সালে তৈরি চলচ্চিত্র জসJAWS, এই হাঙরের প্রতি মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল যে কারণে মানুষ এদের আদম খোর হিসাবেই ভেবে বসে । বাস্তবে মানুষ এদের প্রথা গত শিকারের বাইরে তাই মানুষ শিকারের উপর এরা বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেনা মানুষের উপর আক্রমণে যে ঘটনা গুলি ঘটেছে তার বেশিরভাগই ভুল বুঝার উপর ভিত্তি করে ।
নামকরণ
গ্রেট হোয়াইট সবসময় Carcharodon carcharias নামে পরিচিত ছিল না । ১৭৫৮ সালে Carolus Linnaeus প্রথম গ্রেট হোয়াইট এর বৈজ্ঞানিক নাম দেন তার দেওয়া নামটি ছিল Squalus carcharias । পরে স্যার অ্যান্ড্রু স্মিথ, 1833 সালে এর জেনেরিক(জাতিবাচক) নাম হিসাবে Carcharodon দিয়েছিলেন, বর্তমানে এদের বৈধ বৈজ্ঞানিক নাম Carcharodon carcharias । Carcharodon এসেছে গ্রীক শব্দ karcharos থেকে যার মানে ধারালো jagged এবং odous মানে দাঁত। এদের প্রচলিত নাম গুলির মধ্য আছে গ্রেট হোয়াইট,হোয়াইট পয়েন্টার,হোয়াইট শার্ক,হোয়াইট ডেথ ইত্যাদি ।
গ্রেট হোয়াইট শার্ক এর উত্পত্তি হয় মধ্য-মিইয়সিন (mid-Miocene) যুগে । গ্রেট হোয়াইট শার্ক এর নিকটতম জানা জীবাশ্ম টি ১৬ মিলিয়ন বছর পুরনো । যদিও এ তথ্যের উপর এখনও বিতর্ক চলছে । অনুমান করা হয় গ্রেট হোয়াইট শার্ক এর পূর্বপুরুষ এক বিশাল আকার প্রাগৈতিহাসিক হাঙর, মেগলাডন এর মতন । শারীরিক আকার ও অঙ্গপ্রতঙ্গ এর দিক দিয়ে এই দুই হাঙর ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এর কারণে অনেক বৈজ্ঞানিক বিশ্বাস করে মিগলডনই আধুনিক গ্রেট হোয়াইট এর নিকট তম আত্মীয়, যে কারণে সাম্প্রতিক কালে এদের Carcharodon megalodon ও বলা হয় । তবে বর্তমানে কিছু বৈজ্ঞানিক গ্রেট হোয়াইট ও মেগলাডন কে দূরবর্তী আত্মীয় বলে ব্যাখ্যা করেছেন । এছাড়া ও গ্রেট হোয়াইট এর সাথে প্রাচীন মকো শার্ক এর আরো বেসি ঘনিষ্ঠতা পাওয়া গেছে । বিলুপ্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রজাতি Carcharodon hubbelli এর একটি গোটা চোয়াল ২২২ টা দাঁত এ ৪৫ টা কশেরুকা ১৯৮৮ সালে অবিষ্কার হলে মেগলাডন তত্ত্ব টা গুরুত্ব লাভ করে ।এখানে উল্লেখ যজ্ঞ আধুনিক গ্রেট হোয়াইট, মেগলাডন থেকে আকারে অনেকটাই ছোট ।
বিচরন স্থান
যে সব উপকূলে জলের তাপমাত্রা ১২ এবং ২৪ °C (৫৪ এবং ৭৫ ° ফাঃ) মধ্যে, সেসব উপকূলবর্তী এবং সমুদ্রতীর হইতে দূরবর্তী জলের মধ্যে বাস করে এরা । এদের বিচরন ক্ষেত্র এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে(আটলান্টিক উত্তরপূর্ব ও ক্যালিফোর্নিয়া)ক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, ওশেনিয়া, চিলি, এবং ভূমধ্য সাগরে এদের ব্যাপক ভাবে দেখা যায় কারণ এসব এলাকার তাপমাত্রা গ্রেট হইট এর জন্য খুবই অনকুল
আটলান্টিকে এদের দেখা মেলে নিউফাউন্ডল্যান্ড থেকে ফ্লোরিডা,মেক্সিকো উত্তর উপসাগর, বাহামা এবং কিউবার পাশাপাশি ব্রাজিল থেকে আর্জেন্টিনা এবং পূর্ব আটলান্টিক মধ্যে ফ্রান্স থেকে ভূমধ্য সহ দক্ষিণ আফ্রিকায়
ভারত মহাসাগরে এদের দেখা মেলে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং Seychelles দ্বীপপুঞ্জ, সেই সাথে Réunion ও মরিশাসে ও । পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে এদের দেখা মেলে নিউজিল্যান্ড এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে । কেন্দ্রীয় প্যাসিফিকে এদের দেখতে পাওয়া যায় হাওয়াইয়ান দ্বীপে এবং আলাস্কা থেকে পূর্ব প্যাসিফিক মধ্যে চিলি ক্যালিফোর্নিয়া এবং পানামা উপসাগরে এদের দেখা যায় ।
এই হাঙর জলের উপরের অংশে বিচরন করে । এদের সাধারণত সমুদ্রতীরাতিক্রান্ত এলাকায় দেখা যায় পৃষ্ঠ থেকে ৭৭৫ ফুট) গভীরত্বে ।
সমুদ্রের epipela স্তরে এর বিচরন করে, খোলা সমুদ্রে ১,২০০ মিটার (৩.৯০০+ ফুট ) গভীরে এদের দেখতে পাওয়ার রেকর্ড আছে । গ্রেট হোয়াইট একটা উপকূলবর্তী প্রজাতি এ তথ্য পুরোপুরি সত্য নয় ।
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেকা গেছে ক্যালিফোর্নিয়ার গ্রেট হোয়াইট শার্ক বাজা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে হাওয়াই এ চলে আসে এই জায়গাটাকে এই জন্য হোয়াইট শার্ক ক্যাফে বলা হয় এখানে গ্রেট হোয়াইট শার্ক ১০০ দিন মতন থাকে তারপর আবার ফিরে আসে বাজা তে এই সফরে এরা খুব ধীরে ধীরে সাঁতার কাটে এবং ৯০০ মিটার (৩,০০০ ফুট) গভীরে থেকে চলে। গন্তব্যে আসার পর, তারা আচরণ পরিবর্তন করে হাঙর গুল তখন প্রায় ৩০০ মিটার (১,০০০ ফুট) গভীরে সাতার কাটতে থাকে দশ মিনিটের জন্য । অনুরূপ একটি গবেষণায় একটি গ্রেট হোয়াইট শার্ক কে অনুসরণ করে দেখা যায় সেটি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে সাতরে যায় এবং ২০,০০০ কিলোমিটার (১১,০০০ NMI ১২,০০০ মাইল) এর এই সফরে সময় লাগে ৯ মাস । এই পর্যবেক্ষণ গ্রেট হোয়াইট হাঙর এর ব্যাপারে অনেক প্রথাগত তত্ত্বের বিরুদ্ধে যায় এবং এই গবেষণায় এই সম্ভাবনা প্রকাশ করে যে গ্রেট হোয়াইট গুষ্টির মধ্যে ও মিথস্ক্রিয়া সম্ভব যা পূর্বে বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে মনে করা হত । যদিও তাদের মাইগ্রেশন কারণ এবং কেন তাদের গন্তব্য তা এখনও অজানা । সম্ভবত প্রজনন এবং খাদ্যের জন্য তার এমন করে ।